somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিভিন্ন ধর্মে একত্ববাদ -১ (হিন্দু বা সনাতন ধর্ম)

০৭ ই জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আর্য ধর্মসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও বেশি জনসংখ্যা বিশিষ্ট ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম । প্রকৃত পক্ষে "হিন্দু" একটি পারস্য শব্দ এবং হিন্দু শব্দ দ্বারা সিন্ধু উপত্যাকা এলাকার অধিবাসীদের বুঝানো হত । বর্তমানে প্রচলিত অর্থে হিন্দু একটি সাধারণ ধর্মের নাম যার আওতায় অনেক শ্রেনীর ও অনেক বর্ণের বিভিন্ন বিশ্বাস আছে , যাদের অধিকাংশের ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তি হচ্ছে বেদ, উপনিষদ এবং ভগবত গীতা ।

হিন্দু ধর্মে ঈশ্বরের সাধারণ ধারণাঃ
হিন্দু ধর্ম সাধারণভাবে বহু ঈশ্বরবাদী ধর্ম হিসেবে পরিচিত ।অধিকাংশ হিন্দুই এ কথার সত্যতা স্বীকার করেন এবং অসংখ্য দেবতার অস্তিত্বের বিশ্বাসের মাধ্যমে এ স্বীকৃতি প্রকাশ প্রকাশ করেন । কোন কোন হিন্দু ত্রয়ী ঈশ্বর তত্ত্বে বিশ্বাস করেন । তবে শিক্ষিত হিন্দু যারা তাদের ধর্মগ্রন্হ ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছেন তারা জোর দিয়ে বলেন যে, একজন হিন্দুর উচিত একজনমাত্র ঈশ্বরে বিশ্বাস করা এবং তাঁর উপাসনা করা ।

পবিত্র কুরআন বলে,

"এসো, আমাদের এবং তোমাদের মাঝে একটি সাধারণ বিষয়ে ঐক্যমতে পৌছি । সাধারণ ঐক্যমতের বিষয় এই যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করি না । " (৩ঃ৬৪)

এখানে সাধারণ ঐক্যমতের কথা হয়েছে যে, আমরা আল্লাহ (একমাত্র ঈশ্বর/স্রষ্টা) ছাড়া আর কারো ইবাদত করি না ।

ভগবত গীতা
হিন্দুদের সকল ধর্ম গ্রন্হের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ভগবতগীতা । গীতার নিম্নলিখিত শ্লোকটি বিবেচনা করে দেখুনঃ

" তারা, যাদের জ্ঞান-বুদ্ধি বস্তুগত আকাংখার দ্বারা বিলুপ্ত হয়েছে, বিভিন্ন উপদেবতার কাছে আত্নমর্পণ করে এবং নিজেদের প্রবৃত্তির দ্বারা চালিত হয়ে উপাসনার বিশেষ নিয়মনীতি অনুসরণ করে । "
এখানে গীতা বস্তবাদী লোকদের সম্পর্কে উল্লেখ করেছে যারা বস্তুবাদী এবং প্রকৃত ঈশ্বর বাদ দিয়ে অন্য উপ-দেবতার উপাসনা করে ।

উপনিষদসমূহঃ
১. "একমেবা দ্বিতীয়াম"
"তিনি এক একক, যাঁর কোন দ্বিতীয় নাই ।" [চান্দোগ্য উপনিষদ ৬ঃ২ঃ১]

২. উপনিষদের নিম্নের শ্লোকটিও দেখুনঃ
"ন-কস্য কাসুজ জানিতা ন কাধিপাহ"
"তাঁর কোন পিতা-মাতা নাই, কোন প্রভুও নাই ।"
[সেভতাসাভাতারা উপনিষদ ৬,৯, দ্বিতীয় ভাগ, পৃষ্ঠা ২৬৩]

৩.উপনিষদের আরো শ্লোক দেখুনঃ
"ন তস্য প্রতিমা আসাতি"
"তার সমতুল্য কেহ নাই"
[সেভতাসাভাতারা উপনিষদ, অধ্যায় ৪ঃ১৯]
"নৈনম উরধভাম ন তিরানকাম ন মাধ্য ন পারিজাগ্রাভাত না তাসি প্রতিমে আস্তি যস্যনামা মাহাদ যাসাহ"
"তার সমতুল্য কেউ নাই, যার নাম মহা গৌরবের ।"
(এস. রাধা কৃষ্ঞান The principal Upanishad, কৃত পৃ.৭৩৬ এবং ৭৩৭)

উপনিষদের উপরোল্লিখিত শ্লোকসমূহ কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতসমুহের সাথে তুলনা করে দেখুন ।
" এবং তার সমকক্ষ আর কেউ নাই ।" [আল-কুরআন-১১২ঃ৪]
"তার সমতুল্য আর কেউ নেই ।" [আল-কুরআন-৪২ঃ১১]

৪. ঈশ্বরকে কোন বিশেষ আকারে কল্পনা করার বিষয়ে উপনিষদের নিম্নোক্ত শ্লোকসমূহে মানুষের অক্ষমতা তুলে ধরা হয়েছেঃ

" না সমুদ্রসে তিস্হাতি রুপম অ্যাস্যা, ন কাকসুসা পাস্যতি কাস ক্যানাইয়াম । হ্রদা হ্নদিস্হাম মানাসা য়া এনাম, এভাম ভিদুর আমর্তাস তে ভবন্তি ।"

