সবকিছুর কিছুর একটা সীমা আছে। প্রত্যেকদিন কোন না কোন ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া। আরে বাপ এখনই যদি এই অবস্থা হয, বিয়ের পর কি হবে?আর ঝগড়া করেছিস কর, একদিন,দুইদিন না- সাতটা দিন কেটে গেল একবার ফোনটা পর্যন্ত করার নাম নেই। ছেলেটা নিজেই ফোন করতো, কিন্তু দোষটা তো তার না। সে ফোন করবে কেন? মেয়েটারই তো সব দোষ। সেই তো খুচিয়ে খুচিয়ে ঝগড়া শুরু করে। খুবই অস্থির লাগছে ছেলেটির। কতদিন সেই গলার স্বরটি শুনে না। হারামজাদী নিশ্চয়ই এখন অন্যকারো সাথে ফোনে আড্ডা মারছে। নিশ্চয়ই তার সেই কানাডায় থাকা কাজিন ছেলেটার সাথে। না হলে এতদিন তাকে ভুলে থাকতে পারছে কিভাবে? নাকি অন্য কারো সাথে প্রেম করছে? .. আচ্ছা অসুস্থ হলো না তো? মেয়েটার আবার যখন তখন ঠান্ডা লাগে। শীত নাই, বৃষ্টি নাই কটকটে রোদ, কথা নাই বার্তা নাই ঠান্ডা লেগে যাবে। সাইনাসেরও প্রব্লেম আছে। বেচারীর সাইনাসের ব্যাথাটা আবার উঠেনি তো?নাহ্, ছেলেটা আর থাকতে পারছে না। কোন একটা খোঁজ নেয়া দরকার। ফোন করবে? না, তাহলে তো প্রশ্রয় দেয়া হবে। এই ধাক্কায় শয়তানটাকে একটা শিক্ষা দেয়া দরকার। যাতে আর কোনদিন ঝগড়া না করে।ছেলেটা প্লান ঠিক করে ফেলে কি করবে।
ভিন্ন একটা সিম থেকে মেয়েটাকে ফোন দেয় ছেলেটি। বেশ কয়েকবার রিং হবার পর সেই পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে ফোনের ওপাশ থেকে।
-‘হ্যালো, কে বলছেন?’।
ছেলেটা তার গলার স্বরটা পরিবর্তন করে নিজের নামটি না বলে অন্য একটি নাম বলে।
-‘দুঃখিত আপনাকে চিনতে পারছি না। কাকে চাইছেন?‘
-‘সুরভী বলছেন?’
-‘জ্বী বলছি, কিন্তু আপনাকে তো চিনতে পারছি না।আপনি আমার নাম্বার কোথা থেকে পেলেন?’
ছেলেটা প্রশ্নটা এরিয়ে যায়।এরপর কিছুক্ষণ কথা হয় দুজনের।ফোনটা রেখেই ছেলেটার মনটা খারাপ হয়ে যায়।যদিও সে গলার স্বর পরিবর্তন করে অন্য নাম নিয়ে কথা বলেছে, মেয়েটা কেন তাকে চিনলো না?কেন অপরিচিতের মত কথা বললো?সাত দিনেই সে তার এত অপরিচিত হয়ে গেছে?সামান্য গলার স্বর পরিবর্তনেই সে কেন তাকে চিনতে পারলো না।প্রচন্ড অভিমান হয় ছেলেটির।আবার ভালোও লাগে।মেয়েটা কত ভালো।সে অপরিচিত বলে তার সাথে কথাই বলতে চাইলো না।আর সে কিনা কি সব ভাবছিলো।বুকের ভেতরটা খালি খালি লাগে।ছুড়ে ফেলা ফোনটির দিকে তাকিয়ে থাকে।আবার কি ফোন দিবে সে?এখন মনে হচ্ছে তারই উচিৎ ফোন করে ক্ষমা চাওয়া। আবার এটা ভেবেও রাগ হচ্ছে মেয়েটা কেন তার গলা চিনতে পারলো না!
ফোনটা রেখেই মেয়েটি মুচকি হাসে। শেষবার ঝগড়ার পর থেকে মেয়েটা অপেক্ষা করছিলো কখন ছেলেটা নিজ থেকে ফোন দিবে।কি যে কষ্টে গেছে এই ক’টা দিন।শেষ পর্যন্ত ফোন ঠিকই দিলো।কি পরিমান বেকুব। সে ভেবেছে অন্য নাম্বার থেকে গলার স্বরটা একটু মোটা করে কথা বললেই বুঝি আর তাকে চিনতে পারবে না। সবাইকে নিজের মত বেকুব ভাবে।তার প্রেমিকটা এমন গবেট হলো কেন। একটা কাজ যদি ঠিকমতো করতে পারে।কি আর করা এই গাবলুকে নিয়ে সারা জীবন কাটাতে হবে।মেয়েটা ঠিকই জানে বেকুবটা আবার ফোন দিবে এখনই। গাবলুটার কথা ভাবতে তার যে কি পরিমান ভালো লাগে।
ফোন বাজছে। মেয়েটা আবারো একবার মুচকি হেসে ফোনটা তুলে নেয়।