somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিখি চলো ....

০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখ খোলো পাপড়ি, ঠিক সেইভাবে যেভাবে লজ্জাবতীর পাপড়িগুলো ধীরে ধীরে মেলে ধরে নিজেদের;এবার এই চেয়ারটাতে বসো।চুলের বাধন খুলে দাও, ফ্যান ছেড়ে দিচ্ছি, বাতাসে তোমার চুল উড়তে থাকুক; এই দৃশ্যটি দেখবো বলেই না এত আয়োজন!
তুমি তো জানো ডায়েরী লেখাটা আমার প্রিয় অভ্যাস, তোমার-আমার প্রতিটি দিনকে সন্তানতুল্য মমতায় আমি এখানে লিখে রাখি।তবে তুমি বোধহয় জানোনা আমাদের অসংজ্ঞায়িত সম্পর্কের ৪০০তম দিন পূর্ণ হল আজ, আর আমাদের সপ্তাহান্তের সেই বিশেষ খেলাটির ৩৬৫দিন, অর্থাৎ ১বছর।এখনো মনে আছে, সম্পর্কের ৫ম সপ্তাহের শেষ দিনে আমরা এক বিকেলে রিক্সায় ফার্মগেট যাব স্থির করেছিলাম, কিন্তু কোন রিক্সাওয়ালাই সদয় হচ্ছিলনা আমাদের প্রতি। হঠাৎ তুমি কী মনে করে যেন বললে-‘আর ১০মিনিটের মধ্যে আমরা রিক্সা পেয়ে যাব, শুধু তাই নয়, সেই রিক্সাওয়ালাটি লুঙ্গির বদলে ফুলপ্যাণ্ট পড়ে থাকবে।চাইলে যে কোন শর্তসাপেক্ষে তোমার সঙ্গে এ ব্যাপারে বাজী ধরতেও রাজী আছি।"
১৫মিনিটের মধ্যে রিক্সা পেতেই পারি, কিন্তু ফুলপ্যাণ্ট পরিহিত রিক্সাওয়ালা সংক্রান্ত তোমার এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আমাকে অবাক করেছিল বইকি, কারণ আমি লক্ষ্য করেছি অধিকাংশ রিক্সাওয়ালারাই লুঙ্গি পরে থাকে। তাই বাজীতে রাজী হয়েছিলাম নির্দ্বিধায়_ সবার মত আমারও বিজয়ী হওয়ার দুর্দমনীয় লোভ, বিশেষত জয়টা যদি হয় তোমার বিরুদ্ধে এবং এর বিপরীতে যে কোন শর্ত দেবার স্বাধীনতায়, তাহলে তো সেই বিজয় বাংলাদেশের অষ্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয়ার চেয়েও বহুগুণে আনন্দময় আমার কাছে; হোক না সেটি রিক্সাওয়ালার পোশাকের মত আপাত গুরুত্বহীন কোন বিষয়ে।
আমি বিজয়ের ব্যাপারে এতটাই নিশ্চিত ছিলাম যে তোমার সেই বাজীর শর্তটি আমিই দিয়ে দিলাম_‘‘যদি সত্যিই এমন হয় তাহলে আগামী ৩ঘণ্টা তোমার যে কোন খেয়ালের খেলোয়াড় হয়ে থাকব, এই সময়টুকুতে তোমার যে কোন কথাই আমার জন্য আদেশ, এমনকি তুমি বললে এই ৩ঘণ্টা বসে বসে ভিক্ষা করতেও আপত্তি নেই।কিন্তু বাজীতে হারলে তোমার ক্ষেত্রেও যে একই কথা প্রযোজ্য হবে এটা বুঝতে পারছো তো?” তুমি কোন কথা না বলে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়েছিলে শুধু, এরপর শর্তে তোমার সম্মতি জানানোর খানিকবাদেই রিক্সা পেলাম, আর আশ্চর্যজনকভাবে হেরে গেলাম বাংলা সিনেমার কাকতালীয় ঘটনার মত অবিশ্বাস্যতায়!

