বুকের মইধ্যে হৃদপিন্ড আমার জোরে জোরে বাড়ি খাইতে থাকে । এক্কেবারে পরথমেই বাপের সামনে । হালার কফালের কি ফের । মাটির দিকে তাকাইয়া যেকোন মুহূর্তে দৌড়ানির প্রস্তুতি রাইখা আমি আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে আগাইতে থাকি । দরজার কাছে গিয়া দেখি আম্মাও আছেন ঐখানে । আব্বা কি যেন বলা শুরু করছিলেন । আম্মা হুহু করে কেঁদে দিলেন দেখে থাইমা গেলেন । শইল্যের কি অবস্থা দেখ । চামড়া পুইড়া কি অবস্থা দেখ । তোরা যদি এইসব করতে থাকস একদিন আমি ঘরদুয়ার ছাইড়া যেদিকে দুচোখ যায় চৈলা যামু । গলার মধ্যে আবেগ আমারও জমা হৈতে থাকে । সেইটা ভাইঙা পড়ার আগেই চিৎকার কৈরা ডাকি কিরে খোদেজা আছস নি । কান্দনের ভাবটারে দুর করার লাইগা । খোদেজা আমার ছুড বৈন ।
দুপুরে বড় ভাই জুহর থাইকা ফিরা আইতাছে দেইখা আমি পুকুরপাড়ে রেললাইনে গিয়া বসি । আম্মাজান বড় ভাইরে ডাইকা নেন । আধঘন্টাখানেক পরে আইসা বড় ভাইর সামনে পড়লে ভাই কিছু না বৈলা আসসালামু ওয়ালাইকুম বৈলা উইঠা দোকানের দিকে চইলা যান । বাড়ির সামনের পুকুরটার একটু পরেই দোকান ।
দুইদিন পরে দোকানে গিয়া দেখি ছ্যারাব্যারা অবস্থা । জিনিসপত্র নাই । যে কাস্টমার যেটাই চায় । আমার ছুডডার ছুডডা কয় নাই । মনে মনে ঠিক কৈরা ফালাই । কিছু একটা করতে হৈব । ভাইগো মত নিশ্চিন্ত হৈয়া বৈসা থাকলে আগামি বিশ বছরেও আমি নিজেতো দূরের কথা বড় ভাইরেও বিয়া করাইতে পারুম না ।
সপ্তাহখানেক একান্তে আল্লার কাছে তওবা আর নামায কালাম নিয়া পইড়া থাকি । আয়েশা কৈছিল এক সপ্তাহ পর ফিরা না গেলে এন্ড্রিন খাবে । মেয়েটার খবর জানতে পারলে ভালো হৈত । তবে কোনো উপায় নাই । চিঠি লেখার ইচ্ছা করতাছে না । ঠিকানাও জানি না ভালোমত । আয়েশার কথা মনে হলে আবার সেই অচিন দ্বীপের গন্ধের জন্য শ্বাসকষ্ট হওয়া শুরু করে ।
কোমর বাইন্ধা নাইমা যাই কিছুদিনের মধ্যেই , বাপের দোকানে প্রাণ ফিরাইয়া আনার জন্য । আব্বাকে না বৈলাই গেরামের মাদরাছার হুজুরের কাছ থাইকা ট্যাকা ধার নিই বিশ হাজার । দোকানে নতুন জিনিস উঠানো শুরু করি । আব্বা বাকি বিক্রীতে কাউরে কখনও না করেন নাই । গেরামেই অন্তত লাখখানেক ট্যাকার বাকী পইড়া আছে । কেউ দেয় না । দেয়ার গরজও নাই । আব্বা একবারের বেশি দুইবার কাউরে কখনও বলেন না বাকী শোধ করার জন্য । যে ধরণের লোকেরে বাকী দেয়া হৈছে ঐগুলারে দুইবার কেন হাজারবার বল্লেও ট্যাকা বাইর করতে পারব না ।
খালেদার বিয়া হৈয়া গ্যাছে গেরামেই । মাইঝা ভাইর দোস্তের সাথে । কিছুদিন আমার হুজুর ছিলেন গেরামের মাদরাছায় । তারপর ছৌদি চলে যান । চার বচ্ছর পরে ফিরেই সপ্তাহের মইধ্যে বিয়া । খালেদা এখন হুজুরের বউ । তার পর্দার অন্ত নাই । তবে আমাদের পরিবারের লুকজনের সাথে আলাদা । সেই ছুডকাল থাইকাই ফরিদ ভাইর বাড়ীতে আসা যাওয়া । উনার বাবা মারা গেছেন অনেক আগে । মা অন্ধ । সামনে থাকলে বুঝেন সামনে কেউ আছে । কে কি করতেছে এইগুলা বুঝেন না । অপারেশন কৈরা লাভ নাই বৈলা দিছে ডাক্তার রা । উল্টা আরো ক্ষতি হৈতে পারে । ফরিদ ভাইর চাইরপাশে আতরের গন্ধ ভুরভুর করে । চোখে সুরমা লাগানো থাকে সারাদিন । দোকানে বা মসজিদে যেখানেই যান । দেখা হৈলেই মুখে একটা লাজুক হাসি । উনাদের বাড়িতে যাই মাঝে মইধ্যে । বাকীর ট্যাকা চাওয়া, আম্মারে ওদের খবরাখবর আইনা দেয়া এইসব কারণে । দিনে যতবারই যেসময়েই যাই দেখি ফরিদ ভাই গোসল করে আসছেন । খালেদার মাথায় ভিজা গামছা বান্ধা ।
