somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দানিয়া ও ফ্রাংকোর পুনর্জন্ম

১৫ ই জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে গুটিকতেক ফরেনারের সাথে পরিচয় আছে তাদের গায়ের চামড়া সাদা। শৈশবকাল থেকে ফরেনার মানে সাদা চামড়াই বুঝি। সাদা চামড়ার বৃটিশদের উপমহাদেশ শাষণের গল্পগাঁথা থেকে ফরেনারের সাথে হোয়াইট সিম্বলিক হয়ে ওঠে। ব্যাপক উন্নত, নতুন সব যন্ত্রপাতি, নারীদের এক্সপ্লোসিভ ফিগার, পুরুষগুলান লম্বা এমন একটা পূর্ব ধারণা আমার ভেতরে গ্রোথ্থিত থাকতো। ফরেনার বলতে এখনও আমি ইন্ডিয়ান বা আফ্রিকানদের বুঝি না। তবে আগে যেমন ফরেনারদের ভাষা মানেই ইংরেজি বুঝতাম সেটা চেঞ্জ হয়েছে। কিন্তু এই সাদা চামড়াদের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে আমার বিষ্ময়ের সীমা থাকতো না। আইখম্যানের ৬০ লাখ ইহুদী হত্যার বই পড়ে সেই শৈশবে ইহুদীদের রহস্যময় ট্রাজেডির নায়ক মনে হতো। রক্তে এবং শিরার গহীনে এমন কোন ধনুকভাঙা পন তাদের তাড়িত করে যা আনব্রেকেবল বাই এনি কস্ট।

এরপরে রোমাহর্ষক চলচ্চিত্রে ইহুদী সাদা চামড়ার নিধন দেখে, শেক্সপিয়ার থেকে শুরু করে বিভিন্ন নাটকে ইহুদীদের ভূমিছাড়া উদ্বাস্তুজীবের আখ্যান পড়ে একটা জাতি স্বত্ত্বার অবোধগম্য ভাবানুবেগ সম্বন্ধে কিঞ্চিত তাড়িত হয়ে উঠি। এমন সময় ফ্রাংক কালিবের সাথে আমার পরিচয়। বাবা কুটনৈতিক। ফ্রাংক আর আমার কাজিন মুনা খুব ভাল বন্ধু ছিল। আমাদের বাড়ীর পাশের বাড়ীর দাদি ছিলেন ইন্ডিয়ান এ্যাংলো-ইহুদী, বৃদ্ধা থুরথুরে। দানিয়া দাদি বলতাম তারে, কিন্তু উনি মুসলমান হয়ে গেছিলেন সেই বৃটিশ আমলেই। ফ্রাংককে কখনও তিনি ভাল চোখে দেখতেন না। তখন আমাদের বয়স কত হবে! ১৯/২০। ফ্রাংকের টকটকে লাল বর্ণ দেখে হয়তো মুনা তার প্রেমে পড়ে গেছিল, তখনও আমি ভাবতাম সাদাদের ঘৃনা করা যায় না। কলোনিয়াল সাদার মহত্বের কিছু বীজ আমার ভেতরে জেনেটিক্যালী দাসত্ব মানতো।

ফ্রাংক পরিষ্কার বাংলা বলতে পারতো। বুড়ির ছেলে মেয়ে মানে পাড়াতো চাচা, ফুফুরা খাঁটি বাঙালী হয়েছে, একটু ফর্সা এই যা। বুড়ির দাদাও জার্মানী থেকে ইন্ডিয়া এসেছিলো, কোন বাঙালী মেয়েকে বিয়ে করে সেটেল হয়েছিল। তাদের সন্তান বাঙালি বটে তবে এ্যাংলো ভাবটা থাকতোই। বুড়ো বয়সেও বুড়ি জার্মান বলতে পারতো অনর্গল। ফ্যাংককে দেখলেই অন্য দিকে লাঠি ঠুকে ঠুকে পালাতেন। বুঝতাম বুড়ির স্বজন হারানোর ব্যাথাটা এত এত বছর পরেও টনটনে। স্মৃতির আস্তরে, জাতিয়তার ঘোরটোপে অভিযোজিত নানা সংস্কৃতির আড়ালেও সে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ফ্রাংক বলতো এরা সারাজীবন ঘৃণা পুষে থাকবে, কখনও ভালবাসতে পারবে না আমাকে।

বুড়ির নাতি একটা আমাদের সাথে ব্যাডমিন্টন খেলতো। বুড়ি তাকে নিষেধ করে দিলো ফ্রাংকের সাথে মিশতে। ফ্রাংক সহজভাবে নিলেও আমি নিতে পারি নাই সহজভাবে। তাকে বললাম, তোমার সমস্যাটা কি দাদি?

দাদী কিছু বলতে চাইতো না। মাঝেমাঝে ঘোত ঘোত করে বলতো, আমার রক্ত গরম হইয়া যায় ওরে দেখলে! ওরে আমার সামনে নিয়া আবি না!

দিব্যচোখে দেখতে পাচ্ছি অনেক বৎসর পরে এই একই ঘটনা হয়তো রিপিট হবে। আজকের কোন এক প‌্যালেস্টাইনী শিশু সেদিন দাদী হবে। কোন এক ইজরায়েলী বালককেও সে ফ্রাংকের মতই ঘৃনা করবে। বংশ পরম্পরায় চলতেই থাকবে আর রক্ত উষ্ণ হয়ে উঠবে উত্তরসূরীদের।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ২:৫৩
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শেষ মুহূর্তে রাইসির হেলিকপ্টারে কী ঘটেছিল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩২

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত খুব কমই জানা গেছে। এবার এ ঘটনার আরও কিছু তথ্য সামনে এনেছেন ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের কিছু উল্টা পালটা চিন্তা !

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১০

১।
কলকাতা গিয়ে টুকরা টুকরা হল আমাদের এক সন্ত্রাসী এমপি, কলকাতা বলা চলে তার ২য় বাড়ি, জীবনে কতবার গিয়েছেন তার হিসাব কেহ বের করতে পারবে বলে মনে করি না, কলকাতার অলিগলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×