somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাক-ডাক্তার

২১ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জঙ্গলমহলের একটা কাকের ডাক্তারী করার খুব শখ। কিন্তু
ডাক্তারী করতে হলে, প্রথমে তা শেখা দরকার। প্রতিবছর এই
জঙ্গলমহলে ডাক্তারী পড়ার এন্ট্রাস পরীক্ষা হয়। তাতে বহুবার
অংশ নিয়েছে কাক, সফল হয়নি।


ডাক্তারীর স্বপ্ন দেখা কাক তাই বন্ধুদের কাছে বলে--আরে ধুর,
এখানে আবার ডাক্তারী শেখানো হয় নাকি, আসল ডাক্তারী
শেখানো হয় ফরেনে। ভাবছি এবার ফরেন ঘুরে ডাক্তারীটা শিখে
আসবো।


বন্ধুরা হাসে। তারা জানে, কাকের ফরেন মানে, মানুষ নামক
দ্বিপদীদের লোকালয়। সেখানে জঙ্গলমহলের রাষ্ট্রপতি, প্রধান-
মন্ত্রীদের কদর নেই, তা এ-তো এক কাগেয়াপট্টির কাক।


কাক বন্ধুদের বলে--আমাদের এলাকাটা কাগেয়াপট্টি নয়,
কাকদ্বীপ। জঙ্গলমহলের চারদিকে সমুদ্র-ঘেরা কাকদের বসতি,
কাকদ্বীপ।



বন্ধুরা কাকের ওই কাকদ্বীপ নামটি সমর্থন করে, ডাক্তারীটা
নয়। তারা বলে--মানুষদের ডাক্তারী তো শুধু হিংস্রতা। কাটাছেঁড়া
আর ছুঁচ ফোটানো কি সবার সয়?


বন্ধুদের বাধা উপেক্ষা করে, হিতাকাঙ্খীদের নিষেধ অমান্য
করে আকাশে উড়লো কাক।


কাকদের জঙ্গলমহলে মানুষদের খুব বদনাম। সেই মানুষ নামক
দ্বিপদীদের কাছে ডাক্তারী শিখে এসে কাক প্রমাণ করে দেবে,
মানুষমাত্রই খারাপ নয়।


জঙ্গলমহলের সভ্যতার প্রতি খুব একটা শ্রদ্ধা নেই কাকের।
এই সভ্যতার দৌলতে কতজনের কপাল ফিরে গেল, ফিরলো
না শুধু তার।



বাঘ-সিংহ রাতারাতি হয়ে গেল থানার বড়বাবু। পায়রা পেলো
ডাকবিভাগের চাকরী। এমনকি শেয়াল যাদের নামে কিনা
কুমীরছানা তছরুপের অভিযোগ আছে, সে-ও হয়ে গেল,
পণ্ডিতমশাই।


কাককে কি নিদেনপক্ষে একটা হিসেবরক্ষকের কাজ দেওয়া
যেতো না?



অথচ চাকরীর বাজারে কাকেদের কত সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ড আছে।
কাক পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান। হিসেব কষেই তো
জনৈক কাক বলেছিল--হাতে রইল পেনসিল। আজ সেসব
ইতিহাস।

ডাক্তারী শিখে অনেককিছু নিন্দুকদের চোখে আঙুল দিয়ে
দেখিয়ে দেবে কাক।


উড়তে-উড়তে লোকালয়ে হাজির হলো কাক। দেখল,
একটা বাড়ির বারান্দায় বসে একজন বৃদ্ধ ঝিমোচ্ছেন। তাঁর
পাশে পড়ে রয়েছে একটা পশুপাখিদের ছবিওলা বই।

ওটা নিশ্চয় ডাক্তারী শেখার বই। কিন্তু ওপাশের ওই ছোট
কাঠের বাক্সটা কিসের?

কাক যখন বাক্সের চিন্তায় মশগুল ঠিক তখনি তার দিকে তেড়ে
এলো একদল জংলী কাক। তারা কা-কা করে বললো--তুই
কোন ঘাটের মড়া-রে, আমাদের এঁটোকাটায় ভাগ বসাতে
এসেছিস?

বিরক্ত কাক বললো--অশিক্ষিতের দল, তোরা কি জানিস
আমার বাসা জঙ্গলমহলের কাকদ্বীপ। আমরা এখন সভ্য হয়ে
গেছি, এঁটোকাটা খাইনে।
--তবে এসেছিস কেন এখানে?
--আমি এসেছি ডাক্তারী শিখতে।
--ফুঃ ফুঃ, ডাক্তারী আবার একটা কাজ নাকি, ওই দ্যাখ
ওই বুড়োটা ওষুধের বাক্স নিয়ে বসে আছে, ও-ও একটা
ডাক্তার। আমাদের এখানে বলে কোয়াক-ডাক্তার। কিন্তু ওর
কাছে কোন রোগী আসে না। বুড়ো তাই মনের দুঃখে ঝিমোয়।


শুনে পুলকিত হলো কাক। ঠিক জায়গায় এসেছে সে। তাই
খুশিঝরা গলায় বললো--রোগী না আসুক, আমি তো এসেছি
আজ, ওই মহর্ষির কাছে ডাক্তারী শিখে তবেই বাড়ি যাব।

--সে তুই যতখুশি শিখে নে, কিন্তু আমাদের আহারে ভাগ
বসাবি-নে খবরদার।

বলে উড়ে গেল জংলী কাকের দল।

বারান্দায় বসা বৃদ্ধের তন্দ্রা ছুটে গেল, তিনি সবিস্ময়ে দেখলেন,
একটা কাক বইয়ের সামনে বসে আছে।
আদুরে গলায় তিনি বললেন--কি-রে বাছা পড়বি নাকি?

