somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

কবিতার ভাষামিথ / হামিদ রায়হান

১৪ ই জানুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৬:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যারা - কবিতা কী জানতে চান, তাদের জন্য একটি দরকারী লেখা। এই লেখাটি ১৪ জানুয়ারী ২০০৫ শুক্রবার দৈনিক ইত্তেফাক এর সাহিত্য সাময়িকীতে ছাপা হয়েছিল। কবিতার একটি দিক নিয়ে লেখক তার চিন্তা-চেতনা তুলে ধরেছেন খুব সাবলীল ভাবে। এখানে সবার সাথে শেয়ার
করার মানসে তুলে দিলাম।

-----------------------------------------------------------------------------
কবিতার ভাষামিথ
হামিদ রায়হান

========================================
একটি রূপকে অন্য রূপে পাল্টে নেয়ার আয়োজনই ভাষা। ধ্বনি যত প্রান্তিকের দখলে যায় তত কেন্দ্রিকতায় তার উপস্থিতি হ্রাস পায়। যেখান থেকে ছড়িয়ে যাওয়ার জন্য তার উদ্ভব। ধ্বনি পরিবর্তিত হয় চিত্রকল্পে, পরিবর্তন ও পুনরাবৃত্তিই কবিতার চরিত্রনির্যাস, যার ডাইভার্স বা দ্বৈরাজ্যের অবিরাম বৈচিত্র্য নিখিল কবিত্ব। মিলন ও বিচ্ছেদের অযুত চক্র রূপরূপান্তর। যার প্রত্যেকটিতে নিহিত ব্যাপ্তিচ্ছা। এইসব সমারোহে সমগ্রকবিতা গড়ে ওঠে। জীবন যেরকম। যেমন রচিত নিখিলবিশ্ব। পদে পদে তার দ্বৈরাজ্যের যে ব্যাপ্তি দ্বৈরাজ্যে। সেই পরম দ্বৈরাজ্যের স্মরণ কবিতার নিভৃত আয়োজন। শিল্পমাত্র সেই আয়োজনের প্রদর্শন।
এখন শিল্প-সাহিত্যে একই সঙ্গে প্রান্তিকতা ও কেন্দ্রিকতা প্রযুক্তি ও মেঠোকে মিলিয়ে দেয়ার তোড়জোড়। সমাজ জীবনে ঐক্য সঙ্গতির যে সংজ্ঞা যখন ক্রিয়াশীল থাকে তারই পৃথক পৃথক আয়োজন প্রদর্শন। লোকাচারে বা ধর্মাচারে সংখ্যা জাহিরের একই ছন্দানুগমন। কিš' ছন্দের অভিধানিক অর্থবোধকতা ব্যাপক। এ অর্থবোধক কবিতার সমগ্রে নিহিত সূক্ষ্ম মিলনাকাঙক্ষা-যুগ্মরূপের সত্তায়। যেন সবকিছু গ্রাস করে তার অর্থবৃত্ত। সেখানে ছন্দের অর্থ, ইচ্ছা, তাৎপর্য, অবয়ব সংস্থান, নির্মাণকৌশল, গঠন প্রকার, গোপনীয় অভিপ্রায় পূরণের উপায় ইত্যাদি প্রত্যেকটি অর্থ কবিতার বেলায় প্রয়োগ করলে ছন্দের অর্থবৃত্ত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন, এটা জানা যে, ছন্দের কারণে কবিতা স্মৃতিগ্রাহ্য। আর এ কারণে যুগ্মের তল্লাশীতে ছন্দের প্রয়োগ যত সার্থক স্মৃতিগ্রাহ্যতা তত গভীর। কেবল ধ্বনি বা গণিত হিসেবে নয়, তাৎপর্যের দিক থেকেও এটা একই মূল্যে গ্রাহ্য। এ গ্রাহ্যতার সঞ্চার ইহপার্থিব। ফলে একটা অসম্পূর্ণতার ঝোঁক থেকে যায়। যা গতিউৎসুক। তাই যেখান থেকে এটা দেখা হয়, পুনরাবৃত্তি ও পরিবর্তন, জগৎ সংসারের ছন্দঃরহস্য। দেখে, ছন্দের অবলম্বন। তার প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ, নৈকট্য ও দূরসূত্র। অর্থাৎ আধিপত্যবাদের কেন্দ্র শিথিল হলে তবেই প্রান্তিকের অবসর। কবিতা এমনই কল্পলতা। কবিতা ঘুরে ফিরে এই নামগান। নাম গান-কল্পলতা তেমনই এক যুগ্মরূপ। এইরূপ কল্পলতার কাছ থেকে যা চাইতে ইচ্ছে হয়, ধ্বনির মধ্যে দিয়ে কামসূত্রের গ্রন্থন। এই গ্রন্থনা মানে ধ্বনিমিথুন। যা মিল দেখায়।