তোমার বাজীতে জেতার বহিপ্রকাশ আমার বুকে কাঠ ঠোকরা পাখি হয়ে নিরন্তর ঠুকরে গিয়েছিল পরবর্তী ৩ঘণ্টা, ওহ কী ভয়ানক সে অভিজ্ঞতা: তোমার ব্যাগ আমার কাধে ঝুলিয়েই ক্ষান্ত হলেনা, আমাকে বসতে হলো রিক্সার পাদানীতে গুটিসুটি হয়ে; আশেপাশের রিক্সা থেকে মানুষ কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেও তোমার দিলে একটুও দয়া হয়নি, উপরন্তু রিক্সা থেকে নেমে আমরা যখন ফাস্ট ফুডের দোকানে ঢুকলাম তুমি নিজের জন্য লাচ্ছির order দিয়ে আমাকে দিলে সিঙ্গারার অর্ধেক, এবং পুরো লাচ্ছির তিন-চতুর্থাংশ শেষ করে বাকি লাচ্ছিটুকুর সঙ্গে পানি মিশিয়ে দিলে আমাকে খেতে। এরপর দোকান থেকে বের হয়ে তোমার নির্দেশমত একপায়ের জুতা খুলে হাতে নিয়ে আমাকে তোমার সঙ্গে হাটতে হয়েছিল বাকি সময়টুকু। খালি পায়ে হাটার একটা ভাব আছে, কিন্তু একপায়ে জুতা পড়ে হাটাটা যে কেমন অস্বস্তিকর তা কিভাবে বোঝাই!
সেই থেকে শুরু, এরপর প্রতি সপ্তাহের শেষ দিনটিতে ঐ একই শর্তে আমরা বাজী ধরতাম,যথারীতি আমার হার হত,আর তোমার বিচিত্র সব খেয়ালের বলি হতে হত ৩ঘণ্টা যাবৎ। বাজীতে জেতার মুহুর্ত থেকে তুমি হয়ে যেতে অচেনা কেউ_ কখনো আমাকে প্রখর রোদের মধ্যে স্ট্যাচু অব লিবার্টির ঢঙে দাড় করিয়ে রেখেছো, মাঝে মাঝে জেতার পর ৩ঘণ্টা নিজের জন্য রেখে দিয়েছো অন্যসময় ব্যবহার করবে বলে,কখনোবা বলাকা হলের সামনে পুরনো বই বিক্রি করিয়েছো, এমনকি ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে ভিক্ষাও করিয়েছো; কী বাদ রেখেছো তুমি! জানো, আমার একসময় প্রচণ্ড জেদ চেপে গিয়েছিল, জিততে হবেই যে কোন মুল্যে, তাইতো এই খেলাতে তোমার চেয়ে আমার আগ্রহই বেশি; মনে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল একদিন জিতবোই, আর সেইদিন আমার সব অপদস্থতার শোধ তুলব। বিশ্বাস করো, প্রতিটি হারের রাত্রিতে আমি পরিকল্পনা করেছি সেই কাঙ্ক্ষিত ৩ঘণ্টা নিয়ে। অবশেষে গতকাল তুমি হারলে; ইচ্ছে হচ্ছিল তখনই মনের ভেতর পুষে রাখা ইচ্ছাটা বাস্তবায়ন করি, কিন্তু মনে মনে হিসাব কষে দেখলাম আজ সেই খেলাটির ১বছর পুর্ণ হয়; তাইতো গতকালকের অব্যবহৃত ৩ঘণ্টা উশুলের জন্য তোমাকে আমার ফ্ল্যাটে ডেকে এনেছি। তুমি ভাবতেও পারবেনা কী খেলা আজ খেলব তোমার সাথে_ গত ৫১টি সপ্তাহ আমাকে বলতে গেলে রীতিমত কাঁঠাল পাতা খাইয়েছো যত্রতত্র, আমার আজকের এই ৩ঘণ্টার খেলা তোমাকে আজীবন মনে রাখতে হবে পাপড়িমণি; ভালোবাসা মনকে কেবল উদারই করেনা, কখনো কখনো হিংস্রও করতে পারে।তোমার চোখ বলছে তুমি ভয় পাচ্ছো, তাইতো এই AC room এও ঘামছো।

এই মেয়ে, ট্যিসু পেপার ব্যাগেই রাখো;এই ঘামকে ঝরে যেতে দাও, ভালোবাসা দিয়ে এই ঘামকে কিনে নেব আমি।হ্যা, আমার খেলা এখনই শুরু হবে;তার আগে প্রাথমিক কিছু শর্তের কথা বলি_ আগামী ৩ঘণ্টা তুমি মুখে কোন শব্দ উচ্চারণ করতে পারবেনা, এমনকি চেয়ার ছেড়েও উঠতে পারবেনা, কোনকিছু বলার প্রয়োজন হলে ইশারায় বলবে, আর বাকিটুকু আমি তোমার মুখভঙ্গি থেকে বুঝে নেব। বলতে পারো, এটা আমার জন্যও একটা পরীক্ষার মত; তোমাকে কতটুকু অনুভব করতে পারি সেই পরীক্ষা। একমিনিট বসো; পাশের রুম থেকে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আসি।
শুরুতেই এই অফসেট কাগজ দুটি আর কলমটি ধরো, আগেই বলেছি কোন কথা বলতে পারবেনা; কেবল আমার কথামত কাজ করে যাবে, খেলা কিন্তু শুরু হয়ে গেছে।

