somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয়ভাসিনী কাঁদবে কেন? জাহানারা ইমাম কাঁদবে কেন? ছিলাম আমরা দেশের জন্য আছি এখনো.....

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি শুরু হয়েছে বহুল প্রত্যাশিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যাল প্রথম রায় দেয় বাচ্চু রাজাকেরর এবং তার সাঁজা হয় মৃত্যুদন্ড। দেশবাসী খুশী। কারণ অবশেষে আমরা দায় মুক্তির স্বাদ পেতে শুরু করেছি। অপেক্ষায় আছি কবে এদের সত্যিকারের ফাঁসি হবে সেটা দেখার জন্য। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে আমরা সক্ষম হয়েছি এদের বিচারের কাঠগড়ায় আনতে। সমগ্র বাংলাদেশের জনগনের সাথে সাথে আমরা যারা প্রবাসে রয়েছি তারাও অপেক্ষায় আছি কবে সমস্ত রাজাকারকে তাদের কাজের উপযুক্ত সম্মানি আমরা দিতে পারব। কবে আমরা আমাদের মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবি ও মা -বোনদের হত্যা’র প্রতিশোধ নিতে পারব। বড্ড দেরী করে ফেলেছি এর পরেও আমরা তাদের সাজা দিতে চাই। নিউইয়র্ক সময় তখন সোমবার গড়িয়ে মঙ্গলবার রাত ১টা কি ২টা। ল্যাপট নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ পত্রে চোখ বুলাচ্ছি একটু পর পর। আর মাথায় চিন্তা রায় কি হবে? কাজের সুবাদে আমি নিউইয়র্কের বাংলাদেশী একটি নামকরা পত্রিকাতে কাজ করি। আমাদের পত্রিকা বের হয় সোমবার, তাই রবিবার অনেক রাত পর্যন্ত আমাদের কাজ করতে হয়। সর্বশেষ সংবাদটিও যেন আমরা পত্রিকাতে দিতে পারি সেই চেষ্টা থাকে আমাদের। এর আগের সপ্তাহে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায়ের সংবাদটি অনেক রাতে পেলেও সেটা আমরা দিয়েছিলাম। এবার রায় আমাদের পত্রিকা প্রকাশের পরের দিন। আমি আমাদের নিউজ এডিটরকে হাসতে হাসতে বলছিলাম হাবিব ভাই এক কাজ করেন আমরা আগাম নিউজ দিয়ে দেই। জানিই তো ফাঁসি হবে। আমরা লিখে দেই কাদের মোল্লার ফাঁসি। তখন সবাই হাসতে ছিল এবং মোটামুটি সবাই শিওর ছিলাম। সাঈদিকে হয়ত ফাঁসি দিবে না সরকার জামায়াতের ভয়ে কিন্তু এই সব চুনোপুটিদের তো দিবে। কিন্তু সংবাদপত্রে তো আর খবরের আগেই খবর লেখা যায় না। তাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি কখন ফাঁসির রায় হবে। ঐ দিকে অনলাইনে টিভিতে খবর দেখছিলাম যেই চ্যানেলে লাইভ কাভারেজ করছে। একটি বেসরকারী সংবাদ চ্যানেলে খবর হচ্ছে সেটা শুনছি আর নিউজ চ্যানেল পড়ছি। হঠাৎ শুনলাম ৬টা অভিযোগের মধ্যে ৫টাই প্রমাণিত। তখন অনেক রাত। ঘুমাতে যাব কিনা চিন্তা করছি। কারণ আমি তখন ৯৯% নিশ্চিত যে ফাঁসি হতে যাচ্ছে। কিন্তু একি?? একটু পড়েই শুনি যাবজ্জীবন। ভাবলাম কানে ভুল শুনছি। ঝাপিয়ে পড়লাম নিউজ সাইটগুলোর উপর। কিন্তু যখন দেখলাম যে না আসলেই যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে তখন নিজেকে খুব ছোট মনে হতে লাগল। রাজাকার ও এদের দোষর এবং নব্য রাজাকার (যারা বর্তমানে রাজাকারদের সাপোর্ট করে আমি নিজেও তাদের রাজাকার বলেই অভিহিত করব এবং বলব) রায়ের দিন হরতাল দিয়েছে যেন রায় ওদের পক্ষে যায়। সরকার যেন ওদের ভয়ে কোন সাজা না দেয়। এক বুক হতাশা, লজ্জা নিয়ে ঘুমাতে গেলাম ফেসবুকে হাতাশার কথা জানিয়ে।