কাক ঘাড় নেড়ে বলল--কঃ।
উচ্ছ্বসিত বৃদ্ধ হাঁক ছাড়লেন--কইরে নন্টে-ফন্টে-ঝন্টে, তোরা
তো শুধু পড়া ফেলে পালাস। দেখে যা একটা কাক আজ
আমার কাছে পড়তে এসেছে, কথায় আছে না, জ্ঞাণীর কদর
গুণী বোঝে।




বৃদ্ধের চেয়ে কাকের উৎসাহ বেশী। সে উড়ে গিয়ে বসলো ওসুধের বাক্সের উপর। তারপর বলল--
আমি আপনার কাছে ডাক্তারী শিখবো।


কাকের সেই কাকীয়-ভাষা বৃদ্ধ বুঝলেন না। তাই বললেন--আহা ওষুধের বাক্সে বসছিস কেন, এক্ষুণি
নোংরা করে ফেলবি।

বৃদ্ধের কথা বেশ বুঝতে পারছে কাক। তাই সে বাক্স থেকে নেমে বইয়ের পাশে দাঁড়ালো। তারপর
বললো--আমি আপনার কাছে ডাক্তারী শিখবো।

বিস্মিত বৃদ্ধ বললেন--বাঃ বাঃ, বেশ বুদ্ধিমান কাক তো! কিন্তু তোর ভাষাটা বোধহয় ককেশীয়
ভাষা, যেটা কিনা আমি জানি না। তবে আমি বেশ বুঝতে পারছি যে, তুই জানতে চায়ছিস, ওই
ওষুধের বাক্সে কি আছে।


কাক ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়েছে দেখে বৃদ্ধ বাক্সের ঢাকনা খুললেন। ছোট্ট একটা শিশি বের
করে বললেন--এই শিশিতে যা ভরা আছে তাকে তোরা জল বলিস কিন্তু আমরা বলি ওষুধ।
এই জল তোর পেটে একফোঁটা পড়লে পোলিও-ডিপথোরিয়া-টিটেনাস-হাম, যা-কিছু হবে
সব সেরে যাবে। তার উ কৃষ্ট প্রমাণ আমি , মাত্র দু-বছর এই জল খাচ্ছি তবু দ্যাখ আমার
বাহাত্তর বছরের শরীরে বাহাত্তুরে ধরেনি, যমের মতো ওসব অসুখ আমার ছায়া মাড়ায়নি।

কাক হাঁ করে শুনছে দেখে বৃদ্ধ দ্বিগুণ উৎসাহে বললেন--ঘামাচি, চুলকোনি, ফোঁড়াতেও
এই জল খুব কাজ দেয়।

জলীয় ওষুধের গুণাগুণ শুনে কাকের চোখদুটো বড়ো-বড়ো হয়ে গেছে দেখে বৃদ্ধ হাসলেন।
বললেন--মহাপুরুষরা কি বলেছেন জানিস, বলেছেন--জলই জীবন।

আর আমরা কোয়াক-ডাক্তাররা বলি--জলই জীবন, জলই ওষুধ, জলই সারৎসার।
সেই যে একটা কথা আছে না, বিদ্যায় বুদ্ধি, কর্মে বল, ইহা ছাড়া দুনিয়ার সবকিছু জল।
যাক-গে সেকথা, আগে তোকে পড়ালেখা শেখায়, তারপর না হয় ডাক্তারী শেখাবো।

বৃদ্ধের প্রস্তাবে বিরক্ত হলো কাক। বললো--পড়ালেখা পরে হবে আগে ডাক্তারীটা শেখান।

এবারও কাকের ভাষা বুঝলেন না বৃদ্ধ। তবু অনুমানের উপর ভিত্তি করে বললেন--তোরও দেখছি
আমার নাতিদের মতোই স্বভাব। পড়ার কথা বললেই শুধু, ছুটি দাও-ছুটি দাও। থাক সব মুখ্যু হয়ে,
আমার আর কি, ৭২ বছর কেটে গেছে আর ২৮ বছর চোখ-বুজে কাটিয়ে দেব। যাঃ আমার
চোখের সামনে থেকে দুর হয়ে যা।

কাক বুজলো বৃদ্ধ রেগেছেন। রাগে চোখ বন্ধ করেছেন তিনি। ডাক্তারী তো অনেক শেখা হলো,
এখন ওষুধের অভাবে সেই বিদ্যে মাঠে মারা যায় কেন? সামনে পড়ে থাকা ওষুধের শিশিটা
ঠোঁটে তুলে নিয়ে আকাশে উড়লো কাক।


কাকের ডানার শব্দে বৃদ্ধ দেখলেন--ওষুধ হাওয়া। চিৎকার করে উঠলেন--ধর-ধর, চোর-চোর,
কইরে নন্টে-ফন্টে-ঝন্টে ছুটে আয়, কাকে আমার ওষুধ চুরি করে নিয়ে পালালো-রে, কাকে
আর ওষুধ বিলাবো-রে!

পড়ার ডাক নয় বিপদের আহ্বান, বৃদ্ধের নাতিরা তাই বীর-বিক্রমে আত্মপ্রকাশ করলো। তাদের
বাঁটুল থেকে ছোঁড়া গুলতি আকাশে উড়ে গেল। তবু কাকের নাগাল পেল না।
(পরের কথা জানতে, কাক-ডাক্তার শেষাংশ,পড়ুন)

৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×