somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-৯

২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষের কাছে ট্যাকা চাওয়াতে , ধার বা সাহায্য যেটাই হোক, আমার জড়তা কাইটা গেছে সেই কুট্টিকালেই । কায়দা আমপারা শেষ করতে না করতেই যখন গেরামের মাদরাছায় প্রথম জমাতে ঢুইকা গেলাম, তার পর থেকে প্রতিটা ধানের সিজনেই হুজুররা পাঠাইয়া দিত ধানের কোরা নিয়া মাদরাছার জৈন্য ধান সাহায্য নিয়া আসতে । উপরের দিকের ছাত্ররা বাড়ি বাড়ি যাইত না তয় ওরা হিসাব রাখত কুনখান থাইকা কদ্দুর ধান আইত । কেউ কম আনতে পারলে বকা বাদ্যি করত ওরে, পরে আরো বেশি না আনলে খবর আছে শাসাইত বা নিজের বাড়ীতে কি ধান রাইখা আইছস কিনা জেরা করত । জেরা শাসানির মুখে নিজেও দুএকবার পড়ছিলাম । তখন মনে হইত হালারা তরা যদি এত বুঝস তাইলে তরা যাস না ক্যান , আমগোরে পাঠাইলি ক্যান । পরে অবশ্য উপরের জামাতে উঠার পর যখন নিজে খবরদারি করলাম তখন বুঝলাম ছুড পুলাপানরে কেন পাঠানো হয় । গেরামের বাড়ি থাইকা ধান সাহায্য দেয় সাধারণত বাড়ির মহিলারা । তাগো কাছে পুলাপান পাঠাইলে তারা মায়া করে বেশি । তাছাড়া পর্দারওতে একটা ব্যাপার আছে । পুলাপান যত অন্দরে যাইতে পারে , বাল উইঠা যাওয়া পুলাপান তো পারে না ততটা অন্দরে যাইতে ।

এই সাহায্য সুপারভাইজিং এর কাম করনের সময় থাইকা ছাত্র-শিক্ষক হৈলেও মোহতারাম ছাবের সাথে আমার একটা বন্ধুত্ব গইড়া উঠছে । মোহতারাম ছাবের দুই বউয়ের বিশাল সংসার । দুইডারই আবার পেট খালি থাকে কম । অবশ্য সবাই সেইডা জানে না । জানার মত ঘনিষ্টতা ছিল আমার । শীতের সিজনে অঞ্চল জুইড়া ওয়াজ মাহফিল হৈত । মওলানাগো ওয়াজ শুইনা দুযখের আগুনের ডরে আর বেহেশতের হুরগো বড় বড় দুধের লোভে পাব্লিক হাত খুইলা দান খয়রাত করে । ছাগলনাইয়া সোনাইমুড়ি পরশুরাম পাঁচগইচ্যা চিওড়া চোদ্দগ্রাম মিয়াবাজার গুনবতি মাঝে মইধ্যে কুমিল্লা পর্যন্ত পুলাপান নিয়া চৈলা যাইতাম মাহফিলে মাহফিলে মাদরাছার জন্য চাঁদা উঠাইতে । হিসাবের খাতায় লেখনের আগে অনেকবার মোহতারাম ছাব আইসা , তোর ভাবীর শইল খারাপ ফেনী নিতে হৈব ডাকতরের কাছে বা একটা নতুন ঘর উঠাইতাছি সব করছি টৈনটা আর কিনতে পারতাছি না বৈলা অল্পসল্প নিয়া যাইতেন । সেগুলা বাদ দিয়াই হিসাব লেখতাম । আমি নিজেও দারিদ্রের পোনমারা খাওয়া পাব্লিক । কখনো গাঁইগুই করি নাই দিতে । হাত খরচের ট্যাকা সিনেমা দেখনের ট্যাকা হুজুরের কাছ থাইকা বৈলাই নিতাম টুকটাক । তিনিও কখনও দুইকথা বলেন নাই ।

এই মাদরাছাটা দিনদিন কেমুন জানি পিছদিকে হাঁটতাছে । ছুডকালে যখন পরথম দ্বিতীয় জামাতে ছিলাম , সামনের উঠানটা গমগম করত সবসময় পুলাপাইনে । এক কেলাস শেষ হওনের পরে আরেক কেলাস শুরু হওনের আগ পর্যন্ত সময় দাড়িচা বোম্বাস্টিং খেলছি কত । সাদা পাইন্জাবি টুপি পড়া শতখানেক পুলাপানে পুরা উঠানডা জুইড়া একটা সুন্দর ল্যান্ডইসকেইপ বানাইত । বার্ষিক ওয়াজের দিনে কি ব্যস্ততা, খানাপিনা , তিলাওয়াতের প্রতিযোগিতাই না চলত । দিনদিন গেরামের মানুষ বেদ্বীন হৈতাছে । গেরামের প্রাইমারি ইশকুলডা অনেক পুরান । ইশকুলে পুলাপাইন ছিল না । অল্প যেকয়ডা আছিল শরমে শরমে যাইত মাদরাছার সামনে দিয়া রেলরাস্তা পার হৈয়া । যেগুলার বাড়ি মাদরাছার আশেপাশে হেইগুলা । ঐগুলারে কত টিটকারি করছি । মাদরাছায় মাইয়াগো ব্যবস্থা নাই বৈলা ইশকুলের পুলাপাইনের বেশিরভাগই আছিল মাইয়া । পুলাডিরে হের লাইগা মাইগ্যা কৈয়া খ্যাপাইতাম । মাইনষে এখন পুলা মাইয়া সবডিরেই ইশকুলে পাঠাইতাছে । দ্বীনের দিকে খেয়াল নাই ।

