somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-৬

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয়তম আমার জানের জান,

কাল রাতের ঘটনার জন্য আমি খুবি দুঃখিত । নিজেরে বেঁধে রাখতে পারিনি । প্রিয়তম তুমি জাননা কত দুঃখ আমার মনে জমা হয়ে আছে । প্রেমে এত কষ্ট এতদিন শুধু শুনেছি এখন বুঝেছি । তোমাকে লজ্জায় ফেলার জন্য আমাকে ক্ষমা করো । আমি বুঝেছি তোমার মাল পড়ে গিয়েছিল । তাই তোমাকে আর জোর করে ধরে রাখিনি । লজ্জা পেয়োনা । আমি কিছু মনে করিনি ।

তুমি প্রথম যেদিন এলে সেদিন থেকে তোমাকে দেখি । আড়াল থেকে তোমার কথা শুনি। তোমার কথা, তোমার চলা সবকিছু আমাকে দিনদিন শুধু আরো পাগল করে দিয়েছে । পুকুরপাড়ে তুমি যখন বসে থাকতে শুধু তোমাকে দেখার জন্য অনেকদিন মাদরাছায় যাইনি । তোমার মনে কি যেন গোপন ব্যাথা । আমি সব শুনতে ছাই আমার জান । তোমার সব কষ্ট আমি দূর করে দিতে ছাই । তুমি শুধু পায়ের তলে ঠাঁই দিয়ো ।

আম্মা আব্বার কথা শুনলাম কয়েকদিন আগে । আব্বা আমার বিয়া দিয়ে দিতে ছান । কিন্তু আম্মা এখনো ভাইয়ার চলে যাবার শোক কাটিয়ে উঠতে পারেন নাই । তুমি চিন্তা করোনা । এখনো কমসে কম ছয় মাস সময় আছে । আমি সব করতে পারবো তোমার সাথে চিরদিন থাকার জন্য । বাড়ি-ঘর সব ছাড়তে পারব । তুমি শুধু ইশারা দিলেই হবে । তোমার সাথে হলে আমি ভাঙা ঘরেও থাকতে পারব । দিনে একবেলা খেলেও কোনো দুঃখ থাকবে না ।

প্রিয়তম আমি তোমাকে অপমান করাতে ছাই না । আব্বা তোমার সাথে আমাকে কিছুতেই বিয়ে দিবেন না । আব্বা আমাকে দূরে কোথাও বিয়ে দিতেই চান না । কিন্তু আমি তোমার সাথে সাতসমুদ্রের ওপারে হলেও যাতে রাজি ।

তুমি বাড়ী যাবে এক সপ্তাহের জন্য শোনার পর থেকেই আমার চোখের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে । আমি তোমাকে না দেখে এক সপ্তাহ কেন একটি দিনও যে থাকতে পারি না । আমার মাথার কসম, যত তাড়াতাড়ি পার চলে এস । যদি না আস আমি কিন্তু এন্ড্রিন খেয়ে ফেলব । আমাকে বাঁচাতে হৈলেও তাড়াতাড়ি চলে এসো ।

শরীরের যত্ন নিও । নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করো । আর এই অভাগিনীকে মনে করো । তোমার পথ চেয়ে বসে আছি ।

ইতি তোমার প্রেমের কাঙাল
মোসাম্মাৎ আয়েশা বানু ।

শনির আখড়ায় খালার বাসায় এসে লুঙির জন্য পলিঠনের থৈলাটা খুইলা দেখি ভিতরে এই চিঠি । কোন ফাঁকে ঢুকাইয়া দিল কে জানে । লইজ্জায় মনে হৈল মাটি ফাইটা যাক আমি ভিতরে ঢুকি । ভাবছিলাম মাল পইড়া যাবার ব্যাপারটা আয়েশা খেয়াল করে নাই । অথবা ব্যাপারটা সে বুঝেও না । কি শরমের কথা ।

এই টাইফের প্রেমের চিঠি জীবনে একটাই মাত্র পাইছিলাম । কুলসুমা যখন তার মনের মায়ার কথা খুইলা বলছিল । তারপর থাইকা কখনও চিঠির দরকার হয় নাই । সেই চিঠি পইড়া সাথে সাথে ছিঁড়া পানিতে ফালাইয়া দিছিলাম । ঘরে আট ভাই । নিজের বৈলা কিছু নাই । পান্জাবি লুঙি বিছনা সবই সবাই মিলা ব্যবহার করতে হৈত । বড় ভাইর হাতে পড়লে আমারতো খবর হৈতই কুলসুমার গায়েও কলঙ্কের কালি লাগত । জিনা নিয়া বড় ভাইর মিজাজ খুবই কড়া । অবশ্য কুনডা নিয়া যে না সেইটাও ভাইববার কথা ।


