somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিরোধী দলের থেকে ডেপুটি স্পিকার হইলে কি লাভ হইবে?

২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. অসার জাপানী ভদ্রতা

জাপানে যদি আপনি থাকতে আসেন তবে প্রথম ছয়মাস বা বড়জোর একবছর আপনার দুর্দান্ত কাটবে। আপনার মনে হবে যেন স্বর্গে বাস করছেন, বিশেষ করে আশপাশের জাপানীদের, যাদের সাথে আপনার পরিচয় হবে, তাদের মধুর ব্যবহারে আপনি মাঝেমাঝে নিজেকে বড় রকমের কোন তারকা বলে ভুলও করে ফেলতে পারেন। জাপানী যেকোন সিস্টেমে এটাকে আমরা বলতে পারি "হানিমূন পিরিয়ড", এসময়টায় আপনি যাই করুন, বিনিময়ে স্মিত হাসি আর গালভরা কিছু প্রশংসা পাবেনই পাবেন। এরমধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্য হবেন আপনি যে ব্যাপারটায় সেটা হলো, প্রতি পদে পদে কারণেই হোক বা অকারণেই হোক, আপনাকে এরা "সুমিমাসেন" বলতে বলতে কান ঝালাপালা করে ফেলবে। "সুমিমাসেন" মানে হলো, "দুঃখিত"। আপনি যদি একটু বোকাসোকা হন, তাহলে ক'দিনের মধ্যে আপনার ধারনা হয়ে যেতে পারে যে, আপনি কোন দোষই করতে পারেননা, যত দোষ সব আশপাশের এই জাপানীরাই করছে।

কতটা অকারণে এরা "সুমিমাসেন" বলতে পারে, সেটা আমাদের বাঙালী বুদ্ধিতে কল্পনাও করা যায়না। যেমন ধরুন, আপনাকে নিয়ে আগামী উইকএন্ডে আপনার কোন জাপানীজ বন্ধু তার গাড়ীতে করে ঘুরতে যাবে বলে ঠিক করলো। শনিবার সকালে যথাসময়ে আপনার বাসার সামনে এসে সে অপেক্ষায় আছে, আর আপনি শেষ মুহূর্তের চাপে মিনিট পাঁচেক বা দশেক দেরী করে ফেললেন। সাধারণত এক্ষেত্রে জাপানী বন্ধুর বিরক্ত হবার কথা, কিন্তু আপনি যখন গাড়ীর সামনে এসে হন্তদন্ত ভাব দেখিয়ে প্রমাণ করতে চাইবেন যে আপনি ঢিলেমী করে দেরী করেননি, তখনই দেখবেন ব্যাটা বত্রিশ দাত বিকষিত করে বিনয়ে গলতে গলতে বলছে, "সুমিমাসেন, স্কেজ্যুলটা বেশী সকাল সকাল করে ফেলেছি, আপনার নিশ্চয়ই ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলো, সুমিমাসেন।" বাক্যের শুরুতে একটা সুমিমাসেন, শেষে আরেকটা সুমিমাসেন -- এই হলো অবস্থা। তবে বাস্তবতা টের পাবেন আরেকটু পরে, হানিমুন পিরিয়ডটা কেটে গেলে। তখন একেকটা জাপানী সিস্টেম যেন একেকটা "খাইস্টা জেলখানা", কাজের পাহাড় -- এমনি এমনি তো আর এই জাতি এত দ্রুত এরকম উন্নতি করে ফেলেনি!

