আচ্ছা, আমি একটা মানুষের বর্ণনা দেই। কোথাও দেখেছেন কিনা ভেবে দেখুন। ভালোভাবে ভাববেন।।।
চুলগুলো পরিপাটি করে আচরানো। একদম সহজ সরল চেহারার ভাব। কারো সাথে কথা বলেনা। যাদের সাথে কথা বলে একদম অল্প। একদিকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ ধরে। মাথা নাড়ায় খুব আস্তে আস্তে। যেনো সদ্য ভুমিষ্ট কোন শিশু। পৃথিবীটাকে দেখছে। আমি যার বর্ণনা দিচ্ছি সে মোটেও শিশু নয়। সে হতে পারে ১৬বছরের কিশোর কিংবা ২৫বছরের যুবক। আমি নিজেও জানিনা তার আসল বয়স। কারণ এই "তার"-টা দ্বারা কোন নির্দিষ্ট মানুষকে বুঝানো হচ্ছে না। এই "তার" কথাটা দিয়ে বুঝানো হচ্ছে অনেকগুলো মানুষকে। যাদেরকে আপনারা দেখেছেন। প্রত্যেকেই হয়তো দেখেছেন।
আশ্চর্যরকমের এইরকমের সহজ সরল মানুষগুলোকে বলা হয় অটিস্টিক। অটিস্টিকরা আমাদের সাথেই আছে। কিন্তু তাদের চিন্তাধারা সম্পর্কে আমরা কখোনোই বুঝতে পারি না। তাদের বোকা-বোকা চেহারা আমাদেরকে বুঝিয়ে দেয় যে তারা মোটেও খারাপ নয়। আমার আগের লাইনটা ভুল নয়। আবার পুরোপুরি ঠিক নয়। মাঝে পড়ে। বোকা-বোকা চেহারার হলেও আর সাধারণ দশটি মানুষের মতোই তাদের মধ্যেও আছে প্রতিভা। প্রতিভাগুলোর বিকাশ করতে চায় না তারা। এককথায় বলতে গেলে নিজেকে তারা লুকিয়ে রাখে আলাদা একটা জগতে। যেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারেনা। তার এই জগতে প্রবেশ না করতে পারায় আশেপাশের মানুষরা যে কষ্ট পায় তা নিয়ে তারা ভাবেনা। কষ্ট পায় বললে ভুল হবে। অটিস্টিক'দের নিরীহ মুখটাকে দেখলেই চলে যায় সব কষ্ট।
অটিস্টিকদের নিয়ে বেশি লিখতে না যাওয়াই ভাল। প্রবাদে আছে, "Example is better than advice" বাংলা করলে একটু উল্টাপাল্টা শুনায়। তাই আর বাংলা করলাম না। সরাসরি উদাহরণে আসি। একেবারে বাস্তব উদাহরণ।।।
আমাদের শ্রেণীর আর দশটা স্বাভাবিক ছেলের মতো একজন স্বাভাবিক ছেলে হাসিব। তার সাথে আমার দেখা অষ্টম শ্রেণীতে। ছেলেটা অটিস্টিক। তাকে আমরা "মামা" বলেই ডাকি। সেও আমাদেরকে তাই বলে ডাকে। অষ্টম শ্রেণীতে তার সাথে প্রথম দেখা হলেও তার নাম যে হাসিব তার জানলাম নবম শ্রেণীর শেষের দিকে এসে। বোঝেন অবস্থা। হাসিব মানে মামা লেখাপড়ায় মোটেও ভাল না। শিক্ষকরাও তার উপরে মারাত্মক অসন্তুষ্ট। তার দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে তার মধ্যে প্রতিভা আছে। কিন্তু সে কখোনোই শিক্ষকদের কিছু জিজ্ঞেস করেনা। পরীক্ষার ফলাফল ভালো হবে কিভাবে? আমার সাথে তার সম্পর্ক ভালই। মাঝেমধ্যে খারাপ লাগে ওর জন্য। কিন্তু কি হবে ওর জন্য খারাপ লাগিয়ে। নিশ্চয়ই ওর-ও আলাদা একটা জগত আছে। মনের ভিতরে। যার খোজ আমরা এখনো পাইনি।
(ভেবেছিলাম বিজ্ঞানের একটা লেখা লিখবো। কিন্তু অনেক কিছুই লিখে ফেললাম। সেজন্য দুঃখিত।)
অটিস্টিক, যাদের মনের দরজাটা থাকে সবসময় বন্ধ!!!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফিরে দেখা - ১৩ মে
১৩ মে ২০০৬
দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
কাঁচা আম পাড়ার অভিযান
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমরা কেন এমন হলাম না!
জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি
২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন