আগের পর্বগুলার লিংক পোস্টের শেষে ।
---------------------------------------------------
আফনে কে ? দেখলাম না তো এতদিন । দেখার ইচ্ছা থাকলেই না দেখতেন । তরুণীর কন্ঠে হালকা রহস্যের সুর । আমার জীবনের মেয়েরা এমন রহস্য করা সপ্রতিভ নয় । হয় অতি মায়ায় নিশ্চুপ অথবা খালেদার মত পুরা খানকি । ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চুপ করে আছি । মেয়ে বলে বন্ধুর ভাইবোন কয়জন সেইটাও জানেন না কেমন বন্ধু হৈলেন । মাহবুবের এমন নিঃস্বার্থ টানের বিপরীতে ওরে নিয়া আমি তেমন আগ্রহ দেখাইনাই তাই একটু খারাপই লাগলো । যা বলার সে আগ বাড়িয়ে বলেছে , যা শুনার সে নিজে জিজ্ঞসাসা করেই শুনেছে । ও আচ্ছা আপনি তাইলে মাহবুবের বোন । বলে আমি হাত ধোয়ার জন্য বাইর হৈতাছি এমন সময় মেয়ে সাবান এগিয়ে দেল । চোখে চোখ পড়ায় আমি আঁৎকে উঠলাম । ধারণা ছিল এমন চোখ পৃথিবীতে এক জোড়াই আছে । গভীর রাতে মাঝে মাঝে রেললাইনে বইসা হাত মারতাম । চাঁদহীন রাইতের সেই কুচকুচে কালো অন্ধকারের চাইতেও কালো মায়াময় একজোড়া চোখ । বেশিক্ষণ তাকাইয়া থাকতে নাই ঐগুলার দিকে । হারায়া যাবার ভয় শতভাগ ।
এই একমাসে হয়ত জানা যাইত মাহবুবের কাছ থাইকা । ওর পরিবারের টুকটাক । কিন্তু বেচারা দাওয়াতে দাওয়াতে কাহিল হৈয়া ছিল । আর আমিও সবকিছু ভুইলা থাকার জন্য চারধারে ইউক্যালিপ্টাস গাছ লাগানো বড় বাইরের পুকুরের পাড়ে গিয়া বৈসা থাকতাম অলস সময়ের বেশিরভাগ । খাওয়া দাওয়া সব মাহবুবের ছুড বৈন দুইটাই নিয়া আসত বৈঠকখানায় । পিচ্চি দুইডা মারাত্নক শিক্ষকভক্ত । ভাত খাইতে দিয়া দাড়ায়া থাকত কখন কি লাগে সেগুলা সাপ্লাই করার জইন্য । চতুর্থ কারো সাহায্য এই বাড়ীতে কখনোই লাগে নাই এই একমাসে ।
এর মইধ্যে বাড়িতে চিঠি দিয়া আমার মোটামুটি সব অবস্থা জানাইছি । কারোরে জানানোর তেমন গরজ ছিল না । তয় মা বুড়ি আর কুলসুমার জন্য জানাইতে হৈল । কুলসুমারে আলাদা কৈরা জানানোর দরকার ছিল না । বাড়িতে খবর পাঠাইলে ও যে আমার ভাইগুলার আগে সেই খবর পাইব সেইটা নিশ্চিত ।
মাহবুব চইলা যাবার পর বাড়িটা কেমন যেন ঝিম মাইরা থাকে সারাদিন রাইত । আয়েশা এখন আর আগের মত ছায়ার মত নাই । পাইন্জম জামাতের উর্দু বই নিয়া মাঝে মইধ্যে সন্ধ্যাবেলা আসে । এইটার অর্থ কি ঐটার ব্যাখ্যা কি । বুঝাইয়া দিতে আমার অসুবিধা নাই । তয় পেরায়ই মনে হয় হাচাই কি বুঝে না নাকি খালি জিগানির লাইগা আসে । এমনিতে দেখি অনেক কিছু পারে । মাথা ভালা মেয়ের ।
এইরকম চলতেছিল ভালাই । হঠাৎ একদিন অনেক কিছু উল্টাপাল্টা লাইগা যায় । পিচ্চি দুইডা সন্ধ্যা না হৈতেই শুরু করে ঝিমানি । তাও কুনোরকমে ধইরা বাইন্ধা আধাঘন্টা চল্লিশ মিনিটের মত কোনরকমে রাখি । এইরকম শেষসময়ে দুইটা বই নিয়া হাজির হয় আয়েশা । পিচ্চি দুইডা এরই মইধ্যে টৈলা পড়ে প্রায় । আয়েশা আইসা বলে যা বিছনাত গিয়া ঘুমা । দুইডার কুনোদিকে খেয়াল না থাকলেই এই কথাডা যেমনেই হোক শুনে এবং টলতে টলতে চলে যায় । একটা আয়াতের অর্থ লেইখা দিতে বলে আয়েশা । আমি কই ঠিকাছে আমি কৈতাছি তুমি লেখ । না হুজুর, আফনে লিখা দেন । কলম বের করতাছি কয় এইটা দিয়া লেখেন এইটার কালি সুন্দর । কলম দিতে গিয়া আমার হাত ধইরা ফেলে । আমি টাশকি খায়া বোবা হৈয়া যাই । গরীবের মেয়ে কুলসুমার চোখে হাজার দীঘির মায়া থাকলেও হাত রুক্ষ পাত্থরভাঙা শ্রমিকের মত । খালেদার হাত ধরা হয় নাই কখনো । দুধই ধরা হৈছে খালি । এইরকম কোমল হাত জীবনে এই পরথম । পুরা শরীরে কারেন্ট খেইলা যায় আমার । ছাড় বৈলা ছিটকাইয়া বাইরে বাইর হৈয়া যাই আমি ।
