somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিগত এশীয় দ্বি-বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী: বৃহৎ আয়োজনে বৈচিত্র্যের সমাহার

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিগত এশীয় দ্বি-বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী: বৃহৎ আয়োজনে বৈচিত্র্যের সমাহার
--পার্থিব রাশেদ


বৈচিত্র্য ও বিশালতার বিচারে মানসিক উৎকর্ষ প্রাপ্তির সবচেয়ে বড় আয়োজন এশীয় দ্বি-বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী। ঢাকায় গত বছরের ২১ অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত হয়ে গেল ১৩তম এশীয় দ্বি-বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী।

গোপনীয়তায় নয় বরং প্রদর্শনের মাধ্যমেই যে কোনো শিল্পচর্চার সার্থকতা মূর্ত হয়ে ওঠে। কারণ শিল্প যতো নীরবে নিভৃতেই তৈরি হোক না কেন, যতো বুদ্ধি, আবেগ, দার্শনিকতা কিংবা সৃষ্টিশীলতা শিল্পে থাক না কেন, তা কেবল তখনই সার্থক হয়ে ওঠে, যখন তা সমাজের স্বীকৃতি পায়। ফলে এ অঞ্চলের শিল্পের সাম্প্রতিক অবস্থা, প্রবণতা ও গুণগত মান বিচারের সুযোগের সৃষ্টি করে এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, শিল্পে ব্যক্তিগত মাত্রার পরও আঞ্চলিক স্বাক্ষর বলে একটা বিষয় আছে, এ ব্যাপারে চৈতন্য সৃষ্টি। তবে এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে সবচেয়ে বড় পাওয়া দিকটি হলো, জাপান থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাম্প্রতিক শিল্পভাষার নমুনা দেখতে পাওয়া। গত দুই দশকে দেশে দেশে কনসেপচুয়াল ও স্থাপনা শিল্পে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে, যা আমাদের দেশের মানুষের দেখার সৌভাগ্য তৈরি করে দেয় চারুকলা প্রদর্শনী। যদিও এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে ওই ভাবধারায় সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ কাজগুলো প্রদর্শনী করা সম্ভব হয়নি। তবু অধিকাংশ এশীয় প্রদর্শনীতে শিল্পী বা শিল্পানুরাগীদের জন্য কিছু না কিছু অনুপ্রেরণার খোরাক ছিল।
পুরস্কার এবং স্থাপনা শিল্প এশীয় দ্বি-বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীর দুই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরস্কার শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, যেহেতু এ বৃহৎ আয়োজনে একাডেমির পক্ষ থেকে মূল্যায়নের কর্মটি সংগঠিত হয়। অন্যদিকে স্থাপনা শিল্পের মাধ্যম হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে চর্চার সুযোগও এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী।
এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী হলেও প্রতিবারের মতো এবারো বাংলাদেশের শিল্পীদের কাজের সংখ্যার প্রাচুর্য এ প্রদর্শনীকে দেশীয় কাজের নমুনা নির্ভর আয়োজনে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের শিল্পীদের অনেকের মধ্যে কাজের মধ্যম ধর্মী চিত্রকল্পেই উচ্চ ধর্মী আকাক্সক্ষার জন্ম হয়েছে। যে শিল্পীদের কাজের মধ্যে এমনটা হয়েছে, তারা হলেন আজমাল উদ্দীন, আশরাফুল হাসান, গোলাম ফারুক বেবুল, গুলশান হোসেইন, প্রশান্ত কুমার বুদ্ধ প্রমুখ। বাংলাদেশের অনেক শিল্পীই উত্তরাধুনিক মিশ্র ভাষাকে কেবল মাধ্যমের মিশ্র প্রক্রিয়া বলে ভ্রম করেছেন। এ প্রদর্শনীতে শাহিনুর রহমান, ফজলুল করিম ও মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানের কাজে এ ভুলের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ধরা দিয়েছে। অপরদিকে আনিসুজ্জামান, বিপুল শাহ, আবুল খায়ের ও বিশ্বজিৎ গোস্বামীর কাজ শিল্পে সম্ভাবনার কথা বলে। এদের মধ্যে শিল্পভাষা অনুসন্ধান ও নির্মাণের প্রতি আকাক্সক্ষা অটুট থাকলে ভবিষ্যতে নতুন কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাইফুল ইসলামের ‘ফিলোসফি অফ দ্য লাস্ট ড্রিমার’-এর ক্ষেত্রে একথা খাটে।