আমার মনে হয় তোমাকে এভাবে বিভ্রান্তির মধ্যে রাখলে খেলার মুল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। তাই তোমাকে সংক্ষেপে আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলি_ আমি আসলে তোমাকে খেলার ছলে লেখালিখির চিরায়ত বর্ণিল-স্বপ্নিল ভুবনে নিমন্ত্রণ জানাতে চাইছি; আমি কোন দেশবরেণ্য লেখক নই, কোনদিন হব এমন সম্ভাবনাও বাংলাদেশের ফুটবল বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার সমান। তবুও আমি লিখি প্রাণের তাগিদে, একটি বিষয়কে নিজের মত করে বিশ্লেষণ-উপস্থাপনের অভিপ্রায়ে, আর সেকারণেই তোমাকে এই ভুবনে আমার এত প্রয়োজন_ এখানে আমি এক নিঃসঙ্গ পানকৌড়ি; তাড়নায় নয়, প্রেরণার জন্য হলেও কাউকে আকড়ে ধরতে চাই ভেসে থাকতে।আমি জানি, লেখার ব্যাপারে তোমার মধ্যে নিদারুণ এক ভীতি কাজ করে, তবুও বলছি, একবার শুধু সাহস করে কাগজ-কলম নিয়ে বসে মিনিটখানেক কাটিয়ে দিলেই দেখবে এর মত আনন্দদায়ক কাজ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। তাছাড়া, তুমি যে কখনই আর একজন হেলেন কেলার দুরে থাক, নিদেনপক্ষে অরুন্ধতী রায়-ঝুম্পা লাহিড়ীও হতে পারবেনা তাতো নিশ্চিত; সুতরাং তোমার সঙ্কোচ কিসের?আমাদের লেখালেখি শুধুমাত্র আমাদের নিজস্ব অনুভুতির খণ্ড খণ্ড মেঘ; আজ নাহয় খেলার ছলেই একে বৃষ্টি হয়ে ঝরতে দাও, যেভাবে আমরা হাত ধরাধরি করে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম ফুলার রোডের এক সান্ধ্যবিকেলে।

চিন্তার কিছু নেই ম্যাডাম, তুমি বুঝতেও পারবেনা কখন-কিভাবে একটি লেখার কাঠামো দাড়িয়ে যাবে তোমারই অজান্তে। তুমি শুধু আমার নির্দেশনাগুলো পালন কর। তোমার সামনের টেবিলটিতে আপাত অপ্রয়োজনীয় যে জিনিসগুলো রাখা আছে এগুলোই তোমার লেখায় সঞ্চালকের ভুমিকা পালন করবে। এখন আমি এগুলোকে একটি একটি করে টেবিল থেকে তুলবো, তোমার কাজ হবে প্রত্যেকটি জিনিসের সাথে সঙ্গতিপুর্ণ একটি শব্দ অফসেট কাগজের সর্ববামে লেখা। এই যে, তুমি আবার ঘামছো!আরে, এটাও তো আমাদের সেই কাছাকাছি হওয়া খেলারই অংশ। চেয়ে দেখ, তোমার জন্য চা-বিস্কুট-পানির বোতল সবই নিয়ে এসেছি; তাড়াহুড়োর কিছু নেই, ভয তো নয়ই।

প্রথমেই টেবিল থেকে চিঠি লেখার একটি খাম তুলে নিলাম। তুমি এর রঙটি লিখো কাগজের সর্ববামে। দেখতেই তো পাচ্ছো এর রঙ “নীল”।
আমার হাতে এখন একটা প্যারাসুট নারিকেল তেলের বোতল।আগের লেখা শব্দটির দেড়ইঞ্চি নিচে এই তেলের গন্ধসূচক একটি শব্দ লিখো।ধরে নিচ্ছি, তুমি লিখলে “সুগন্ধি”।
তোমার হাতটা একটু বাড়াও তো, এইতো হাতভর্তি লালচুড়ির টুংটাং আওয়াজ সমগ্র রুমটিতে যেন জলতরঙ্গ সৃষ্টি করেছে। গতবৈশাখী মেলায় এই চুড়িগুলো কিনে দিয়েছিলাম; তোমার সাথে কেনাকাটা করতে যাওযার চেয়ে বঙ্গবাজারে দিনভর জ্যামে আটকে থাকাও অনেক তৃপ্তিকর_ এত চুজি হয় মানুষ!ভাবতে অবাকই লাগে, আমার মত এক ৬৭শতাংশ উন্মাদ মানুষকে তুমি পছন্দ করেছো!অবশ্য, সেই বৈশাখী মেলায় লালশাড়ি-লালচুড়ি-লালটিপে তোমাকে দেখে ছেলেগুলোর কেমন হিংসা হচ্ছিল তা আমি ভালোই বুঝতে পারছিলাম; কারণ তুমি আসার আগে আমিও এভাবেই উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়াতাম মেলা দিয়ে, আর রঙিন কপোতীদেরকে সাদাকালো কপোতদের বাহুলগ্না হতে দেখে দেখে মনে মনে “beauty with dirty” স্তবক আউড়াতাম।
এই যাহ,খেলার মাঝখানে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা শুরু করে দিয়েছি; এবারের মত মাফ চাই প্রিয় “perfect number”, আমার।প্রেয়সী-প্রিয়তমা শব্দগুলোকে জীর্ণ-সংকীর্ণ মনে হয়, তাই তুমি আমার শুধুই “perfect number”, এই সংক্রান্ত ব্যাখ্যাটা তোমার ভাল লাগতে পারে: দেখ ৬, ২৮, ৪৯৬, ৮১২৮....এরকম বেশকিছু সংখ্যা আছে গণিতের ভাষায় যাদেরকে বলা হয় “perfect number”। উদাহরণস্বরূপ ২৮; এর উৎপাদকগুলো হচ্ছে ১,২,৪,৭,১৪...এগুলো যোগ করে দেখ যোগফল সেই ২৮-ই হবে।অনুরূপভাবে, কোন মানুষের প্রতিইঞ্চি অনুভবের সমষ্টি যদি আর একটি ভিন্ন মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়,এবং অনুভবগুলোকে একেকেটি সংখ্যা ধরা হয়, সেক্ষেত্রে “ভিন্ন মানুষটিকে” “perfect number”বলাটাই সঙ্গত মনে করি; “প্রেয়সী” কি পারবে ভাবনাকে এত গভীরে ভাবাতে?যাইহোক, খেলায় ফিরে আসি। তোমার এই চুড়ির “shape”এর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি শব্দ লিখো।
হুম, আমি মনে হয় তোমাকে বেশ ভালোই অনুভব করতে পারি প্রশ্বাসের মত করে; তাই জানতাম তুমি “বৃত্ত”-ই লিখবে।
এবার মুখটা তুলে আমার চোখের চশমাটা খেযাল করো।তুমি যেটা করবে তা হলো চশমার একটি প্রায়োগিক শব্দ লিখবে।
বাহ, “দৃষ্টি” লিখেছো!তোমার শব্দচয়নে মুগ্ধ হচ্ছি, বারেবারে কেবলই মনে হচ্ছে তোমার এই “তুমি”টা তোমার নিজেরও অচেনা ছিল এতকাল।

