somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোকা আমি!!!

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার যখন তিন বছর বয়স, আমি আমার নানা নানুর সাথে থাকতাম খুলনায়। আমার নানা ছিলেন জেলা জাজ। একাটা বিশাল ব্রিটিশ আমলের বাড়িতে থাকতাম আমরা। ছোট বেলায় সামনের ঐ বাগানটাকে মনে হতো অনেক বিশাল। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখা যেত না ( আমার কাছে)। বড় হয়ে একবার গেলাম সেখানে দেখলাম আসলে বাগান টা ততো বাড় নয়। ছোট বেলা নিজের সাইজের কারনে ওটাকে অনেক বড় মনে হতো। বাড়িটও অত বড় নয়, হা হা হা! দোতালা লাল ইটের বাড়ি।

পিছনে ছিল রুপসা নদী। তার পাশে আমাদের বাড়ির পেছনে ছিল একাটা শেফালি ফুলের গাছ।আমি যখন ফুল কুড়াতে যেতাম তখন দেখতাম নদী দিয়ে লম্বা লম্বা ট্রেন যায় আর ওগুলো পানির ভেতর ঢুকে যায় আস্তে আস্তে। ওখান থেকে চলে আসবার পর অনেক বড় হয়েও ব্যপারটা নিয়ে ভাবতাম। এটা কি করে হয়। পরে উদ্ধার করলাম। আসলে ষ্টিমার গুলো আমার ছোট সাইজে অনেক বড় মনে হতো ট্রেনের মতো।

আমাদের বাড়ির দারওয়ান বা মালীর ছেলের সাথে আমি রান্না বাড়ি খেলতাম। ফেলে দেয়া বড়ই এর বিচি দিয়ে মাংস বানিয়ে রান্না করতাম আর সেই ছেলেকে জোর করে খাওয়াতাম আর বকা দিতাম না খেলে যেমন করে আমার নানু আমাকে বাকা দিত না খেলে।ও বেচারা জাজের নাতির ভয়ে কষ্ট হলেও ওগুল সত্যি খয়ে ফেলত। কখনও দেখা হলে মাফ চাইতাম। তার বাবা আমার নানুকে কমপ্লেন করেনত উনার ছেলে বড়ই এর বিচি হাগু করে জন্য। আমার নানু আমাকে পিট্টি দিত। আজো অনুতাপে ভুগি ওকে কষ্ট দেবার জন্য।

আমার নানু এক পাগলিকে আমাদের নীচের ড্রয়িং রুমে কেন যে থাকতে দিতেন আজো আমার মনে এই প্রশ্ন। রোজ তাকে দেখতাম লাল ভেলভেটের পর্দার ফাক দিয়ে গুমাচ্ছে লাল কর্পেটের উপর উপুর হয়ে চুল এলোমেলো করে। কখনও তার মুখ দেখতে পাইনি। সব সময় সে ঘুমাতো। সবাই বলতো সে পাগল। খুব ভয় পেতাম তাকে আমি। আমার পাগল ভিতি ওখান থেকেই এসেছে। খারাপ লাগে এখন ভেবে কেন ওকে ভয়পেয়ে কোনদিন কথা বলিনি।

আর ভয় পেতাম এক বোবা ফকিরকে, আমার নানুর বাধা ফকির ছিলেন উনি। ফকির যে বাধা হতে পারে তার আগে জানতাম না। আমি সেই ফকিরকে ভিষন ভয় পেতাম কারন সে কথা বলতে পারত না, অদ্ভুৎ শব্দ করতো মুখে । দোতালার বারান্দায় যদি আমি খেলছি আর ওকে আধা মাইল (আমার ছোট সাইজের দর্ৃষ্টিতে) দুরে গেটের ভেতর ঢুকতে দেখতাম আমি বারান্দার মেঝেতে শুয়ে পরতাম যাতে সে আমায় দেখতে পর্যন্ত না পারে, যেন চোখ দিয়ে ও আমাকে খেয়ে ফেলবে।

একাবার আমি নীচের বারান্দায় পোর্চে বসে খেলি। দেখতে পারি নাই যে সে আসছে। যখন সে ২০ হাত দুরে আমার চোখ পড়ল তার উপর। আমার মনে হলো আমি মারা যাচ্ছি এত ভয় পেলাম। আমি আমার নানুর শাড়ি পেচিয়ে পরে রান্না বাড়ি খেলছিলাম মালির ছেলের সাথে। বোবা ফকির কে দেখা মাত্র দৌড় দিলাম সিড়ির দিয়ে উপরে, সিড়ি টা সেই পুরান আমলের লাল কার্পেটে মোড়া বাড়ীর মাঝখানে ছিল। প্রথম ল্যন্ডিং এ যেই পৌছেছি অমনি পরে গেলাম পেচান শাড়ির কারনে।

গরিয়ে গরিয়ে ১০/১২ টা সিড়ি পরে নীচে এসে পড়লাম আর আমাকে কুড়িয়ে নিল সেই বোবা ফকির। গরিয়ে পাড়ার পর চোখ মেলে যেই দেখি আমি ওর কোলে সাথে সাথে সেন্স হারালাম ভয়ে। আজও পাপ বোধে ভুগি ওকে ভয় পাবার জন্য তবু এখনো বোবা ভিতি আমার রয়ে গেছে কিছুটা তার জন্য সত্যি লজ্জা পাই। এখনও ইচ্ছে করে খুলনা গিয়ে ক্ষমা চাই ঐ বোবা ফকিরের কাছে।

বড় হয়ে একবার গেলাম ওখানে। বাড়িটা কোন কারনে খালি ছিল। মালি আর দাড়োয়ানের সাথে দেখা হলো যারা আমাকে কাধে করে পুজো দেখতে নিয়ে যেত। আমাদের একটা হরিণ ছিল ওরা আমাকে হরিণটার পিঠে করে ঘোরাত। আমাকে দেখে চিনতে পারেনি। যখন পরিচয় দিলাম কেদে ফেলল, আমকে খুকি খুকি করে জড়িয়ে ধরল। ওদের কাছে আমি এখনও ছোট্ট খুকিই আছি, কিযে ভাল লাগায় মন ভরে গেল!!!! ইচ্ছে করল ঐসব দিনে আবার ফিরে যাই, নানুর শাড়ির আচল ধরে বাগেনে টমেটো তোলা আর টমেটো গাছের ভেতর হারিয়ে গিয়ে ভয় পাওয়া (নিজের উচ্চতার কারনে)!!! হরিণের পঠে চরে ঘোড়া ঘোড়া খেলা!!! পুজো দেখতে যাওয়া আর আফসোস করা এই ভেবে আহারে ওরা কেন আমাকে ঐ বড় বড় পতুল গুলো না দিয়ে পানিতে ফেলে দিচ্ছে, কত বড় অপচয়!!! আমি ওদের কত যত্ন করে রাখতাম!!

ছোট বেলায় আমার যে কত রকমের ভয় ছিল! কত রকমের বোকামি ছিল। আজ তার অনেক গুলোকে কটিয়ে উঠেছি তবু কিছু কিছু রয়ে গেছে আজো!!!!
২৩টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×