somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ধর্মচিন্তা

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাসা থেকে কোনদিন ধর্মপালনের জন্য জোরাজুরি করা হয় নাই। বাবাকে দেখতাম রোজার সময় খুব নামাজ পড়তে আবার রোজা শেষে ঢিলেমি শুরু করতে। আদতে বাসার সবাই ধর্মবিশ্বাসী ছিল। তবে ধর্ম বিষয়ে আমাদের কারো বাড়াবাড়ি ছিল না। উদাহরন দেয়া যায়, আমার নানা হজ্জে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তার অতি কষ্টে জমানো সম্পদের সামান্য একটু খরচ করেও তিনি হজ্জে যেতে আগ্রহী ছিলেন না। সৌদিদের হজ্জ্ব ব্যবসার প্রতি তার এই ঘৃনা মোটামুটিভাবে ধর্মবিদ্রোহের সমান।

ক্লাস সিক্সের দিকে আমি নামাজ পড়া শুরু করি। বাসায় মাসিক মদীনা থেকে শুরু করে বেহেশতি জেওর- প্রচলিত সব ধর্মীয় বইই ছিল। আবহাওয়া বেশ অনুকূল ছিল। কিন্তু তীর ছেড়ে সামান্য দূরে গিয়েই তরী ডুবে গেল। বেহেশতের তীরে আর আমি পৌছতে পারলাম না।

তরী ডুবা শুরু করার কোন একটা একক কারন নাই , সুতরাং একটা নির্দিষ্ট দিন থেকেই অবিশ্বাসের শুরু না। সেভেনে থাকার সময়ও নামাজ পড়ি নিয়মিত। মসজিদে ঈদের জন্য কেনা নতুন জুতা হারিয়েও আসি।


আমার ধারনা পিউবার্টি শুরুর সময় থেকেই আমার সন্দেহের সূত্রপাত।

প্রচুর হাবিজাবি বই পড়ি। নাইনে থাকতেই সেবা ছেড়ে দিয়ে ক্লাসিকে ঝুকে পড়ছি। রবি-শরৎ-বঙ্কিম শেষ। পড়াশুনার পরিধি বাড়ে সেই সাথে বাড়ে অবিশ্বাস। ছোট ছোট প্রশ্ন আসে যার উত্তর পাই না। হুজুরদের চরিত্র দেখে ইসলাম সেরা জীবন ব্যবস্থা সেটা মানাও কষ্টকর হয়ে পড়ে।

সত্যিকার অর্থে বিজ্ঞান-যুক্তি-গনিত এই সম্পর্কে আমাকে আগ্রহী করে তুলেন নটরডেমের নিমাই স্যার। তার স্পর্শে এসে আমি পুরা অবিশ্বাসের জগতে চলে আসি।

এরপর বুয়েটে এসে নাস্তিকতা ফলাই। ক্লাসে হযরতকে নিয়ে একটা জোকস বলায় সবাই মিলে ঠিক করে আমাকে ক্যাফের সামনে পিটানো হবে। বড় ভাইয়েরা আমার ক্লাসমেটকে সতর্ক করে দেয় যেন আমার সাথে না মিশে। তাবলীগের হুজুরদের সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করি। দুই হুজুরকে সমকামি বলে সন্দেহ করি - সবাইকে সেটার জানান দেই।

একটা পর্যায়ে এসে আমি অনুভব করি- অনেক হইছে। মানুষকে তাক্ত করে লাভ নাই। এরচে নিজেই ধর্ম প্রচারের কথা ভাবি। দিনের পর দিন, ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করি প্ল্যান করে। ধর্মের মূল দর্শনটা ধরার চেষ্টা করি। বাইবেল, কোরআন সিরিয়াসলি পড়া শুরু করি।

একসময় ধর্মপ্রচারের সিদ্ধান্তও বাদ দেই। অবিশ্বাসের জগতে আমি ইতঃস্তত ঘুরি। কোন উদ্দেশ্য খুজে পাই না নাস্তিকতার বা ধর্মবিশ্বাসের। দুইটাই সমান মনে হয়। হুজরদের সুখী মুখ দেখে হিংসা হয়। বিশ্বাস ঠকায় বটে তবে বিনিময়ে সে অনেক ভালো বস্তু দেয়।

আমি এরপর বিশ্বাসের জগতে ফিরে আসার চেষ্টা করি। কয়েকবার চেষ্টা করেছি। ফিরে আসতে পারি না। ভাবলাম নামাজ পড়া শুরু করি। একসময় বিশ্বাস চলে আসবে... কাজ হয় নাই।
আমার সমস্যা হল জাকির নায়েককে দেখলে হাসি আসে, হুজুরদের অতি মাত্রায় স্বল্পজ্ঞানী মনে হয়- কাউকে পাই না যে আমাকে পাপ থেকে ফিরিয়ে স্বর্গে নিয়ে যাবে ।

আমি একা, আমার বিশ্বাসহীনতার জগতে। "কিছু নাই" - এরচেয়ে বড় সত্য আমি খুজে পাই নাই।


=====================================
Click This Link

এই পোষ্টের প্রেক্ষিতে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০০৯ সকাল ১১:৪২
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×