ওহো, তোমাকে তো বলা হয়নি, কাল রাতে ব্রতী আপুকে ফোন করেছিলাম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে। তুমি করনি কেন?আপুটাকে আমার ব্যাপক লাগে; অসম প্রেমের প্রতি আমার প্রবল আগ্রহটা তোমার কারণেই আর আলোর মুখ দেখতে পেলনা, নয়তো আপুর খবরই ছিল, হা হা হা। আচ্ছা, ব্রতী আপুর জন্য যথার্থ একটি শব্দ লিখতো।ওরে বাপস, একেবারে “প্রতিভা” লিখে ফেললে?

হাসছি কেন জানো?আমি এখন, তোমাকে পাঠানো আমার প্রথম sms টা পড়ছি। কেমন ভোম্বল যে ছিলাম, এত কাকুতি-মিনতি করে লেখা smsপড়ে তুমি নিশ্চয়ই আমার চেয়েও বেশি হেসেছিলে সেসময়; তোমার এখনকার এই মুচকি হাসি অবশ্য আমার বক্তব্যকেই সমর্থন করছে।তো,আমার সেই “হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসনের” কদাকার চেহারার মত sms পড়ে তোমার মনে সৃষ্ট অনুভূতিকে একশব্দে লিখো দেখি।
What a melancholy joke!তুমি “প্রার্থিত” লিখলে! এটা কি অবাধ-স্বচ্ছ অনুভূতির প্রকাশ, নাকি নিতান্তই মনরক্ষার জন্য লেখা?
ধুত্তরি, এইসময় তোমাকে আবার ফোন করে কে?একদম নড়বেনা, ফোনও রিসিভ করবেনা, নিয়ম নিয়মই।রাগ করোনা পাপড়িমণি, দেখো তুমি-আমি এইমুহূর্তে এক অপার্থিব সত্তা হয়ে উঠেছি, ফোনের অনুপ্রবেশের মাধ্যমে সেই সত্তার abstractness কে কিছুতেই ক্ষুণ্ন হতে দেয়া চলবেনা।সুতরাং ফোন বন্ধ কর।যা বলছিলাম, তোমার ফোনের রিঙটোনকে একটি শব্দে প্রকাশ কর।আ্যা, এটা কী লিখলে?তোমার রিংটোন “ছন্দোময়”?লেখ তোমার যা খুশি,তাতে কাকের রঙ যদি হলুদও লেখ তা-ই সই; আপাতত শব্দসংগ্রহই আমাদের মূখ্য উদ্দেশ্য।

একমিনিট, আজকে পেপারের বিনোদন পাতাটি পড়েছো?’দ্য লাস্ট ঠাকুর” সিনেমার উপরে একটা ফিচার লিখেছে, অনেক প্রশংসিত হয়েছে দেখলাম। যদিও প্রশংসিত চলচ্চিত্রের ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিমত ততটা উৎসাহব্যঞ্জক নয়, তবুও এটি আমরা দেখবো স্টার সিনে কমপ্লেক্সের পর্দায় পাশাপাশি বসে।এ নিয়ে পরে বিস্তারিত কথা হবে; আপাতত খবরের কাগজের প্রতি তোমার মনোভাব লিখো।
বাহ, “আস্থা” শব্দটি সার্বিক বিবেচনায়ই ওজনে ভারী।তুমিই পারবে।ভালোবাসতে মনকে প্রশান্ত মহাসাগরের ঢেউ গুণতে শেখাতে হয়; তোমার মত যাদের মনের প্রতিকোণে সেই ঢেউয়ের নামতা লেখা আছে, তাদের হাতে লেখা
আসবেই।
ভালো কথা, তুমি কি “Next” মুভিটা দেখেছো?তুমি হ্যা সূচক মাথা নাড়ছো। হলিউডে এই থিমে প্রচুর মুভি হয়, আমার ততটা ভালো লাগেনি, যদিও আমার বন্ধু বলেছে এটা ৫বার দেখার পর বুঝতে হবে।আসলে আমার কোন মুভি ২য় বার দেখতে ইচ্ছা হয়না; সবঘটনা আগে থেকেই জানা থাকলে বা পূর্বানুমানের সাথে মিলে গেলে আমি সেই বই পড়া কিংবা মুভি দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। ঠিক আছে, একত্রে নাহয় আর একবার দেখা যাবে কোন একসময়।তার আগে, এই মুভিকে একটি শব্দে বিশ্লেষণ কর।
যত তোর কাছে আসি, যাই দূরে সরে।নাহ, তোমার মন বোঝা আমার কম্ম নয়; তুমি “কল্পনা”লিখলে কেন?