আমার নিজের বেলায়ও এই জাপানীজ "হানিমুন পিরিয়ড"টা কেটে যাওয়ার পর একটা রূঢ় সত্য আবিস্কার করলাম। আমি অবাক বিস্ময়ে দেখলাম, এরা আসলে "সুমিমাসেন" টার্মটা তখনই ব্যবহার করে যখন এটার কোন প্রয়োজনই নাই! শুধু ভদ্রতা করে ক্ষমা চাওয়ার ক্ষেত্রে, যেখানে কেউ এ্যাপোলজী এক্সপেক্ট করছেনা, সেখানেই এই শব্দের ব্যবহার! অথচ, যখন আসলেই ক্ষমাপ্রার্থনা প্রয়োজন হয়, যখন কোন একটা বিষয়ে আপনি আসলেই জাপানীদেরকে অভিযুক্ত করার গ্রাউন্ডে চলে যাবেন, তখন দেখবেন যে সে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজের পক্ষে যুক্তি দিয়ে যাবে, বা ঘাড় ত্যাড়া করে চুপ করে থাকবে, কিন্তু "সুমিমাসেন"টি আর তার মুখ দিয়ে বের হবেনা, কাভি নেহি!

উপসংহার টানা যায়, ব্যবহারিক দিক দিয়ে জাপানী "সুমিমাসেন" শব্দটা যার মানে হয় "আমি দুঃখিত" বা "আমি ক্ষমাপ্রার্থী", সেটা আসলে অপ্রয়োজনীয় একটা শব্দ, এটা ডিকশনারীতে না থাকলেও হয়।



২. আমাদের রাজনৈতিক ন্যাকামো

আমাদের দেশে নতুন সরকার এলো, প্রায় তিন সপ্তাহ হতে চলল। নতুন সরকার আসলে মানুষের মধ্যে আলাদা একটা উত্তেজনা আসে, সবাই আশা করে এবার কিছু একটা হবে(!)। তাই শুরু থেকেই সরকারের কোন পদক্ষেপটা ভালো হলো, আর কোন পদক্ষেপটা সরকারকে ডোবাবে -- এসব নিয়েই সবখানে টেবিল গরম হয়। প্রতি সপ্তাহেই, সত্যি বলতে কি, প্রতিদিনই দেখতে পাচ্ছি সরকারের কর্মকান্ড নিয়ে নতুন নতুন ইভ্যালুয়েশন, বিশ্লেষণ। কোন পয়েন্টে সরকারকে পাশ মার্ক দেয়া যায়, কোন পয়েন্টে সরকারের স্কোর একটু বাড়লো, কোনটায় একটু কমলো -- এসব নিয়ে আলোচনা চলছে তো চলছেই।

একারণেই হয়তো এ মৌসুমটায় পত্রিকার কলামিস্টদের কলমের বেগ আর কলামের দৈর্ঘ্য পাল্লা দিয়ে বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছেনা। দেশে দৈনিকপত্রিকার অভাব নেই, কলামিস্টের অভাব তো আরো নেই! তার ওপর এবার আবার এসে জুটেছে একগাদা প্রাইভেট চ্যানেল! এগুলোর তো এখন এক এবং অদ্বিতীয় কাজ হলো কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চেহারার ব্যক্তিকে এনে সুদৃশ্য এক ড্রয়িংরূমে বসিয়ে দেয়া, টেবিলে কফিকাপ, আর মাইক চালু -- চালাও আলোচনা অনুষ্ঠান। অনেক আগে বিটিভিতে সপ্তায় দুয়েকদিন রাত দশটার পর আলোচনা অনুষ্ঠান হতো -- তাতেই উন্মাদ সম্পাদক বিরক্ত হয়ে এর সুশীল নাম রেখেছিলেন "ভালোচনা" অনুষ্ঠান, জানিনা এখন বেচারা কিভাবে বেঁচে আছেন।