কবি ক্রান্তদর্শী, আবিষ্কর্তা। কবি সর্বদা অভিনব পথে পা রাখতে পছন্দ করেন। চলার ধ্বনি, চলাফেরার আওয়াজে চিনতে শেখে প্রাণী বিশেষের উপস্থিতি। আদি অবস্থায় ধ্বনি থাকে অনিবার্য সহায়ক; এমন কি ভাষা আয়োজন সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে। আত্মরক্ষা ও আক্রমণের তাৎক্ষণিক ঔচিত্যকে মিলিয়ে দেখে নেয় দৈনন্দিন জীবনে আর স্থায়ী যাপন ব্যবস্থায়। লুকানো ও বেরনোর মুহূর্তগুলো থাকে ধ্বনি নিয়ন্ত্রিত। যার ক্রমস্ফীতি ও ক্রমবিস্তার এই জগৎ, সেখানে আদি বিভাজন তরঙ্গ ও কনায়। এই বিভাজন থাকে ক্রমস্ফীতির সর্বত্র রূপ রূপান্তরে। আর্থিবের আচরণে যেমন, ধৈর্য ও গতিতে। প্রকৃতি ও পৌরুষে। এ আদি বিভাজনের ফলে জাগরুক তীব্র মিলনাকাঙক্ষা। তার ব্যাপ্তি সর্বময়। এখানেই প্রশ্ন অবস্থানের। এটা একটা অর্থ যা দ্বিখণ্ডিত, যা দ্বৈরাজ্যময়তার ধারক। কেননা কবি সর্বদা কালপ্রাসঙ্গিক। আপন সময়কে তিনি ঠিকমত সনাক্ত করতে সক্ষম। সেখান থেকেই তিনি বের করে আনেন তার অনুধাবন। তার ভাষা আয়োজনে থাকে সময়ের জ্ঞাপন এলাকা। তার অন্তর্গত যথার্থতা যেখান থেকে চিরদিনের মুগ্ধতা ছড়ায় আর যুগ্মরূপ বা পরিপূরকের সম্পৃক্ত সংবাদবাহক যখন তার সমারোহের মধ্যে নিহিত ক্রিয়াশীলতাকে উন্মোচিত করে দেয়, এর উদ্ভূত সুরে মানব সভ্যতার সমগ্র ইতিহাস ভেসে ওঠে। এই পার্থক্য এই ভাষাগত একত্রীকরণের অভিসন্ধিকে অভিসরণ করে বোধের যুগ্মরূপ। অনবছিন্নের দিকে গতিময়তায় এখানেই কালপ্রাসঙ্গিকতার বা সময় সাধনার ঔচিত্য। স্বররচনার মধ্যে তার পার্থক্যের মূলসূত্র। এ রহস্যের ক্রমউন্মোচনের মধ্য দিয়ে সম্পর্কসূত্র অন্বেষার তোড়জোড়। অর্থময়তার বয়নসাধনের নবীকরণের প্রস্তাব। যেজন্য কবিতার কোন বাঁধাধরা পরিভাষা নেই। নিরন্তর কবি মাত্র তার মত করে পৃথক পরিভাষা গড়ে তোলে। নিছকের যে কোন একটি অঞ্চল তাক করে এই পরিভাষা রূপ পায়। পায় ভাষার নাগাল স্বরনালীর সমান্তরাল রদবদলে। প্রত্যেক জীবের নাগালের মধ্যে নিহিত আছে এক বিশেষ জীবনোপায়। সেইমত তার শরীর ও আচরণ, নিজের ভিতর ও বাহিরের মানে খোঁজা, আত্মরক্ষা ও আক্রমণে যুগপৎ লিপ্ত হওয়া, শিল্পবোধ ও শিল্পসৃজন তার ব্যতিক্রম নয়-যেভাবে রেখে যাওয়ার কথা তার জৈবধর্মের প্রমাণ। যেখান থেকে বাইনারি বা দ্বৈততার চেতনার সূত্রপাত, পুনরাবৃত্তি ও পরিবর্তনের ক্রিয়মানতায়সহ উপস্থিতির ক্রমব্যাপ্তি। আধার ও আধেয়র সম্পর্কসূত্রে নির্ভর করে শেষাবধি দেখে মিল তার ন্মুক্ত স্বতঃস্ফূর্ত স্বাভাবিক মিলনাকাঙক্ষার বাঁধন। যেখানে ছন্দপূর্বতা পায়, পায় মুক্তি, গড়ে ওঠে মুক্তির চিরকালীন শিবির। প্রত্যেক শব্দের অর্থবোধকতাও নির্ভর করে তার প্রয়োগের ওপর। কারণ প্রত্যেক শব্দ একটা অর্থ সঞ্চয় প্রকল্প।