দাঁড়াও, কোথায় যাচ্ছো?তুমি কিছুতেই এমনটি করতে পারোনা, এই ৩ঘণ্টা তুমি আমার ইচ্ছার অধীন, এমনকি তোমাকে এই নির্জনঘরে নগ্ন করে ছবি তুললেও তোমার টু’শব্দটি করার অধিকার নেই। আমি দুঃখিত, খারাপ উদাহরণ দেয়ার জন্য।মানছি, আমার ওভাবে বলাটা উচিৎ হয়নি তোমার “কল্পনা” লেখার প্রেক্ষিতে। যাও, একটি প্রস্ফূটিত হৃদয়ের বিকাশকল্পে আগের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিলাম।কেননা, তোমার এই অজ্যামিতিক মুখটি আমার আজীবনের ক্যানভাস_ এখানে আমি শুধু তোমার নানা ভঙ্গিমায় হাসির ছবি আকবো; কখনো যদি অভিমানী-দুঃখবিলাসী ছবি আকার প্রয়োজন হয়,জেনে রাখো আমি নিঃসঙ্কোচে নিজের হাত-চোখ বিসর্জন দিয়ে দেব।
বেশ বুঝতে পারছি, এত শব্দ লিখতে তোমার বিরক্ত লাগছে।এই খেলাটায় বিরক্তির কোন স্থান নেই।সুতরাং আর একটিমাত্র শব্দ লিখেই খেলার ২য় পর্ব শুরু করব।

আচ্ছা পাপড়ি, তুমি কি কখনো ভেবে দেখেছো “মন” শব্দটা যতটা ক্ষুদ্র , এর Concept টা তার চেয়েও অনেক অনেক বিস্তৃত ও অভিনব। আমিতো বলবো “theory of relativity” কিংবা “big-bang theory” এর চেয়ে “cycle of human psychology” বহুলাংশে জটিল, কারণ আইনস্টাইন-স্টিফেন হকিংরা মহাবিশ্বকে “পাঠশালার পাঠ্য” করে ফেললেও নিজেদের মনের ন্যুনতম একটি গহ্বরের সন্ধানও কি পেয়েছিলেন?বেশি গুরুগম্ভীর কথা আরম্ভ করেছি?অতকিছুর দরকার নেই, তুমি তোমার মনকে একটি বিশেষণে বিশেষায়িত করলেই চলবে।

তোমার মনোবিশ্লেষণটা উপভোগ করলাম; অধিকাংশ মানুষের মত তুমিও তাহলে ‘স্বাপ্নিক” মনের অধিকারী। কেউ কেউ অবশ্য নিজেকে সবার থেকে আলাদা ভেবে পুলকিত হয়। আমি মনে করি এই পুলকটা কুপমন্ডূকতার পরিচায়ক, কারণ “ব্যতিক্রম” বলতে আদতে কিছু নেই, আপাত দৃষ্টিতে যা কিছু ব্যতিক্রম বলে ভ্রম হয় সেগুলো আসলে অতিস্বাভাবিকেরই একটি অপ্রচলিত রুপ। কক্ষনো নিজেকে ব্যতিক্রম ভাবার ভুল করোনা যেন, তাহলে একসময় নিজেকে ভাবনার একাকী-জনমানবশূন্য আন্দামানে এক অপ্রকৃতিস্থ পণ্ডিতমন্য হিসেবে আবিষ্কার করে ফেলার আশঙ্কা আছে।
খেলার প্রথম পর্বে সহায়তা করার জন্য তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিৎ ছিল, কিন্ত করবোনা, কারণ কৃতজ্ঞতায় মুক্তি এবং সৌজন্যের সংমিশ্রণ আছে, অন্যদিকে ভালোবাসায় আছে বন্ধনের আবরণে মহামুক্তির ফানুস; সৌজন্য তাকে নিষ্প্রভ করে দেয়।বলা তো যায়না, এই কৃত্রিম কৃতজ্ঞতা তোমাকে যদি কোন পঞ্চমাত্রার অস্পষ্ট চিত্র করে তুলে আমার কাছে!

