somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য : সাক্ষাৎকার

১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়ে অমূলক আশঙ্কারও ছাপ পড়েছে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে। সেইজন্য জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের প্রশ্নে সরকারের নীতি আরও স্পষ্ট করা দরকার। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একথা বলেছেন। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের ৩২ বছরে পদার্পণের প্রাক্‌কালে গণশক্তিকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এবিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অজয় দাশগুপ্ত । সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তবে এটাও ঠিক, কয়েকটি ক্ষেত্রে যেমন এই কাজে বাধা এসেছে, তেমনি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষের সমর্থন ও সহমতের ভিত্তিতেই জমি নেওয়া হয়েছে। তাই বাধাটাই মূল নয়, সেটা ব্যাতিক্রম। তা সত্ত্বেও আমরা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।[/si


গণশক্তিঃ গত ৩১ বছর ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রায়ে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার জনস্বার্থে কাজ করে চলেছে। এই সরকারের সাফল্যগুলির মধ্যে কোন দিকটিকে আপনি বিশেষভাবে চিহ্নিত করতে চান ?

ভট্টাচার্যঃ বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্যের কেন্দ্রে রয়েছে ভূমি সংস্কার, যারফলে এরাজ্যে গ্রামের গরিব মানুষের হাতে জমি এসেছে। শুধু প্রশাসনিকভাবে নয়, অনেক সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই এই সাফল্য এসেছে। প্রশাসন পরবর্তীতে তাঁদের হাতে পাট্টা তুলে দিয়েছে। ভূমি সংস্কার কর্মসূচীর সাফল্যের কারণেই পশ্চিমবঙ্গে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ একর কৃষিজমির সিংহভাগ গ্রামের গরিব মানুষের হাতে, প্রায় ৮৪ শতাংশ। আর এরসঙ্গেই এসেছে পঞ্চায়েতী রাজ। যেহেতু গ্রামের গরিবের হাতে জমি, তাইজন্যই সম্ভব হয়েছে গরিব মানুষের হাতে পঞ্চায়েত। এরই ফলে কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য আমরা অর্জন করেছি। ধান, পাট, আলু, সবজি, ফল,ফুল উৎপাদনে আমরা গোটা দেশে এগিয়ে।

গণশক্তিঃ ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের ব্যাপকসংখ্যক মানুষের ইতিবাচক রায়ে সপ্তমবারের জন্য পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হলো। কৃষির সাফল্যকে সংহত করে কৃষির ওপর ভিত্তি করে শিল্প গড়ার যে স্লোগানকে মানুষ নির্বাচনে বিপুলভাবে সমর্থন করলেন, পরবর্তী সময়ে সেই স্লোগান রূপায়ণে এত বাধার সম্মুখীন হতে হলো কেন ?

ভট্টাচার্যঃ ২০০৬ সালের নির্বাচনে কৃষির সাফল্যকে সংহত করে কৃষির ওপর ভিত্তি করে শিল্প গড়ার যে স্লোগান আমরা দিয়েছিলাম, তাতে অবশ্যই মানুষের সম্মতি ছিল। কিন্তু এই উত্তরণটা সহজ ছিল না। বিশেষ করে যাদের জমি হস্তান্তর হবে, তাদের দিক থেকে তো বাধা আসবেই। সেইজন্য জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের প্রশ্নে আমাদের নীতি আরও স্পষ্ট করা দরকার।

গণশক্তিঃ রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রশ্নে বামফ্রন্ট সরকারের আন্তরিক প্রয়াসের সঙ্গে অন্য সবকটি রাজনৈতিক দলের সহমত গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না কেন ? ব্যাপকতম জনগণকে সমবেত করার ক্ষেত্রেও কি ঘাটতি থেকে যাচ্ছে না ?

