somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কয়রা ভ্রমনের স্মৃতিচারণ

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আর কিছু দিন পর প্রিয় ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে আসতে হবে ঢাকায় চাকুরীর সন্ধানে তাই তিন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম যে ঘুরতে যাবো কোথাও।
কয়রায় আমার বন্ধুর দাদাবাড়ি, ওখানেই যাওয়া ঠিক করলাম।
রাতে খুলনা লঞ্চঘাট থেকে রওনা করলাম...ব্যাগ ঠিক ঠাক মত রেখে চলে গেলাম লঞ্চের ছাদে।
ঠিক করলাম সারা রাত আকাশ দেখে কাটাবো...
মংলা পেরিয়ে লঞ্চ যখন সুন্দরবনের মধ্যে প্রবেশ করছিলো মনে হচ্ছিলো লোকালয় আর সভ্যতাকে রেখে এসেছি অনেক দূরে...
বনের মধ্যে এঁকেবেঁকে চলে গেছে নদী...আমাদের আশেপাশের মানুষজন কাথামুড়ি দিয়ে ঘুমোবার আয়োজন করে ফেললো...
জেগে রইলাম আমরা তিঞ্জন...ক্যাম্পাসে কাটানো দিন গুলি যেন এক লহমায় সামনে চলে এলো...হাসলাম...দুঃখ করলাম...তিরস্কার করলাম...আর এসবের সাক্ষী হয়ে রইলো বনের উপরে উঁকি দেওয়া চাঁদ আর কুয়াশায় ঢেকে থাকা আকাশ...
কেমন বিহ্বল হয়ে গেলাম তিনজন ই...মুখে আর কথা সরছিলোনা...কী রূপ...কী রহস্য চারিপাশে...
নদীর দু’পাশে রাত জাগা প্রানীদের চোখ দেখতে পাচ্ছিলাম...আর খুব খুব আশা করছিলাম মামার ডাক শোনার...বরাবরের মত সেবার ও ভাগ্য সহায় হলোনা।
কখন ঘুমিয়ে পড়লাম টের পাইনি...কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছিলো সমস্ত বিশ্বচরাচর।

ভোরে ঘুম থেকে উঠে একের পর এক গ্রাম পেরিয়ে পৌঁছলাম গন্তব্যে।
মনে হচ্ছিলো চলে এসেছি বিচ্ছিন্ন কোনো জনপদে...কিছু আদিবাসীও দেখলাম।

দাদাবাড়ী দেখে মুগ্ধ হলাম...তেল লবন এরকম কিছু জিনিস বাদে বেশিরবাগ ই নিজেদের জমিতে ফলায় তারা।
জমিতে ধান পুকুরে মাছ, আছে বায়ো গ্যাস প্লান্ট রান্নার জন্য...আছে সৌর বিদ্যুত...
দুপুরে ভাত খেয়ে গাছ থেকে পান ছিড়ে খেলাম...একটু দূরে যেয়ে সিগারেট(খুলনা থেকে নিয়ে যাওয়া)।

রাতে আমরা যেখানে ছিলাম সেটার চারপাশ ঘিরে আছে হাজ্র রকম গাছ...মূল বাড়ি থেকে কিছু দূরে...গা ছমছম করা জায়গা।
অনেক রাতে ঘরের বাইরে এসে যেন ধাক্কা খেলাম...
চাঁদ এত সুন্দর দেখিনি কখনো...
আর হাজার রকম মৃদু শব্দে পুরো পরিবেশটা অপার্থিব মনে হচ্ছিলো।

পরদিন গেলাম পার্শ্ববর্তী সুন্দরবনে।
বনের দু’পাশ দিয়ে নদী চলে যেয়ে এপাড় থেকে ওটাকে অর্ধবৃত্তাকার মনে হচ্ছিলো।
গ্রামের কয়েকজন দস্যি ছেলে নৌকায় করে নিয়ে গেলো বনের কাছে।
নদী থেকে সরু ফিতার মত খাল পেরিয়ে বনে ভিতরে চলে এলাম আমরা।
নৌকা থেকে নামতেই হাটু পর্যন্ত কাদায় দেবে গেলো।
গাছ থেকে শুকনো ডাল ভেঙ্গে নিলাম ব্যালান্স রাখবার জন্য।
হাঁটা কি যায় শ্বাসমূলের জন্য!
দারুন রোমাঞ্চ হচ্ছিলো...
হরিনের পায়ের ছাপ দেখলাম...নানান পাখির কিচিরমিচির...এর ই মাঝে চিনলাম এতদিন ধরে শুনে আসা বিভিন্ন গাছ।
এখানে বাঘমামা কে নিয়ে দারুন সব গল্প প্রচারিত আছে।
গ্রামের ছেলেগুলি আমাদেরকে ভয় দেখাতে লাগলো।
আমরাও কপট ভয়ের অভিনয় করলাম। ছবি তুললাম সবার।
কোন এক ফরেস্ট অফিসারের রূপসী ভাগ্নি এসে কি কি করেছিলো তাও শুনলাম...কয়েক ঘন্টা যেন কেটে গেলো রুদ্ধশাসে।

বন ছেড়ে বাইরে এলাম...দু’টি নৌকা ছিলো...প্রতিযোগিতা হলো কে আগে ওপার পৌঁছায়।
পাড়ের কাছে এসে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লাম...

এখানে বিঘার পর বিঘা জমিতে শুধুই ঘের। বিকেলে হাঁটতে বেরিয়ে মনে হলো দীগন্ত রেখায় চলে এসেছি।এত এত ফাঁকা জায়গা, জনমানুষের চিহ্নমাত্র নেই। রাতে হাটে হেলাম, বাতাসা খেলাম, পাতার বিড়ি ফুঁকলাম। বিশাল এক দীঘির বেদীতে শুয়ে রাতের তার দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিলো কি হয় যদি আর ফিরে না যাই শহুরে ব্যাস্ততায়, কৃত্তিমতায়...এখানে এই প্রকৃ্তির কোলেই কেটে যাক বাকীটা জীবন...

ফিরে আসার দিন খুব টানছিলো গ্রামের সব কিছু...আর সব কিছু ছাড়িয়ে সুন্দরবন যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছিলো।
আহ কী দিন ছিলো সেসব!


সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:০৩
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×