মন দিয়ে শোন, এই পর্বে তুমি কী করবে_ কাগজের সর্ববামে যে শব্দগুলো দেড়ইঞ্চি ব্যবধানে নিচে নিচে লিখেছো সেগুলো দিয়ে এমনসব বাক্যরচনা কর যাতে প্রতিটি বাক্যে “পরিবারের” থিম থাকে। তোমার লিখতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে, ততক্ষণে আমি আজকের পেপারে দেয়া সুডোকু সমাধান করি।
লেখা শেষ?আমিতো এত দ্রুত কিছুতেই লিখতে পারতাম না। মানবী পাপড়ির সৌরভতো বহুকাল পেলাম, এবার দেখি তার বাক্যগুলো কেমন সুরভি ছড়ায়_

নীল: মা'র নীলশাড়িটা পড়লে নিজেকে মা-মা মনে হয় ইদানীং।
সুগন্ধি:কতদিন পার হয়ে গেছে, অথচ বিকেলবেলা বুবু চুল বেধে দেয়ার সময় যে সুগন্ধি তেল মেখে দিত মাথায় এখনো বাতাসে সেই সুবাস মিশে আছে যেন।
বৃত্ত:পরিবার কোন বিচ্ছিন্ন জ্যামিতিক নকশা নয়, একটি বর্ধমান পরিধির বৃত্ত_ সময়ের সাথে যার ব্যাসার্ধ ও অন্যান্য পরামিতিগুলো পরিবর্তিত হতে থাকে।
দৃষ্টি:আমাদের ঘরের প্রতিটি দেয়াল ভালোবাসার ইট দিয়ে গাথা; তাই অভিমানের দৃষ্টি সে দেয়াল ভেদ করে ভেতরে আসতে পারেনা।
প্রার্থিত: প্রার্থিত সুখ, প্রার্থিত মানুষের প্রার্থিত স্পর্শ, আর কিছু প্রার্থিত মুহুর্ত_ এই নিয়েই একে নিলাম প্রার্থিত পরিবারের ছবি।
প্রতিভা: কোন অলৌকিক ক্ষমতা চাইনা, শুধু অকৃত্রিম স্নেহের প্রতিভায় আপনজনকে পরিচালিত করতে চাই আলোকিত জীবনাদর্শে।
ছন্দোময়: সংসারে রাগ-অনুরাগ, মান-অভিমান যেন ছন্দোময় কবিতার মত অনুরণিত-স্পন্দিত হয় অন্তর থেকে অন্তরে।
আস্থা: কোন পারিবারিক সম্পর্কই কখনো একপাক্ষিক হতে পারেনা; তা হবে নির্ভরতা, নির্ভারতা, আর আস্থার সমণ্বয়।
কল্পনা: আমার কল্পনার সংসারে তুমি, আমি , আর কিছু সুন্দর মুখ নিশ্বাস নেয় সর্বক্ষণ।
স্বাপ্নিক: আজ এই স্বাপ্নিক মনের সকল স্বপ্নকে নিবেদন করছি আমাদের স্বপননীড়ের উদ্দেশ্যে।

খেলার এই অবস্থায় একটি “স্পর্শ বিরতি” নিচ্ছি_ তোমার খোলাচুলে স্পর্শ করে হাত দুটিকে সাদা বকের মত শুভ্রতার প্রতীকে রূপান্তিরত করে নিই আগে, তবেই তো ভাবের ভরা কটাল আসবে! কিন্তু স্পর্শের এই এক দোষ: চুলে স্থান পেলে চোখ-অধরেও স্থান চায়। সেই লোভকে সংবরণ করে পুনরায় খেলা শুরু করা যাক।
বাক্যগুলো আরেকবার দেখ ভাল করে, অতঃপর এমন দুটি বাক্য বাক্য বাদ দাও যে দুটি তোমার ততটা মনঃপুত হয়নি।
Well-done, নির্বাচনের এই সহজাত ক্ষমতাটা ভীষণভাবে জরুরী। আমিও “প্রতিভা” আর “স্বাপ্নিক” এর বাক্য দুটি বাদ দিতে চাইছিলাম।আজকের এই অনির্দিষ্ট প্রহরগুলো আমাদের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসছে, কী বলো।যাইহোক, বাকি বাক্যগুলোকে তোমার পছন্দের ক্রমানুসারে পাশাপাশি লিখ কাগজের অপর পৃষ্ঠায়। তোমার লেখা চলুক, ইত্যবসরে আমি পিসিতে আবৃত্তি শুনতে থাকি। তমি টেবিলে সামনের দিকে ঝুকে পড়ে লিখছো, চুলগুলো অবিন্যস্ত হয়ে প্রায়ই মুখের উপর এসে পড়ছে, আর তুমি তা সরিয়ে দিচ্ছো অন্যমনস্কভাবে_ এই দৃশ্যকে ভাষা দিতে আবৃত্তির বিকল্প কিছু আছে কি?

