somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুড়ি বছর পর যখন দেখা হলো!

২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা হয় যদি!

২য় পর্বটা হঠাৎ করেই লেখা। তবে এটাই শেষ পর্ব। উপরে প্রথম পর্বের লিংক। প্রথম পর্বে শাহেদ-মুনিয়ার যদি কুড়ি বছর পর দেখা হয়! আর এই পর্বে তাদের দেখা হওয়ার পরের গল্প।
--------------------------------------------------------------------------------
আবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা হয় যদি!
আবার বছর কুড়ি পরে -
হয়তো ধানের ছড়ার পাশে
কার্তিকের মাসে-
তখন স্বন্ধ্যার কাক ঘরে ফেরে- তখন হলুদ নদী
নরম নরম হয় শর কাশ হোগলায়- মাঠের ভিতরে।

মুনিয়াকে পুরো কবিতাটি আজ আবারো শুনালো শাহেদ।
কুড়ি বছরপর মুনিয়া শাহেদের কাছে এসেছে। একদম পাশে বসেছে তবে খানিকটা দূরত্ব রেখে। শাহেদ বলেছিল, কাছে এসে বসো।
মুনিয়া একটি মুচকি হাসি দেয়। কিছু বলে না।
তারপর মুনিয়া নিজ থেকে আবার বলল, শেষদিন যে কবিতাটি শুনিয়েছিলে ওটা আবার একটু শোনাবে?
বলতে তো দেরি নেই। কবিতাটা তো শাহেদের মুখেই ছিল শুধু বের করে দিলো।
- তো কেমন আছো? মুনিয়া প্রশ্ন করলো।
- আছি ভালো। অসলে সত্যি কথা বলতে তেমন ভালো নেই।
- এটা কি আমাকে কিছু বোঝানোর জন্য বলছ।

চটাচট উত্তর। এমনভাবে শাহেদ আশা করেনি। মুনিয়ার কাছে একটু আবেগ সে আসা করেছিল। শতহোক, এই মেয়েটাকে তো সে একসময় প্রচন্ড ভালোবাসতো। একসময় কি!! এখনও.....এখনও সে ভালোবাসার বাগানে ফুল ফোটে একমাত্র মুনিয়ার জন্যই।
- আসলে জীবনটা বড্ড একাকিত্বের মাঝে কাটে। যাকে হয়তো বলা যায় ফ্রাস্টেশান।
- কি এমন মহা অন্যায় জীবনে করেছো যে একাকিত্বের মধ্যে তোমাকে থাকতে হয়?
- মানে তো বুঝলাম না। অন্যায় করলেই কি একাকিত্বে থাকতে হয়!! এটা আবার কি কথা?
- হা হা... অবশ্যই। মার্ক টোয়েনের সেই উক্তিটি শোনো নি! সবচে জঘন্যতম একাকিত্ব হলো নিজেকে ভালো না লাগা। সুতরাং তুমি তখনও একা যখন নিজের সাথে থাকতেও তোমার ঘিন্না হবে। অবশ্যই তেমন কিছু তোমার লাইফে ঘটে নি।
- না না। যদি সেরকম কিছু হয় তাহলে অবশ্যই নিজের কাছে এখনো ছোট হইনি। একাকিত্বটা শুধু এ জন্যই আসে তা কখনোও ভেবে দেখিনি।

মুনিয়া খুব মনোযোগ দিয়ে শাহেদের দিকে তাকিয়ে ছিল। তারপর বলল, সো, মিষ্টার শাহেদ, আপনি তাহলে একা নন, নিজের সাথেই বসবাস করেন।
- একদম ঠিক। নিজের সাথে। তবে তুমি যেহেতু একটি উক্তি দিলে তাই পাল্টা একটি উক্তি আমিও দেই। তবে তা শুধু আমার তোমার মতামতটাকে ডিফেন্ড করার জন্য।
- অবশ্যই। বলো।
- পার্ল এস বাক একজন মার্কিন কথাসাহিত্যিক। তিনি বলেছেন, আমার ভেতরে একটি জায়গা আছে যেখানে আমি একা। সেজন্যই সেখানে ডালপালা মেলা শাখাগুলো কখনই শুকায় না।
- বুঝলাম না। তবে কিছু কিছু হয়তো বুঝলাম।
- বুঝলে না? শুধু এতুটুকুই বলি, প্রতিটি মানুষের মাঝে একটি জায়গা আসে যেখানে সে একা থাকতে পছন্দ করে।

