somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-৭

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বুকের মইধ্যে হৃদপিন্ড আমার জোরে জোরে বাড়ি খাইতে থাকে । এক্কেবারে পরথমেই বাপের সামনে । হালার কফালের কি ফের । মাটির দিকে তাকাইয়া যেকোন মুহূর্তে দৌড়ানির প্রস্তুতি রাইখা আমি আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে আগাইতে থাকি । দরজার কাছে গিয়া দেখি আম্মাও আছেন ঐখানে । আব্বা কি যেন বলা শুরু করছিলেন । আম্মা হুহু করে কেঁদে দিলেন দেখে থাইমা গেলেন । শইল্যের কি অবস্থা দেখ । চামড়া পুইড়া কি অবস্থা দেখ । তোরা যদি এইসব করতে থাকস একদিন আমি ঘরদুয়ার ছাইড়া যেদিকে দুচোখ যায় চৈলা যামু । গলার মধ্যে আবেগ আমারও জমা হৈতে থাকে । সেইটা ভাইঙা পড়ার আগেই চিৎকার কৈরা ডাকি কিরে খোদেজা আছস নি । কান্দনের ভাবটারে দুর করার লাইগা । খোদেজা আমার ছুড বৈন ।

দুপুরে বড় ভাই জুহর থাইকা ফিরা আইতাছে দেইখা আমি পুকুরপাড়ে রেললাইনে গিয়া বসি । আম্মাজান বড় ভাইরে ডাইকা নেন । আধঘন্টাখানেক পরে আইসা বড় ভাইর সামনে পড়লে ভাই কিছু না বৈলা আসসালামু ওয়ালাইকুম বৈলা উইঠা দোকানের দিকে চইলা যান । বাড়ির সামনের পুকুরটার একটু পরেই দোকান ।

দুইদিন পরে দোকানে গিয়া দেখি ছ্যারাব্যারা অবস্থা । জিনিসপত্র নাই । যে কাস্টমার যেটাই চায় । আমার ছুডডার ছুডডা কয় নাই । মনে মনে ঠিক কৈরা ফালাই । কিছু একটা করতে হৈব । ভাইগো মত নিশ্চিন্ত হৈয়া বৈসা থাকলে আগামি বিশ বছরেও আমি নিজেতো দূরের কথা বড় ভাইরেও বিয়া করাইতে পারুম না ।

সপ্তাহখানেক একান্তে আল্লার কাছে তওবা আর নামায কালাম নিয়া পইড়া থাকি । আয়েশা কৈছিল এক সপ্তাহ পর ফিরা না গেলে এন্ড্রিন খাবে । মেয়েটার খবর জানতে পারলে ভালো হৈত । তবে কোনো উপায় নাই । চিঠি লেখার ইচ্ছা করতাছে না । ঠিকানাও জানি না ভালোমত । আয়েশার কথা মনে হলে আবার সেই অচিন দ্বীপের গন্ধের জন্য শ্বাসকষ্ট হওয়া শুরু করে ।

কোমর বাইন্ধা নাইমা যাই কিছুদিনের মধ্যেই , বাপের দোকানে প্রাণ ফিরাইয়া আনার জন্য । আব্বাকে না বৈলাই গেরামের মাদরাছার হুজুরের কাছ থাইকা ট্যাকা ধার নিই বিশ হাজার । দোকানে নতুন জিনিস উঠানো শুরু করি । আব্বা বাকি বিক্রীতে কাউরে কখনও না করেন নাই । গেরামেই অন্তত লাখখানেক ট্যাকার বাকী পইড়া আছে । কেউ দেয় না । দেয়ার গরজও নাই । আব্বা একবারের বেশি দুইবার কাউরে কখনও বলেন না বাকী শোধ করার জন্য । যে ধরণের লোকেরে বাকী দেয়া হৈছে ঐগুলারে দুইবার কেন হাজারবার বল্লেও ট্যাকা বাইর করতে পারব না ।

খালেদার বিয়া হৈয়া গ্যাছে গেরামেই । মাইঝা ভাইর দোস্তের সাথে । কিছুদিন আমার হুজুর ছিলেন গেরামের মাদরাছায় । তারপর ছৌদি চলে যান । চার বচ্ছর পরে ফিরেই সপ্তাহের মইধ্যে বিয়া । খালেদা এখন হুজুরের বউ । তার পর্দার অন্ত নাই । তবে আমাদের পরিবারের লুকজনের সাথে আলাদা । সেই ছুডকাল থাইকাই ফরিদ ভাইর বাড়ীতে আসা যাওয়া । উনার বাবা মারা গেছেন অনেক আগে । মা অন্ধ । সামনে থাকলে বুঝেন সামনে কেউ আছে । কে কি করতেছে এইগুলা বুঝেন না । অপারেশন কৈরা লাভ নাই বৈলা দিছে ডাক্তার রা । উল্টা আরো ক্ষতি হৈতে পারে । ফরিদ ভাইর চাইরপাশে আতরের গন্ধ ভুরভুর করে । চোখে সুরমা লাগানো থাকে সারাদিন । দোকানে বা মসজিদে যেখানেই যান । দেখা হৈলেই মুখে একটা লাজুক হাসি । উনাদের বাড়িতে যাই মাঝে মইধ্যে । বাকীর ট্যাকা চাওয়া, আম্মারে ওদের খবরাখবর আইনা দেয়া এইসব কারণে । দিনে যতবারই যেসময়েই যাই দেখি ফরিদ ভাই গোসল করে আসছেন । খালেদার মাথায় ভিজা গামছা বান্ধা ।