হ্যা, বাক্যের বিন্যাস মোটামুটি ঠিক আছে।বাক্যগুলো পড়েই বুঝতে পারছো যে এক বাক্যের সঙ্গে তার পুর্ববর্তী বা পরবর্তী বাক্যের কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং বাক্যগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধন গড়তে প্রতিটি বাক্যকে এমনভাবে সম্প্রসারিত কর যেন সেগুলোকে আর বিচ্ছিন্ন বাক্য মনে না হয়।এবার নিশ্চয়ই লেখাটা দীর্ঘ হবে।সম্প্রসারণ শেষ হলে পুরো লেখাটি আবার পড়ো। হ্যা, এখনো বেশকিছু অসংলগ্নতা রয়ে গেছে, এ ব্যাপারে একটু পরে বলছি; আপাতত যতটুকু লিখেছো এর সাপেক্ষে একটি প্রাসঙ্গিক শিরোনাম দিতে পারবেনা?অবশ্যই পারবে। তুমিই তো সেই যে রবিঠাকুরের বই বুকে নিয়ে ঘুমায়, জেগে উঠে হাতড়ে বেড়ায় আলবেয়ার কাম্যুকে।“গ্রন্থকীট” শব্দটির প্রতি আমার দীর্ঘকাল উন্নাসিকতা ছিল; তোমার পাঠ্যাভ্যাস আমার সেই মনোভাবকে ভেঙ্গেচুরে নতুন মূর্তি গড়েছে মানসের মন্দিরে। আবশ্য এক্ষেত্রে আমি কিছুটা অনোন্যপায়ও ছিলাম: তুমি আমাকে শুরুতে প্রত্যাখ্যান করেছিলে সম্পূর্ণ অচিন্তনীয় এক কারণে_পড়াশোনার বাইরে যতটুকু সময় পাও সেটুকু ছিল গল্প-উপন্যাসের জন্য নির্ধারিত, সুতরাং আমার জন্য হৃদয়ে আবাসন থাকলেও আমাকে দেবার মত সময় নাকি তোমার ছিলনা।তোমার সেই সরল স্বীকারোক্তি আমাকে ফ্রানজ কাফকার “মেটামরফোসিসের” ঘোরটোপে নিক্ষেপ করছিল সম্মোহনের প্রাবল্যে।
এইতো, তোমার সম্পর্কে ইতিবাচক কথা শোনামাত্র কেমন স্বাচ্ছন্দে লেখাটার শিরোনাম লিখে ফেললে।প্রশংসার ক্ষমতা ৭৪৬ ওয়াট এর চেয়ে কোনক্রমেই কম হবেনা।তাইতো এই প্রেম-প্রেম কথকতার উপজাত হিসেবে একটি অনিন্দ্যসুন্দর লেখার সৃষ্টি হলো আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায়।আসলে প্রকৃত সত্য কি জানো? “লেখা” প্রত্যেক মানুষের জন্মগত প্রতিভার মত; একে শুধু পারিপার্শ্বিকের প্রেক্ষাপটে জাগিয়ে তুলতে হয় তার অন্তর্গত বোধের গভীর থেকে।সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন sense; এই একটিমাত্র ইন্দ্রিয়ের যথার্থ প্রয়োগ ঘটিয়েই লেখা সম্ভব, এর সঙ্গে অনুঘটক হিসেবে “কল্পনাশক্তিকে” যোগ করে নিতে পারো।
প্রকৃতিগতভাবেই আমরা মানুষেরা কল্পনাপ্রবণ। এই যেমন, তুমি-আমি যতটা সময় দুরে থাকি তার সিংহভাগ অংশই ব্যয় করি লোভাতুর কল্পনায়_ তাতে কখনো রাতের ঢাকায় পাশাপাশি হেটে খিলগাও ফ্লাইওভারে যাই, কিংবা পিঠে পিঠ ঘেষে বসে থাকি কোন পদ্মপুকুরের সামনে। সেই কল্পিত ঘটনাকে চোখের সামনে ঘটতে দেখতে পাওয়ার মাঝেই লেখার মূল রহস্য বা চালিকাশক্তি নিহিত।তুমি নিশ্চয়ই শোনা ঘটনার চেয়ে চাক্ষুষ ঘটনাকেই অধিকতর দক্ষতায় বর্ণনা করতে পারবে, তাই না?তাই যখনই যা লিখবে, এমনকি একটি নিঃশ্বাস পতনের শব্দও, যেন তোমার দৃষ্টিকে এড়িয়ে না যায়।

একজন লেখখকে সর্বপ্রথমে একজন মনোযোগী পাঠক হতে হয়।তোমাকে এই কথাটি বলতে লজ্জা পাচ্ছি, কারণ আমার চেয়ে অন্তত ৩গুণ বেশি বই তোমার পড়া আছে।তবে যে কথাটি না বললেই নয় তা হচ্ছে, লেখার ক্ষেত্রে শেষকথা বলে কেউ নই, তাই কখনই কাউকে আদর্শ ধরবেনা।তাহলে তার ছায়ায় ঢাকা পড়তে পারে তোমার সহজপাঠ্য লেখা।বরং সবার লেখা পড়ে স্টাইল এবং লেখার মৌলিক অনেক অনুসঙ্গ সম্পর্কে ধারণা নেবে, এটা ধার করা বিদ্যে নয়, বরং ধারণার আদান-প্রদান।