দোকানের ট্যকার কুলকিনারা পাই না । সারা গেরামের সবাই হয় বন্ধু নাইলে আত্নীয় নাইলে পরিচিত । বাকী নিয়া পড়লাম সমস্যায় । এক্কেরেই যেগুলারা ছালবাকল নাই ঐগুলারে ফিরাইয়া দেয়া শুরু করলাম । ছুড ভাইডারে দোকানে বসাইয়া দিয়া দুফরে দুফরে শুরু করলাম এইবাড়ি সেইবাড়ি ঘুইরা বাকী ট্যাকা কালেকশনে । বিশ বাড়ীতে গেলে একবাড়িতে দেয় । তাও দুই আড়াইশর বেশি না । এইরকম কৈরা ক্যামনে কি চালামু । আরো উপায়অন্তর ভাইবা দেখতে হৈব । দোকানের অন্তত পুঁজিটা সবসময় না থাকলেতো দিনদিন পিছাইতে থাকমু । দাদার দোকান ছিল রেলক্রসিং এ । লুকের মুখে শুনি বিশাল আলিশান পাইকারি দোকান । সেইখান থেকে হোগা মাইরা মাইরা এই অবস্থা করছেন আব্বা । আমার ছুডকালেই দেখতাম দোকান ভর্তি জিনিস । সারাক্ষণ কাস্টমার লাইগাই আছে ।
গেরামের মাদরাছার দোস্ত রহিম্যা এক বুদ্ধি দিল । রহিম্যাগো বড় দোকান আছে রেলক্রসিং বাসস্ট্যান্ডে । মাদরাছা শ্যাষ করনের আগেই বাপ মারা যাওনে ঐটা নিয়া আছে । দিনদিন উন্নতিই করতাছে । কৈল গেরামের মইধ্যের দোকান যেহেতু কেরাসিন তেল নুন চিনি এইগুলাই বেশি চলে । ফেনী থাইকা আনতে গেলে দাম আর আননের খরচ মিলা যা পড়ে তাতে লাভ কম । আমাগো গেরামের দেড়দুই মাইল উত্তর-পুবেই বডার । ঐখানে হস্তায় পাওন যায় বেলাকের জিনিস । ফেনীর অর্ধেক দামে । এক ট্যকার কাঁচা পইসা দিলে আরো কম দামে দেয় । একদিন ওর সাথে সাইকেল নিয়া গিয়া একমণি একটা চিনির বস্তা নিয়া আইলাম । আমার সাথে পরিচয় করাইয়া দিল । বিডিআর বিএসএফের লগেও খাতির আছে পাট্টির । সমস্যা নাই । কেরাসিন নুন চিনি ফেনী থাইকা আনা বাদ দিলাম । দোকানে একটু একটু কৈরা বেলেন্স ফিরা আসা শুরু করলো । ফেনীর আড়ৎদার গাঁইগুই করে । তারে কৈলাম এইগুলা বেইচা লাভ নাই । তাই কমকম নিই আইজকাল । তাও মাঝে মইধ্যে ঐখান থাইকাও আনতে হয় । খরচ কম হৈলে হাজার হাজার ট্যাকার বাকিতো দিব না ।
মনের মইধ্যে খালি একটা খচখচ সবসময় লাইগা থাকত কুলসুমার লাইগা । দক্ষিণের পরের গেরাম জাহানপুরে শ্বশুর-বাড়িতে আছে । গত তিনমাস ধৈরা আমি গেরামে । একবারও আসে নাই বাপে বাড়ীতে । ওর খবর জানতে মন চায় । আমার কোনো সরাসরি আত্নীয় না । গিয়া দেইখাও আইতে পারি না । খুরশিদ পায়েরখোলা মাদরাছাতেই হুজুর হৈছে । আসে খালি বিষ্যুৎবার বিকালে । শুক্কুরবার সকালে চৈলা যায় । ঠিকমত কথাও হয় না সববারে ।
সামনে রুজা । খুরশিদ রে খোঁচাইতে হৈব ।
------------------------------------------------
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-৬ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৩