somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাবতেই পারি কিন্তু কিছুই করতে পারি না...

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার পাশের বাসার এক আপু আছে তার বাবার(আমরা মামা বলি) একসময় একটা বেকারি, একটা ওষুধের দোকান সহ আরো কিছু টুকিটাকি ব্যবসা ছিল। সেটা প্রায় ১৭/১৮ বছর আগের কথা। ওই মামা আরো বেশি কিছু করার লোভে সবকিছু বিক্রি করে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন দালাল ধরে...সৌদিতে যেয়ে উনার লাভ এই হয়েছে উনি হজ্জ্ব করে ফিরে এসেছেন। এরপর ওই মামা সবকিছু শেষ করে ছোটখাটো দোকানে কাজ করে কোনমতে সংসার চালাচ্ছিলেন। উনার ৫ মেয়ে এক ছেলে। ছেলের প্রতি স্বভাবতই উনাদের ছিল একটু বেশি আশাই আর তাই মেয়েদের কিছুটা অবহেলা আগে থেকেই করতেন ওই মামা মামী। উনার পারিবারিক স্বচ্ছলতা যখন কমে গেল তখন ওই আপু যার আগের থেকেই পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ কম ছিল সে ছেড়ে দিল। ক্লাস সেভেন বা এইটের পর আর পড়াশুনা করে নি আপু।

এর কয়েকবছর পর আপুর প্রেম হয় তারই এক বান্ধবীর বড় ভাইয়ের সাথে। বিয়ের কথা যখন পাকাপাকি হবে তখন ওই ছেলে একটা মোটর সাইকেল চেয়ে বসলো। বলা বাহুল্য আপুদের তিন বেলা খাওয়াটাই কষ্টের কাজ সেখানে মোটর সাইকেল! হলো না আপুর আর বিয়ে

এরপর আপুর দিন কেটে যাচ্ছিল এই ভেবে যে হয়তো তার কোন রকম একটা বিয়ে শাদী হবে সে সেটেলড হবে। কিন্তু বেশ কয়েক জায়গা থেকেই কথা হলেও টাকার প্রশ্নে থেমে যায়। কিন্তু থেমে থাকে না মানুষের মুখের কথা!! বিয়ে কেন হয় না এত বয়স হয়ে গেছে....কেন কারো হাত ধরে চলে যায় নি সময় থাকতে এগুলো সবখানেই শুনতে হয় তাকে।
শেষ যে ঘটনা টা হয়েছে..সেটা বলি। ওই আপুর ছোটবোন একটা বাচ্চাকে প্রাইভেট পড়াতো। সেই বাচ্চার মা ২মাসের টাকা দিচ্ছিল না, আপুর তার বোনের হয়ে টাকা চাইতে গেছিলো। ওই বাচ্চার মা সেটাকে সালিশ পর্যায়ে নিয়ে গেলো এবং সালিশ এ এলাকার এক মাথা লোকজনের সামনে চড় মারে ওই আপুকে। আপু আমাদের বাসায় এসে অসহায়ের মত কেদে ফেললো। আমরা শান্ত্বনা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারি নি!!

বারবার সবখানে হেনস্ত হতে হতে আপু ইদানীং কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। বাসায় উল্টাপাল্টা করে। চিৎকার চেচামেচি ভাংচুর। কিন্তু এখন বাসার লোকজনও তার সাথে অত্যন্ত বাজে আচরণ করছে। তাদের কথা একটা পাগল তারা সামলাতে পারবে না। পাবনাতে পাঠানোর চিন্তাভাবনা তাদের। ৩দিন সে না খেয়ে ছিল কিন্তু সবাই তাকে পানির সাথে ঘুমের ওষুধ গুলিয়ে খাওয়াতে বেশি আগ্রহী...বুঝিয়ে সুঝিয়ে খাবার খাওয়ানোর চেয়ে। আমার আম্মু ৩দিন আগে তাকে খাইয়ে এসেছিলো এরপর থেকে সে শুধু পানি খেয়েই ছিলো। আম্মু এসে বলছিলো সেদিন ওর বোনেরা হাসছিলো পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে। আজকে আমাদের বাসায় এসেছিলো আমরা জোর করেই ভাত খাওয়ালাম। আমাদের বাসায় এসে আম্মুকে বলছিলো, ছোটফুপু (আমার ছোটখালা) কে বলেন তার বাসায় কাজের লোক হিসেবে আমাকে রাখবে নাকি। আমাকে কিছু দেয়া লাগবে না শুধু খেতে পরতে দিলেই হবে।

