somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোল গোল বাংলা এবং আমার দু' পয়সা

২৩ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( রাগিব ভাই এর বাড়িতে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হয়েছে , তাই এই লেখার অবতারনা এবং আপনাদের বিরক্তি উৎপাদনে বিপুল সম্ভাবনা)

অভিনন্দন সকল বাঙালী উদ্যোগ। গোল গোল ( গুগুল ) বাংলায় সত্যিকারের সহজবোধ্য বাংলাকে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে । আমরা সকলেই যে যতটুকু যখন যেখানে পেরেছি সাহায্য করার চেষ্টা করেছি , এখনও করে যাচ্ছি । আমাদের ভাষাবিদেরা গণক যন্ত্রটিকে আত্মঃকরণ করতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ জাগে , তাই হয়ত বাংলার আত্মা আন্তর্জালে " ঘুরে না বেড়িয়ে " -- ভাটাকতে হয় । ( নেহায়েত অনুমান , পিছু গল্প বিজ্ঞজনেরা বর্ননা করবেন আশা করি)

যখন " পৃথিবীর প্রতিটা গণক যন্ত্রের জন্মের পিছনে অন্তত একজন বাঙালীর হাত আছে" শুনে গর্ব করে আসছি , তখন গুগুলে আমাদের সংখ্যালঘিষ্টতা পীড়া দেয় বইকি ।

সমস্যা জানাতে শ্রদ্ধেয় রাগিব ভাই প্রিয় সামহোয়ার ইন ব্লগের বন্ধুদের বেছে নিয়েছেন বলে ভালো যেমন লাগছে , তেমন শংকাও অনুভব করছি । অহেতুক যে নয় সে ইতমধ্যে কয়েকটি মন্তব্য পড়ে বোঝাও যাচ্ছে । ব্যাপারটা হচ্ছে , এফ এম রেডিও এর " আর যে " দের মতন , এই ব্লগেও কিন্তু আমরা খুব নিয়ম মেনে কিংবা মান বজায় রেখে বাংলা চর্চা করি না ।( করা উচিত বলেও খুব একটা মনে করি না , প্রাণ খুলে লিখতে পারাটা ব্লগের আসল মজা) ইংরেজী অক্ষরে কোন লেখা এলে "মাইনাস " দিয়ে ভাসিয়ে দেই কিন্তু এটা বলি না যে মাইনাস এর বদলে প্রশংসা / নিন্দা , বাটনের বদলে " বোতাম " এলো না কেন । অর্থাৎ আমরা নিজেরাই প্রচুর ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি । আপত্তি থাকে না যখন বাংলায় কোন সহজে ব্যবহারযোগ্য পরিভাষা না থাকে । আবার এও মনে করি না যে অক্সিজেনের বাংলা " বায়ুজান " না "অম্লযান" -- কি যেন ভয়ংকর কিছু বানিয়ে বাংলা প্রেম দেখাতে হবে । আমার মতে যাকে আমরা " টেকনিকাল টার্ম" বলি সে সব না বদলানোই উচিত । টুল বার কে বংশ দন্ড বানাবার দরকার নেই ।

কিন্তু , এই আত্মীকরন ব্যক্তিগত " আরাম" থেকে হলে আমার আপত্তি আছে । ক্ষুদে গানরাজ দেখতে গিয়ে দুই বিচারক , বিশেষ করে সামিনা যখন বাংলা শব্দ মনে করতে না পেরে ইংরেজিতে প্রশংসা করতে শুরু করেন তখন আমি বাংলার দৈন্য দেখি না , নিজেদের অলসতার ভয়াবহ রূপ দেখে বড্ড কষ্ট পাই । ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলি , ছোটবেলায় " হয় সম্পূর্ণ বাংলা নয়ত সম্পূর্ণ ইংরেজিতে " কথা বলা খেলতাম । জিতে যাওয়া আমার জন্য ছিলো পানির মতন সহজ । কিন্তু এখন এই আমিই মাঝে মাঝে ইতস্তত করি , বানান নিয়ে দু'বার ভাবি - একি বাংলা ভাষার সমস্যা ? নাকি আমার নিজের ? ( গত ১৩ বছর ধরে বিদ্যালয়ে , কর্মক্ষেত্রে ইংরেজি চর্চার ফল হলো এই )

আমার কষ্টটা এখানেই । আমরা নিজেরাই বাংলার সুন্দর সুন্দর শব্দ বলা বাদ দিয়ে ইংরেজি , হিন্দী নিয়ে মেতে আছি । ফলাফল? অতি প্রচলিত শব্দও এখন কানে " বেখাপ্পা " লাগে । আগে নাটক , বই , গান , সিনেমাতে মান সম্মত বাংলা ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা ছিলো , এখন "যেমন খুশি তেমন সাজো" এর হাতে পড়ে তাও গেছে । এই জন্যই " শুভ ফার্স্ট বৈশাখ " শুনতে হয় জনপ্রিয় গায়িকার মুখে ।

অপর দিকে মনে করুন মধুকবির কথা । তিনি " চিরুনী মানে কি?"র উত্তর দিয়েছিলেন " চিরুনী মানে ফাড়ুনী " । নতুন একটা শব্দই আবিষ্কার করে বসলেন । ভাবুন রবীন্দ্রনাথের কথা -- কত নতুন নতুন আবিষ্কার , শব্দ খেলা , ভাষা নিয়ে পরীক্ষা আছে তার ভান্ডারে । এখন মনে করতে পারছি না কিন্তু আমি জানি বাংলায় এমন অনেক অনেক লেখক , কবি , ভাষাবিদ , গবেষক আছেন যারা বাংলাকে নতুন করে জন্ম দিয়েছেন । অন্য ভাষা থেকে শব্দ গ্রহন করার পাশাপাশি নিজেদের শব্দ জন্ম দেওয়াটাও নিশ্চয় জরুরী , খুব আনন্দের ব্যাপার । আমি জানি আমরা পারবো , পারি । এই ব্লগেই অনেক মজার মজার সুন্দর শব্দ তৈরী হয়েছে ।

তাই, আমার অনুরোধ , ব্লগের বাংলা কিংবা মুখের ভাষাকে মানদন্ড হিসেবে নেবেন না । ১০০০ লোকের মুখের ভাষা এক নয় । তাদের পাখা মেলে হেসে খেলে বেড়াতে দিন ব্লগীয় কিংবা নাটকীয় আকাশে । কিন্তু যখন ঐকমত্যের প্রশ্ন আসবে , তখন শ্রুতিমধুর লেখ্য বাংলার রুপটিকে জায়গা করে দিন আন্তর্জালে । ( টুলবারকে সরঞ্জাম দন্ড কিংবা যন্ত্র দেয়াল না বানিয়ে )

হয়ত মজা করেই আমরা ব্যবহার করি , কিন্তু আন্তর্জাল ( ইন্টারনেট ) , অন্তর্জাল ( ইন্ট্রানেট ) , তড়িৎ ডাক ( ই মেইল ) শব্দ গুলো শুনে কিন্তু ভীষন ভালো লাগে । মজাও লাগে । এ রকম মজার মজার বাংলা যদি করা যায় , হোক না ।

আসুন হাসতে হাসতে খেলতে খেলতেই আমরা বাংলা শব্দ খুঁজে নেই , তৈরী করি । কারন আমি ,

" বাংলায় গান গাই , আমি বাংলায় গান গাই ,
আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই"
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৯
১৯টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×