ভট্টাচার্যঃ ভূমি সংস্কার ও কৃষকের হাতে জমি দেওয়ার কর্মসূচী ব্যা পক ঐক্যমতের ভিত্তিতেই করা হয়েছে। কারণ এটি জমিদারতন্ত্র বিরোধী ও গণতান্ত্রিক। কিন্তু শিল্পায়ণের ক্ষেত্রে যখন ব্যক্তিগত পুঁজির প্রশ্ন আসছে এবং যার বিকল্প এই মূহুর্তে আমাদের হাতে নেই, সেখানে বিরোধী রাজনৈতিক দল, শরিক দলগুলির মধ্যে বিভ্রান্তি থেকে যাচ্ছে। এই বিভ্রান্তি জনগণের একাংশের মধ্যেও বিস্তৃত হয়েছে। আবার সকলেই বলছেন, আমরাও শিল্পায়ন চাই, কেউই শিল্পায়নের বিরোধী নই। কেবল পথ ও পন্হা নিয়ে বিতর্ক। আলোচনার মধ্যে দিয়েই আমাদের এর মীমাংসায় পৌঁছোতে হবে। ব্যক্তিপুঁজি, বৃহৎ বা বহুজাতিক পুঁজির বিষয়ে শরিকদের দ্বিধা সম্পর্কেও আমরা সচেতন।

গণশক্তিঃ আপনি বারবারই বলছেন, গরিব মানুষের দিকে লক্ষ্য রেখেই বামফ্রন্ট সরকার তার উন্নয়ন কর্মসূচী পরিচালিত করছে। তা সত্ত্বেও সেই গরিব মানুষের একটি বড় অংশের মধ্যে বামফ্রন্ট সরকারের উন্নয়নের বিকল্প অভিমুখ সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দুর্বলতা কোথায় থেকে যাচ্ছে ?

ভট্টাচার্যঃ বামফ্রন্ট সরকারের সব কর্মসূচী রূপায়ণের অভিমুখই হলো রাজ্যের শ্রমজীবী গরিব মানুষ। অন্য রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে আমাদের পার্থক্য এইখানেই। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে বামপন্হী বিকল্প হলোঃ প্রথমত, ভূমি সংস্কার, পঞ্চায়েতী ব্যবস্হা ইত্যা দি। দ্বিতীয়ত, কর্মসংস্হানের সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে শিল্পায়ন, বিশেষ করে ম্যােনুফ্যাগকচারিং সেক্টর ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে গুরুত্ব দেওয়া। তৃতীয়ত, সর্বশিক্ষা, সর্বস্বাস্হ্য, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাসদি কর্মসূচী। এগুলি হলো আমাদের কাজের অভিমুখ। তবে এটা ঠিক যে এসব সত্ত্বেও গরিব মানুষের একাংশের কাছে আমরা পৌঁছোতে পারছি না। সরকার, পঞ্চায়েত, পৌরসভা এবং সর্বোপরি পার্টিকে অবশ্যই এই দিকটিতে বিশেষ নজর দিতে হবে।

গণশক্তিঃ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কয়েকটি জেলায় বামফ্রন্টের জনসমর্থন তুলনামূলকভাবে হ্রাস পেয়েছে। কেন এরকম হলো, আপনি কি মনে করেন ?

ভট্টাচার্যঃ পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলের আমরা সামগ্রিক পর্যালোচনা করছি। প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, যেসব জেলা বা অঞ্চলগুলিতে আমাদের জনসমর্থন হ্রাস পেয়েছে, সেখানে সাধারণভাবে কয়েকটি কারণ বের হয়ে এসেছে। যেমন, পার্টি ও গণসংগঠনের দুর্বলতা, বামফ্রন্টের শরিক দলগুলির মধ্যে অনৈক্য, বিরোধীদের প্রচারের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রচারের দুর্বলতা, সর্বোপরি জমি অধিগ্রহণ নিয়ে অমূলক আশঙ্কা। এই সমস্ত বিষয়গুলিকে আলোচনা করেই আমাদের পরবর্তী কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে হবে।

গণশক্তিঃ দার্জিলিঙের সাম্প্রতিক সমস্যাঠ কোন পথে সমাধানের কথা ভাবছেন ?

ভট্টাচার্যঃ দার্জিলিঙ সমস্যা সমাধানে আমাদের ধীর-স্হির হয়ে এগোতে হবে। কারণ বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, এর সঙ্গে জাতিসত্ত্বার প্রশ্ন যুক্ত। আলোচনার মধ্যে দিয়েই আমাদের রাজনৈতিক সমাধানসূত্র বের করতে হবে। পাহাড় ও সমতলে আমরা একসাথেই থাকতে পারি। শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখাই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রাখতে হবে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কেন্দ্রকেও বিষয়টি অবহিত করেছি। আলোচনার মধ্যে দিয়েই এর মীমাংসা করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:২৫
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×