খালিদ মাহমুদ মিঠু ও অশোক কর্মকার দৃশ্যের বুননের মধ্য দিয়ে শিল্পের শেকড়ের সন্ধান করেছেন। অন্যদিকে ফারেহা জেবা দ্বিমাত্রিক তলের সঙ্গে ত্রিমাত্রিকতা যোগ করে আঞ্চলিক চরিত্রের স্থাপনা সৃষ্টির দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। এ মাধ্যমের ক্ষেত্রে ফারেহা জেবাকে জননী বলা যায়। ইয়াসমিন জাহান নূপুরের ‘পুনঃপ্রবর্তিত ড্রেস কোড’ শিরোনামের স্থাপনাটিতে নবদৃশ্যজ বাস্তবতা তৈরির চেষ্টা লক্ষণীয়। তিনি তার শিল্পকর্মের জন্য সম্মান পুরস্কার পেয়েছেন।
যাদের চিত্রে তাদের পুরনো নিজস্ব চিত্রভাষা নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে তারা হলেন, মনসু উল করিম, দিলারা বেগম জলি, রুহুল আমিন, ঢালি আল মামুন। তবে জলিকে নির্দ্বিধায় এদের মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিসচেতন বলে দাবি করা যেতে পারে। একক কাঠামোর পুনরাবৃত্তিকে যে কয়জন শিল্পী ডিসিপ্লিন হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে মাহবুবুর রহমান ও তৈয়বা বেগম লিপির নাম অন্যতম। এ দম্পতি অনেকদিন ধরে সফলতার সঙ্গে স্থাপনা শিল্পের চর্চা করে আসছেন। ‘শান্তিপ্রেমীদের ঘুম’ শিরোনামে মাহবুবুর রহমানের বৃহৎ স্থাপনা হলিউডি কল্পকাহিনী নির্ভর হরর চলচ্চিত্রের কথা মনে করিয়ে দেয়।
ক্যানভাসের সাধারণ বৈশিষ্ট্য দ্বিমাত্রিকতার মধ্যেই বস্তুর উপস্থাপনে ভারতীয় কয়েকজনের উদ্যোগ বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। বর্তমান বিশ্বের সহজ ভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন ভারতের কিশোর কুমার দাস ও অরবিন্দ পাতিল। অপর শিল্পী অঙ্কুর খের ‘সমরূপতার নীতি’ শিরোনামের দুটি চিত্রেই কম্পোজিশনকে প্রধান করে তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশের ফিরোজ মাহমুদের মধ্যস্থতায় যোগদানকারী জাপানি শিল্পী হিরাকি সওয়া, সুয়শি ওজাওয়া ও হিরোহারু মরির কাজে ভিডিও ফটোগ্রাফিই মূল উপাদান, যা থেকে তরুণ শিল্পীদের অনেক কিছু শেখার আছে বলে মনে করছেন শিল্পবোদ্ধারা। এছাড়া ভারতীয় শিল্পী বুজিং রাওয়ের কাজেও আলোকচিত্রই মূল। তবে তার উপস্থাপনের ধরনটি শিল্পে অতিচর্চিত। এখানে একটু নতুনত্বের দরকার ছিল। বর্তমান প্রদর্শনীতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশাল আকারের কয়েকটি বিমূর্ত চিত্র নব-চিত্রভাষার চিত্রকর্ম না হলেও যথেষ্ঠ মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছে। আবদুর রহিম সেলিমের ‘শিরোনামহীন’ তার অন্যতম উদাহরণ। নেপালের শিল্পী সোরগঙ্গা দার্শান্ধারির উপস্থাপনের ধরন অভিনব রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়। দ্বিমাত্রিক তলেই যে নব আঙ্গিক ও ভাবনা চর্চা সম্ভব তা তার শিল্পকর্মে মূর্ত হয়ে ওঠে।
শ্রীলঙ্কার সম্মান পুরস্কার পাওয়া শিল্পী থিয়াসাথ থরাদেনিয়ার ‘আধুনিক যুগের প্রতীক’ নামের কাজটি দৃশ্যজ দিককে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি কনসেপচুয়াল ঘরানার একটি উল্লেখযোগ্য কাজ। স্বল্প পরিসরে ও স্বল্প আয়োজনে ক্যানভাস ও ধাতুপাতের সমন্বয়ে গড়ে তোলা ‘আমরা কোথায় যাবো’ শিরোনামে কোরিয়ার শিল্পী পার্কতে হংয়ের কাজটিকে নব অনুসন্ধানের ফসল বলা যায়। ওমান শিল্পী বুদুর আল-রিয়ামির ‘দহন’ শিরোনামের ভিডিও উপস্থাপনাটি বেশ উপভোগ্য।
বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে একাডেমির বাইরে জ্ঞান ও শিল্পচর্চা প্রায় অনুপস্থিত, সেখানে এ বড় আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তবে তাৎপর্যহীন শিল্পকে পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে এ প্রদর্শনীকে বিশ্বের দরবারে খাটো করে দেখানোর কোনো অবকাশ নেই, যা প্রদর্শনীতে হামেশাই ঘটছে। এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী ক্রমেই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে রূপ নিচ্ছে। তাই কূটনৈতিক প্রভাব ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত হয়ে সত্যিকারের মেধাকে মূল্যায়ন করার আয়োজনে পরিণত করে তুলতে হবে এ প্রদর্শনীকে।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×