আমার নিজস্ব একটি মতাদর্শ আছে লেখার ব্যাপারে। কখনই প্রচলিত, বহুল চর্চিত উপমা ব্যবহার করবেনা লেখায়; যেমন ধর প্রেয়সীর মুখ চাঁদের মত, প্রেমপত্রের খামের রঙ নীল....এরকম কিছু।দেখো নিয়মের মধ্যে থেকে হয়ত গড়পড়তা কাঠামো তৈরি করা যায়, কিন্তু নিয়ম ভাঙ্গার মধ্য দিয়েই ভিন্ন নিয়ম গড়া হয়। এই সত্যটি মাথায় রাখা উচিৎ লেখার সময়।
তুমি আমাকে ভালোবাসো কেন?অথবা তোমাকে এভাবে দেখছি কেন?এই দেখাটা শুধুই দেখার আনন্দে নয়, এর সঙ্গে একটি অদৃশ্য আত্মিক চাহিদাও আছে; এই আত্মিকতা থেকেই লেখালেখির প্রজনন ঘটে।তোমার বই প্রকাশিত হবে, বইমেলায় মানুষ লাইন ধরে তোমার বই কিনবে, টেলিভিশনে তোমার লেখা লাটক প্রচারিত হবে....এরকম উচ্চভিলাষ নিয়ে লিখতে বসলে কিছুই হবেনা কাগজ অপচয় ছাড়া।সবকিছু ভুলে শুধু মানসিক প্রশান্তির জন্য মাত্র ২লাইন ছড়াও যদি লিখতে পারো , দেখবে সেই আনন্দ আমার স্পর্শের চেয়েও তোমার কাছে অধিকতর প্রার্থিত হবে।
শিরোনাম দেয়া হল, লেখা সাজানোও শেষ; এবার চাইলে পুরো লেখাটি একটানে কেটে দিতে পারো। এটা ছিল লেখার খসড়া; মূল লেখাটি শুরু হবে এখন ২য় অফসেট কাগজটিতে। এই কাগজে তুমি আগের লেখাটিই হুবুহু লিখতে পারো, তবে আমি জানি তুমি তা করবেনা।লেখার এই পর্বকে নাম দিতে পারি “নিরীক্ষণ অধ্যায়”।এসময় তোমার হয়ত মনে হচ্ছে মাঝের অংশটুকুই প্রারম্ভিক অংশ হলে ভালো হয়, কিংবা শেষাংশটুকই বেশি প্রাসঙ্গিক লেখার আঙ্গিক বিবেচনায়। যেহেতু লেখাটিকে তুমি একটি পর্যায়ে নিয়ে এসেছো, তাই এটা মোটেও আস্বাভাবিক হবেনা যদি তুমি পুরো লেখাটিকেই বাদ দিয়ে ভিন্নকিছু লিখতে শুরু কর, কারণ খেলার শুরুতে তুমি-আমি কেউই লেখাটির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না; এই মুহূর্তে তার অনেক কিছুই আমাদের সামনে দৃশ্যমান।

এইবার পুরো লেখাটির এলগারিদমটা খেয়াল কর। আমরা শুরু করেছিলাম শব্দ দিয়ে, এরপর বিচ্ছিন্ন কিছু বাক্য, সেগুলোকে পরিমার্জন করে অর্থপূর্ণ কিছু লাইন....এভাবেই একসময় পূর্ণাঙ্গ একটি লেখা পেলাম। তাই লেখার ক্ষেত্রে শব্দই ক্ষুদ্রতম একক।
না না আমাকে আলিঙ্গন করার প্রয়োজন নেই। ২ঘণ্টা আগে খেলা শুরুর সময়ই তোমার দুহাত তুলে পরম তৃপ্তির হাসির দৃশ্য কল্পনা করে রেখেছিলাম; প্রকৃত অর্থে সৃজনশীলতার আনন্দ ব্যক্তি নিরপেক্ষ অনুভতি। তাই তুমি আজ বাড়ি ফিরেই যদি তোমার ছোটভাইয়ের সঙ্গে একই খেলায় মেতে উঠো, বিশ্বাস করো একটুও অবাক হবনা। এখন গলাটা একটু ছাড়তো পল্লবিত পাপড়ি সোনা, এখনও খেলার শেষদৃশ্য মঞ্চায়নের অপেক্ষায় আছে।
শুনতে পাচ্ছো, পিসিতে বনলতা সেন কবিতাটি আবৃত্তি হচ্ছে?তুমি আবার ঐ চেয়ারটাতে বসো। এইতো সেই বিশেষ অংশটুকু চলে এসেছে_
সব পাখি ঘরে ফিরে-সব- নদী-ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার, বনলতা সেন।।।


তুমি লেখার সময় আমি কবিতার এ‌ই বিশেষ অংশটুকু আলাদা ফাইল হিসেবে সেভ করে রেখেছিলাম। এখন থেকে আগামী ৩৫মিনিট শুধু এই লাইনগুলোই চলবে পিসিতে। মোবাইল বন্ধ করে এলার্ম দিয়েছি; আমরা এখন মুখোমুখি বসে থাকব নিশ্চুপ-শুনশান। সব আলো নিভিয়ে জানালার পর্দা টেনে দিয়েছি, টেবিলে জ্বলবে একটি ক্ষয়িষ্ণু মোমবাতি। চোখের প্রতিটি পলকের মাঝে আমরা নিজেদের অব্যক্ত কথাগুলো খুজে বেড়াব, নিশ্বাসের শব্দে মাপবো অনুভবের গভীরতা।এরপর নির্ধারিত সময় শেষে তুমি-আমি একটি নতুন লেখা লিখবো।।।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০০৯ দুপুর ১২:৪২
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×