নিজের ও নিজের চারপাশের সবকিছুর মানে অন্বেষণ, তার দ্বান্দ্বিকতার সন্ধান, তার অর্থময়তা গড়ে তোলার আয়োজন, নানাভাবে উপ্ত থাকে মানুষের জীবনের তাগিদ। দৈনন্দিন যাপনের অর্থময়তার এলাকাকে কিংবা তদাবধি অর্থ সংলগ্ন পরিসরকে অতিক্রম করে এক আনকোরা অর্থময়তাকে ঠাঁই দেয় কবিতার আয়োজনে। যা আলাদাভাবে না দেখে এক সঙ্গে দেখার কথা তাকে এক জায়গায় এনে ফেলার অবিরাম ক্রিয়াশীলতা। কবিতা নির্মাণ যার অবিরাম মহড়া। কবিত্ব তার যাবতীয় আবিষ্কার প্রবণতার কেন্দ্র। যেখান থেকে বাইনারি বা দ্বৈততার চেতনার সূত্রপাত। এই দ্বৈরাজ্যময়তাকে দেখা ও দেখানোই শিল্পবোধ, শিল্পসৃজন। যে কোনভাবেই অনিবার্য এই প্রবণতার প্রস্ফুট। যে জন্য কবিতার কোন বাঁধাধরা পরিভাষা নেই। নিরন্তর কবি নিজের মত করে পৃথক পরিভাষা গড়ে তোলেন। নিছকের যে কোন একটি অঞ্চল তাক করে পরিভাষা গড়ে ওঠে। ভাষা ও অর্থের বিশাল তোড়জোড় এই যাপন। সম্পর্কসূত্র অন্বেষণের তোড়জোড়। তবে যে বুনোটে অর্থবোধকতার ক্রমপ্রসারণ, সেই অর্থবোধকতাকে কবি দেখে, শেষ পর্যন্ত নির্ভর করে আধার ও আধেয়র সম্পর্কসূত্রে। যেখানে ভাষায় যাবতীয় মনন আশ্রিত হয়। কিš' অর্থ, তার শব্দের সমস্যা, সেখানে কবি চিড় ধরিয়ে দেন। সমস্ত পুরনো অর্থময়তাকে মুক্তি কিংবা আত্মস্থ দ্বারা লুকানো ও বেরোনোর মুহূর্তগুলো ধ্বনি নিয়ন্ত্রিত নবাঞ্চল গড়ে তোলেন। যেহেতু অর্থ সমাধান নয়, বরং সমস্যা, সেখান থেকে অবিরাম বেরিয়ে আসার তোড়জোড় রাখা খুবই জরুরী। এভাবেই তাঁর রস ও রসদের সম্পর্ক। তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে দ্বৈততার পরিসর। এ যোগসূত্রের তল্লাশী তার অন্বিষ্ট। কবির রচনার তাড়না।
২.
কেবল বাঁকে সীমিত থাকে ব্যক্তি। বাঁকের সঙ্গে কিংবা বাক্যের সঙ্গে কাব্যের এখানেই পার্থক্য। কাব্য উন্মোচিত করে এই আচরণ প্রক্রিয়া। প্রতিনিয়ত লুকানো বেরোনোর দ্বৈরাজিক পাঁয়তারা চলে। যেজন্য আপাত অসংলগ্নতাকে নিঃসংশয়ে কবি যোগ দিয়ে চলে বহু রৈখিক জ্যামিতির আশ্রয়। জ্যামিতির ছক তাঁর বুনোটের গভীরে। এর কারণ, সূত্রগুলো সর্বত্র এক। তবে পার্থক্য কেবল অবলোকন পদ্ধতিতে। সহজে যেখানে সব মিশে যায়। কেননা কবি আশ্রয় নেন সমদর্শনের। আর তার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে সমমর্যাদা, যা জীবনের সর্বত্র কাঙিক্ষত। তার বিবেচনামত নির্মাণ করে নিরাপদ আশ্রয়। লুকানো ও বেরোনো, স্মৃতি ও স্বপ্নের দ্বৈরাজ্যে-এই চরাচর। শব্দ সাধন যেমন টানা ও পোড়েন খোঁজে ভাষার বুনোটে। অবিরাম জড়ো করে যোগচিহ্ন। যে অসংখ্য যোগচিহ্নের যোগসাধন জীবন। যাকে কবিতার সম্পর্ক সাধন সনাক্ত করে। যেহেতু অবস্থান গোপন করে জীব জগৎ, তাই অবস্থান জ্ঞাপন করে কবি।

কবি সর্বদা কাল প্রাসঙ্গিক। তাই তার ভাষা আয়োজনে থাকে সময় জ্ঞাপন এলাকা। অনবচ্ছিন্নের দিকে গতিময়তায় এখানেই কাল আচরণের পরিবর্তিত কালখণ্ডে বা সময় সাধনার ঔচিত্য। প্রাকৃতিক ও মানুষের স্বরচনার মধ্যে পার্থক্যের মূলসূত্র। কাল সাপেক্ষানুমানের স্বাভাবিক ক্রিয়মানতা কবির এই অবস্থান ভিন্নতাকে ধরিয়ে দেয়। ফলে ভাষাগত একত্রীকরণের অভিসন্ধিকে অভিসরণ করে বোধের যুগ্মরূপের ক্রিয়াশীলতাকে কবি উন্মোচিত করে দিতে চান। যেভাবে শব্দের একদিকে স্ববিনষ্ট