"তার আকার বা রুপ দেখা যায় না; কেউ তাকে চোখ দিয়ে দেখতে পারেনা । যারা হৃদয় এবং মন দিয়ে তাকে হৃদয়ে উপলব্ধি করে, তারাই অমর হয় ।" [সেভতাসাভাতারা উপনিষদ, অধ্যায় ৪ঃ২০]

পবিত্র কুরআনে এই রুপ বিষয় নিম্নোক্ত আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
"কোন দৃষ্টি তাকে দেখতে পারেনা , কিন্তু তাঁর দৃষ্টি সবার উপরে । তিনি সকল উপলব্ধির উপরে, অথচ তিনি সকল জিনিসের বিষয়ে অবগত ।" [আল-কুরআন-৬ঃ১০৩]

বেদঃ

হিন্দু ধর্ম গ্রন্হসমূহের মধ্যে বেদকে সর্বাপক্ষো পবিত্র ধর্মগ্রন্হ বিবেচনা করা হয় । প্রধান বেদ ৪টি । যথা- ঋগ বেদ, যজুর্বেদ, সাম বেদ এবং অথর্ব বেদ ।

১. যর্জুবেদঃ
" ন তস্য প্রতিমা আস্তি"
"তার কোন আকার নাই " [যজুর্বেদ,৩২ঃ৩]

এতে আরো বলা হয়েছে" তিনি অজাত, তাই তিনি আমাদের উপাসনার অধিকারী ।"

"তার কোন আকার নেই, নিশ্চয়ই তার গৌরব বিরাট । তিনি তার ভিতর ধারণ করেন সকল উজ্জ্বল বস্তু । আমার প্রার্থনা তিনি যেন আমার ক্ষতি না করেন । তিনি অজাত, তিনি আমাদের উপাসনার অধিকারী ।" [যর্জুবেদ,by Devi Chand পৃ.৩৭৭]

"তার কোন অংশীদার নেই এবং তিনি পবিত্র ।" [যর্জুবেদ,৪০ঃ৮]

"তিনি উজ্জ্বলতায় সমাসীন । তিনি অমূর্ত নিরাকার, শরীর-বিহিন এক পবিত্র সত্তা, যাকে কোন অশুভ ভেদ করে নাই । তিনি সুদূরদর্শী, প্রজ্ঞাময়, সর্বব্যাপী সয়ম্ভু, যিনি যথার্থভাবে অনন্ত সময়ের জন্য লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করেছেন ।" [যর্জুবেদ-৪০ঃ৮]

" আন্ধাতামা প্রাভিশান্তি ইয়ে অসম্ভূতি মুপাসতে" ।
"তারা অন্ধকারে প্রবেশ করে, যারা প্রাকৃতিক বস্তুসমূহের (আগুন,পানি ইত্যাদি) পূজা করে, তারা মহাঅন্ধকারে প্রবেশ করে যারা সৃষ্টি বস্তু (যেমন-পাথর বা মাটি দ্বারা তৈরী) পূজা করে " [৪০ঃ৯]

২. অথর্ব বেদঃ
"দেব মাহা ওসি"
"ঈশ্বর নিশ্চয়ই মহান " (অথর্ব বেদ-২০/৫৮ঃ৩)

" তুমি যেমন মহান, তেমনই তোমার মহত্ব প্রশংসার দাবীদার; নিশ্চয়ই তুমি মহান হে ঈশ্বর ।" (অথর্ব বেদ, সংহতি ভলিউম-২, উইলিয়াম ডিমাইট হুইটনি, পৃ.৯১০)

পবিত্র কুরআনের সূরা রাদ -এ অনূরূপ অর্থের একটি আয়াত আছেঃ
'তিনিই মহান, তিনিই শ্রেষ্ঠ ।' (আল-কুরআন-১৩ঃ৯)

৩. ঋগ বেদঃ
সকল বেদের মধ্যে ঋগ বেদ প্রাচীনতম । হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ ঋগ বেদকে সবচেয়ে পবিত্র বিবেচনা করেন । ঋগ বেদে উল্লেখ আছে,
"বিজ্ঞ পুরোহিতগণ এক ঈশ্বরকে বহু নামে ডাকেন " [ঋগ বেদ-১ঃ১৬৪ঃ৪৬]

"মা চিদান্যাদভি শাংসাতা "
"হে বন্ধুগণ, সেই একমাত্র ঐশী সত্তা ছাড়া আর কারো উপাসনা করো না ।"
[ঋগ বেদ সংহিতি, ভলিউম-১১, পৃষ্ঠা ১ও ২ । স্বামী সত্য প্রকাশ স্বরস্বতি এবং সত্যকাম বিদ্যালংকার ।]

" জ্ঞানী যোগিরা তাদের হৃদয় ও মন দিয়ে সে সর্বোচ্চ সত্তার ধ্যান করেন যিনি সর্বত্র বিরাজিত, মহান এবং সর্বজ্ঞ । একমাত্র তিনি তাদের কাজ সম্পর্কে অবহিত বিধায় সকল ইন্দ্রিয় অঙ্গ-প্রতঙ্গকে তাদের নিজ নিজ কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেন । নিশ্চয়ই , শ্রেষ্ঠ গৌরব সে মহান স্রষ্টার ।" [ঋগ বেদ-৫ঃ৮১]



হিন্দু বেদান্ত সুত্র এর ব্রক্ষা সুত্রাঃ
" একাম ব্রহাম, দ্ভিতিয়া নাস্তে নেহ না নাসতে কিনচান "
"ঈশ্বর, কেবলমাত্র একজন, দ্বিতীয় কেউ নেই; কেউ নেই, কেউ নেই, মোটেই কেউ নেই ।"

চলবে ..............
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৫:১১
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×