আমি আপুকে অনেক পছন্দ করি। একবার আম্মু আর মেজখালা ছোটখালার বাসায় গেল তখন আমার খালাতো বোনের ব্রেইন টিউমার অপারেশন হয়েছিলো ওকে দেখতে। মামী ঢাকাতে ছিল। বাসায় আমরা ৫ ভাইবোন ছাড়া আর কেউ নাই। এদের মধ্যে আমার অবস্থান মেজো হলেও দায়িত্ব ছিল আমার উপর কারণ বুবু সবসময়ই একটু বেসামাল। নানী অসুস্থ হয়ে পড়লো, আপু তখন আম্মুরা না আসা পর্যন্ত নানীর অনেক সেবা করেছিলো যা আমি কখনই করতে পারতাম না।
এই আপুই প্রথম আমাদের বাসায় তাবলীগের মহিলাদের নিয়ে আসে। এরপর যখন আমাদের তাবলীগের ঘরটা তৈরি হয় তখন ও এই আপু অনেককিছু করেছে। যদিও পরবর্তীতে তাকেই ওখান থেকে বের হতে বাধ্য করা হয়েছে। তাবলীগের কাহিনী আরেকদিন লিখবো।

এই আপু কোন এক অজানা কারণে আমাকে অনেক পছন্দ করে। আমি অনেক মানুষকেই দেখি আমাকে চেনে এবং শুনি আপু নাকি আমার কথা অনেক বলে। আমার ধারণা, আমি যদি কোন মানুষকে অপছন্দও করি কিন্তু যদি শুনি সে আমাকে পছন্দ করে তবে তার প্রতি এক ধরনের দুর্বলতা কাজ করে। যেটা আমার ঐ আপুর প্রতি বেশি দুর্বলতার হয়তো বা আরো একটা কারণ!

যে কথা বলছিলাম, আপু আজকে এসে এতো আসহায়ভাবে আমাকে বলছিলো, আউলা তুমি বলো আমি কি করবো? আমার তো কিছূ করে খেতে হবে। আমার আব্বা চোখটা বুজলেই আমার ভাই আমাকে বের করে দিতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করবে না। তুমি বুঝবে না আমি কেন বিয়ে করতে চাই। কেন বিয়ে না হবার জন্য টেনশন করি....আমি একটা নিরাপত্তা... একটা নিরাপদ আবাসস্থল খুজি ...জীবনে কিছুই পাই নি...আব্বা কখনওই আমাদের একটা জামা দিতে পারে নি কাউকে কখনও বলি নি। কোন আক্ষেপও ও নেই তবে আজকে আমার একটা কিছু করা খুবই দরকার! বল না আমি কি করবো?


আপু চলে গেছে প্রায় ২ ঘন্টা হলো..আমার তার করুন করে বলা কথাটাই কানে বাজছে, কি করা যায় বলো তো...কিন্তু আমি শুধু তার জন্য কি করা যায় ভাবতেই পারি কিন্তু কিছুই করতে পারি না...
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:১২
২৩টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামীলীগে শুধুমাত্র একটি পদ আছে, উহা সভাপতি পদ!

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৪ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১


বাঙ্গালীদের সবচেয়ে বড়, পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দলটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। মানুষ এই দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। ৭০ এর নির্বাচনে এই দলটিকে নিরঙ্কুশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমপি আনারের মৃত্যু এবং মানুষের উষ্মা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:২৯


সম্প্রতি ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর আনোয়ারুল আজীম আনার নামে একজন বাংলাদেশি এমপি নিখোঁজ এবং পরবর্তীতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহের হাড়-মাংস আলাদা করে হাপিত্যেশ করে দেওয়া হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

দোয়া ও ক্রিকেট

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৪


দোয়া যদি আমরাই করি
তোমরা তাইলে করবা কি?
বোর্ডের চেয়ারম্যান, নির্বাচকের
দুইপায়েতে মাখাও ঘি।

খেলা হচ্ছে খেলার জায়গা
দোয়ায় যদি হইত কাম।
সৌদিআরব সব খেলাতে
জিতে দেখাইত তাদের নাম।

শাহাবুদ্দিন শুভ ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!!

লিখেছেন অন্তর্জাল পরিব্রাজক, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:২১



দয়া করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!! X( এরা ছাগলের দলই ছিল, তাই আছে, তাই থাকবে :-B !! এরা যেমন ধারার খেলা খেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বকুল ফুল

লিখেছেন নীল মনি, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৪

বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে থাকে আমার এই ঘর। আমি মাটির ঘরে থাকি। এই ঘরের পেছন দিকটায় মা'য়ের হাতে লাগানো বকুল ফুলের গাছ৷ কী অদ্ভুত স্নিগ্ধতা এই ফুলকে ঘিরে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×