somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাচনের অন্যপাঠ

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত রোজার প্রথম দিনেই তার সাথে আমার দেখা হয়। তপ্ত শরত দিনের শেষ সন্ধার রহস্যময়তার সময়ে সে আমাদের বাসায় আসে। সেই মেয়েটি নিষ্ঠুর এক দারিদ্রতার গ্রাসে পড়ে যার কাছে এই শহরের রাস্তাগুলোকে সব ঋতুতে যে কোন উপলক্ষ্যের জন্যেই করুণা উপার্যনের রাস্তা হিসেবে আবির্ভুত হয়। ফলে রোজার মাসে করুণার হাসিতে কাউকে কাবু করে যদি সামান্য কিছু ইফতারি আদায় করা যায় সেই আসায় তার বাসায় বাসায় ঘুরে বেড়ানো। প্রথম যেদিন বন্ধ দরজার ওপারে এক মিহি কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম, খালাম্মা ইফতার দিবেন- তখন আমাদের বাসার ইফতারের আয়োজন শেষ। কন্ঠস্বরের এটা আকর্ষণ আমার অলস সময়টাকে দুলিয়ে দিল। হঠাৎ ভাবনা চিন্তার অবসরে তাদের প্রতি কৌতুহল হল এরা কারা নাম কি দেখতে কেমন হাসতে কেমন কতটা সাবলিল সদ্য আসা নাকি আগে থেকেই ঢাকায় থাকে। তাদের কেন্দ্র করে এতোগুলো কৌতুহলের সুতোয় বাঁধা পড়ে দরজা খুলতে বাধ্য হলাম। একটি ছোট মেয়ে আমার দৃষ্টি কেড়ে নিল। তার হলুদ আর লাল ছোপ ছোপ জামা গলিয়ে বের হওয়া মুখখানা রুম থেকে আসা সাদা আলোর প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আমার ছায়ায় ঢাকা পড়ায় স্পষ্ট হল না। তারপর দিনও সে এল একই জামা গায়ে এবং মুখটা অস্পষ্টই রয়ে গেল। তৃতীয় দিনও তাই। নিজের ভেতর একটা অদ্ভুত খেয়াল লক্ষ্য করলাম-মেয়েটার মুখ আমি একদিনও দেখিনি-নামও জিঞ্জেস করিনি। প্রথম দিনেই জিজ্ঞেস করেছিলাম বাড়ির কথা। বলল চাঁদপুর-জায়গাটার নামেই বাকি সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া হয়ে গেল আমার। চাঁদপুর বলার সাথে সাথেই আমার মনে হল ছায়ায় ঢাকা মেয়েটির পেছনে দাঁড়িয়ে অনেক ছায়া -লতিফ নজরুল একটা মহিলার পান খাওয়া মুখ.......আরো কতজন এরা সবাই চাঁদপুর থেকে এসেছে। আর জিঞ্জেস করতে ইচ্ছে করেনি মেয়েটার নাম কিভাবে এসেছে। ইফতার দিয়ে দরজা বন্ধ করার সময়ে মনে হয়েছে এদের ইতিহাস আর কতবার পঠিত হবে শিক্ষিত সমাজে কত কাল ধরে। রাতের নিস্তব্ধতায় সেই মেয়েটির ছায়া ছায়া মুখখানা আমার কাছে এসেছিল। সিগারেটের ধোঁয়ার প্রহেলিকায় মেয়েটির মুখ ভেসে ওঠে- ঠিক যেন কাশফুলের মাঝে হাসি হাসি মুখের যে মেয়েটির মুখ কল্পনা করা যায় ও তাই। তার ওই জামাখানার ছবি বহুধা বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত নদী বক্ষে ভেসে চলা নানা রঙের পাল হয়ে চলে আসে আমার কৃষ্ণবর্ণ রাতে। মিলিয়ে যাওয়া সিগারেটের ধোঁয়া দেখতে দেখতে মনে হয় ওই সমস্ত নৌকাগুলোর গন্তব্য কি ইফতার খোঁজায় এসে শেষ হয়। একবার তার চাইতেও ছোট বয়েসের একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল জিজ্ঞেস করার পর তার ঠিকানা উল্টে ফেলেছিল বলেছিল জেলা মতলব থানা চাঁদপুর। তখন