দোকানের ট্যকার কুলকিনারা পাই না । সারা গেরামের সবাই হয় বন্ধু নাইলে আত্নীয় নাইলে পরিচিত । বাকী নিয়া পড়লাম সমস্যায় । এক্কেরেই যেগুলারা ছালবাকল নাই ঐগুলারে ফিরাইয়া দেয়া শুরু করলাম । ছুড ভাইডারে দোকানে বসাইয়া দিয়া দুফরে দুফরে শুরু করলাম এইবাড়ি সেইবাড়ি ঘুইরা বাকী ট্যাকা কালেকশনে । বিশ বাড়ীতে গেলে একবাড়িতে দেয় । তাও দুই আড়াইশর বেশি না । এইরকম কৈরা ক্যামনে কি চালামু । আরো উপায়অন্তর ভাইবা দেখতে হৈব । দোকানের অন্তত পুঁজিটা সবসময় না থাকলেতো দিনদিন পিছাইতে থাকমু । দাদার দোকান ছিল রেলক্রসিং এ । লুকের মুখে শুনি বিশাল আলিশান পাইকারি দোকান । সেইখান থেকে হোগা মাইরা মাইরা এই অবস্থা করছেন আব্বা । আমার ছুডকালেই দেখতাম দোকান ভর্তি জিনিস । সারাক্ষণ কাস্টমার লাইগাই আছে ।

গেরামের মাদরাছার দোস্ত রহিম্যা এক বুদ্ধি দিল । রহিম্যাগো বড় দোকান আছে রেলক্রসিং বাসস্ট্যান্ডে । মাদরাছা শ্যাষ করনের আগেই বাপ মারা যাওনে ঐটা নিয়া আছে । দিনদিন উন্নতিই করতাছে । কৈল গেরামের মইধ্যের দোকান যেহেতু কেরাসিন তেল নুন চিনি এইগুলাই বেশি চলে । ফেনী থাইকা আনতে গেলে দাম আর আননের খরচ মিলা যা পড়ে তাতে লাভ কম । আমাগো গেরামের দেড়দুই মাইল উত্তর-পুবেই বডার । ঐখানে হস্তায় পাওন যায় বেলাকের জিনিস । ফেনীর অর্ধেক দামে । এক ট্যকার কাঁচা পইসা দিলে আরো কম দামে দেয় । একদিন ওর সাথে সাইকেল নিয়া গিয়া একমণি একটা চিনির বস্তা নিয়া আইলাম । আমার সাথে পরিচয় করাইয়া দিল । বিডিআর বিএসএফের লগেও খাতির আছে পাট্টির । সমস্যা নাই । কেরাসিন নুন চিনি ফেনী থাইকা আনা বাদ দিলাম । দোকানে একটু একটু কৈরা বেলেন্স ফিরা আসা শুরু করলো । ফেনীর আড়ৎদার গাঁইগুই করে । তারে কৈলাম এইগুলা বেইচা লাভ নাই । তাই কমকম নিই আইজকাল । তাও মাঝে মইধ্যে ঐখান থাইকাও আনতে হয় । খরচ কম হৈলে হাজার হাজার ট্যাকার বাকিতো দিব না ।

মনের মইধ্যে খালি একটা খচখচ সবসময় লাইগা থাকত কুলসুমার লাইগা । দক্ষিণের পরের গেরাম জাহানপুরে শ্বশুর-বাড়িতে আছে । গত তিনমাস ধৈরা আমি গেরামে । একবারও আসে নাই বাপে বাড়ীতে । ওর খবর জানতে মন চায় । আমার কোনো সরাসরি আত্নীয় না । গিয়া দেইখাও আইতে পারি না । খুরশিদ পায়েরখোলা মাদরাছাতেই হুজুর হৈছে । আসে খালি বিষ্যুৎবার বিকালে । শুক্কুরবার সকালে চৈলা যায় । ঠিকমত কথাও হয় না সববারে ।

সামনে রুজা । খুরশিদ রে খোঁচাইতে হৈব ।
------------------------------------------------
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-৬ Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৩
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×