somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রফেসর গলদঘর্মের ক্লিয়ার কথা

১০ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পড়তে হবে, পড়তে হবে বলে কানটা তো ঝালাপালা করে ফেলল! কিন্তু বললেই কি হবে নাকি। আমি কি আর কম পড়ি নাকি! কিন্তু কি যে হয় ছাই কিছু বুঝি না। পড়ি, মনে থাকে না। শুধু পড়ার কথাই বা কেন। এই তো সেদিন মায়ের গা জ্বালানো সব বকাবকি সহ্য করতে না পেরে বললাম, দাও বাজারের ব্যাগটা। আজ আমিই না হয় করে দিই। মায়ের কাছ থেকে বার দু’য়েক শুনে নিলাম কি কি লাগবে ঘরের রান্নাঘর সচল রাখতে। বাজারে গিয়ে পেঁয়াজটা কেনার পরে কিছুতেই মনে করতে পারছি না আর কি যে নিতে বললেন মা। কি ঝামিলা বল তো দেখি। এদিকে আমার বড় বোনটাকে দেখ। সে একটা জ্যান্ত টেপ রেকর্ডার মেশিন। তার স্মরনশক্তির জ্বালায় মহা অসুবিধা হয়ে যায় আমার। বুঝলে না তো? আরে দেখ না- এক সপ্তাহ আগে বলেছিলাম সামনের রোববার স্কুল বন্ধ থাকতে পারে, ঐদিন স্যারদের নাকি কি বিষয়ে মিটিং আছে। পরের সপ্তাহে তো তক্কে তক্কে ছিলাম স্কুলের নাম করে বেরিয়ে সারাদিন বেশ টইটই করা যাবে। কিন্তু না, আমার মহামান্য বড় বোন এসে ঠিক ধরে ফেললেন, যাচ্ছ কোথায় চাঁদু! বলেছিলে না আজ স্যারদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে মিটিং, স্কুল বন্ধ থাকবে। দেখ দেখি, বলেছিলাম আমি কিন্তু স্যারদের বেতনের কথাটা আমিই ভুলে বসে ছিলাম। আব্বার ধারনা আমার মাথাটায় যা আছে কেবল পিওর গোবর। আমি এ ধরনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে আপার কাছে বিবৃতি দিতে যাই। কিন্তু সে বলে, প্রুভ ইওরসেলফ। প্রমান করে দেখা তোর মাথায় গোবর নেই অন্য কিছু আছে।
তো আমি অনেক ভেবেচিন্তে এক গরুর ব্যাপারির কাছে গেলাম কি করা যায় পরামর্শ করার জন্য। সে বলল এ ব্যাপারে তার খুব ভাল ধারনা নেই। তবে আমি পাশের বস্তিতে রহিমার মা যে কিনা তার কাছ থেকে গোবর নিয়ে ঘুঁটে তৈরি করে তার কাছ থেকে খবর নিতে পারি। বস্তিতে গিয়ে রহিমার মায়ের কাছে বিষয়টা উপস্থাপন করতে সে বলল এ ব্যাপারে তার বিশেষ কিছু করণীয় নেই। তবে আমি পেটের কোন ডাক্তারের সাথে কথা বলে দেখতে পারি। কারণ তার দৃষ্টিতে পেট ভরা ও ভাল থাকলে সব কিছু বেশি বেশি মনে থাকে। গেলাম পাড়ার এমবিবিএস ডিগ্রীহীন ডাক্তারের কাছে। সে বলল এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কোন পন্ডিতের সাথে কথা বলতে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যাকেই জিজ্ঞেস করি পন্ডিত কোথায় পাই সেই হাত তুলে বলে আমিই তো পন্ডিত। বল কি জানতে চাও, ফ্রম আলপিন টু এটম বোম্ব- সব বলে দিচ্ছি। এ তো ভাল ঝামিলায় পড়া গেল। তখন দেখা হয়ে গেল আপার এক বন্ধুর সাথে। সে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আরেক পন্ডিত এই পরিচয় দেয়ার আগে বলল আমার সমস্যাটা নিয়ে তার কিছু করণীয় আছে। আছে! আমি তো যেন আব্বার পকেটে ভুলে ফেলে যাওয়া টাকার সন্ধান পেলাম। কোথায়, কি করতে হবে আমাকে?