হওয়া আর অন্যদিকে স্বোপার্জনের ক্রমপরিণতি। সাপেক্ষানুমানের স্বাভাবিক ক্রিয়মানতা। এভাবেই একীভূত দ্বৈরাজ্যময়তার চরাচরে বিভেদ ও ভেদের ধাপগুলো ক্রমশ অতিক্রম করে শব্দের ধ্বনিবাহকতা ও অর্থবাহকতার যে সম্পর্ক সূত্রের মধ্যে কাল আচরণের পরিবর্তিত কালখণ্ডে ভাটার টান। সেদিকে প্রাসঙ্গিক বিবেচনার সূত্রপাত। শব্দে শব্দার্থে বা শব্দের পারস্পরিক সম্পর্কে যে আমূল পরিবর্তন, তার সমার্থক জ্ঞানের বিভাজিত সীমা অতিক্রম করে ঐক্যসূত্র। এই অতিক্রমের ঔচিত্য কবির কাছে স্পষ্ট। তার নাগালে অনেক বেশী স্পষ্ট এই অনিবার্যতা। সম্পর্ক বদল মানুষ টের পায় যাপনের নিজস্ব শর্তে। সেই জনমানসকেই কবি উন্মোচিত করেন। তবে অর্থের অনুষঙ্গটি শব্দের মধ্যে সবসময় উপস্থিত থাকে না। তিরিশ পঁয়ত্রিশ বছরের ব্যবধানে প্রকাশিত দুটো অভিধান পাশাপাশি রেখে দেখলে তাদের শব্দের থেসোরাসটি বোঝা যাবে। এ অনিবার্যতা যাপন ও শব্দার্থের আদি আদিগন্তে। যেখানে প্যারাডাইম সম্ভাবনার উদ্ভাবিত সুরে মানব সভ্যতার সমগ্র ইতিহাস ভেসে ওঠে। কেননা শব্দ ইতিহাসের ছায়া। শব্দ এবং ইতিহাস উভয়ই জীবন চর্চা আর শিল্প চর্চার অন্তর্গত যথার্থতা। শব্দ ও ইতিহাস একই ঘটনাক্রম থেকে সৃষ্ট। কালপ্রাসঙ্গিকতায় কবি যথার্থ ইতিহাসমনস্ক। সেখান থেকেই তিনি বের করে আনেন তাঁর অনুধাবন। বর্ণের সঙ্গে বোধের সম্পর্ক, ধ্বনি ও বর্ণের যে সম্পর্ক যাপনের সর্বত্র ক্রিয়াভিত্তিক ভাষার গঠনে, স্বতঃস্ফূর্ত খেলাচ্ছলের মধ্য দিয়ে তাকে ফাঁস করে দেন। এজন্য সব আছির সঙ্গে তার নিজের আছির যোগসূত্রের তল্লাশী। যে উশখুশ থেকে রচনার তাড়না। এই নেশা বা রহস্যই তাঁকে সচল রাখে। নিত্য নতুন সৃজনশীলতায় তাঁ বেঁচে থাকার রসদ জোগায়। এভাবেই তাঁর রস ও রসদের সম্পর্ক। যে সম্পর্কের বুনোটে অর্থবোধকতার ক্রমপ্রসারণ। অর্থবোধকতা শেষাবধি নির্ভর করে আধার ও আধেয়র সম্পর্ক সূত্রে। প্রতিটি শব্দের অর্থবোধকতাও নির্ভরশীল তার প্রয়োগের ওপর। নিজের ও নিজের চারপাশের সবকিছুর অর্থ অন্বেষণ, অর্থবোধকতার সন্ধান, অর্থময়তা গড়ে তোলার আয়োজন, নানাভাবে থাকে জীবনের তাগিদ। এভাবেই তার অগ্রসর, চলার ভঙির মূলসূত্র। কেননা প্রকৃতির আয়োজনে আগামীর সঙ্গে আজকের পার্থক্য হয়। চলা যেমন স্থির অর্থাৎ পরিবর্তনসহ পুনরাবৃত্তি। পুনরাবৃত্তি ও পরিবর্তন পাশাপাশি, একত্রে উপস্থিত। সচলতার অন্তর্নিহিত বুনোট। দ্বৈততার প্রতিনিয়ত প্রদর্শন। ক্রিয়মান তার পারস্পরিক অবস্থান।

কবিত্ব জীবের প্রধান গুণগরিমা। কবিত্ব মানুষ জীবের অবিচ্ছেদ্য স্বাভাবিকতা, যে কোনভাবেই অনিবার্য এই প্রবণতার প্রস্ফুট। তার মধ্যে দ্বৈততার সূত্রের রহস্য নিহিত। কবিত্বের অর্থ নিরন্তর এই মেলবন্ধনের নবাঞ্চলের অন্বেষণ। স্থিতি ও জঙ্গমের আনুপাতিক বিবরণী। বুঝের ব্যাপকতা। এভাবে দাঁড়ানো প্রকল্প তার বাঁক অন্তর্গত আছে। দীর্ঘকালীন বিকাশে উপলব্ধি করা যায় তার চলার ভঙ্গির সূত্র। কিš' এই চলা কেবল পুনরাবৃত্তি নয়। যেমন পৃথিবী আহ্নিক গতির দৈনন্দিন পুনরাবৃত্তির অধীন। চলার ছন্দের