somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামহোয়ার ইন ব্লগ - (৫৮)

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অকস্মাৎ টোকা এল - দিদি দরজা খুলুন। নেমী
বাস্তবে ফিরে এল।
- শাড়ী বের করুন , আমাদের ক্লাশ ন'টায় - মেয়ে দুটি বলল।
নেমী ভেবেছিল ও আজ একেবারে নতুন একটা দামী নীল রং এর শাড়ী পরবে। কেননা এর পরেই তো ওকে নীল আকাশের নীল নীল নীলিমায় হারিয়ে যেতে হবে। শুভর স্পর্শ নিয়েই ও সেখানে অনন্তকাল বেচে থাকবে। যেন আকাশের দূর্বল মেঘগুলোও কোন দূর্বল মুহুর্তে ওকে ভিজিয়ে না দেয়। মেঘের উপরে থেকেই ও মেঘগুলোর কামড়াকামড়ি খেলা দেখবে।
রাতেই পরিকল্পনা নেওয়ায় নেমী কোন নতুন শাড়ী কিনতে পারল না। ওর পুরোনো তিন চারটে শাড়ী থেকে ফিরোজা রংয়ের জামদানীটা বের করল। একেবারে যে পুরোনো টা নয় , কিছুদিন আগে কেন একবার মাত্র পরেছে। খয়েরি রংয়ের ব্লাউজ আর সবুজ পেটিকোট। মেয়েদুটি বলার আগেই ও নিজেই বিরক্তির সাথেই বলল-
একদম ম্যাচ হোল না , কি বিশ্রী লাগবে।
মেয়েদুটি একসাথে বলল-
না দিদি একেবারে খারাপ হবে না।
নেমী মনে মনে বলল- আমি জানি শুভ নীল রং তোমার পছন্দ। কিন্ত তুমি তো একটাও কিনে দিলে না। যেন অভিমান হয়েছে এভাবে মুখটা কালোকরে বলল-
আমি নিজে কিনে নীল রং এর শাড়ী পরবো কেন ?

মেয়েদুটি ওকে শাড়ী পরিয়ে দিয়ে চলে গেল আর সাজার অন্যান্য সবই নেমী নিজের হাতে পরল। আয়নাতে ঘুরে ঘুরে নিজেকে কয়েকবার দেখলো। পেটের দিকে তাকিয়ে নিজেই যেন ভীযন লজ্জা পেল , এতটা অংশ ফাকা ও ঢাকবে কি করে। শুভর সামনে ওর এই ফাকা শরীর নিয়ে যেতে ভীযন লজ্জা পাচ্ছে।
হলের গেট থেকে বেরিয়ে নেমী দেখল গাড়ী এসেই রয়েছে। মনে মনে ওর একটা আশা ছিল হয়ত শুভ আসবে। কিন্ত ড্রাইভারকে দেখে তা মরে গেল , শুভ আসলে নিজেই ড্রাইভ করে। গাড়ী চলতে চলতে ও ভাবল - গিয়েই ও শুভকে সালাম করবে। তারপর ঐ প্রথম চুমু দেবে। বেটা পেয়েছে কি - একদিনও আগে চুমু দিতে পারে না ও।

দরজা খুলে দিয়ে খালা হেসে দিল। পেটের কাছে শাড়ীটা ধরে একটু টেনে উঠিয়ে দিল। নেমী খেয়াল করল নাভীর এতটা নিচে ও শাড়ী পরেছিল নাকি। খালা নেমীর নাকটা ধরে একটু টিপে দিয়ে বলল- দুস্টু মেয়ে খাবার কথা ভুলে যেয়ো না যেন। বলেই মুখ টিপে হাসতে হাসতে চলে গেল।