বিশেষ কিছু না। বন্ধুটি জীববিজ্ঞান বিভাগের একজন ছাত্র। তার এক শিক্ষক আছেন- প্রফেসর গলদঘর্ম। তার কাছে নিয়ে গেলেই তিনি আমাকে মাথার ভেতর কি বস্তু থাকে তা বলে দিতে পারবেন। উত্তম প্রস্তাব। চলুন যাওয়া যাক। নিয়ে যাওয়া হল আমাকে তার চেম্বারে।

প্রফেসর গলদঘর্ম নাম শুনে ভেবেছিলাম দেখতে অনেকটা বুনো মোষের মত দেখতে কিছু হবে। তা কিন্তু না। কি সুন্দর চেহারা। যেন একদম ঋত্বিক রৌশন। সুন্দর ছিপছিপে শরীর, হাফহাতা সাদা গেঞ্জিতে তার ফোলানো মাসলগুলো দেখা যাচ্ছে। তিনি মিষ্টি হেসে শুনলেন সব কথা। তারপরে বললেন, তাহলে শোন। তিনি যা বললেন তা অনেকটা এরকম।

আমরা যখন বলি ‘মনে’ থাকে না তখন তো জিজ্ঞেস করাই যায়- আচ্ছা তাহলে মনটা শরীরের কোথায় থাকে? মাথায় না পেটে? বিজ্ঞানীরা বহুদিন হিসেব নিকেশ করে বললেন আরে মন বলে কোন জিনিস তো আসলে শরীরে থাকে না। আমাদের মগজটা যে সব কাজকর্ম করে তার একটা ধরনকেই আমরা বলি মন। সে জন্য মনে থাকা আর না থাকার সমস্যাটা আসলে মগজের সমস্যা, মগজেই তার সমাধান খুঁজতে হবে। এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে- বিজ্ঞানীদের তো অনেক সাহস- তারা করলেন কি মানুষের মস্তিষ্কটাকে নিয়ে কেটেছিঁড়ে, ছবি তুলে, নেড়েচেড়ে পরীা করে দেখলেন ভাল করে। তারপরে এঁকে ফেললেন মস্তিষ্কের একটা ম্যাপ বা মানচিত্র। সেখানে বলা আছে কোন অঞ্চলে কি কাজ হয় তার বিস্তারিত বিবরন। এবার এই গঠনটা নিয়ে অনেক পড়াশোনা করে অ্যাটকিনসন আর শিফরিন নামের দু’বিজ্ঞানী একটা মডেলের মত দাঁড় করালেন। তারা বললেন, স্মৃতির স্তর তিনটি। প্রথম স্তর হল নোটবুক, দ্বিতীয় স্তর হল, স্বল্পস্থায়ী স্মুতি আর তৃতীয় স্তর হল দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি। এই তো কঠিন কথাবার্তা শুরু হয়ে গেল। আমি প্রফেসর গলদঘর্মের সামনে ঘামতে ঘামতে হাত তুললাম। স্যার?
বল মাই সন। মিষ্টি হেসে বললেন তিনি।
আমি আর জানতে চাই না। আমি বাড়ি যাব।
সরি সন। আমার সামনে একবার যে এসে পড়ে তার মগজটা মেরামত না করা পর্যন্ত তাকে তো আমি ছাড়ি না। প্রয়োজনে তাকে আমি চেয়ারের সাথে বেঁধে নিয়ে তারপরে বোঝাই। পাকানো শক্ত হাত মুঠো করে তিনি আমার সামনে ধরলেন।
ওরে বাবা। কি ঝামিলা! ঢোঁক গিলে বললাম, আচ্ছা বাঁধতে হবে না। বলেন বলেন।
ওকে। শোন তাহলে। আবার বলতে থাকেন তিনি।

স্মৃতির প্রথম স্তরটার নাম সহজ করে বলা যায় নোটবুক। আমাদের চোখ যা দেখে, কান যা শোনে, হাত যা স্পর্শ করে বা পায়ে যা ঠেকে সবই সংকেতের মত করে নোটবুকে অল্প সময়ের জন্য ধরা থাকে। ইংরেজিতে একে বলে ংবহংড়ৎু ৎবমরংঃবৎ, আমরা বাংলায় বলছি শুধু নোটবুক। সব ইন্দ্রিয় একইভাবে সব কিছু নোটবুকে একইভাবে টুকে রাখতে পারে না। যেমন, চোখ যেখানে কোন সংকেত এক সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে কানের মতা সেেেত্র চার পাঁচ সেকেন্ড পর্যন্ত। আবার চোখ কিন্তু একই সময় দশ থেকে পনেরোটি পর্যন্ত তথ্য ধরে রাখতে পারে।
এরকম টুকে রাখা অবস্থার পরের ধাপটাই হল স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি। বোঝা গেল? কিয়ার?
