somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রীলঙ্কায় তামিল জনগন সম্ভবত একটি গনহত্যার সম্মূখীন হতে যাচ্ছে।

১২ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রকেট লাঞ্চার কাঁধে লিবারেশন টাইগার্স অভ তামিল ইলম-এর দুজন গেরিলা সদস্য। শ্রীলঙ্কার উত্তারাঞ্চলে মুক্ত ও স্বাধীন তামিলভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তামিলদের জঙ্গি সংগঠনটি। আজ অবধি মুক্ত ও স্বাধীন তামিলভূমি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সফল না হলেও দীর্ঘদিন ধরে আর্ন্তজাতিক মহলের চোখে স্বন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্ণিত হয়েছে সংগঠনটি এবং সংগঠনটির প্রধান ভেলুপিললাই প্রভাকরণ। লিবারেশন টাইগার্স অভ তামিল ইলম দিনে দিনে শক্তিশালী হয়ে উঠলেও শ্রীলঙ্কার সরকারি বাহিনীর সাম্প্রতিক অপরেশনে মুখে সংগঠনটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে।

শ্রীলঙ্কায় তামিলরা ঠিক কোনওভাবেই বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়; তারা প্রতিষ্ঠা চায়-রাষ্ট্র, ভাষা ও সংস্কৃতির। বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে সিংহলীদের সম্পর্ক ভালো। কাজেই এদেশে তামিলমাত্রই জঙ্গি-এমন একটা ভ্রান্ত ধারনা প্রচার পেয়েছে। অবশ্য আমরা অন্য কথা বলব। বলব যে, বিশেষ পরিস্থিতিই মানুষকে জঙ্গি করে তোলে। যেমন, ফিলিস্তিনে হামাস-নেপালে মাওবাদীরা। এবং আমাদের মনে রাখতে হবে যে শ্রীলঙ্কায় তামিল জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বাস করে আসছে-তারা কোনওমতেই দ্বীপটিতে অর্বাচীন কিংবা অনাহূত নয়-ইতিহাসের সাক্ষী তেমনই। বরং, সংখ্যালঘু বলেই তামিলা বরাবরই সংখ্যাগুরু সিংহলীদের চাপ ও আগ্রাসনের মুখে ছিল। ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতার পর পরই ১৯৪৮ সালে সিংহলী রাষ্ট্রনায়কেরা তামিলদের ওপর 'সিনহালা' ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার অপচেস্টা করেছিল যেহেতু শ্রীলঙ্কায় প্রায় ৭০ ভাগ লোকই সিনহালা ভাষায় কথা বলে! সংস্কৃতির উপর আক্রমন হলে যা হয়-ফলাফল হয়েছে ভয়াবহ: সত্তরের দশকের মাঝামাঝি ভেলুপিললাই প্রভাকরণ জাতীয়তাবদী তামিল সংগঠন 'লিবারেশন টাইগার্স অভ তামিল ইলম' প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে এই সংগঠনটি ঘিরেই তামিলরা জঙ্গি হয়ে ওঠে এবং সঙ্গত কারণেই শ্রীলঙ্কার তামিল জনগন পৃথক একটি তামিল রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে থাকে। কাজেই তামিলদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা ঠিক নয়। শ্রীলঙ্কায় তামিল টাইগারদের ভূমিকা অনেকটা হামাসের মতন-সিংহলীরা এক্ষেত্রে ইজরেলের নির্মম ভূমিকা নিয়েছে মাত্র।
গত কয়েক মাস ধরে দ্বীপটির উত্তরাঞ্চলে তামিল গেরিলাদের ওপর শ্রীলঙ্কার সরকারি বাহিনীর প্রবল আক্রমনের মুখে প্রভাকরণ ও তার সংগঠনটি প্রায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। এরইমধ্যে সেখানে তামিল টাইগারদের বেশ ক'টি ঘাঁটি হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। মিডিয়ায় নিয়মিত সেসব সংবাদ এলেও বর্তমানে গাজায় ইজরেলি অমানবিক আক্রমনের ফলে বিশ্ববাসীর চোখ এখন ফিলিস্তিনে। ওদিকে সরকারি বাহিনীর প্রবল আগ্রাসনের পর থেকেই হাজার হাজার তামিল জনগন ঘরবাড়ি ছেড়ে গভীর অরণ্যের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাপক এক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ায় লক্ষ লক্ষ তামিল নারীপুরুষশিশুর জীবন হয়ে পড়েছে সঙ্কটাপন্ন।
তামিল গেরিলাদের ওপর সরকারী দলের চূড়ান্ত বিজয়ের পর তামিলঅধ্যুষিত এলাকায় সরকারী সৈন্যরা ব্যাপক গনহত্যা চালায় কিনা- প্রশ্ন এখন এটাই। অবস্থা বিশ্লেষন করে মনে হয়- নতুন ভাবে তামিল টাইগারদের উত্থানের যে কোনওধরনের সম্ভাবনাই সমূলে উপড়ে ফেলার জন্য যা যা করণীয় শ্রীলঙ্কা সরকার তাই করতে যাচ্ছে । দুঃখজনক হলেও সত্যি-সে রকম র্দুভাগ্যজনক সম্ভাবনা মোটেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রথমত: আর্ন্তজাতিক পর্যবেক্ষক মহলের দৃষ্টি এখন ফিলিস্তিনে। দ্বিতীয়ত: আমাদের মনে থাকার কথা-প্রথম মহাযুদ্ধের ডামাডোলের সুযোগেই তরুণ তুর্কিরা আর্মেনিয়দের ওপর ব্যাপক গনহত্যা চালিয়েছিল। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতিও অনেকটা সেরকম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে মনে হয়। শ্রীলঙ্কার তামিলবিদ্বেষী নীতিনির্ধারক মহলটি সম্ভবত এই রকম অভাবনীয় সুযোগটি (!) হাতছাড়া করতে চাইবেন না। গনহত্যার পর শ্রীলঙ্কা সরকার প্রাণহানির বিষয়টি তাদের 'অভ্যন্তরীণ বিষয়' বলে এড়িয়ে যাবে; ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি গনহত্যার সময়ও পশ্চিম পাকিস্থানী শাসকগোষ্ঠী সে রকমই দাবি করে বসেছিল!
আসলেই কি শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দ্বীপটির উত্তরাঞ্চল থেকে তামিলদের নিশ্চিহ্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে? ইজরেল যেমন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যুর বিনিময়ে হলেও হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাদা ফসফরাস ছিটিয়ে!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৩৮
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×