somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পারফিউম: দ্যা স্টোরী অব আ মার্ডারার

০৮ ই জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ একই রকম - দুটো হাত, পা, চোখ, কান, নাক, মুখ - অথচ ভিন্ন তার ভাষা, কার্যাবলী। এ কারনেই কেউ হয় প্রেমিক, কেউ বা প্রেমের নিষ্ঠুরতার শিকার, কেউ যোদ্ধা, কেউ চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের শিকার। বাহিরের পার্থক্য দৃশ্যমান হলেও ভেতরের পার্থক্যটা শুধুই অনুভবের। সে পার্থক্য ইন্দ্রিয়গত হলে তো কথাই নেই।

'পারফিউম: দ্যা স্টোরী অব আ মার্ডারার' একটি অস্বাভাবিক প্রখর ইন্দ্রিয়ের গল্প। জার্মান লেখক প্যাট্রিক সাসকাইন্ডের বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস 'পারফিউম' যা কিনা পৃথিবীর ৪৫টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে, অবলম্বনে পারফিউম মুভিটি তৈরী করেছেন পরিচালক টম টাইকার। এ গল্প জ্যা ব্যাপ্টিস্ট গ্রানুইলির যে একজন ভাগ্যাহত মানুষ ছাড়া আর কিছুই নয়। প্যারিসের এক মাছ বাজারের মধ্যে জন্ম নেয়া গ্রানুইলিকে তার মা অনাদরে ফেলে রেখেছিল পূর্বের চার সন্তানের মতই, জন্মের পরই মারা যাবার জন্য। কিন্তু গ্রানুইলি তো অন্যদের মত নয়, তাই মরে নি বরং বেচে উঠে এক অনন্য সাধারন ঘ্রানশক্তি নিয়ে।

সুগন্ধির রাজধানী ফ্রান্সের অষ্টাদশ শতাব্দীর এক নিপুন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে মুভিতে। যেখানে পৃথিবীর সেরা সুগন্ধি তৈরী হয়, প্রতিনিয়ত হাজার হাজার লোক খেটে যায় সামান্য সুগন্ধি তৈরী করে বাতাসে ভাসিয়ে দেয়ার, সেখানে প্রবল তীক্ষ্ম এবং সামান্য পার্থক্যকে আলাদা করার ক্ষমতা সম্পন্ন গ্রানুইলিই তো যোগ্য ব্যক্তি।


পরিচালক টম টাইকার এর আগে একবার বিশ্বকে জানান দিয়েছিলেন 'রান লোলা রান' মুভির মাধ্যমে। আর পারফিউম মুভির মাধ্যমে যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন সময় এবং স্থানের বাস্তবসম্মত উপস্থাপনে। বিশাল মাছের বাজার, প্রচুর মানুষ আর পোষাক খুব সহজেই বাস্তবে থেকেও শত বছর পিছিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।



আশ্রমে বড় হওয়া গ্রানুইলিকে বিক্রি করে দেয়া হয় একজন চামড়া ব্যবসায়ীর নিকট। কঠোর পরিশ্রমে কেটে যাওয়া দিনগুলোর মধ্যেও গ্রানুইলি নিজেকে আবিস্কার করে নতুন করে - বহু দূরের, জলের তলের গন্ধও সে চিহ্নিত করতে পারে অনায়াসে। একদিন যোগাযোগ ঘটে যায় গুসেপ্পি বালদিনির সাথে যে কিনা একজন গন্ধবণিক।
শর্তসাপেক্ষে বালদিনি গ্রানুইলিকে শিখিয়ে দেয় ফুল থেকে তেল আহরনের উপায়, শিখিয়ে দেয় উপকরনের নামসমূহ আর সুগন্ধি তৈরীর উপায়। শিখতে থাকে গ্রানুইলি আর চলতে থাকে পরীক্ষা নিরিক্ষা, যদি তেরো ধরনের গন্ধ সংরক্ষন করা যায় তবে তৈরী করা সম্ভব হবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সুগন্ধি। তারপর একদিন সে পাড়ি জমায় গ্রাসের পথে যেখানে তৈরী হয় পৃথিবীর বিখ্যাত সুগন্ধি সমূহ।



ফুল চাষাবাদের এবং সুগন্ধি তৈরীর কার্যাবলীর একটা বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় এখানে। বিশাল বিশাল ফুলের বাগানের সকল ফুল হাজার হাজার লোকের পরিশ্রমে নানাবিধ প্রক্রিয়ার পরে তৈরী হয় সামান্য একটু তেল আর তার সাথে বিভিন্ন উপকরন নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে তৈরী হয় সুগন্ধি। সেই সুগন্ধি বিক্রি হয় সমাজের বিত্তশালী রুচিশীল ব্যক্তিদের মাঝে, সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সুগন্ধি প্রস্তুতকারকের। আড়ালে থেকে যায় গ্রানুইলির মতো ব্যক্তিরা, জীবনের গল্পটাই এরকম।