আমি মাথা নাড়লাম, না। বোঝা গেল না। একেবারেই কিয়ার নয়, খুবই অপরিষ্কার।
ধর কাসে স্যার এত দ্রুত কথা বলছে যে তুমি লিখে কুল পাচ্ছ না। তখন কি করবে তুমি? সংক্ষেপে সংকেতের মত করে কিছু শব্দ লিখে রাখবে যাতে পরে দেখলে বুঝতে পারবে, তাই না? বাড়িতে গিয়ে কিছু সময় পরে যখন তুমি তোমার নোটটা দেখবে তখন তোমার মনে পড়ে যাবে স্যার কি নিয়ে কথা বলেছিলেন। কিন্তু যদি আলসেমি করে তুমি দু’দিন পরে নোটটা খোল তবে দেখবে তোমার নিজের লেখা সেই সব সাংকেতিক শব্দের অনেক কিছুই তুমি বুঝতে পারছ না। এই যে অল্প কিছু সময় পরে তুমি দেখা বা শোনা জিনিস মনে করতে পারছ এটাই হল স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি। স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিতে একসঙ্গে পাঁচ থেকে সাতটি তথ্য থাকতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা সাতের ওপর যাবে না। এখন কয়েকটা তথ্য মিলে যদি একটা প্যাকেট বা গুচ্ছ বানানো যায় তাবে তথ্যের সংখ্যাও বাড়ানো যাবে। যেমন আমাদের টেলিফোন নম্বর মনে রাখা। কোন একটা নাম্বার ধরা যাক- ০১৭১১৯৬৩৩৭; এটা মনে রাখতে আমরা কয়েকটা ভাগে ভাগ করে নিই। ০১৭-১১-১৯৬-৩৩৭- এভাবে চারটা ভাগ করে নিলাম। চারটা ভাগে মোট ১১ টি তথ্য জমা হয়ে থাকল। এভাবে মনে রাখাটাও সহজ হয়ে যায়। স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিটাকে যদি দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতির দিকে ঠেলে দেয়া না যায় তবে সে কিন্তু হাওয়া হয়ে যাবে। সবচেয়ে কম যে স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি তারও মেয়াদ বিশ থেকে ত্রিশ সেকেন্ড পর্যন্ত হয়। কিয়ার?
আর সেটা সারা জীবন মনে রাখতে হলে কি করতে হবে? জিজ্ঞেস করলাম আমি।
প্রফেসর গলদঘর্ম দু’হাতে দু’টো গাল চুলকে হাসলেন। বলতে থাকলেন বাড়তি বাক্য ব্যয় না করে।
মস্তিষ্কের তিনটি অংশ সবসময় স্বল্পস্থায়ীকে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে গেঁথে ফেলার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। এজন্য যেটা মনে রাখতে চাই তার প্রতি মনযোগ দরকার, দরকার বারবার সেটা পুনরাবৃত্তি করা। এই পুনরাবৃত্তি মানে কিন্তু মুখস্থ করা নয়। আমাদের মস্তিষ্ক কিন্তু কেবল টেপ রেকর্ডারের মত কোন তথ্য স্মৃতিতে ধারন করে রাখে না। যে কোন নতুন তথ্য মাথায় ঢোকার আগে তাকে আগে থেকে জমে থাকা অন্য তথ্যগুলোর সাথে তর্ক বিতর্ক করতে হয়। কিছু বিষয়ে এদের মেলে, কিছু বিষয়ে মেল না। ঐ মেলা-না মেলা নিয়ে তথ্যটা পায় একদম ভিন্ন এক চেহারা। ঐ ভিন্ন চেহারা তথ্যটা জায়গা করে নেয় দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে। কিয়ার?
