ছেলে-মেয়ের একটা ছোট্ট দল হৈ-হুল্লোড় করে সমুদ্রের তীরের দিকে এগিয়ে চলেছে।গত ভোর রাতে বাসে করে একসাথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসেছে তারা।গত রাতের ক্লান্তি কাটিয়ে সকাল সাতটা বাজতে না বাজতে আবার সমুদ্রের তীরে বেড়াতে যাচ্ছে।যেন মনে হচ্ছে সমুদ্র তাদেরকে চম্বুক দিয়ে টানছে। হয়ত কেউ কেউ প্লান করেছে এই সকাল বেলাতেই সমুদ্রে নিজেকে একটু ভিজিয়ে নেওয়ার।কারো কারো উদ্দেশ্য ছবি তোলা।আবার কারো বা শুধুই ভ্রমন।আসুন আমরা আগে তাদের সাথে পরিচিত হয়ে নেই।
দলটিতে মোট লোকজনের সংখ্যা এগার জন।হ্যাঁ ওরা এগার জন।ওরা সবাই বাংলাদেশের বিখ্যাত এক ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র-ছাত্রী।ওদের মধ্যে সাতজন ছেলে আর চার জন মেয়ে।ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসার পরই তাদের বন্ধুত্ব।একে অপরকে খুব ভাল করে চিনে মনে হয়।একে একে তাদের পরিচয় দিচ্ছি।আপনার সর্বডান দিকে যে দুজনকে দেখতে পারছেন, ওরা হল শিমুল ও কনা।ওরা সবসময় একসাথেই থাকে।ভালবাসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে একে অপরকে।দ্বিতীয় যে জুটি রয়েছে এ দলে তারা হচ্ছে সুমন ও ঈশিতা।ওদের মধ্যে কোন না কোন বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি চলছেই সবসময়।দেখে বুঝার উপায় নেই যে সত্যি তারা একে অপরকে ভালবাসে।শিমুল ও কনার পরই দুজন হেঁটে আসছে।যথারীতি তারা কি বিষয় নিয়ে যেন তর্ক করছে।কি বিষয় নিয়ে কথা বলছে এত দূর থেকে বুঝা যায় না অবশ্য।এর পরে আছে যথাক্রমে রবিন,পান্থ,মাসুদ,মিম,বিপাশা,মামুন ও নিয়ন।রবিন ও পান্থ হচ্ছে ছেলে জুটি।যেখানেই যাক না কেন তারা দুবন্ধুর একসাথে যাওয়া চাই।হোস্টেলে দুজন একসাথে থাকে।দুজনই ভাল গীটার বাজায় আবার দুজনই ভাল গানও গায়।বেড়াতে এসেও ওরা গীটার আনতে ভুল করেনি।এদের পাশেই আছে মাসুদ।সবসময় চটপটে আর হাইটে একটু ছোট।সবসময় মজা করে বেড়ায় আর মানুষকে হাসিয়ে বেড়ায়।মাসুদ থাকবে অথচ সেখানে মানুষ না হেসে থাকবে তা হয় না।ঠিক এইজন্যে বন্ধুমহলে সে হানিফ সংকেত নামে পরিচিত।ওদের পাশেই রয়েছে মিম ও বিপাশা।রবিন ও পান্থ যদি ছেলে জুটি হয় তবে বলতে হয় মিম ও বিপাশাও সেরকম মেয়ে জুটি।তাদের আচার ব্যবহারে বোঝা যায় দুজনই সবকিছুর ব্যাপারে বেশ চুজি।এরপরই আছে মামুন ও নিয়ন।দুজন একেবারে দুই প্রকৃতির।মামুন খুব বেশি স্টাইলিশ।মেয়েদেরকে তেমন পাত্তা দেয় না।অনেক মেয়ের সাথেই ঘুরেছে সে।কিন্তু ভালবাসার ব্যাপারে সে সবসময়ই উদাসীন।সে নাকি শহরের মেয়েদের কাছে গেলেই খালি পারফিউমের গন্ধ পায় যা তার একটুও ভাল লাগে না।আর মেয়েরা বলে, তার সুদুর্শন চেহারায় নাকি এসব অহংকারের কারন।আর নিয়নকে উঠতি কবি বলে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায়।স্বাস্থ্য একটু মোটা, সবসময় চুপচাপ আর কোন কিছু দেখলেই অভিভূত হয়ে কবিতার লাইন আওড়াতে থাকে।তার কবিতা শুনে অনেকেই ভুল করে যে এগুলো কার লেখা।কিন্তু সত্য হচ্ছে এই যে, ওগুলো নিয়নের ইনস্ট্যান্ট কবিতা।একান্ত নিজের বন্ধু ছাড়া এ কথা অনেকেই প্রায় সময়ই ধরতে পারে না।যেমন এখনকার কথাই ধরেন।সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করেছে,
হে সমুদ্র, ভিজব তোমার কোলে
আমার দেখা স্বপ্নের আলিঙ্গনে
আত্না হবে আজ নির্মল
হাসির বন্যা আজ অবিরল।
দলটা প্রায় সমুদ্রের কাছাকাছি চলে এসেছে।তাদের কথাবার্তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
মামুন নিয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-ওই ব্যাটা দাঁড়া।এসেই শুরু করে দিছিস।কবিত্ব অন্য জায়গায় গিয়ে দেখাগা যা।
নিয়ন কিছুই বলল না।এসব ধরনের কথা তাকে প্রায়ই শুনতে হয়।এসব কথায় সে রাগও করে না।কবিতা ছাড়া অন্যকিছু তার মুখ দিয়ে বের হয় না অনেক সময়েই।
(চলবে...)