somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিএনপি-জামাত জোট সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসন, সংকটাপন্ন বাংলাদেশ

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিএনপি-জামাত জোট সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসন, সংকটাপন্ন বাংলাদেশঃ
বিএনপি-জামাত জোটের পাঁচ বছরে দুঃশাসনের ফলে এই সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটে। দেশ পরিণত হয় মৃত্যু উপত্যকায়। সরকারি মদতে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়, সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এএমএস কিবরিয়া, প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা ও সংসদ সদস্য আহসানউলাহ মাস্টার, অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম ও মমতাজউদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতা-কর্মী বিএনপি-জামাত জোট ও তাদের সহযোগী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ লাখ লাখ আওয়ামী লীগ সমর্থক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাজার হাজার নারী ও নারীশিশু হয় ধর্ষণ, গণ-ধর্ষণের শিকার। শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, নারী-শিশু, ব্যবসায়ী- কেউই ওই ফ্যাসিস্ট বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পায়নি। জনগণের জীবন হয়ে পড়ে নিরাপত্তাহীন। সরকারি মদতে উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান, গ্রেনেড হামলা, বোমাবাজী এবং একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ফলে বাংলাদেশ পরিণত হয় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের নতুন টার্গেট। পক্ষান্তরে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। আইনের শাসন ভেঙে পড়ে। বাংলাদেশকে চিহ্নিত করা হয় অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে।
বিএনপি-জামাত জোটের পাঁচ বছরে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। জোট সরকার ও হাওয়া ভবনের পৃষ্ঠপোষকতায় খাদ্য সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ আমলের তুলনায় দ্রব্যমূল্য ১০০-২০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। মুদ্রাস্ফীতির হার আওয়ামী লীগ আমলে ১.৫৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। পক্ষান্তরে গড় প্রবৃদ্ধির হার ৫·৬ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় ৫·১ শতাংশে। পাঁচ বছরে জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি বাড়লেও খাদ্য উৎপাদন আওয়ামী লীগ আমলের ২ কোটি ৬৮ লাখ থেকে কমে দাঁড়ায় ২ কোটি ৬১ লাখ টন। দারিদ্র্য হ্রাসের হার কমে আবার ০·৫০ শতাংশে নেমে আসে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যার ক্রমবৃদ্ধি ঘটতে থাকে। গত ৭ বছরে নতুন করে দরিদ্র হয় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। বাড়ে ধন বৈষম্য। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পায়।
বিএনপি-জামাত জোট দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদের ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় এলেও, দুর্নীতি-লুটপাট ও দুর্বৃত্তায়নই এই সরকারের নীতি হয়ে দাঁড়ায়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অতি নিকটজনের নেতৃত্বে ১১১ জন গডফাদারের দৌরাত্ম্য হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য। 'হাওয়া ভবন'কে রাষ্ট্রক্ষমতার প্যারালাল কেন্দ্রে পরিণত করা হয় এবং এটি হয় দেশের সমুদয় দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের প্রসূতি কেন্দ্র। বিএনপি-জামাত জোটের মন্ত্রী, সাংসদ, নেতা-কর্মী এবং দলীয় প্রশাসনের অকল্পনীয় দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, লুটপাট, চাঁদাবাজি প্রভৃতির ফলে টিআইবি পরপর পাঁচবার বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে।
সর্বক্ষেত্রে সরকারের দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার ফলে উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়ে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট হয়ে ওঠে অসহনীয়। পাঁচ বছরে জোট সরকার ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারেনি। একমাত্র বিদ্যুৎ খাতেই ২০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও অপব্যয় হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে শিল্প ও কৃষি উৎপাদনে সৃষ্টি হয় চরম সংকট। বিদ্যুতের দাবি জানাতে গেলে কানসাটে ২০ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়।
বস্তুত জোট সরকারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও নারী উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়।
জোট সরকার জনপ্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, বিচার বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, রাষ্ট্র ও সরকারের সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। শত শত উচ্চপদস্থ বেসামরিক, সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তাকে পদচ্যুত, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করার পাশাপাশি দলীয় অনুগত অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ম বহির্ভূতভাবে পদোন্নতি প্রদান ও নিয়োগ দান করে। দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগদানের জন্য কর্মকমিশনের প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। দলীয় অনুগত ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন করে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের চাকরির বয়সসীমা ২ বছর বৃদ্ধি করা হয়। অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের বিচারপতি নিয়োগ করে সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা ও মানুষের শেষ ভরসাস্থলটিকে ধ্বংস করা হয়।
বিএনপি-জামাত জোট সংসদকে অকার্যকর এবং সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে। সংসদে বিরোধীদলকে কথা বলতে না দেওয়া, স্থায়ী কমিটিগুলোর কর্মকাণ্ডকে স্থবির এবং ব্রুট মেজরিটির জোরে গণতন্ত্র চর্চার সকল পথ রুদ্ধ করে দেয়। ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার উদ্দেশে নির্বাচন কমিশনকে আজ্ঞাবহ দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। সংবিধান ও সুপ্রিমকোর্টের রায় উপেক্ষা করে ১ কোটি ১৩ লাখ ভুয়া ভোটারসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে ৩ শতাধিক দলীয় ক্যাডারকে নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগদান করে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ ও কারচুপিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায়, যার ফলে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ফাঁদ (The Middle Class Trap): স্বপ্ন না বাস্তবতা?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫



বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিছু রিসার্চ এবং বিআইডিএস (BIDS) এর দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিবারের ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×