somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৭ নং বাস ও "ওয়ান ম্যান শো"

১৬ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্রাসবাসা বিল্ডিং থেকে পেছনের এক্জিট দিয়ে বের হতেই ৭ নং বাসের বাস স্টপ টা রাস্তার ওপারে চোখে পড়তে শান্তি লাগল মনে এইভেবে যে যাই হোক হাড়িয়ে যাইনি, বাড়ি ফেরার বাসটা কোথায় থামে সেটা খুজতে সময় নষ্ট হবে না।

পেডিসট্রিয়ানের সবুজ মানুষ সিগনাল দেখে রাস্তা পার হয়ে বাস স্টপের দিকে পা বাড়ালাম। কাছাকাছি পৌছতেই তিব্র পরিচিত গন্ধে প্রচন্ড ভয়ে গা ঝিমঝিম করতে লাগল। গন্ধের সোর্স খুজতে লাগলাম।

"ওয়ান ম্যন শো"- আমার চেনা একজন মানুষই ঐ গন্ধ নিয়ে দিন শুরু করত। ভাল খারাপ যাই করত ঐ গন্ধ গায়ে নিয়ে।

আমার গা কাপছে ভয়ে, ঘৃণায়, রাগে, অসহায় অনুভুতি ঠিক যেমনটা আগে হতো..একই সাথে অজানা আকর্ষনে। খুজতে থাকলাম গন্ধের সোর্স।

বাস স্টপে বেশি মানুষ নেই। একজন চাইনিজ মহিলা, একজন ককেশিয়ান ৬০/৬৫ বছর বয়েসি ভদ্রলোক, একজন চাইনিজ ছেলে আর দুজন মালেয় মেয়ে। সম্ভবত ককেশিয়ান ভদ্রলোকই হবেন গন্ধের সোর্স । কারন তার পার্সোনালিটি বলছে সেই এই গন্ধ মাখতে পারে। কাছে গিয়ে গন্ধ নিয়ে কনফার্ম হবার ইচ্ছাটা অনেক কষ্টে কনট্রোল করলাম।

আমার মাথা ঘুরে গা বমি বমি করতে থাকল গন্ধে। কাছে না গিয়ে শুকেও আমি ১০০% সিওর এই লোকই গন্ধের সোর্স. কারন ঐ একই ভাব, একই পার্সোনালিটি, একই ভংগি, এমন কি একই ধরনের পোশাক। তাকাবার একই চাহনি। শুধু বয়সটাই মেলেনা।

আসাধারন স্মার্ট! একজন মানুষের আত্তা যেন আমার সামনে এসে দাড়িয়েছে আরেক জন একই ধরনের মানুষের ভেতর শুধু বয়সটা বেশি সেই মানুষের। আমার সানগ্লাসের ভেতর দিয়ে টের পেলাম সেও আমাকে পর্যবেক্ষন করছে।

আমরা দুজনই জানি কেউ আমারা কাউকে চিনি না। কিন্তু দুজনই এমান কাউকে জানি ঠিক আমাদেরই মতো, আমাদের অতিতে যারা আমাদের জীবনের অনেকটা জুরে ছিল এবং প্রভাব বিস্তার করে ছিল। সে প্রভাব ভাল বা মন্দ, ভয়ের বা ভাল লাগার, দুঃখ বা শুখের আলাদা করে আমরা বলতে পারব না কারন সেটা ছিল সব মিলিয়ে। আজ আছে শুধু ঘৃণা, ভয় আর আকর্ষন। অনুভুতিটা ঠিক এক্সপ্লেইন করা গেলনা।

আমি সিওর একই কথা ওর মনের ভেতর চলছে। কারন ও আমার দিকে একই ভাবে তাকাচ্ছে। আমার সান গ্লাস থাকায় আমার মনটা সে পড়তে পারছেনা..হাহ হয়ত বা পারছে..যেমন সে আগেও পারত। সব জানত সে আমার....এমনকি আমার খিদে পেলে সে জানত আমার আগে।

মনে প্রানে চাইছিলাম সে যেন অন্য বাসে ওঠে ( সত্যিই কি তা চাইছিলাম?)। পর পর তিনটা বাস এলো বাস স্টপে। আমার ৭ নং বাস টা সবার শেষে। সাবাই তাদের নিজ নিজ গন্তব্যর বাসে এগিয়ে গেল..শুধু আমরা তিন জন পরে রইলাম ৭ নং বাসের জন্য।

সে আমার আগে উঠল, আমি ওর পেছনে, ঠিক পেছনে...গন্ধের তিব্রতায় আমার সারা গা কাপছে। বাসে উঠে কার্ড ট্যাপ করে সামনের সিটে গিয়ে বসতেই দেখলাম সে আমার উল্টো দিকের সিটে, আমাকেই পর্যবেক্ষন করছে। ঠিক একই ভাবে তাকিয়ে যেমন সে তাকাত অনেক বছর আগে।

বার্ধক্য তাকে কাহিল করেছে এখানে। বুঝলাম যখন ও এই বয়েসে আসবে দেখতে ঠিক এমনই লাগবে। সেও হয়ত ভাবছে ২০ বছর আগে তার চেনা মেয়েটা ঠিক আমারই মত ছিল..আমারই মত ভংগি করে ঘার ঘুড়িয়ে তাকাত...। ভাবছে এত মিল কিকরে হয় দুজন মানুষের দুটো ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন বয়সে!!?

আমার মনে হলো আমি ত আর ১০টা সাধারন যাত্রির মত তার পাশে গিয়ে বসতে পারতাম, কিন্তু কেন পারলাম না? সেও ভাবছে একই কথা আমি জানি, আমি সত্যি জানি।

আমি আমার মাত্র কেনা ড্রাইভিং টেস্ট এক্জামের বই খুলে পরা শুরু করলাম, এটা আমি সব সময় করি ট্রাভেল টাইমটা কাজে লাগাবের জন্য।

হল্যান্ড ভিলেজে এসে সে বেল টিপলো বাস স্টপিং এর। বুঝলাম সে এখন নেমে যাবে। সে আমার দিকে প্রশ্ন নিয়ে তাকাল আমিও নামব কিনা। আমি মন দিলাম আমার বইএ। বাস বাসস্টপে এপ্রোচ করতেই সে উঠে দাড়াল আর অমনি বার্ধক্যের চাপে তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে গিয়ে সামলে নিল, আমার চোখ আর হাত তৈরি হয়ে গিয়েছিল ওকে ধরবার জন্য যদি সে পরে যেত। সে ধন্যবাদের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে হেটে নেমে গেল। হাড়িয়ে গেল শত শত মানুষের ভিরে। আমি ঘুরেও তাকালাম না ওর চলে যাওয়া দেখতে।

আমি বসে রইলাম হঠাৎ পাওয়া গন্ধের অতিতের কিছু কথা নিয়ে...। মন দিলাম আমারা ড্রাইভিং বুকে।


সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:৪০
১৮টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×