এখনতো নিজের একখান ঘর একখান বিছনা একখান টেবিল আছে । তাই ভাইবলাম চিটিটা রাইখা দিই । কিন্তু আইতে তো চাইছি পলাইয়া । আবার ঐখানে ফিরা যাবার মত সাহস পাইতাছি না । খালত ভাইডারে জিগাইতে হৈব । ঐডা ভালো পরামর্শ দিতে ফারে । বয়সে আমার ছুড হৈলেও পুলা বাল পাকনা । বুঝে বহুত ।

খালত ভাইর কাছে আমি খুইলা বলি সব কতা । কুলসুমা মোন্তাজির আয়েশা খালেদা বেবাকতের বেবাককিছু । মোন্তাজির এখন কৈ জানতে চাইলে মুখ ফসকাইয়া বৈলা ফেলি ফিলিস্তিনে মরতে গ্যাছে । বৈলাই মনে হয় কোরান ছুঁয়াইয়া শপথ নিছিলেন মোহতারাম ছাব ।শেষে ওরে কিরা কসম কাইটা স্বীকার করাই কারো কাছে কুনোদিনও এই কতা কারুরে যেন না কয়।

ভাই কয় ফিরা যাইতে মাধাইয়া । গিয়া আরো তিন চাইর মাস থাইকা তারপর গেরামে চৈলা যাইতে । তদ্দিনে বাপ বড় ভাইর রাগ কমব । আর আয়েশা যেহেতু কৈছেই আরো ছয় মাস সময় আছে তাইলে আয়েশাও কুনো বড় ঝামেলা করব না । কিন্তু বারবার খালি মানা করে খবরদার আন্জা আন্জি দুধ ধরাধরি যাতে কুনোরকমে না করি । এই মাইয়া পুরা মনপ্রাণ দিয়া নাকি আমারে ভালোবাসে । আরেকটু আগাইলেই মাইয়ার ফিরার পর থাকবো না । তখন একটা কেলেঙ্কারি ঘইটা যাইব । মাহবুবের পরিবাররে অন্তত এই ঝামেলায় ফালানো ঠিক হৈব না । নিমকহারামিরও একটা সীমা আছে ।

নফসের উপর একসময় মনে হৈত অনেক কনটোরোল আছে আমার । চাইর পাঁচদিন থাকতাম হাত না মাইরা । কিন্তু দিনদিন মনে হয় কমতাছে । খালত ভাইর আন্জাআন্জির কতা আমি হাইসাই উড়াইয়া দিই । আরে ধুর মিয়া , মাথা খারাপ মনে করছ নাকি আমার । কিন্তু মনে মনে খালি সেই নরম উষ্ণ শইল্যের ছোঁয়ার কথা , সেই কোমল হাতের কথা ভাসে আমার । নাকে অচিন দ্বীপের সুগন্ধ । শ্বাসকষ্টের মত মনে হৈতে থাকে ।

ফেনীর বাসে যখন উঠি তখনও মনের দোটানা কাটাইতে পারি নাই । খালত ভাইরে বলি লুকাল বাসে ভাড়া কম হৈব, তাই উঠছি । কুমিল্লার বাস সব ভাড়া বেশি । কিন্ত মনে আমার অন্য চিন্তা । পারমু না পারমু না আমি নফসের সাথে । বাড়িই ফিরা যামু ।মাধাইয়া ইস্টপিজ যখন পার হৈয়া যাইতে থাকে , বুকের মইধ্যে মনে হৈতে থাকে আমার বড় বড় টুকরা ধৈসা পড়তাছে । সুগন্ধি দ্বীপের ঘেরাণ এই জীবনে আর পামু না এইটা মনে হৈলেই সব খালি খালি লাগা শুরু করে । ময়নামতি নাইমা যাই উল্টাদিকের বাসে উঠব বৈলা । নাইমা আবার মনে হয় পারমু না পারমু না নফসের সাথে । এক ঘন্টা ময়নামতিতে ঘুরঘুর কৈরা আমি আবার ফেনীর বাসে উইঠা যাই ।

রেল ক্রসিং এ নাইমা বাড়ি পর্যন্ত পথটা খালি বুক ধুকধুক করতে থাকে । বাড়ির সামনের পুকুর পাড় থেকে দেখি আব্বা চেয়ারে বসা , দরজার সামনে ।
------------------------------------------------
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-৫ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৩
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×