নেমী শুভর ঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে বুকে সাহস নিয়ে মাথা নিচু করে ঘরে ঢুকল। প্রায় খাটের কাছে এসে মাথা উচু করে ও থমকে গেল। শুভ ঘরে নেই। পাগলের মত এসে ও খালাকে জিজ্গেস করল -
খালা শুভ কোথায় ?
- বাইরে গেছে । বলল- এক্ষুনি আসছি। বস ! এসে যাবে।
নেমী শুভর ঘরে এসে অনিচ্ছা স্বত্বেও কাদল। আলনায় তাকিয়ে দেখে হেসে দিল। শুভর সবগুলো শার্টগুলো ও সাদা বানিয়েছে। বলল- এটুকু যখন পেরেছি , তোমাকে আমি খুন থেকে ও বাচাবো। ভাবলো আজই তো আমার শেয দিন , যা পারে আজ ক্ষতি করে যাবে ও। আলনা থেকে সাদা শার্টগুলো এনে হ্যাদারাম হ্যাদারাম লিখে ভরে ফেলল। শেয শার্ট টা এনে ও যখন লিখছিল তখনই শুভ ঘরে ঢুকল। তাড়াতাড়ি শার্ট টা ও দলা করে বালিশের নিচে লুকাল। শুভ তার হাতের প্যাকেট টা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলল- হ্যাদারামের ফ্যামিনিন জেন্ডারটাও লিখ।

শুভকে দাড় করিয়ে সালাম করতে গেলে শুভ ওকে টেনে উঠালো , বলল- এখন না। নেমী ঠোট বাড়িয়ে চুমু দিতে গেলে একেবারে ঠোটের কাছথেকে ঠোট টা সরিয়ে নিয়ে শুভ বলল- শান্ত হও। নেমী যেন কিছুতেই আর নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না , মনকে শক্ত করে ঘুরে দাড়িয়ে ঠিক শুভর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল-
এতদিন তোমার কথা শুনেছি , আজ আমার কথা তোমার শুনতে হবে।
শুভ যেন অত্যন্ত স্বাভাবিক ওর স্বভাবগত ভাবেই বলল-
- সবটুকু শুনতে হবে ?
হ্যা সবটুকুই । আমার যা খুশি ইচ্ছা করব আজ। মন যা চায়। ভেংগে চুরে চুরমার করে ফেলব। চোখ মেলে শুভর দিকে তাকিয়ে বলল- কি অন্যায় করেছি আমি ? আমাকে নাও না কেন। আমি বাচতে চাই বলেই শুভ বুকে পড়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগল। শুভ এবারে আর বাধা দিল না , মনে মনে বলল- কাদুক , যাকে সারাজীবনই কাদতে হবে তাকে ক্ষনিকের প্রবোধে লাভ কি।
আস্তে আস্তে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দু পা এগিয়ে টাবিল থেকে প্যাকেট টা নেমীর হাতে দিয়ে বলল- পোশাকটা পরে নাও।

নেমী প্যাকেট টা খুলে দেখল নীল রংয়ের শাড়ী, ম্যাচিং ব্লাউজ, পেটিকোট অন্যান্য সবকিছু। কি অসম্ভব সত্যি। বিস্ময়ের চোখ নিয়ে শুভর দিকে তাকাতেই ও বলল-
- ও ঘরে যাও । খালা পরিয়ে দেবে।
নেমী কথা না বলে প্যাকেট টা হাতে নিয়ে ওঘরে গেল। কিছুক্ষন পর ফিরে এসে দেখল- শুভ শেরওয়ানী পরে বসে আছে। নেমীকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বলল-
চলো।
কোথায় ? কেন ? কিছু জিজ্গেস না করেই নেমী শুভর পিছু পিছু গাড়িতে উঠল।

কোর্ট থেকে বিয়ে করে ওদের ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেল। ঘরে ঢুকে শুভ নেমীকে বলল-
আমি বাইরে যাচ্ছি । রাত্রে ফিরব। তুমি খালার কাছে যাও। রাত ঠিক দশটায় আমার ঘরে আসবে ঠিক নতুন বউ যেভাবে আসে। আর শোন একা হেটে এসো না , খালাকে বলো খালা পৌছে দিয়ে যাবে। নেমী চোখ উচু করে তাকাতে তাকাতেই শুভ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