বাইরে পুকুর পাড়ে জুনিপোকাদের ঝোপের পাশে বইসা আমি বারবার নিজের মনের ভিতরে জন্মানো কুকল্পনাগুলারে ধমকাই । জীবনে অনেক দুস বন্ধু ছিল । দরকারে কাউরে পাওয়া যায় নাই । মোন্তাজির ছিল । ফিলিস্তিনে মরতে চইলা গেল । এই মাহবুব যারে একসময় বিরক্তির মত মনে হৈত । সেই আমার সবচে প্রয়োজনের সময়ে প্রত্যাশার চাইতেও অনেক বড় আশ্রয় হৈছে । মাহবুবের মা । নিজের পুলার চাইতে কুনোরকমে কমতি করেন নাই । মাহবুব যখন চৈলা যাইব তখনো দুইজনের পাতে সমান জিনিস তুইলা দিছেন । পিচ্চিগুলারে সেইভাবে বইলা দিছেন । আমি নিজে শুইনা ফালাইছি কয়েকদিন ।এই পরিবারের উপর এত বড় নিমকহারামি আমি করতে পারমু না ।
সপ্তাহখানেক পরে আবার একই সময়ে আসে আয়েশা । পিচ্চিগুলারে চইলা যাবার পর যেই আমার সামনে বই খুলতাছে আমি সোফা থাইকা উইঠা বাইর হৈতে গেলাম । আমার হাত টাইনা ধৈরা ফেলল । আবার সেই কোমল হাতের ছোঁয়ার কথা ভাবতে সেকেন্ডখানেক থামলাম । তাতেই শরীর আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল । দুইহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে আয়শা বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা নাই বল্লেই চলে । মাহবুবের মা এখনো স্বাভাবিক হৈতে পারেন নাই । রাইত হৈকেই কানতে বসেন ঘটা কৈরা । কানতে কানতে প্রায়দিন ঘুমাইয়া পড়েন । সব দেইখাই আসছে মেয়ে । আর তাছাড়া প্রেমে পড়লে মেয়েরা আত্নঘাতী হৈতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনা শুইনা আসতাছি অনেক আগে থাইকাই । কুলসুমারেও তো দেখলাম ।
আইজ আয়েশার চোখে সেদিনের মত রহস্য নাই । বরং কি এক গভীর দুঃখ । আমাকে জড়াইয়া ধইয়া ঝরঝর কৈরা কাইন্দা দিল মেয়ে । আওয়াজ নাই । সাবধানী কিন্তু গভীর দুঃখি বিড়ালিনীর মত অঝোরে কেঁদে চলছে মেয়ে । কান্নার বেগ বাড়ে আর আমারে জড়াইয়া ধরা বাঁধন শক্ত হয় । বেকুবের মত দাঁড়িয়ে আছি । হাত দুইটা দুইপাশে ঝুলানো । নাকে অচিন দ্বীপের গন্ধ । মেয়ের সুগন্ধি চুল । অপরাধবোধ , হতভম্ভবোধ এতসবের মাঝখানেও ধোন শক্ত । আরেকটু জোরে ধরার পরই গেল পইড়া । ছিঃ আয়েশা । ইন্নালিল্লাহ বলে আমি ঝটকা মেরে মেয়ের দুর্বার বাঁধন ছিড়ে বেরিয়ে যাই ।
পালাতে হবে ।
--------------------------------------------------
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-৪ Click This Link
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-৩ Click This Link
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-২ Click This Link
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-১ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৩৮