জীবনে প্রথম যেটা হতে চেয়েছিলাম সেটা হলো লঞ্চের সারেং।তখন থাকতাম বরিশালে।মাঝে মাঝে বাবা মার সাথে ঢাকা আসতাম।আসতে হতো লঞ্চে।লঞ্চ ভ্রমনটা তাই আমার কাছে বেশ রোমাঞ্চকর একটা ব্যাপার ছিলো।ঢাকা বরিশাল রুটের লঞ্চ গুলো ছিলো বিশাল।পানির উপর দিয়ে চলা ছোটখাটো এক একটা হোটেল বলা চলে।সেই বিশাল জিনিসটাকে যে চালিয়ে নিয়ে যায় সেই সারেং হবার ইচ্ছা আমার হতেই পারে।তো আমি আমার বাসায় ঘোষনা দিয়ে দিলাম যে আমি সারেং হতে চলেছি।টুকটাক ছবি আঁকতে পারতাম। বাসার দেয়াল টেয়াল মোটামুটি নানা আকারের লঞ্চ টঞ্চ এক ভরিয়ে ফেললাম সারেং হওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে।খুদে সারেং এর অত্যাচারেই কিনা কে জানে একদিন আমাকে একটা ছোট খেলনা লঞ্চ কিনে দেয়া হলো।অল্প একটু কেরোসিন দিয়ে সেটা চালানো যায়। বাসার সামনে একটা ছোট খাটো পুকুর ছিলো। সেখানে শুরু হলো আমার সারেং হবার ট্রেনিং।সারাদিন সেখানে খেলনা লঞ্চ চালাই।তিন দিনের মাথায় আমার সাধের লঞ্চ পুকুরে ডুবে গেলো।ব্যাস সবাই আমাকে বুঝালো যে লঞ্চ যে চালাবি, লঞ্চ যদি এভাবে ডুবে যায়?তখন কি করবি?আমিও বিশাল সমস্যায় পরে গেলাম।এই দিকটা তো ভেবে দেখা হয়নি।অনেক চিন্তা ভাবনা করে অবশেষে সারেং হবার চিন্তা বাদই দিতে হলো।প্রথম জীবনের এইম ইন লাইফটা এখানেই শেষ।
এরপর হতে চাইলাম ‘ম্যাকগাইভার’।টিভি সিরিয়ালটা তখন তুমুল জনপ্রিয়।পুরো সপ্তাহ বসে থাকি সিরিয়ালটার জন্য।গোপনে ম্যাকগাইভার হবার প্রস্তুতিও চলতে থাকে।এবার আর বড় কাউকে জানাইনা।প্রথমবার তাদের চালাকিটা আমি ততদিনে বুঝে গেছি যাতে আমার সারেং হবার ইচ্ছেটা মাঠে মারা গেছে।দরজার উপর বালতি রেখে দেই,বালিশ থেকে তুলো বের করে শত্রুদের নাজেহাল করার জন্য ফাঁদ পাতি আরো কতো কি? কিছু কিছু তো একদম প্রথম শ্রেনীর ট্রাপ।তো আমার ‘ম্যাকগাইভার’ হবার ট্রেনিং খুব দ্রুতই শেষ হয় কারন আমাদের বাসায় যে মহিলাটা কাজ করতো সে একদিন আমার তৈরী ট্রাপে পড়লো।দরজার উপর মশারি দিয়ে একটা যুতসই নেট ট্রাপ তৈরী করে অপেক্ষা করছি আমার ফুফাতো ভাইটাকে ট্রাপে ফেলবো বলে, কথা নেই বার্তা নেই সেখানে এসে ঢুকে গেলো ওই মহিলা।আর ফাঁদে পরে সেকি চিৎকার। সবাই ছুটে এলো।তারপরের কথা আর কি বলবো, নাইবা বললাম। তবে কঠিন মাইরের পর আমার ম্যাকগাইভার হবার সব চেষ্টা বাদ দিতে হলো। কেউ বুঝলোনা কি প্রতিভা অকালে হারিয়ে গেলো।
এরপর খুব ইচ্ছা হলো ম্যারাডোনা হবো। তেমন ভালো খেলতে পারি না।পাড়ার ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলার চেষ্টা করি। বল পাইনা পায়ে। খালি বলের পেছন পেছন দৌড়াই। কারনে অকারনেই কেন জানি আছার খেয়ে পরি।কাপর ভর্তি ধূলাময়লা নিয়ে সন্ধ্যাবেলা বাসায় ফিরি। তাতে কি হয়েছে, ম্যারাডোনাও তো ফাউলের কারনে কতবার মাঠের মধ্যে গড়াগড়ি খায়। তাই আশায় বুক বাধি।কিন্তু আমার ম্যারাডোনা হবার ইচ্ছারও বিলুপ্তি ঘটে কারন প্রাকটিস করতে গিয়ে আছার খেয়ে পায়ের দুটো নখ উঠে যায়। কঠিন ব্যাথায় রাতে জ্বর আসে। এরপর বহুদিন বল ধরি নাই। আর ম্যারাডোনা হবার ইচ্ছাটাও ততোদিনে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
এরপর আরো বহুকিছু হতে চেয়েছি। কখোনো রোবোকপ, কখনো ব্যাটম্যান, কখনোবা তিন গোয়েন্দা। কোনটাই হওয়া হয়নি।এখনো চেষ্টা চলছে কিছু একটা হয়ে ওঠার। চেষ্টা করছি একজন ভালো মানুষ হবার। দেখি হতে পারি কি না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:০২