somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি বিবর্তনের কাহিনী

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৫:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নাস্তিক নিয়ে লেখার কাজটা খুবই কঠিন। কারন বাস্তবজীবনে প্রকৃত নাস্তিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। একজন মানুষ মনে আনন্দে কোন ধর্মগোষ্ঠীকে গালাগালি করে নিজেকে যদি নাস্তিক হিসাবে পরিচিত করতে চায় - আমি সেখানে তাকে নাস্তিক বলতে দ্বিধান্বিত। কারন একটা বিশেষ ধর্মের নির্দিষ্ট অনুসারীর বাইরে সবাই সেই ধর্মের বিষয়ে অমত করবে - এইটাই স্বাভাবিক। ইন্টারনেটে একটু ঢু মারলেই দেখা যাবে বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠী বিপক্ষ দলকে কিভাবে হেনেস্তা করে। অনেকে সেই ধর্মের পরিচয় নিয়ে ধর্মের সমালোচনা করে ক্যামোফ্লেজ করে। এইটা কোন সমস্যা না। আর এই কারনেই ধর্মকে গালাগালি করে একটা ধর্মের অনুসারীদের উত্যক্ত করা নাস্তিকতার একমাত্র পরিচয় হতে পারে না।

বাস্তব জীবনে নাস্তিক খুঁজে পাওয়া কঠিন- কথা আগেই বলেছি। মুখে মুখে নাস্তিকতার বুলি কপচানো অনেক যুবককে দেখা যায় বিয়ের আসরে ঠিকঠাক হুজুরের সাথে কলেমা পড়ে বা মিলাদের দাওয়াতে ফিনফিনে পাঞ্জাবী পড়ে হাজির হয়। আবার বিয়ের আগের কঠিন নাস্তিককেও দেখেছি বিয়ের পর শুক্রবারে পাঞ্জাবী পড়ে নামাজের জন্যে সকাল থেকেই তৈরী হয়ে বসে থাকে। তাই সুনির্দিষ্ঠ ভাবে নাস্তিকদের আলাদা করা কঠিন। আর নর্থ আমেরিকায় শুধু বিয়ার খাওয়া জায়েজ করার জন্যে নিজেকে নাস্তিক পরিচয় দেওয়া মানুষের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়।

অনেক কথা বলে ফেললাম। এবার আসি আসল কথায়। আমার জীবনে কয়েকজন কঠিন নাস্তিক দেখেছি - তারমধ্যে আমার বাবার বন্ধু ছিলেন একজন। সংগত কারনেই নামটা বলছি না। উনি চার মেয়ে আর দুই পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। চাকুরী খুব একটা বড় করতে না - কিন্তু দেখতাম প্রচুর বই পড়তেন। আর ইসলাম ধর্মের গুরুরহস্য নিয়ে কঠিন আলোচনা করে আসরের সবাইকে চমকে দিতেন। জ্ঞানী নাস্তিক হিসাবে আমি বরাবরই উনাকে শ্রদ্ধা করতাম।

ভদ্রলোকের মেয়েগুলো দেখতে বেশ সুন্দর ছিলো। তাই অল্প বয়সেই ওদের বিয়ে হয়ে যেতে থাকে। উনিও দ্রুত কন্যার দায় থেকে মুক্তি পেয়ে আনন্দিত ছিলেন।

এর মধ্যে ভদ্রলোক একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বদলি হয়ে যান। ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার সুবিধার জন্যে উনি পরিবারকে বড় শহরেই রেখে দেন। একাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা শুরু করেন। একদিন শুনা গেল উনি সেখানে আরেকটা বিয়ে করেছেন। কথাটা আমরা বিশ্বাস করিনি। কিন্তু যেদিন ভদ্রলোকের বড় মেয়ে এসে আব্বার কাছে কেঁদে পড়লো - কারন ওর বিয়ে হয়েছিলো সৈয়দ বাড়ীতে - আর সেই বাড়ীর লোকজন তাকে বলেছে যে যদি ওর বাবার দ্বিতীয় বিয়ের কথা সত্য হয় তাকে তালাক দেওয়া হবে।

ভদ্রলোকের গিন্নীর অনুরোধে আমার বাবা আমাকে সংগী করে ভদ্রলোকের কর্মস্থলে গেলেন। দিনে এটাই মাত্র ট্রেন যেত সেখানে - আর রাতে ফেরার ট্রেন। সুতরাং আমাদের দুইজনের সারাদিন সেখানে থাকতে হবে। আমরা দুপুরের মধ্যেই উনার বাসায় পৌছলাম। উনি বাবাকে দেখে খুবই খুশী - আনন্দে ডাকা শুরু করলেন - ময়না, ময়না, কই গেলাগো ছোট বৌ, দেখো কে এসেছে।

শুনে বাবার মুখে কালো ছায়া নেমে এলো। আর কিছু বলার দরকার ছিলো না। কিন্তু নাস্তিক ভদ্রলোক এরপর যা বললেন তা শুনে আমরা দুইজনই বাকরুদ্ধ।

উনি বলা শুরু করলেন - মানুষ হিসাবে উনি নিজেকে আবিষ্কার করতে পেড়েছেন নতুন ভাবে। তাই এখন উনি আবার ইসলাম অনুসরন করছেন। আর রসুলের সুন্নাত মেনেই ময়নাকে বিয়ে করেছেন। বাবাকে দেখলাম শুধু চুপ করে শুনছেন।

দুপুরের খাবার সময় ময়নাকেও দেখলাম - অল্প বয়সী একটা ফুটফুটে সুন্দর মেয়ে - গরীব বাবা-মা নিম্চয় এইঁ বিয়ে দিয়ে নিজেদের ভারমুক্ত করেছেন।

রাতের ট্রেনে উঠার পর বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম - উনি কেন এমনটা বলছেন? উনি তো নাস্তিক।

বাবার উত্তর ছিলো - মানুষের মন পরিবর্তনশীল - আর পরিবর্তন কখন কিভাবে কোথায় কি প্রেক্ষিতে হবে তা বোধ হয় ইশ্বরও জানেন না।

অনেকদিন পর যখন দেখি বিরাট বিরাট নাস্তিকরা হঠাত জামাতি হয়ে যায় - তখন বাবার কথাগুলো মনে পড়ে - আর তাই অবাক হই না। কারন এরাওতো মানুষ।

(আমার ব্লগে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৫:২৩
২২টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামীলীগে শুধুমাত্র একটি পদ আছে, উহা সভাপতি পদ!

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৪ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১


বাঙ্গালীদের সবচেয়ে বড়, পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দলটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। মানুষ এই দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। ৭০ এর নির্বাচনে এই দলটিকে নিরঙ্কুশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমপি আনারের মৃত্যু এবং মানুষের উষ্মা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:২৯


সম্প্রতি ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর আনোয়ারুল আজীম আনার নামে একজন বাংলাদেশি এমপি নিখোঁজ এবং পরবর্তীতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহের হাড়-মাংস আলাদা করে হাপিত্যেশ করে দেওয়া হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

দোয়া ও ক্রিকেট

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৪


দোয়া যদি আমরাই করি
তোমরা তাইলে করবা কি?
বোর্ডের চেয়ারম্যান, নির্বাচকের
দুইপায়েতে মাখাও ঘি।

খেলা হচ্ছে খেলার জায়গা
দোয়ায় যদি হইত কাম।
সৌদিআরব সব খেলাতে
জিতে দেখাইত তাদের নাম।

শাহাবুদ্দিন শুভ ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!!

লিখেছেন অন্তর্জাল পরিব্রাজক, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:২১



দয়া করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!! X( এরা ছাগলের দলই ছিল, তাই আছে, তাই থাকবে :-B !! এরা যেমন ধারার খেলা খেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বকুল ফুল

লিখেছেন নীল মনি, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৪

বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে থাকে আমার এই ঘর। আমি মাটির ঘরে থাকি। এই ঘরের পেছন দিকটায় মা'য়ের হাতে লাগানো বকুল ফুলের গাছ৷ কী অদ্ভুত স্নিগ্ধতা এই ফুলকে ঘিরে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×