প্রতিরূপ। প্রকারান্তরে অনুধাবন করা যায় এই ক্রিয়মানতায় রূপের পারস্পরিক অবস্থান। যার অর্থবোধকতায় দাঁড়ানোর প্রসঙ্গ সমার্থক। অর্থবোধতার এই পিছু টান শিল্পকে (কবিতাকে) রহস্যময় বা নাগাল অস্থিরতায় তন্ময় রাখে। এমন অবস্থা প্রত্যেক ব্যবহৃত শব্দের। এ অঞ্ঝরী-সীমায় কেবল কবি নিয়ে যেতে পারেন। যা অনতিব্যক্ত থেকে ব্যক্ত। দ্বৈততার দোলাচল বিনাশের পথ। সম্পর্কের ক্রমবিকশিত তাৎপর্য। চলনে বলনে ক্রমশ উন্মোচিত হতে চায়। কেননা এ দাঁড়ানো প্রকল্পের জন্য পরস্পরের আয়োজনে আসে পরিপূরক ভিন্নতা। শব্দের মধ্যে অর্থ পুরে দেয়ার পুরুষকার। পরিপূরকতার সমন্বয়। অস্তিত্বে আত্মসম্পূর্ণতা যত প্রখর মিলনাকাঙক্ষা, তার সবটাই ভর করে বাইপেডালিজমের সূত্রে। সমন্বয় গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে পেয়ে যায় তার প্রামামিকতা। শেষাবধি সবকিছুকে দাঁড়াতে বা যোজিত হতে হয় কোথাও না কোথাও যে কোন পারস্পরিকে। কবিতা সেই অর্থবোধকতার আবহমান সূত্র। প্রতিপন্নের এলাকা, অনুমেয়র ব্যাপ্তি। সমগ্রকে স্পর্শ করার অনুভূতির নাগাল। প্রকাশ ও অপ্রকাশের সমুচ্চয় গড়ে ওঠে। দাঁড়ানো জীবনে যেমন আসে মীমাংসা তেমনই অমীমাংসেয়তার পরিসর হয় ব্যাপ্ত। দাঁড়ানো থেকেই প্রস্ফুটিত হয় আলিঙ্গন। দাঁড়ানো থেকেই চৈতন্যের সীমাহীন বিস্তার। শিল্পের দাঁড়ানো থেকে অর্থ পুরে দেওয়ার পুরস্কার পর্যন্ত বিস্তৃত তার প্রয়োগ। আধার ও আধেয়র সম্পর্কসূত্রের চক্রব্যূহ।

কবি শব্দের একটি অর্থ মীমাংসক। প্রতি মুহূর্তে তিনি খোঁজেন নতুন শব্দ। আরো অভিনব শব্দ সমন্বয়। নিজের চারপাশের সবকিছুকে নাগালে আনতে যুৎসই শব্দের ঘেরাটোপে ঘিরে ফেলা, একদিকে শব্দের মধ্যে ধরে রাখা। অন্যদিকে সেই বিষয়টিকে সম্ভাবনার দিকে জাগরুক রাখা। অর্থাৎ সমাজের সর্বস্তরে কেন্দ্র-প্রান্ত বিভাজন, শব্দের মানের এলাকায় যথারীতি। দাঁড়ানো প্রকল্পের দ্বৈততার ছায়াপাত অর্থবোধকতা থেকে মুক্তি দিয়ে গড়ে তোলে নতুন অভিষেক। ঠেলে দেয় নতুন সম্পর্কের আশ্রয়ে। একটি পরিচিত বিষয়কে নতুনভাবে দেখিয়ে দেওয়ার আয়োজন। ভাষার এক ভিন্ন ছিরিচাঁদ গড়ে তোলা। কবি ভিন্ন বিশ্বাসযোগ্যতা সৃজন করেন। পুনরাবৃত্তির মধ্যে দেখা দেয় পরিবর্তন। সুনিশ্চিতের পাশে গড়ে তোলেন ঝুঁকি। দেখিয়ে দেন সীমালঙ্গনের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া রৈখিকতাকে ধরে রাখে সম্পর্কের বিন্যাসে। সম্পর্ক আবিস্কারের যোগসাধনে। কবিতার অন্বিষ্ট এই সমদর্শন। যে জন্য আপাত সংলগ্নগুলোকে কবি নিঃসংশয়ে যোগ দিয়ে চলেন বহুরৈখিক জ্যামিতির আশ্রয়ে। একটা জ্যামিতিক ছক তাঁর বুনোটের গভীরে। তিনি জানেন দু’টো সমান্তরাল রেখা কোথাও না কোথাও গিয়ে মেলবে। স্পাইরাল চিহ্নিত বিন্দু তার শঙ্খিল আচরণে আবার দেখা দেবে একই জায়গায়। কেননা সূত্রগুলো সর্বত্র এক, পার্থক্য কেবল অবলোকন পদ্ধতিতে। যেখানে অনায়াসে সব মিশে যায় ফলে কবি আশ্রয় নেওয়া সহজ হয়ে যায় সমদর্শনে, কারণ সমদর্শন থেকেই গড়ে ওঠে সমমর্যদা, যা জীবনের সর্বত্র কাঙিক্ষত।
৩.
