somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলে যায় বসন্তের দিন.........

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিন গুলো একে একে চলে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছি অন্তিম মুর্হুতটির দিকে।প্রতি জন্মদিনে, প্রতি বসন্ত উৎসবে, নববর্ষে ও নবান্নে সবাইকে আনন্দ খুশীতে মেতে উঠতে দেখেছি। নতুনকে বরণ করে নেয়া, উৎসাহ উদ্দিপনায় আনন্দ ও গানে।আমিও নাচে গানে কবিতায় ও আনন্দে সামিল হয়ে যাই সবার সাথেই। কিন্তু একটুক্ষণের জন্য হলেও আমার খুব ভেতরের এক সত্বায় কাঁপন ধরে। কেঁপে উঠি আমি কিছু হারাবার বেদনায়। নতুন দিনের শুরুতে আমার ভেতরে একটা সূক্ষ বেদনা জাগে, ফেলে আসা দিন গুলোর জন্য। আমি আসলেই হয়তো দুঃখ বিলাসী অথবা নস্টালজিয়া আমার প্রিয় এক বিষয়।

আজ সকাল থেকেই ভাবছিলাম কাল থেকে আবারও এক নতুন বছরের শুরু। নতুন দিন, নতুন ভোর।শুধুই পুরোনো এই পৃথিবীটাতেই, পুরোনো দিন গুলোকে সাক্ষী রেখে নতুন দিন গুলোতে হেঁটে চলা। এ বছরে আমি অনেক পেয়েছি, হারিয়েছিও কিছুকিছু। তবে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব নিকেশে প্রাপ্তিটাই অনেক বেশী বলে মনে হয়। অপ্রাপ্তিগুলো ভাবতে চাইনা। ভাবছিলাম এ বছরে নতুন করে কি কি পেয়েছি, অনেক গুলো ভালোলাগা,ভালোবাসা, ভালোলাগার দিন ও ঘটনা। কিছু নতুন প্রিয়জন ও বন্ধু।কিছু ভ্রমন স্মৃতিও এবছরটাকে স্মরণীয় করে রাখবে।

এই ব্লগটাতেও এসেছি এ বছরেই। এটাও আমার এক অবিস্মরণীয় প্রাপ্তি। ব্লগের পাতাগুলিও ঠিক যেন ডায়েরীর পাতাগুলোর মতই বছরটাকে আজীবন ধরে রাখবে।ইচ্ছে হলেই পাতা উল্টিয়ে দেখে নেওয়া।

স্কুল জীবন থেকেই লুকিয়ে ডায়েরী লেখার অভ্যাস গড়ে উঠেছিলো।লুকিয়ে বলছি কারণ আমি বড় হবার সাথে সাথে একটু চাঁপা স্বভাবের হয়ে উঠি। অনেক কথা বলতাম হয়তো সবার সাথেই কিন্তু নিজের কিছু একান্ত কথা কাউকেই বলতে পারতাম না। আমার সে নীল ডায়েরীটা ছিলো আমার অতি আপন প্রিয় এক বন্ধু।খুব বিশ্বাসী আর কাছের এক বন্ধু। যাকে সব বলা যায়।

এই ব্লগের পাতাটাও অনেকটা সেই রকম। ঠিক আমার ছোটোবেলার প্রিয় সেই নীল ডায়েরীটার মত না হলেও অনেকটাই তেমন। আমি আমার এই প্রিয় বন্ধুটাকেও খুঁজে পেয়েছি এ বছরেই। আর সাথে কিছু অনেক অনেক বড় হৃদয়ের মানুষের দেখা পেলাম। যাদের অনেককেই আমার এই জীবনে ভোলা হবেনা। ২০০৮ আমাকে অনেক দিয়েছে।

ক্লাস টেনে পড়তাম যখন, সে বছর প্রথম ডায়েরী লেখা শুরু করি। আজ সেই প্রথম ডায়েরী থেকে তার পরবর্তী প্রতি বছরের ডায়েরীগুলো বের করে নেড়েচেড়ে দেখছিলাম।
হঠাৎ চোখ আটকে গেলো একখানে। যেখানে আমার প্রথম সমুদ্র দর্শনের বর্ণনা লিখেছিলাম। সমুদ্রের কাছে প্রথমবার যখন যাই তখন বিকেলবেলা। অনেক দূর থেকেই সমুদ্রের গর্জন কানে আসছিলো। হেঁটে হেঁটে আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম সমুদ্রের কাছে। সুর্য্যটা তখন ডুবু ডুবু। কিছুক্ষন পরেই সূর্য্যাস্ত দেখতে পাবো, সবাই বলাবলি করছিলো। খুব হইচই করছিলো সবাই।ডুবুডুবু সূর্য্যের মায়াবী আলো, উথাল পাতাল বাতাস আর সমুদ্রের গর্জনের সেই দারুন ভালোলাগাটা কিছুতেই আমি আজও ভাষায় প্রকাশ করতে পারিনা। আর ডায়েরীতে যখন লিখেছিলাম তখন তো আমি নিতান্তই কিশোরী।

তবুও এক নিমিষে মনে পড়ে গেলো সেই বিকেলটা। সবার সাথে হাঁটছিলাম আমরা সমুদ্রতটে। কিন্তু আমার খুব খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো একা হয়ে যেতে। সমুদ্র আর ঐ বিকেলটার সৌন্দর্য্য একা একা নিজের মত করে মন দিয়ে অনুভব করতে। আমাদের দলটা খুব হইচই হট্টগোল করছিলো। এত হট্টগোল হইচই এর মাঝে কি এত সৌন্দর্য্য মন দিয়ে অনুভব করা যায়???

দ্বিতীয়বার যখন গিয়েছিলাম, তখন আমি একুশ। সেবার আমি সবার থেকে সন্ধ্যাবেলাটাই ঠিকই একা হয়ে গিয়েছিলাম। চারিদিকে হাজার হাজার মানুষ কিন্তু আমি একা একা বালুকাবেলায় হেঁটে গিয়েছিলাম বহুদূর!!!!!!

সেদিনও মনে পড়ছিলো সেই কিশোরীবেলার সমুদ্র দেখার স্মৃতিটা। আরো একবার সমুদ্রের বালীয়াড়ীতে হাঁটতে চাই আমি। যদিও সেটা স্বপ্ন। কখনও পুরণ হবে না হয়তো।কেন ? সে প্রশ্নের ঊত্তর শুধুই ঐ নীল ডায়েরীটাতেই লেখা যায়।

সামনের দিন গুলো তার নিজের নিয়মেই বলে দেবে নতুন বসন্তের কথা। তবুও আমি মিস করি ফেলে আসা অতীত আর ফেলে আসা দিন গুলোকে। সাথে সেসব দিনের ভালোলাগা ও ভালোবাসাগুলোকে। তাই নতুন বছরের প্রক্কালে সবাই যখন নতুনের বরনোৎসবে মেতে ওঠে আমি তখন চুপিসারে আনমোনা হই পেছনের বসন্তগুলোকেই ভেবে।যেখানে আর কখনও ফেরা হয়না।ফিরে যাওয়া যায়না।
চলে যায় বসন্তের দিন ...............................


সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।




সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:৫৫
৮২টি মন্তব্য ৮০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×