মাদরাছার দিন যহন আছিল, ওয়াজের দিনে বা ঈদে চান্দে পুলাপাইনে জায়গা দেওন যাইতাছে না বৈলা সাহাইয্য উঠানি হৈত । আমি থাকতেই নতুন একটা টৈনের ঘর বানানি হৈছিল বেশি পুলাপাইন জায়গা দেওনের লাইগা । তারপরও ফান্ডে টেকা আছিল অনেক । এখন নতুন ঘর উডানি দুরের কথা, যেই দুইডা আছে হেইগুলারও পুরাডা লাগে না । একটা দুইডা খালি থাকে । ফান্ডের ট্যাকা খরচের জায়গা কই । পাব্লিক সাহাইয্যও করে কম আইজকাইল ।

মোহতারাম ছাবরে খুইলা কৈ ঘটনা । যদিও উনার সেই আগের বিশহাজারও অহনও শোধ করি নাই , তারপরও তারে কৈ পুরা এক লাখই দিতে । এইডাতো আর বেশি দিনের লাইগা না । বড় ভাই ছোদি যাইব খালি তিনমাসে লাইগা । ফিরা আইলেই হগলেরডা বুঝাইয়া দেয়া হৈব । মোহতারাম ছাব অনকে কতার পর পন্চাইশ হাজার দিতে রাজী হন । আমি মাদরাছা থাইকা বাইর হওনের পর সময়তো আর কম হৈল না । হেরপর থাইকা বাড়ানি হয় নাই সেইডা ঠিকাছে , কিন্তু মাদরাছা চালাইতে ও তো খরচ লাগে । উন্নয়ন নাই হোক । তাছাড়া মোহতারাম ছাবের পুলাপাইনডিও তো বড়ই হৈতাছে ছুডতো হৈতাছে না । সব বুঝি বৈলা আমি রাজি হৈয়া যাই । কতা আর বাড়াই না ।

বাকি পনচাইশ হাজার যোগাইতে শুরু হয় ধর্ণা দেয়া । মামা খালাগো বাড়িতে বেড়াইতে গেলে এক কথা ট্যাকা চাইতে গেলে আরেক ব্যবহার । জেরার মুখে পড়তে হয় জায়গায় জায়গায় । খালি হাতে এত বড় কামে হাত দিলাম কিয়ের লাইগ্যা এইডা নিয়া শুনতে হয় ধমক । কিয়ের লাইগা দিছি সেডা কুলসুমা ছারা আর কেডা বুঝবো । তাই মিছা আত্নবিশ্বাসের মুখোশ পরন লাগে । এইধরণের ব্যাপার আমার কাছে পুরা নতুন হৈলেও বিভিন্ন জাগার উদাহরণ দিই । পন্চাইশ হাজার জোগানি যেদিন শেষ হয় তারপরদিন নতুন একজোড়া জুতা কিনতে ফেনী যাই ।

বড় ভাইরে শেষ পইর্যন্ত পাডাইতে পারলাম । মনের ভিতর অনিশ্চয়তার ঢিপঢিপ করলেও আমি হাসিখুশি ভাব দেখাই হগলরে । বড় ভাই যেইখানে নামায পড়াইত সেইখানে তিনমাসের জৈন্য আমিই ঢুকি । গেরামের মাইনষের একটা আলাদা চোখের চাহনি পাই অনেকদিন পর । হগলের না । বুড়া যেগুলি দিনের বেশিরভাগ সময় মসজিদে পইড়া থাকে তাগো কাছ থাইকা । আগ বাড়াইয়া সালাম দেয় । কি খবর ইমামছাব কয় । খারাপ লাগে না আমার ।

ঝামেলা একটু বাইধা যায় । বাড়ী বাড়ী লুকজনের শোয়ার ঘর বসার ঘরের চিপায় চাপায় গিয়া বাকীর ট্যাকা চাওনের কি হৈব এইটা নিয়া আমি পইড়া যাই ঝামেলায় । নতুন ভাবখান ধৈরা রাইখা ঐকাম এখন কেমনে চালাই । আবার এইকামে ঘরের আর কেউই যোগ্য না । উপরের তিনডার কুনোডারতো দেখাই নাই । ছুডডিরে লুকজন পাত্তাই দিব না । পাঠানি শুরু করলে হয়ত পাত্তা দিতে পারে । কিন্তু পেরেকটিস টাইম দেওনের মত সময় তো আমার দোকানে নাই । হিসাবের অবস্থা নড়বড়ে । তাই ঠিক করি আমারে দুইডা মুখোশ পরতে হৈব । ইমাম একডা , বাড়ি বাড়ি গিয়া এর বউ ওর বউর লগে হাসির কথাবার্থা কৈযা বাকীর ট্যাকা উসুল করার মানুষ আরেকডা । যাওনের টাইম নিয়া একটু এদিক সেদিক করন লাগবো । সববাড়ীতে সবদিন যাওন যাইব না ।

খালেদার শ্বশুর বাড়ীতে খালেদার আন্ধা শ্বাশুড়ী আর ও ছাড়া কেউ নাই । ইশকুল মাদরাছায় পড়ইন্যা পুলাপান যেদিন বাড়িত থাকে সেইদিন শুক্কুরবারে জুম্মার ঘন্টা দুই আগে খালেদার শ্বশুর বাড়ী যাই ।
---------------------------------------------------
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-৮
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৩
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×