সকালে ঘুম থেকে উঠলাম। অভ্যাসবসত ফেসবুকে ঢুঁ মারলাম। কিন্তু একি?? সারা দেশ আবার জেগে উঠেছে ঠিক আজ থেকে ৪২ বছর আগে যেভাবে জেগে উঠেছিল। ফেসবুকে সবাই এই রায় মানি না মানবো না বলে চিৎকার করছে। সবার এক দফা এক দাবি আর তা হল সমস্ত রাজাকারকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো। চোখের কোণে হঠাৎ অ¯্রু চলে আসল। আমরা যারা তরুণ, যাদের জন্ম বাংলাদেশ নামক একটি দেশের জন্মগ্রহণের পর, যারা স্বাধীন দেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছে তারা মানে আমরা যুদ্ধ দেখিনি। আমরা জানি না তখনকার অনুভূতির কথা। কিন্তু আমরা ইতিহাস পড়েছি। ইতিহাস থেকে আমরা জেনেছি তখনকার পাস্তিানীদের বর্বর অত্যাচারের কথা সেই সাথে আমরা জেনেছি এই দেশী কিছু মানুষ কি করে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। আমরা তাদের নাম বা পরিচয় জেনেছি ইতিহাস থেকেই। যখন জেনেছি রাজাকার, আল বদর, আল শামস এর কথা তখন এদের প্রতি ঘৃণা, ক্রোধে চোখ মুখ লাল হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল যদি একটাকে পেতাম টুকরো টুকরো করে ফেলতাম। আমার এই অনুভূতি শুধু আমার একার যে তা নয়। সেটা আমি ঐদিনই জানলাম। যখন দেখলাম আমার মত অসংখ্য তরুন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তারা এই রায়কে প্রত্যাখান করে এই রায়ের বিরুদ্ধে মাঠে নামার জন্য সবাইকে আহ্বান করছে। দলে দলে তরুণ সমাজ জড়ো হতে লাগল রাজধানী ঢাকার শাহবাগে। প্রথমে ভেবেছিলাম অন্যান্য ছোট খাট আন্দোলনের মত এটাও ভাটা পড়ে যাবে রাতের আধারেই। কিন্তু অবাক হতে হল যখন দেখি রাত দিন কোন কিছুই এদের দমাতে পারেনি। বুঝতে পারলাম আমরা এখনো দেশকে কতটা ভালবাসি। আমরা সবাই এখন দলমত নির্বিশেষে একটা দলের মানুষ। আর তা হল স্বাধীন দেশ বাংলাদেশের। আমরা সবাই একত্রে চাই সমস্ত রাজাকারের ফাঁসি। শাহবাগে আজ হাজারো জনতার ঢল। শুধু শাহবাগ বা ঢাকা কেন্দ্রীক এই আন্দোলন যে বসে আছে তা নয়। সমগ্র দেশেই এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। দেশের প্রতিটা আনাচে কানাচে থেকে একই ধ্বনি। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই। এই প্রবাসে বসে টিভি এবং পত্রিকায় ছবি দেখেই বুঝতে পারছি আরেকটি গণ বিস্ফোরণ হতে যাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ অবস্থানে দেশের তরুনরা আরেকটি যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করছে। এই যুদ্ধ কোন দেশের প্রতি নয়,এই যুদ্ধ সেই সকল মানুষের বিরুদ্ধে, যারা আপনার আমার ভাই বোনদের বিনা দোষে হত্যা করেছে, যারা এই দেশকে চায়নি চেয়েছিল পাকিস্তানের অধীনেই থাকতে, যারা আমাদের মা বোনদের সম্ভ্রম নিয়ে খেলা করেছে। আজকের যুদ্ধ তাদের বিরুদ্ধে। আজ আমরা যুদ্ধ করব। আমরা আজ ফাঁসিতে ঝোলাব বাচ্চু, কাদের মোল্লা, নিজামী, সাঈদী’র মত অসংখ্য রাজাকারদের। প্রিয় ভাসিনী বা জাহানারা ইমাম আপনাদের বলছি আপনাদের আমরা আর কাঁদতে দিব না। অনেক কেঁেদছেন আপনারা। আজ আমাদরে সময় এসেছে আপনাদের চোখের পানি মুছে দেয়ার। আমাদের সময় এসেছে স্বাধীনতা বিরোধীদের তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার দেয়ার।