সমস্যাটা হলো সরকারের সমালোচনা আর প্রসংশসায় কোন বিষয়গুলো আসছে? সেগুলো দেখলে আমার জাপানী "সুমিমাসেন"র কথা মনে পড়ে যায়।
যেমন, বিএনপিপন্থী কলামিস্ট বুদ্ধিজীবিরা, যারা সরকারের দোষ ধরবে সেটাই স্বাভাবিক, তারা শুরু করলো দশ টাকায় চাল খাওয়ার আবদার নিয়ে। এটা কি এখন আর বাস্তবে সম্ভব? জবরজং ফাজলামী। তারচেয়ে বাবা তোদের আমলের সিন্ডিকেটেড ব্যবসায়ীগুলার নাম প্রকাশ করে দে, তাহলেও জনগন একটু খেয়ে পরে বাঁচতে পারবে।
তারপর তারা আন্দোলন করছে ইয়াজুদ্দিনকে ইমপিচ করানো নিয়ে, সংসদে নাকি ওয়াকআউটও করেছে। এটা তে এখন কি আসে যায়? আপনার কিছু আসে যায়, না হাসিনার, না খালেদার? এরপর দেখা যাচ্ছে সংসদে প্রথম সারিতে বসার আবদার নিয়ে মাঠ গরম হচ্ছে, বিরোধীদল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে। বলি -- এইসব বালছালে কার কি উপকার হবে? এগুলো হলেই কি, না হলেই কি?

পোস্টের শিরোনামের প্রসঙ্গে বলি, বিরোধীদলের স্পিকার হইলে জাতির কি লাভ? আমার তো মনে হয় ৩০ সদস্যের এই বিরোধী দল ছয়মাসের মধ্যেই জব্বর কোন ছুতোয় সংসদ ত্যাগ করবে, আর সাথে সাথে সাংসদের সুবিধাগুলো ষোলাআনা নেবে, গাড়ী আমদানী করবে, ন্যামফ্ল্যাটও ছাড়বেনা। আমজনতার কি লাভ হবে?

অথচ আওয়ামী লীগ সরকার কি অলরেডী মাঠ গরম করার মতো কাজ শুরু করে দেয়নি? আমার মতো নাদান, যে কিনা নিয়মিত খবরের কাগজও পড়েনা, সেও তো লিস্ট আপ করলে সেই সংখ্যা দশ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে!
একটু লিস্ট আপ করি:
১. চাঁদাবাজদের উৎরামো শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে, গদফাদাররাও ব্যাক করছেন
২. ইউনিভার্সিটিগুলোতে ছাত্রলীগ কি করা বাদ রাখছে?
৩. দাম কমানোর নামে সিন্ডিকেটিংয়ের বিরুদ্ধে কিছুই করা হচ্ছেনা, উল্টে সারের ভর্তুকি নিয়ে অনেক রকম অভিযোগ আসছে (একটা হলো সিন্ডিকেটরদেরই পকেট ভারী করার, আরেকটা হলো কমদামী সার ডিলাররা সার কোম্পানীকে আবার বেচে দিচ্ছে)
৪. বিএনপি'র নেতা-কর্মীদের উপর অত্যাচার, হত্যা
৫. উপজেলা নির্বাচনের যাচ্ছেতাই অবস্থা
৬. দাগী মন্ত্রী-সচিবদের জেলমুক্তির মচ্ছব
৭. প্রশাসনের দলীয়করণের আয়োজন

নাহ, দশটা করতে পারছিনা, হয়ত দুচারজন কমেন্ট করলেই দশ হয়ে যাবে। অথচ আমাদের কলামিস্ট/আলোচক/পাবলিকের ইন্টারেস্ট সম্পূর্ণ অন্য জায়গায়।

আওয়ামী লীগপন্থী কলামিস্ট আলোচকরা আবার এককাঠি বাড়া। তারা গত তিনসপ্তায় কিছু দেখতে পাচ্ছেননা চোখে, এখন হঠাৎ করে বিরোধী দলকে ডেপুটি স্পিকার পদ না দেয়ায় সরকারকে নসিহৎ করা শুরু করেছেন, তাদের বক্তব্যে এমন একটা অনুভবের তৈরী হয় যে, সরকার আসার পর এই প্রথম তারা একটা ফাউল করে বসলো!

এসব পড়লে, দেখলে মাথার আশপাশে খালি একটা এ্যানিমেশন ঘোরাফেরা করে, এক কাঁচুমাঁচু চেহারার জাপানী ভয়াবহ বেগে মাথা উপর নিচে দোলাচ্ছে আর "সুমিমাসেন", "সুমিমাসেন" করে যাচ্ছে।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:০২
২৭টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×