প্রতিভাবান গ্রানুইলি সংরক্ষন করতে চায় সুন্দরী নারীর দেহের মাদকতা, আর তাই নির্বিচারে হত্যা করে যায় একের পর এক সুন্দরী নারীদের। তাদের দেহ থেকে বিচিত্র উপায়ে সংগ্রহ করে নেয়া হয় গন্ধ, যে গন্ধ এর আগে কেউ কোনদিন সংগ্রহ করতে পারেনি। আর নগ্ন লাশটি পড়ে থাকে বিভিন্ন জায়গায়। সুতরাং খোজ পড়ে যায় খুনীর যে কিনা শুধুই খুন করে কিন্তু কোন নির্যাতনের ছাপ রেখে যায় না। সবাই তটস্থ, কে বলবে পরবর্তী শিকার কে!



গ্রানুইলির চরিত্রে রূপদানকারী বেন হুইশা সম্পূর্ন চরিত্রটিকে তুলে ধরেছেন অসাধারন দক্ষতায়। একই চরিত্রে পাপহীনতা এবং নিষ্ঠুরতার বিস্ময়কর উপস্থাপন তাকে ভিন্ন রূপ দান করেছে। একবারেই নতুন বেন তার ভাঙ্গা চোয়াল, আর অবিন্যস্ত হাটাচলার মধ্য দিয়ে সেই বেনকেই তুলে ধরেছেন যা তুলে ধরেছিলেন লেখক প্যাট্রিক সাসকাইন্ড। পরিচালক টাইকার নিজেই বলেছেন নতুন এই অভিনেতা নির্বাচনের, "আমরা সেই অভিনেতাকে খুজছিলাম যে বইটির পাঠককে বিভ্রান্ত করবে না আবার নতুন দর্শককেও আকৃষ্ট করবে মূল উপন্যাসের প্রতি। বেন এ দিক থেকে সবচেয়ে যোগ্য" এ ধরনের চরিত্রের প্রয়োজনীয়তা মুভিটি দেখলেই উপলব্ধি করা যায়, সম্পূর্ন মুভিটি গ্রানুইলিকে ঘিরেই আবর্তিত, বাকীরা সময়ের প্রয়োজনে এসেছে, চলেও গেছে।


গ্রানুইলি একজন প্রেমিক, কিন্তু তার নিজের কোন গন্ধ নেই, কেউ অন্যান্য সকল মানুষের মতো তাকে ভালোবাসবে না, প্রেমিক গ্রানুইলি তাই নিজের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কাজ করে যেতে থাকে। সকল উপকরন তৈরী করতে আর একটি মাত্র মেয়েকে হত্যা করলেই হয় -সে বেছে নেয় ধনাঢ্য বাবা অ্যান্টোনিও রিচির সুন্দরী মেয়ে লরাকে যে হবে তার তেরোতম উপকরন যে উপকরন সুগন্ধিকে অনন্য সাধারন করে তোলে।



তৈরী হয় শ্রেষ্ঠতম সুগন্ধি, কিন্তু ধরা পড়ে যায় গ্রানুইলি, তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করার প্রস্তুতি নেয়া হয়। সারা শহর থেকে নারী পুরুষ সবাই জমায়েত হয়, তৈরীকৃত শ্রেষ্টতম সুগন্ধি নিয়ে হাজির হয় গ্রানুইলি, মাতিয়ে দেয় উপস্থিত সবাইকে। যে তৈরী করে পৃথিবীর শ্রেষ্টতম সুগন্ধি সে মানুষ নয়, অ্যান্জেল। সবাইকে মোহিত করে গ্রানুইলি হারিয়ে যায়, ফিরে যায় তার জন্মস্থানে। খালি করে দেয় বোতলের সকল সুগন্ধি, সে ঘ্রান নিতে ছুটে আসে সকল নারী পুরুষ আর সেই সুগন্ধির মধ্যেই মিশে যায় গ্রানুইলি, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সুগন্ধি প্রস্তুতকারক।

২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ মুভিটি তৎকালীন সবচেয়ে ব্যয়বহুল জার্মান মুভি। ওফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ৫২০০ জন এক্সট্রা, ১০২ টি বিশাল সেট, আর ৫২০ জন টেকনিশিয়ান কাজ করেছে মুভিটির নির্মানে। আর লোকেশন নির্বাচনে ইউরোপের আটটি দেশ চষে বেড়িয়েছেন নির্মাতা। সে কারনেই হয়তো ১৪৭ মিনিটের এই মুভিটি ১২টি পুরস্কার জিতে নিয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

সবশেষে যে কথাটি না বললেই নয়, সুগন্ধিদ্রব্য তৈরীর গল্প জানতে আর সৌন্দর্যের জন্য হত্যার রোমান্টিকতাকে অনুভব করতে দেখে ফেলুন 'মাস্ট সি' এবং 'অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নিষিদ্ধ' এই মুভিটি।

সিনেমাখোর গ্রুপে জয়েন করুন
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১২:০৭
১২টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×