কবিতা অনুধাবন করে জীবনছন্দ। নবাঞ্চলের তল্লাশী। ফলে পুরনো ছন্দ আয়োজনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব জীবন সম্মত নয়। উদ্দেশ্যহীনভাবে জীবনে কোন পরিবর্তন আসে না। জীবনই জীবনে পরিবর্তন আনে। যা সমান্তরালভাবে কবিতায় দেখা যায়। যে যত বেশি করে সনাক্ত করতে পারেন, আঞ্চলিকতা, স্থানিকতা, বিষয়ান্ত, অর্থবোধকতার প্রান্তিকতা, তাঁর কবিতায় লক্ষ্যগুলো তত বেশী স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই প্রান্তিকতার প্রতি, ব্রাতের প্রতি যে সমমর্যাদার দাবি জীবনের মৌল অন্বিষ্ট।

একটি মাত্র বিশেষণে একজন কবির সমগ্র প্রস্তুতি। এ বিবেচনা এক রৈখিক। কবি ও কবিতার সামগ্রিকতাকে, তার জীবননির্বাহের অঞ্চলগুলোর প্রতি উপেক্ষা বা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা। প্রত্যেক কবি পড়েন সেই ফাঁদে। পাঠকের কাছেও সে ফাঁদ থাকে সমান বাধা। আসলে ‘সম’ ধারণার হিসেবকে গোলমাল করে দেওয়ার জন্য অসমবাচক শব্দপ্রয়োগ। বিবেচনই অসম নির্মাণের এ প্রক্রিয়াকে ফাঁস করে দিতে চায়। এগুলো দিয়ে বাঁধার বহুরৈখিতা গড়ে তোলে। ফলে সাংখ্যসীমাকে অতিক্রম করে, এলোমেলোর মধ্যে, অনির্ণেয়তার মধ্যে, অনিশ্চয়তার মধ্যে যে প্রান্তিক পরিসর, তাকেই স্পর্শ করে কবিতার এলাকা, প্রাত্যহিকের অভ্যন্তর। যেভাবে পার্থিবে অগোচরে ঘটে দৈনিক ও বার্ষিক গতি সমন্বয়ের প্রতিফলন। যেখানে কীভাবে তাপ্পি মেরে বহুরঙা করে এক আপাতসম্পূর্ণতা গড়ে ওঠে তা ধরে ফেলা সহজ নয়। অথচ আয়রনি গড়ে ওঠে অপ্রদর্শনযোগ্য বোধকে চারিয়ে দেওয়ার জন্য। যাকে নিয়ে জীবনছন্দের রহস্য। সাংখ্য, যে ভুমিকা পালন করে ভাষার স্থানিকতার সংবেদনায় তাকে অনুসরণ করে নিরন্তর অবস্থানবদল ঘটে। যেখানে পরখ করা হয় সাংখ্যের সমন্বয়, যেখান থেকে আসে জীবনের ছন্দ। সাংখ্যের অন্তর্নিহিত দর্শনের উন্মোচন। ধ্রুবক ও চলকের সম্পর্কের বিন্যাসকে স্পষ্ট করে দিতে চায় পূর্ণতার সঙ্গে শূন্যতার সম্পর্ক। শূন্যের সঙ্গে একের সম্পর্ক যেভাবে। ছন্দ গতি ও স্থৈর্থের সমন্বয়। যেমন গতি ও স্থৈর্থের নিজস্বতা টের পাওয়া যায় না। এখানে স্থানিকতার সংবেদনা প্রযুক্ত সেই অর্থে। একেবারে পাকা ঘষামাজা ধ্রুবক ও চলকের সম্পর্কের বিন্যাসের বয়নে। জীবনের আরেক প্রান্তিক বাক এলাকা। অর্থাৎ ভূমিকার সঙ্গে ছন্দের সমন্বয় স্পষ্ট করে দেয়। যাকে নিয়ে জীবন ছন্দের রহস্য। যেখানে পরখ করা হয় সংখ্যার সমন্বয়, যেখান থেকে আসে জীবনের ছন্দ। সংখ্যা নির্ধারণ সংখ্যা সাজানো সংখ্যার বহিঃপ্রকাশ, সংখ্যা বিশেষের সঙ্গে এলাকার সম্পর্ক, স্থিতি ও গতির সম্পর্ক। সংখ্যা যে ভূমিকা তৈরী করে। যা সরাসরি ভূমিকার চত্বরে এনে রাখা। বাঁক এলাকার কবিতার আয়োজনে ঈষৎ মনোনিবেশের গুরুত্ব, কেননা যেখানে প্রান্তিক অর্থবোধকতার রদবদল।