যারা মনে করেন দেশের তরুন সমাজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাদের বলছি, আপনারা একবার শাহবাগে আসুন। দেখুন আমরা প্রতিবাদ করতে জানি, আমরা প্রয়োজনে দেশের জন্য আবার প্রাণ দিতে প্রস্তুত। সবার আগে মা, আর আমাদের কাছে দেশটাই হচ্ছে মা। অনেক রাজনৈতিক দল অনেক সমাবেশ হরতাল দেন কই এই রায়ের বিরুদ্ধে কেউ তো কিছু দিচ্ছেন না? বরং এত কম সাজা দেয়ার পর সেই সাজাটাও যেন না দেয় তার জন্য জামায়াতের মত দল হরতাল ডাকছে। আর ভাই আপনাকে জ্বি ভাই আপনি যিনি কাদের মোল্লার আইনজীবি আপনাকে বলছি। আপনার বোনকে যদি কেউ আপনার সামনে ধর্ষণ করত, আপনার ভাইকে আপনার সামনে যদি কেউ মেরে ফেলত এর পর আপনি তাকে ছাড়ানোর জন্য কি আদালতে লড়তেন? আপনার কি একট্ওু লজ্জা লাগল না আসামীপক্ষের আইনজীবি হতে? টিভিতে আপনাকে দেখে উপরের কথাটুকুই জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা হচ্ছিল খুব।
আমরা কোন দলের না, আমরা কোন লীগের না। আমরা বুঝি না রাজনীতির এত প্যাচ। আমাদের একটাই দাবী আর তা হল সমস্ত রাজাকারের ফাঁসি। আমরা দায়মুক্ত হতে চাই। ৩৪৪ জন মানুষ হত্যার বিচার কখনেই যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে না। যুদ্ধ চাই আরেকটি যুদ্ধ-

১৯৫২- ঢাকা মেডিকেল
১৯৭১- রেসকোর্স ময়দান
২০১৩- শাহবাগ চত্ত্বর
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামীলীগে শুধুমাত্র একটি পদ আছে, উহা সভাপতি পদ!

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৪ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১


বাঙ্গালীদের সবচেয়ে বড়, পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দলটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। মানুষ এই দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। ৭০ এর নির্বাচনে এই দলটিকে নিরঙ্কুশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমপি আনারের মৃত্যু এবং মানুষের উষ্মা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:২৯


সম্প্রতি ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর আনোয়ারুল আজীম আনার নামে একজন বাংলাদেশি এমপি নিখোঁজ এবং পরবর্তীতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহের হাড়-মাংস আলাদা করে হাপিত্যেশ করে দেওয়া হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

দোয়া ও ক্রিকেট

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৪


দোয়া যদি আমরাই করি
তোমরা তাইলে করবা কি?
বোর্ডের চেয়ারম্যান, নির্বাচকের
দুইপায়েতে মাখাও ঘি।

খেলা হচ্ছে খেলার জায়গা
দোয়ায় যদি হইত কাম।
সৌদিআরব সব খেলাতে
জিতে দেখাইত তাদের নাম।

শাহাবুদ্দিন শুভ ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!!

লিখেছেন অন্তর্জাল পরিব্রাজক, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:২১



দয়া করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!! X( এরা ছাগলের দলই ছিল, তাই আছে, তাই থাকবে :-B !! এরা যেমন ধারার খেলা খেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বকুল ফুল

লিখেছেন নীল মনি, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৪

বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে থাকে আমার এই ঘর। আমি মাটির ঘরে থাকি। এই ঘরের পেছন দিকটায় মা'য়ের হাতে লাগানো বকুল ফুলের গাছ৷ কী অদ্ভুত স্নিগ্ধতা এই ফুলকে ঘিরে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×