আই নো আন্ডারস্ট্যান্ড। বিজ্ঞের মত ইংরেজিতে বলার চেষ্টা করি আমি। মানে বলতে চাইলাম বুঝতে পারিনি।
প্রফেসর গলদঘর্ম বললেন, জানতাম। শোন তাহলে।

ধরা যাক একজন লোকের সাথে আমাদের আলাপ হল। আলাপের মাঝে জানা গেল তার নাম আন্দালিব, বয়স ৩৫, ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক লোকসান করেছে, কথা বেশি বলে, দেখতে মোটাসোঁটা, গোঁফ আছে। এ সব হচ্ছে আমাদের চোখে দেখা আর কানে শোনা তথ্য। মস্তিষ্কের স্মৃতিতে তথ্যগুলো এভাবে কিন্তু জায়গা পাবে না। সেখানে বচার বিবেচনা চলতে থাকবে- আন্দালিব নামটা কঠিন কিন্তু আনকমন। কই এরকম নাম তো আমার রেকর্ডে নেই! লোকটা কেমন? বেশি কথা বলে। বেশি কথা বলা লোকেরা কি ভাল হয়? আমার আগের রেকর্ড বলে আব্দুল সাহেব বেশি কথা বলে কিন্তু লোক ভাল আবার পিন্টুও বেশি কথা বলে কিন্তু শয়তানের হদ্দ। তাহলে এ লোকটাকে কিভাবে দেখব? ব্যবসায় নাকি আবার লোকসান হয়েছে, মানে সে কি অতি সরল নাকি অতি চালাকি করতে গিয়ে ফেঁসে গেছে? রেকর্ড বলছে- এই দু’ধরনের লোকেরাই ব্যবসায় লস দেয়।
এইভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে আন্দালিব নামের লোকটা সম্পর্কে কিছু তথ্য পয়েন্ট আকারে আমাদের মগজে জমা হযে থাকবে। পয়েন্ট তিনটি হতে পারে- আন্দালিব অদ্ভূত নাম, সে ভাল নয় এবং দেখতে খারাপ। এই তিনটি পয়েন্টের লেজে গেঁথে থাকবে অন্য সব তথ্য। যেমন- আন্দালিব নামটার সাথে তার কথা বলার ভঙ্গি, সে ভাল নয় এর সাথে তার ব্যবসায় লোকসান বা বেশি কথা বলা এবং দেখতে খারাপ এর সাথে তার শারীরিক গঠন। মগজের যে তিনটি অংশ এসব কাজ করে তাদের নাম হল- টেম্পোরাল, হিপেক্যাম্পাস আর অ্যামিডগালা। কিয়ার?
দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি সব তথ্যকে সাজিয়ে রাখে লাইব্রেরির মত করে অর্থ বা শব্দের ক্রম অনুসারে। এ জন্য পরিচিত বা কাছাকাছি কোন শব্দ শুনলে আমরা সচকিত হয়ে উঠি- কোথায় যেন শুনেছি! স্মৃতি হল একরকম জালের মত। একটা শব্দের সাথে আরেকটা শব্দ জড়ানো। দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে কিছু রাখতে চাইলে তাই প্রথমেই দরকার চোখের সামনে এলোমেলো তথ্যগুলোকে নিজের মত করে গুছিয়ে নেয়া। প্রতিটি শব্দের সাথে থাকে কিছু দৃশ্য, কিছু ঘটনা। যখন আমরা বলি, কলম, তখন বিশেষ চেহারার এক লেখার জিনিসের ছবি দেখতে পাই। যখন বলি-ভালবাসা। তখন ভালবাসা সংক্রান্ত এক বা একাধিক ঘটনার কথা মনে পড়ে। এই শব্দ আর ছবিকে এক করে নেয় মগজটা। কিয়ার?

তাহলে স্যার?
কি ব্যাপার?
মানে সবই তো বুঝলাম। আমরা তিন ধাপে সব কিছু মনে রাখি। প্রথমে শুধু টুকে রাখি, তারপরে অল্প মনে রাখার চেষ্টা করি আর তারপরে অনেকদিনের জন্য মনে রাখতে সব সাজিয়ে রাখি। কিন্তু তারপরও আমরা তাহলে ভুলে যাই কেন?