হেসেছিলাম- কিন্তু এখন এই রাত্রির নৈশঃব্দ্যে সেই হাসির বিকৃত মুখচ্ছবি ফিরে আসে আমার কাছে আমি সেই হাসির কোন শব্দ শুনতে পাই না। এই রাত্রির অন্ধকারে কোন এক জঞ্জালের পাশে শুয়ে থাকা মেয়েটার স্বপ্নে আমার সেই হাসি কি বিকট হয়ে দেখা দিয়ে তাকে ভীত করে তুলছে। আমার শুধু মনে হতে থাকে সেই মেয়েটি যার সদ্য মুখে বোল ফুটেছে সে কেমন করে ওই সত্যটাকে ধরে ফেলে যে তাদের ঠিকানার কোন ঠিক নেই ওই থানা জেলার নামে ওলট পালটে তার ঠিকানাটা ভুল হয় না কেবল শহুরে হাসি উদ্রেক ব্যতিত- তাদের জেলা থানা গ্রাম সমস্ত ক্ষেত্রে একটি স্থানের নামই যে আসে বাংলাদেশ। পরদিন মেয়েটার মুখ আমার কাছে স্পষ্ট হয়- ওই ছায়ায় ঢাকা অবস্থাতেই। কারণ আমি বুঝতে পারি আমার ছায়ায় ঢাকা পড়া মেয়েটির মুখে আরো এক পুরুস্তরের ছায়া লেপ্টে আছে- সেই ছায়ায় ঢাকা পড়া তার শিউলি ফোটা চোখগুলোর স্নিগ্ধতা আর মুগ্ধতাকে আমি দেখতে পাই তার গন্ডদেশ আর অধর জুড়ে বৃষ্টিস্নাত প্রান্তরের প্রসন্নতা দেখতে পাই সেখানে নিশ্চয়ই একগুচ্ছ সাদা দাঁতের হাসির রংধনু ফুটে উঠত। আজকে তার চলে যাওয়ার পথে আমি তাকিয়ে থাকি। তার নেমে যাওয়ার সিঁড়ির প্রান্তে চকিতে এক ভয়াল গহ্বর দৃষ্ট হয়। তখনই মনে হয় মেয়েটির সাথে কি আর কখনো দেখা হবে। মনে হয়েছে তাকে কেন আমি ইফতার দেই- তাকে কি আমি করুণা করি। আমার মাও খুব আগ্রহী মেয়েটিকে ইফতার দিতে। তিনি কেন দেন। মায়ের সাথে নিজের অনুভূতির কোন পার্থক্য কি আছে। জানি না। আমি মেয়েটিকে পরদিন দেখার বিষয়েই আচ্ছন্ন থাকি। একবার মেয়েটিকে ইফতারি দেয়ার সময় দুটি পিয়াজু দিয়েছিলাম ওই পিয়াজুর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার মনে হয়েছে দুই সংখ্যাটা বাঙালির জীবনে কতো গুরুত্বপূর্ণ। দুই ধর্ম দুই ভাগ বায়ান্নর সাথে দুই ১৬/১২ র সাথে দুই আগে দুই নেতা আর এখন দুই নেত্রী, এখন আবার ২৯-এর সাথে দুই। এই দুইয়ের সুতোয় বাঁধা হয়ে সেই মেয়েটি আর আমি কোথায় যেন অবিচ্ছিন্ন- এক।
এখন এই নির্বাচনি বাতায়নে মেয়েটি আবারও ফিরে এলো আমার কাছে। ফিরে আসার কারণ তার বয়েসি কিছু ছেলের গলা ফাটানো নির্বাচনি স্লোগানের কন্ঠস্বর আর তাদের দেহরুপ। শীর্ণদেহের সে কি বেমানান বিকট চিৎকার- বাতাসে মিলিয়ে যায় কোন প্রতিদান ছাড়াই। আর তাদের কন্ঠার ফুলুনিতে যে আবেগের ঢেউ ওঠে তাতে কি তারা এই শহরে জঞ্জালে বাল্যকালের আমেজ ফিরিয়ে আনে। জানি না- তাদের বাল্যকালেরই আরেক পরিণতি সেই রোজার মাসের মেয়েটি আমার কাছে ফিরে আসে। হায় নির্বাচন- ক্ষমতার পালাবদলের দৃশ্যরুপ- সমস্তই কেমন ম্রিয়মান হয় আর অনর্থে পরিণত হয় একটি কাতর কন্ঠে- খালাম্মা ইফতারি দিবেন। সাঁত্রিশ বছরের রাজনীতি এমন কতো কাতর কন্ঠ তৈরি করে। ওই নির্বাচনি গমগমে স্লোগানের ফাঁকেওতো তা কেমন হু হু স্বরে বয়ে যায়- যায় না। এইবারওতো তাই হবে- হবে না।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×