দুজনের কথা খুব জ্ঞানের দিকে চলে যাচ্ছে। হয়তো দুজনই বদলে গেছে। আগে এমন হতো না। কেউ কাউকে ডিফেন্ড করতো না। যুক্তিতর্কের মাঝে কিছুই নিতো না। একাকিত্বের কথা আসলে হয়তো কেউ একজন বলে উঠতো, কে বলেছে তুমি একা! এতো আমি আছি তোমার পাশে।
এসব সস্তা রোমান্টিক ডায়লোগ দেবার মতো বয়স এখন আর তাদের না। কুড়ি বছর আগে ওসব মানাতো। কিন্তু এখন এসব বলা মানে মিছেমিছি অভিনয় মার্কা কথা। বললে হয়তো হাসিও পাবে।
তবে শাহেদ চায়। শাহেদ এখনও চায় মুনিয়া এসব বলুক। তার ভিতর আত্মাটা অনেকদিন ভালোবাসা পায় না। মিছে হোক অন্তত মুনিয়া তার ভালোবাসার মানুষতো। একটু মিছেই না হয় শুনুক।
মুনিয়া প্রশ্ন করে। লেখালিখি করো না কেনো?
- করি না তা না। করি তবে ছাপানো হয় না।
- কেনো?
- হুমম.... আসলে লেখার কথা আসলে বলতে হয়, আমরা কেনো লেখালিখি করি? কারণ, সমাজের বিভিন্ন বাস্তবতায় আমরা সন্ধিহান হয়ে পড়ি। বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় আমরা আটকে আর্তনাদ করতে থাকি। তখন তা প্রকাশের কোনো জায়গা আমরা পাই না। তাই মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়া হয় লেখা। কিছু মানুষ তাই করে। তবে অধিকাংশ মানুষ লিখতে না পেরে সে জটিলতা গলা চাপা দিয়ে মেরে ফেলে।
- ক্লিয়ার করো। তুমি তো আমাকেই জটিলতায় ফেলে দিলে। হা হা হা
- করছি। সেটা হচ্ছে। আমি বিয়ে করিনি। সংসার টংসার করার আমার দরকার হয়নি। বাবা-মা মারা গেছেন অনেকদিন হয়েছে। বড় ভাইটা প্রবাসে সুখে আছে। বোন আছে তার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আর আমি আছি আমার মতো। চাকরী করি, ঘরে আসি। এটাই জীবন। এখানে জটিলতার কোনো আশ্রয় নেই। কোনো বাস্তবতার মুখিমুখিও হতে হচ্ছে না। তাই আমি যা লিখি তা আমার পুরনো সেকেলে ধারনা কিংবা অনুভূতি থেকে। বর্তমান সমাজ কিংবা পরিবার সম্পর্কে আই হ্যাভ নো আইডিয়া। তাই আমার লেখা আমিই বুঝবো।

কথা হচ্ছে দুজন প্রাক্তণ প্রেমিক-প্রেমিকার। পূর্বেই বলেছি, তাদের কথা ধরণ জ্ঞান কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। তারপরও শাহেদই বলে যাচ্ছে । মুনিয়ারটাতো কিছু শোনাই হচ্ছে না।
শাহেদ প্রশ্ন করলো, আমার সম্পর্কে তো অনেক তথ্য নিয়ে ফেল্লে। এখন তোমার কথা বলো।
- আসলে শাহেদ। আমি ভালো আছি। তুমি যে বললে সংসার মানেই বাস্তবতা। কথাটা ঠিক। আমি সেই বাস্তবতার মাঝেই চাপা পড়ে গেছি। আমার অনুভূতি, আমার স্বপ্ন সব-সব কিছু সেই বাস্তবতার কাছে হারিয়ে গেছে। এই যে তোমার সাথে আমার কত্ত স্মৃতি! আমি খুব অবাক হচ্ছি, তোমার চোখ আজও সেই স্মৃতি, সেই অনুভূতিকে জীবিত দেখে। কিন্তু আমার কাছে সব মরে গেছে।
- মরেই তো যাবে। যোগ্য পাত্রের সংসার কি আমার কথা মনে করতে দিবে!
- খোচা দিলে! হা হা..দাও সেটুকু অধিকার তোমার আছে।

