somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ হোক

২১ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ হোক
ফকির ইলিয়াস
========================================
ফিলিস্তিনে অমানবিক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে তারা। নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব মোড়লরা নীরব। জাতিসংঘের অনুরোধ শুনছে না ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে না। নিউইয়র্কের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ ইসরায়েল সফর করেছেন। তার সহমর্মিতা ইসরায়েলিদের প্রতি। না, তিনি এই মুসলিম নিধনযজ্ঞের কোনো প্রতিবাদ করেননি।
বিষয়গুলো খুবই মর্মান্তিক। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানছে না ইসরায়েল। কেন মানছে না? তাদের খুঁটির জোর কোথায়? হামাসকে ধ্বংসের নামে তারা শিশু-নারীসহ সাধারণ মানুষ হত্যার উল্লাসে মেতেছে কেন? রেডক্রসের চেয়ারম্যান যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো সভ্য বিবেকই মেনে নিতে পারে না।
ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্ব সরব হলেও উচ্চ পর্যায়ের ক্ষমতাশীনরা কোনো বিশেষ ভূমিকা রাখছেন না। দেশে দেশে প্রতিবাদ করছে সাধারণ মানুষ। নিউইয়র্কের মানুষ। জাতিসংঘের সামনে তীব্র হিমাঙ্কের মাঝেও বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে মানুষ। শিশুরা প্ল্যাকার্ড বহন করে বলেছে, এ হত্যাযজ্ঞের অবসান হোক। না, এসব কেউ শুনছে না। ইসরায়েলি স্থলবাহিনী গাজা সিটিতে ঢুকে পড়ে যে নির্মম তা-ব ঘটিয়েছে তা দেখেছে বিশ্ববাসী। হামাসের সদস্যরা যা করেছে তা নিজেদের বাঁচানো ছাড়া আর কিছু নয়। অথচ সর্বশক্তি দিয়ে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ইসরায়েলি বাহিনী মানুষ মারার উন্মত্ততা থামাতে চাইছে না।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করুন। তার কথা কেউ শুনছে না। বিশেষ করে আরব বিশ্বের শায়খ, বাদশাহ, আমির, সুলতান, খলিফারা অত্যন্ত নীরব। অথচ তারাই ইউরোপ-আমেরিকার তেল জোগান দেন। মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রনায়করা সমবেত হয়ে এর প্রতিবাদ করলে ইউরোপ-আমেরিকার নেতাদের তা না শুনে উপায় ছিল না। তারা তা করছেন না। বরং যুক্তরাষ্ট্রের তাঁবেদারী আর নগ্ন মোসাহেবিতে তারা ব্যস্ত। এই ন্যক্কারজনক মানবিকতা, তীব্র ঘৃণার দাবি রাখে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যে শান্তিচুক্তি হয়েছিল তার পূর্ণ বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নটি থেকে যাচ্ছে রহস্যজনক। ফিলিস্তিনের প্রবাদপ্রতিম নেতা ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর মাহমুদ আব্বাস এর দায়িত্ব নেন। শুরু থেকেই তিনি তাদের দাবি মানার জন্য ইসরায়েলি প্রশাসনকে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু তারা তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না করে, ভেতরে ভেতরে ফিলিস্তিনকে শাসন করারই মতলব হাঁকছে। হামাসের ‘জঙ্গিবাদী’ কার্যক্রমের দোহাই দিয়ে তারা ফিলিস্তিনীদের ওপর হামলা করছে বিভিন্ন সময়ে। এবার প্রকাশ্য যুদ্ধ বাধিয়ে তারা ফিলিস্তিন জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ারই পাঁয়তারা করছে।