সমগ্রের ইস্যু বের করা কঠিন। জীবন ছন্দের স্ফূরণ স্থানিকতা নির্ভর, আঞ্চলিকতার তন্ময়ে। এভাবে যাপনের প্রত্যেক এলাকায় ছন্দের প্রতিফলনের রহস্যকে বিশ্লেষণ করলে কবিতার ছন্দের সঙ্গে তার যোগসূত্র তাৎপর্য এবং অনিবার্যতা স্বয়ং স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সমন্বয়ের ঔচিত্য ধরা দেয়। গতি ও সমন্বয়ের প্রসঙ্গেই আয়রনি। অর্থাৎ আয়রনি দেখতে হয় জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে। মেজাজের দিক থেকে, নিহিতার্থ ও বহিরার্থে যোগসূত্রে একই খেলা।
সংখ্যানির্ভর ছন্দও এমনই মায়াজাল। একা একা কোন অহং-এর অস্তিত্ব নেই, টিকে আছে অন্যপক্ষ আছে বলেই। প্লুবালিজমের তাৎপর্যের একটি অন্যতম দিক। কবিতা সনাক্ত করে সেই অন্যপক্ষকে। শব্দের কোন দ্ব্যর্থহীন অর্থ নেই। অর্থ দাঁড়ায় তার অবস্থানের প্রেক্ষিতে। শব্দের এ স্থানিকতা অর্থবোধকতার স্থানিকতায় প্রতিফলিত হয়। অবস্থান বা স্থানিক সম্পর্ক ছন্দ আয়োজনকে ব্যাখ্যা করে। তার প্রকৃতি প্রত্যয়ে যতই অর্থ বদল ঘটতে থাকে, অবস্থান বা স্থানিকতা নতুন অর্থবোধকতার দিকে ঠেলে দেয়। সম্পর্ককে বা সম্পর্কের সমমর্যাদা তার বিবেচনে মিলের তাৎপর্য বহন করে। পার্থক্যগুলোর পারস্পরিক স্থানিক অবস্থান। ঠিক যেমন প্রান্তিক জীবন সম্পর্কে কেন্দ্রিকতার ধারণা। যা বোধ হয়, তার স্থানিকতাকে সনাক্ত না করায় কিংবা সমমর্যাদা না দেয়ায়। ছন্দবদলের সীমালঙ্ঘনের প্রতি সহনশীলতা ও ধারণাগুলো গড়ে ওঠে। ভেদ যেভাবে অভেদকে ক্রমশ সনাক্ত করে। সেখান থেকে বের করে আনে অপ্রচলিত শব্দ সম্পর্কের সাজগোজ ফেলে দিলেই অর্থবোধকতার এক ভিন্ন অস্থিরতা সৃজিত হয় যা স্বাভাবিকভাবে হতে থাকে বাঁক এলাকায়, যেখান থেকে সম্পর্ক সূত্রের তল্লাশী। যা দ্রষ্টা ও দ্রষ্টব্যের মধ্যে দূরত্ব গড়ে দিতে থাকে। ফলে বাড়ে কেন্দ্রিকতা ও প্রান্তিকতার ব্যবধান। এই ব্যবধানের ফলে পরিপূরকতার বোধ ব্যাহত হয়। কেননা জীবনের বা জীবের আয়োজনের লক্ষ্য পূর্ণতার বোধ, অনবচ্ছিন্ন চেতনা। এ নাগালের দিকে নিয়ে যেতে চায় চেতনা কাঠামো। চেতনায় স্বায়ত্ত বজায় রাখে সম্পর্কের গভীরতা। জীবনছন্দের সেই বাঁক এলাকার অন্বেষণ। এ অন্বেষা আনে আত্মানুসন্ধানের মুখোমুখি। কবিতা নতুন করে পাশ ফেরার সুযোগ পায়। আত্মসম্পূর্ণতার অহং ঘিরে ফেলে, আনে নতুন আঞ্চলিকতার বিপন্নতা, যে যার মতো ফুঠে ওঠে নিজের ভঙ্গিমায় পরিপূরকতার সুর বজায় রেখে তার প্রতিফলনের অপেক্ষা। এ টান প্রকৃতি প্রদত্ত পরিপূরকতার ধারণা থেকে আত্মসম্পূর্ণতার দিকে, তার গতিপথ আত্মসম্পূর্ণতার বৈধতা থেকে মান্য পরিপূরকতার দিকে। একইভাবে কেন্দ্র ভেঙে দেয়ার তোড়জোড়। প্রান্তিকতার গন্তব্য যেখান থেকে শুরু।