কথার বেড়াজালে শাহেদের খুব মনোযোগ দিয়ে দেখা হলো না মুনিয়াকে। এখন একটু মনোযোগ দিলো মুনিয়াকে দেখার জন্য। সেই বড় বড় চোখ। স্বচ্ছ চোখ। বদলিয়েছে। চোখের নিচে কালি। গালগুলোর চামড়া একটু কুচকিয়েও গেছে। শরীরটাও একটু মুটিয়ে গেছে। শরীরে একটা ভারিক্কি আছে। বয়স, সব বয়সের কারণে। বয়স মানুষকে পরিবর্তন করে দেয়। কিংবা বলা যায় সময়।
সময় মানুষকে কোথা থেকে কোথা নিয়ে যায়! বাস্তবতা মানুষকে ভালোবাসতে ভুলিয়ে দেয়। স্বপ্ন দেখতে ভুলিয়ে দেয়। শাহেদের সাথে মুনিয়ার সকল অসাধারণ অনুভূতিগুলোকেও বাস্তবতা নামক রাক্ষস খেয়ে ফেলে। এমনই সময়। সময় মানুষকে এমন জায়গায় দাড় করায়। যখন সে হাসতে হাসতে বলে ওঠে, ওসব কি ছেলেমানুষী ছিল!!
মুনিয়াও বলল, আমরা কি পাগল ছিলাম তা না শাহেদ?
- তাই? হয়তো!
- হয়তো? তোমার কি মনে হয় না আমরা কি সব পাগলামী করেছি।
- ওটা তো পাগলামীর বয়স ছিল তাই হয়তো করেছি।

আচমকা শাহেদ বলে উঠলো, আর ভালো লাগে না। কিচ্ছু ভালো লাগে না। মরে গেলেই ভালো।
মুনিয়ার সরাসরি উত্তর, তাহলে আত্মহত্যা করো।
একটু ভড়কে গেলো শাহেদ। মানে?
- মানে আবার কি? কেউ যদি মনে করে এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অর্থহীন তবে তার আত্মহত্যা করে মরে যাওয়াই উচিত।

হেসে উঠলো শাহেদ।
ভালোই তো দর্শনতত্ত্ব ছাড়া শুরু করেছো।

স্ব্যান্ধা হয়ে আসছে। বিকেলের সূর্য ডুবে গেছে। মুক্তমঞ্চ ভরে গেছে কপতকপতিদের কিচিরমিচিরে। মুনিয়া বলে উঠলো, আমাকে যেতে হবে।

- চলে যাবে?
- হুমম.....
- কতদিন আছো?
- পরশু ফ্লাইট। এখন যাই।
সময় নেয়নি মুনিয়া। চলে যাচ্ছে। শাহেদ আরেকটি সিগারেট ধরালো। কুড়ি বছর পর দেখা হলো। কিন্তু তেমন কিছুই কথা হলো না। পাশাপাশি বসা হলো, হাত স্পর্শ করা হলো না। মুনিয়াকে তেমন ভালো মতো দেখাও হলো না। শুধু কেনো মুনিয়া আসলো!
হয়তো দেখতে এসেছে, এখনও সে জীবিত আছে কিনা আমার মাঝে। হয়তো আমার ভালোবাসা আজ ওকে মজা দেবে। ও বলবে, আহ বেচারা আজও আমাকেই ভালোবাসে।
এটাই কি বাস্তবতা? এমনকি হয়? মানুষের বদলানো তেমন তো দেখা হয়নি শাহেদের।

কবিতা। জীবনানন্দের কবিতা। কুড়ি বছর পর আবার যদি দেখা হয়। দেখা যে হয়ে গেলো। জীবনানন্দ কি লিখেছে, দেখা হলে কি হবে!!
হয়তো লিখেছে। তারপরও শাহেদ দেখছে, কুড়ি বছর পর সব বদলে গেছে। এই ধানমন্ডি লেক বদলে গেছে। মুনিয়া বদলে গেছে। ওর স্বপ্ন বদলে গেছে। ওর ভালোবাসা বদলে গেছে। ওর স্বপ্নবাজ কথাবর্তা বাদ দিয়ে দার্শনিক কথা বলার মতো পরিবর্তন হয়ে গেছে। বাস্তবতার মাঝে ওর পরিবর্তন হয়ে গেছে।
যুগ বদলেছে। বদলাতে তো হবেই। বদলাই নি শুধু শাহেদের বেলাতেই। বদলানো মুনিয়া সেই কুড়ি বছর আগের মতোই চলে যাচ্ছে। তবে সময় বদলে গেছে। বদলায়নি শাহেদ। সব অনুভূতি, ভালোবাসা, আবেগ সব আগের মতোই রয়ে গেছে।
অন্ধকারে এখন আর মুনিয়াকে দেখা যাচ্ছে না। সব অন্ধকার। না বদলানো শাহেদের হাতে জলন্ত সিগারেটটাই শুধু জ্বলছে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৫৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×