প্রফেসর গলদঘর্ম মনে হয় পছন্দ করলেন না প্রশ্নটা। কটমট করে বললেন, আমি তো ভুলি না।
মানে আমি তো ভুলি।
ও আচ্ছা। ব্যাপারটা হচ্ছে... বলতে থাকেন তিনি।
দুটো কারণে এটা হতে পারে। একটা হল স্নায়ুকোষের সমস্যা। যে স্নায়ু দিয়ে মগজ সব সংকেত টুকে রাখে, সাজিয়ে রাখে- তারই যদি কোন কারণে তি হয়, বয়সের কারণে কাজের মতা নষ্ট হয় তাহলে স্মৃতিশক্তি দূর্বল হয়ে যাবে। আরেকটা কারণ হল মনস্তাত্বিক। অনেকদিন কেটে যেতে সাজানো তথ্যগুলো এলামেলো হয়ে যেতে পারে অনেকটা লাইব্রেরিতে বইয়ের মলাট ছেঁড়া বা ভুল র‌্যাকে বই উঠে পড়ার মত ব্যাপার আর কি। মনে করে উঠতে না পারা কিন্তু ভুলে যাওয়া নয়, যেমন করে মলাট ছিঁড়ে যাওয়া মানে বইটা নষ্ট হয়ে যাওয়া নয়। স্মৃতির তথ্যউদ্ধার করার জন্য কিছু সূত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। বইয়ের বিষয়, আকার ইত্যাদি সূত্র ব্যবহার করে ছেঁড়া মলাটের বইও খুঁজে ফেলে মেরামত করে ফেলা যায়। যেটা তোমরা ইয়াংম্যানরা অনেক ভালভাবে পার। কিন্তু মনযোগের বা আত্মবিশ্বাসের অভাবে অনেক সময় করে উঠতে পার না।
সব তাহলে আমারই চেষ্টার ওপর! চেষ্টা করলেই পারব?
অফ কোর্স। আর আরেকটা কথা। ভুলে যাওয়ার সাথে মানসিক আবেগর ব্যাপারও আছে। তীব্র আবেগের ঘটনা তা সে ভয়েরই হোক বা আনন্দেরই হোক- মনে থাকবে। আর তীব্রতায় কম যে আবেগ আমাদের ভাবাবেও কম, স্মৃতির লাইব্রেরিতেও থাকবে কোণার দিকে, নিতান্ত অবহেলায়। ক্লিয়ার?

তাহলে স্যার গোবরের ব্যাপারটা কি?
গোবরের বাপার মানে?
মানে ঐ যে আব্বা বলে মাথায় গোবর, মানে আমার মাথায় আর কি, আমার আপাও সেটা সমর্থন করে। আপনার মাথাতেও কি গোবর আছে?
প্রফেসর গলদঘর্ম আমার এ গভীর বেদনা থেকে উঠে আসা প্রশ্নটার গুরুত্ব বুঝতে না পেরে একে ফাজলামি হিসেবে ধরে নিলেন এবং আমার মগজে সংকেত পাঠানোর অন্যতম হাতিয়ার কান দুটোকে ধরে টেনে দুদিকে লম্বা করে তোলার চেষ্টা করতে লাগলেন। ব্যাপারটা পছন্দ না হওয়ায় কোনমতে কান ছাড়িয়ে নিয়ে আমি তার চেম্বার থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসি। পেছনে কিছুণ তাড়া করে একসময় হাল ছেড়ে দিলেন প্রফেসর। হাত মুঠো করে ঘুষি পাকিয়ে চিৎকার করে বললেন, আবার কিছু জানার ইচ্ছে হবে না? তখন এসে নাও। কিভাবে মগজের ভেতরটা পানি দিয়ে ধুয়ে দেই দেখতে পাবে।
বাসায় এসে আপাকে ডাক দিলাম গম্ভীর গলায়। আপা যে আমার হাব ভাবে যারপরনাই হতভম্ব সেটা বেশ বোঝা গেল। তার সামনে প্রফেসর গলদঘর্মের মত করে হাত নেড়ে বললাম, খবরদার মাথায় গোবর এমন অবৈজ্ঞানিক কথা আর কখনই বলবে না। ক্লিয়ার?
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×