বাইরে থেকে খেয়েই শুভ দশটার আগেই ঘরে ফিরল। নেমীকে খালা দশটার দিকে পৌছে দিয়ে গেল। শুভ দেখল ঠিক নতুন বউয়ের মত ঘোমটা টানা ত্রস্ত পায়ে হেটে এসেছে। শুভ হেটে গিয়ে ঘরের দরজাটা বন্দ করে দিয়ে নেমীর কাছে এসে দাড়াতেই ও শুভকে সালাম করল। একটু ঝুকে ও নেমীর দু বাহু ধরে দাড় করিয়ে মাথার ঘোমটা টা কিছুটা নামিয়ে দিল। দুটো হাত ধরে ওকে কাটের উপর বসিয়ে বলল-
নেমী আমার দিকে তাকাও।
নেমী ওর দিকে তাকাতেই শুভ হেসে দিয়ে বলল-
তোমাকে আশর্বাদ করবো এই তো।

নেমী আগামীকাল বুধবার আমার জন্মদিন । কালকের রাতের ফজরের আজানের পরে আমার মা আমাকে জন্ম দিয়েছিল। হিসেবমতে পরশুদিন আমার জন্মদিন হওয়া উচিত কিন্তু বুধবারই আমি আমার জন্মদিন ধরি। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ পরশুদিন দিন থেকে আমার নতুন জীবনের শুরু এইতো। শুভ ভালভাবে চেয়ে দেখলো নেমী একভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। প্রচলিত সমাজের নিয়মের মত জন্মদিনে উপহার আমারই পাওয়ার কথা। কিন্ত নেমী ব্যাপারটাকে একটু গভিরে নিয়ে দেখ। জন্ম আমার আনন্দ আমার , কেন আমার আনন্দে অন্য কেউ উপহারদিয়ে আনন্দ পাবে। বরং আমারই সবাইকে উপহার দিয়ে আমার আনন্দকে শেয়ার করে নিতে পারি। আমিই সবাইকে উপ হার দিতে চাই। জন্মদিনের উপ হার হিসেবে বলছি -
- নেমী কি চাও আমার কাছে ? যা চাইবে আজ তাই দেবো।

নেমীর চোখ দিয়ে আনন্দে জল পড়তে লাগল। ওর হাত দুটো দিয়ে শুভর একটা হাত ধরে বলল-
- কিছুই চাইনা শুভ । আমার জন্য কিছুই চাই না । তুমি যা দিয়েছ এ জীবনেও এ ঋন আমি শোধ করতে পারবো না।
- হেয়ালী কোর না নেমী। আমি জানি তোমার অনেক কিছু চাওয়ার আছে। এটা আমার বাসর ঘর নেমী তাছাড়া শুভ মিথ্যে বলে না।
নেমী অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে বলল-
- মাকে আমাদের সাথে থাকতে দাও
- আর কি চাও ?
- মাকে খুন করবে না ।
-তারপর ?
-আমি বাচতে চাই।
-নেমী তোমার সবশেয চাওয়া বল।
- আমি তোমার সন্তান চাই।

আমি তোমার সব চাওয়া মেনে নিলাম। আনন্দের কান্নায় আপ্লুত নেমী শুভকে জড়িয়ে ধরতে গেলে শুভ বলল- আর একটু দাড়াও।
সন্তান হলে যদি তুমি বাচো তাহলে আজই আমার সম্পুর্নটা তোমাকে দিলাম। মাকে আমি খুন করবো না। তোমার প্রথম শর্ত মাকে এ বাড়ীতে স্হান দিতে হবে - তাও দিলাম। কিন্ত আমি কি তোমাদের কাছে কিছু চাইতে পারি না।
নেমী বলল-
- বল কি চাও দেবতা ?


- চলবে



সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:২০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×