somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“ জীবের সেবা ভিন্ন ধর্ম আর কিছূ নয়। তসবিহ জায়নামাজ( আসন) ও আলখেল্লায় ধর্ম নাই।” শেখ সাদীর বিখ্যাত উক্তি

২৩ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধর্মীয় ব্যাপারে লেখতে ভয় লাগে। তার পরও আমার বিবেক বলে তুমি যা জানো তা অপরকে জানানো উচিৎ। তাই বিবেকের তাড়নায় এরকম সাহস করলাম। গঠন মূলক সমালোচনা সাদরে গৃহীত হবে ইনশআল্লাহ।

আমাদের এই উপমহাদেশে এক শ্রেনীর ধার্মীক আছে যাদের যুক্তির চেয়ে অন্ধ বিশ্বাসের প্রতি মোহ বেশি। এই মোহাচ্ছন্ন ব্যক্তিরা ধর্মের মূল স্পিরিট কে বাদ দিয়ে বাহ্যিক কিছু আচার আচরণ নিয়ে সদা ব্যস্ত থাকে।আপনি যদি তাদেরকে ধর্ম বিয়য়ে কিছু বলতে চান তবে তারা আগে দেখবে আপনার দাড়ি আছে নাকি , তার পর দেখবে আপনি আলখেল্লা পড়েছেন কিনা ইত্যাদি। যদি এগুলি না থাকে তবে সে আপনাকে উপহাসের সাথে বিবেচনা করবে আর মনে মনে ভাবে এই ব্যাটা আর ইসলামের কি জানে? এদের কাছে বাহ্যিক বেশভূষাই মুখ্য বিষয়।

আমি বিশ্বধর্ম শিক্ষার এক শিক্ষার্থী মাত্র। এ পর্যন্ত ধর্ম বিষয়ে যতটুকু পড়াশুনা করেছি তাতে আমি বুঝতে পেরেছি যে ধর্মের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানব সেবা। মানুষের কল্যানের জন্যই ধর্মের আবির্ভাব। এই নিবন্ধে আমি শুধু ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলার চেষ্টা করব। অন্যন্য ধর্ম সম্পর্কেও পরে আলোচনা করবো ইনশআল্লাহ।

ইসলাম অর্থ শান্তি। পৃথিবীতে এই শান্তি প্রতিষ্ঠা কল্পে বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। মানুষ যখন অধপতনের সর্বোনিম্ন পর্যায়ে উপনিত হয়েছে তখই নবী রাসূলের আগমন ঘটেছে। এতে কোন কোন নবী- রাসূল সফল হয়েছেন আর যেসব জাতি আল্লাহ পথে আসেনি তারা তাদের পাপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ধ্বংস হয়েছে।

হযরাত ইসা (আ) এর যুগ শেষ হওয়ার বহুকাল পর্যন্ত পৃথিবীতে কোন নবীর আগমন ঘটেনি। এতে মানুষ ধীরে ধীরে ইসা (আ) এর শিক্ষা ভূলে যেয়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়। আরব জাতি চরম অমানবিক কাজ কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় হযরত মুহাম্মদ (সা) এর আর্বিভাব ঘটে। মহানবী (সা) এর উপর আল্লাহ যে প্রথম ওহী নাজীল করেন তা হলো, ‘ পড়’। এই মহান বানীর মাধ্যমে শুরু হয় সমাজ পরিবর্তনের ধারা। এর পর আল্লাহ সেই পাপে নিমজ্জিত জাতিকে আলোর পথে আনতে প্রথম দিকে নাজিল করেন তাওহীদ,আখেরাত, সম্পর্কিত আয়াত। মানুষের মনে আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক ধারনা সুষ্টি করাই মহনবীর (স) এর প্রথম দিকের মিশন ছিল। আস্তে আস্তে যখন মানুষ ইসলামের মূল ধারণা লাভ করা শুরু করলো তখন নবী (স) নজর দিলেন ছোট ছোট পাপ বিষয়ে সতর্ক করা। এভাবে ক্রমে ক্রমে একটা জাতিকে সঠিক পথে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন হযরাত মুহাম্মদ (সা).

এখানে পুরো ইতিহাস বা রেফারেন্স দেওয়া সমীচিন মনে করলাম না। আমি শুধু আমার ধারণাটা ব্যক্ত করলাম।
এই ক্রম বিবর্তনের ইতিহাস পড়ে আমি একটা ব্যপার লক্ষ করলাম যে কোন কিছু (মদ, সুদ,জুয়া ইত্যাদি) আল্লাহ হঠাৎ করে নিষিদ্ধ করেননি । ক্রমে ক্রমে নিষিদ্ধ করছেন। যেমন মদ নিষিদ্ধি হওয়ার ক্রম ধারাটা হলো ১. প্রথমে মদের ভালো মন্দ দিকটা মানুষকে অবহিত করা, আল্লাহ মন্তব্য করলেন যে মদে ভালোর চেয়ে মন্দ দিক বেশি।
২. দ্বিতীয় ধাপে আল্লাহ বললেন যে তোমরা মদপান করে নামাজের ধারে কাছে যেওনা। কারণ হিসেবে বলা হলো মদ পান অবস্থায় মানুষ মাতল হয়ে ভূল কুরআন তেলাওয়াত করতে পারে।
৩ .তৃতীয় ধাপে আল্লাহ পুরোপুরি মদ নিষিদ্ধ করলেন। ততো দিনে মানুষ ইসলামের অন্যান্য আকর্ষনীয় জিনিষ সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। আল্লাহ বুঝতে পেরেছিলেন যে এই অবস্থায় মদ নিষিদ্ধ করলে মানুষ মেনে নেবে। তাই ঘটলো। সবাই মদ ছেড়ে দিলেন। সে সময় মদ একটা কমন বস্তু ছিল পান করার। এখন যেমন অমুসলিম দেশে চলে।