ইসরায়েলের এই বর্বরতম আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিশ্বের মানুষ নানাভাবে ইসরায়েলকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন। ডাক এসেছে বিশ্বের সব দেশে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের। কূটনৈতিকভাবেও চাপ প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন দেশের মানুষ জনমত সংগ্রহে নেমেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, তিনি ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়ে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব পাওয়ার পর এ বিষয়ে কূটনেতিক উদ্যোগ নেবেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনকে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিতে বলেছে বিভিন্ন মানবকল্যাণমূলক সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘হিউমেন ফর হিউমেন’, ‘পিস ফর ওয়ার্ল্ড’, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’, ‘হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ’সহ বিভিন্ন সংগঠন বলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের উচিত শিগগিরই যুদ্ধ বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া। যারা বিশ্বে মানবতা প্রতিষ্ঠার ধুয়া তোলে, ফিলিস্তিন বিষয়ে তাদের অন্ধত্বের তীব্র নিন্দা অব্যাহত রয়েছে বিশ্বজুড়ে।
দেশপ্রেমিক ফিলিস্তিনিরা তাদের দেশমাতৃকার জন্য যে মুক্তি সংগ্রাম করে আসছে, তা বিশ্বের কারো অজানা নয়। স্বাধীনতা যদি মানুষের জন্মগত অধিকার হয়ে থাকে তবে সদ্য জন্ম নেয়া ফিলিস্তিনি শিশুটিরও সে অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার কথা। যারা এই অধিকার হরণ করতে চাইছে, এরা মানবতার শত্রু। এসব জালেমদের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক বিশ্ববিবেক। বন্ধ হোক রক্তপাত।
এ লেখাটি যখন লিখে শেষ করবো তখনই দেখলাম ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে তারপরও তারা চোরাগোপ্তা হামলা করছে ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে। তেরো ধরনের মার্কিন নির্মিত বিষাক্ত ক্ষেপণাস্ত্র তারা প্রক্ষেপণ করছে ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষের ওপর।
ফসফরাস বোমা যদিও আনবিক বোমা নয়, তারপরও এর ক্রিয়া অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি বিষাক্ত। ফিলিস্তিনি শিশুদের রক্তাক্ত দেহ আর বৃদ্ধ নারীদের ঝলসানো মুখ দেখে বারবারই মনে হয়েছে বিশ্বসভ্যতা বারবারই থেকে যাচ্ছে পেশীশক্তির কাছে পরাজিত। অথচ বিশ্ব নেতারা একটি সুসভ্য প্রজন্ম গঠনে বারবার হাত উঁচিয়ে শপথ নিচ্ছেন!
ট্রেন ভ্রমণ করে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নিতে গিয়েছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেছেন, আমি মানুষের জন্য, বিশ্ববাসীর জন্য শান্তির বারতা নিয়েই হোয়াইট হাউসে যাচ্ছি।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পররাষ্ট্রনীতি যে ফিলিস্তিনি মজলুম মানুষের খুব বেশি স্বার্থ রক্ষা করবে, তা বলা যাবে না। বলার কোনো সুযোগও নেই। কারণ ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষায় মার্কিন কংগ্রেস, মার্কিন সিনেট যখন একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানে ফিলিস্তিনের বোমাদগ্ধ শিশুটির পক্ষে দাঁড়াবে কে? তারপরও সবিনয়ে বলি, বারাক ওবামা যদি শান্তির সমতা রক্ষায় ব্রতী হন তবে তাকে দুঃস্থ নিপীড়িত গণমানুষের কথা ভাবতে হবে। ভাবতে হবে, কিভাবে হানাহানি বন্ধ করে বিশ্বে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়।
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমনের নামে বোমা নিক্ষেপের সংস্কৃতি বন্ধে নতুন যাত্রা শুরু হোক ওবামা প্রশাসনের। মনে রাখতে হবে, বিশ্বের কোনো ভূখন্ডই কোনো পরাক্রমশালীর বোমা পর্যবেক্ষণের জন্য উন্মুক্ত নয়।
------------------------------------------------------------
দৈনিক ডেসটিনি। ঢাকা। ২১ জানুয়ারি ২০০৯ বুধবার প্রকাশিত















সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৭:৪৮
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×