বহুত্ববাদ স্পর্শ করে কবির সামাজিক অবস্থান আর জীবনসূত্রের অবস্থান মতো। যাপনের সর্বত্র যা প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য। যখনই স্থানিকতা বা আঞ্চলিকতার একজোট স্পষ্ট করে তোলে পার্থক্যের বা বহুত্বের বহুরৈখিকতার, অবলোকন পদ্ধতিতে এবং প্রকৃতিপ্রদত্ত অনবচ্ছিন্ন থেকে সরে আসে অবচ্ছিন্নে, এই অবচ্ছিন্নের সবচেয়ে বড় ধারক ভাষা স্বয়ং। যেজন্য ভাষাকে অবচ্ছিন্নের ভার থেকে মুক্তি দেয় কবি। সেই মুক্তির দিকে রচনা করে চলে নিত্য নতুন আয়োজন। ভাষা যেখানে যাপনের আঞ্চলিক এলাকানির্ভর। মানব নিয়ন্ত্রিত ভাষার অনবচ্ছিন্নে যার আশ্রয়। সবকিছুকে এক বিশ্বনিখিলের আশ্রয়ে আনার প্রয়োজন। এ আয়োজন পৃথক অর্থবোধকতার সন্ধানে। ভাষার অবচ্ছিন্নের ভার থেকে মুক্তি। বাঁক এলাকানির্ভর ভাষার নবাঞ্চল থেকে অনবচ্ছিন্নের যাত্রা। ভাষা আর অনবচ্ছিন্ন সমার্থক। সেই অনবচ্ছিন্ন ভাষা আয়োজনের সাধন প্রকল্পের যাত্রা যেমন অভেদের দিকে, তেমনই সবদিকে অভেদের ক্রমমিলনের প্ররোচনা। এভাবে প্রতিটি শব্দ একটি সূত্রায়নে গাঁথা। যা প্রত্যয়ের সূত্র। এদিকেই যাপনের যাবতীয় আয়োজন। প্রকৃতি প্রত্যয়ের সম্পর্কের এই লক্ষ্য। প্রান্তিকতায় যার সর্বোপরি গন্তব্য। যেভাবে পার্থিব আয়োজনের সর্বত্র সেই নিয়মের জাগরণ। অনবচ্ছিন্ন বোধের গভীরে সেই উপস্থিতি। যেজন্য কবি বলেন, হয়ে ওঠা। তাই যাপনের সর্বত্র এই সম্পর্কসূত্র ব্যাখ্যা করা হয় এবং মিলনের সম্ভাবনার পথগুলো বিশ্লেষণ করা। কবির কাজ এই সর্বমাত্রিক মেলবন্ধকে ব্যাখ্যা করা এবং তাকে ঘটমান করে তোলা। সংগতি তার অভিপ্রায়। কেন্দ্র যেখানে সদা আক্রান্ত। প্রাকৃতিক দ্বৈরাজ্য যে কারণে সদাদ্রোহী। কবি প্রচলিত ভাষামিথ ভেদে দেন। কারণ ভাষামিথ অর্থবোধকতার কেন্দ্রের ধারক। জীবনের সর্বত্র ভাষামিথের আধিপত্যের ও প্রভুত্বব্যঞ্জকতার এই ভূমিকা বোধকে চারিয়ে যাপনের সর্বত্র জাগিয়ে রাখে। যেজন্য ইজমের পরিসরকে অতিক্রম করে সমমর্যাদার প্রশ্নকে সবার ওপরে রাখে। সর্বমাত্রিক সাম্যের জন্য সংঘর্ষ তার চরিত্রের মর্মে। মিথ ভেঙে ফেলাই কবিতা যা বিপরীত দিক তাতিয়ে রাখে। কর্তৃত্বের ধারণা ছিল তার উৎসে। অনবচ্ছিন্নের সমান্তরাল পরিসকে উন্মোচিত রাখে মিথ, পালন করে ভাষাবদলের ভূমিকা। অন্যদিকে কবিতাভাষা কর্তৃত্বমূলক বাচনের এক কেন্দ্রিকতাকে শিথিল করে দিয়ে পরিবর্তমান বাচনপরিসর নির্মাণ করে। এ নির্মাণ নির্দিষ্টতা ব্যাগ্র, সীমাব্যাকুল শব্দ, অর্থবোধকতা আর ধ্বনিবোধ অতিক্রমণ। নিরন্তর নির্দিষ্টতা ব্যাগ্রের যথার্থতা অন্বেষণ। কারণ, ভাষাবদল ও শব্দ আয়োজনের পরিবর্তনের লক্ষ্য, যাপনের আয়োজনে পরিবর্তনের চেতনা কাঠামো। ভাষামিথ এ সর্বমাত্রিক মেলবন্ধকে ব্যাখ্যা করে যেখানে ‘সম’ শব্দের স্পর্শ সর্বমাত্রিক সাম্যে। শব্দ অর্থ ধ্বনির ত্রিসীমানা। যেভাবে জীবন বদলায় তার সমান্তরাল এই পরিবর্তন। ভাষামিথ শিল্প আর জীবনে যে যোগসূত্র। সাংখ্য এই অখণ্ডকতাবোধের হাতছানি গড়ে তুলতে চায়। বোধময়তার অতলে যে ব্যাকুলতা তা আবহমানতায়, ক্রিয়মানতায় চিহ্নিত হয়। যা আরও ক্রমপরিণত ভাষামিথান্তিকে। এই অনিবার্যতা যাপন ও শব্দার্থের আদিগন্তে।
*************










১৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×