এর পর দেখা যায় যে নামাজের ব্যপারটাও হঠাৎ করে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ হয়নি। নবুওতের কিছুদিন পর নামজ ফরজ হয়।

লেখা দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে লেখাটা শুরু করেছিরাম সে দিকে এবার মন দেওয়া যাক। আমি কুরআন বহুবার অধ্যয়ন করে দেখেছিে যে সেখানে বাহ্যিক পোশাক- পরিচ্ছদ সম্পর্কে কদাচিৎ বলা আছে। পোষাকের মূল দুটি লক্ষ কুরআন থেকে বোঝা যায়। একটি হলো লজ্জাস্থান আবৃতকরণ এবং আরেকটি হলো সৌন্দর্য্য। সূরা আরাফে পোষাক সম্পর্কিত আয়াতটি হলো“
“O Children of Adam! Indeed We have bestowed upon you from on high ( the knowledge of making) garments to cover your nakedness, and as a think of beauty, ...( 7.26, From Md. Asad)

আমি বির্তক এড়াতে বাংলাদশেী অনুবাদ বাদ দিয়ে শ্রদ্ধেয় মুহাম্মদ আসাদ ( লিওপোল্ড লুইস) এর অনূদিত কুরআন থেকে উদ্ধৃতি দিলাম।

এখানে পাঠক স্পষ্ট লক্ষ করবেন যে পোষাকের দুটি দিককেই আল্লাহ তুলে ধরেছেন। আমরা যদি আমাদের সংস্কৃতি পরিমন্ডলের মধ্যকার এমন পোষাক পরিধান করি যাতে কুরাআনের বর্ণিত দুটি শর্তকে পূরণ করে তবে ত আমাদের মোল্লা মওলানাদের কিছু বলার থাকে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের বেশির ভাগ মওলানা নামধারীরা কুরআনের ধারের কাছেও যান না। তারা কিছু ফাযায়েলে আমল বা মুরুব্বিদের নিকট থেকে কিছু শোনা কথার উপর ভিত্তি করে পোষাক সম্পর্কে আমাদের মনে অহেতুক ভীতির সৃষ্টি করেন। তাদের মতে জিন্স প্যান্ট বা গেঞ্জি অনৈসলামিক। আর কেউ কেউ সরাসরি অনৈসলামিক না বললেও মাকরুহ বলতে দ্বিধা করেণ না।

এবার বলি দাড়ির কথা। কুরআনে কোথাও একটি বারের জন্যও দাড়ি রাখাতো দূরে থাক তার গুনগানও করা হয় নি। যেই বিষয় নিয়ে আল্লাহ কোন আয়াত নাজিলের প্রয়োজন মনে করলেন না , আমাদের সমাজের হাজারো সমস্যার কথা বাদ দিয়ে আমরা সেরকম একটি বিষয় নিয়ে তর্কে লিপ্ত হয়ে পড়লাম।

আমার কাছে ইসলাম সম্পর্কে অধ্যায়নের পর মনে হয়েছে যে দাড়ি টুপি বা আলখেল্লার বাস্তবায়নের জন্য ইসলামের আগমন ঘটেনি। মানুষের মানবিক বৈশিষ্ঠাবলীর উৎর্কষ সাধনের মহান ব্রত নিয়ে ইসলামের আগমন। এই ব্রত পালন কালে যার ইচ্ছে দাড়ি রাখবে বা ছোট করবে আর যার ইচ্ছে সে রাখবে না। যার ইচ্ছে সে পাঞ্জাবী পরবে আর যার জিন্স -গেঞ্জি পড়তে ইচ্ছে সে তা পরবে। এতা আমাদের সময় নষ্ট করা উচিৎ না। (নারীদের পোষাকের ব্যাপারে সূরা নিছা সহ আরো কয়েকটি স্থানে র্বননা আছে। ( ইউসূফ আল কারজাভীর ‘ইসলামের হালাল হারামের বিধান’ বইতে বিস্তারিত বর্ননা আছে)

বায়তুল মোকরমে যে কান্ডটা গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ ঘটছে এতে আমাদের সরকার যেমন দায়ী তেমনি আমাদের কিছু অল্প জ্ঞানী মুসল্লীরাও দায়ী।
সরকারের উচিৎ ছিল ভারপ্রাপ্ত খতিবকে নিয়োগ দেওয়া । যার পেছনে সব দলের লোকই অনেক দিন যাবৎ নামাজ আদায় করে আসছে কোন রূপ বির্তক ছাড়াই। আর মুসল্লীদের উচিৎ ছিল পবিত্র স্থানের মর্যাদা সমুন্নিত রেখে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ জানানো এবং পরবর্তীতে আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন করা।





সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৩৬
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×