somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-৪

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-৩ Click This Link
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-২ Click This Link
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-১ Click This Link

গেরামে এসে পরথম কয়েকদিন টাল্টিবাল্টি করে বেড়ালেও শেষ পর্যন্ত একটা কাজে হাত দিতে হয় । গেরামে মসজিদ দুইটা । দুইটার একটার ইমাম বড় ভাই আরেকটার ইমাম আমার উপরের জন । সাইঝা অর্থাৎ উপর থেকে তিন নম্বর ভাইটা দুই গেরাম পরে নানার বাড়ির একমাত্র মসজিদের ইমাম আর সাথে সাথে ছোট একটা মাদরাছায় পড়ায় । বড় ভাই একটা ভোদাইমার্কা পাব্লিক । মিজাজ দেখানোর দিক দিয়া না । জীবনে যেন কুনো উদ্দেশ্য নাই । আমার উপরের ভাইডা একটা আস্তা দরবেশ । হাফেজি পড়ে সেইযে থানা শহরের মাদরাছায় গেল তারপর থাইকা জীবনের যৌবনের উপর তার যেন কোনো মোহই নাই । গেরামেরই দুরের কিনারের মসজিদে থাকে সপ্তাহেও একবার বাড়িতে আসে না । মসজিদেই পইড়া থাকে । পাশে ইমামছাবের ঘর আছে ঐখানে থাকে । সাইঝা ভাই এট্টা উড়নচন্ডী । তুই আলেম মানুষ তোর এত সাজগোজ ফ্যাশন এর কি আছে । মাসে মাসে ঢাকায় মামা খালার বাড়ী যায় । নতুন নতুন কুর্তা পায়জামা বানায় । ফেয়ার এন্ড লাভলি মাখে দুপুরে গোছল কৈরা । অর সাথে ঠিকমত চাইরকথা কওন যায় না । দুই কথার পরই লাইগা যায় । আমার কাম হৈল তাই শেষ পর্যন্ত বাপের দোকান দেখা । আর কারণে অকারণে তার লম্ফা লম্ফা বক্তৃতা শুনা ।

আব্বাজান তাবলীগ আর পরকাল নিয়া আছেন । দোকান একটা আছে মাসে দশ দিন থাকে বন্ধ । যখন খোলা তাও আমার ছুড ভাইডির একটারে বসাইয়া দিয়া তিনি কোরান তিলাওয়াতে মগ্ন থাকেন । মাঝে মাঝে মিজাজ যায় খিঁচড়াইয়া । একদিন তারে সূরা জুমআর আয়াত মাইরা কৈলাম দুনিয়াদারি ছাইড়া দিতে তো আল্লাহ নিষেধ করছেন । করলাম নাকি একটা আকাম । শুরু হৈল দুই ঘন্টার সওয়াল জবাব আর লেকচার । কোন বুজুর্গের খাওন কৈ থাইকা আসত কুন ছাহাবি কিভাবে এবাদতে মশগুল থাকত এইগুলা নিয়া শুরু হৈল হাবিজাবি । সামনে থাইকা সইরাও যাওন যায়না । ধমকাইয়া বসাইয়া দেন । মন এম্নিতেই খারাপ । কুলসুমার বিয়ার কথা মোটামুটি পাকাপাকি । আমিই গা কৈরা পাত্রপক্ষের লুকজনরে বুঝাইয়া ঠিকঠাক কৈরা দিতাছি । দুপুর বেলা যেইভাবে জলভরা চোখ নিয়া কৈল , আফনে দোকান থাইকা ইঁদুর মারার বিষ আইনা দেন তাও আমার বিয়া ঠিক কৈরেন না । ধমক দিয়া সৈরা আসলেও সেই চোখ কিছুতেই ভুলতাম পারতাছি না । তার মৈধ্যে এই কিচ্ছা কাহিনী ।

রাখেন আফনের কাহিনী বৈলা আমি উইঠা দৌড় মারলাম । বুকের মইধ্য ধুপধাপ শব্দ নিয়া বাড়ি থাইকা বাইরে দিলাম দৌড় । জীবনে কখনো আব্বাজানের সাথে এমন বেয়াদবি করি নাই । তাছাড়া এখন কৈরাও ভয়ডা আব্বাজানের না । বড় ভাইর । পেছন থাইকা শুনলাম আব্বা ধমক দিতাছেন । মা-বাবার লগে বেয়াদবি করবি তো জীবন ধ্বংস হৈয়া যাইব । ঠাডা পইড়া মরবি । ধ্বংস হোক । ঠাডা পড়ুক । নিজ হাতে নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়কে যে দুরে পাঠায় তার জীবনে ধ্বংসের আর বাকি কি থাকে । বাড়ির পাশে পুকুর, পুকুরের অন্য পাশে রেলরাস্তা । সোজা গেলে বাসের রাস্তার সাথে ক্রসিং । বাসস্ট্যান্ড । শেষ দুপুরেই রওনা হৈলাম । চৈলা গেলাম যেদিকে দুইচোখ যায় । এক্কেবারে আন্দাজে যে তা আবার ঠিক না । ঢাকার বাসে উইঠা গেলাম । চান্দিনা যামু । মাহবুবের দ্যাশের বাড়ি । পাগড়ি বান্ধনের দিন অনেক কৈরা কৈছে যাইছ বন্ধু । মাধাইয়া বাস স্ট্যান্ডের নাইমা যে কাউরে জিগাইলেই দেখাইয়া দিতে পারব মন্তাজ চৌদরির বাড়ী । রাস্তা থাইকাই দেখা যায় ।

মাহবুবের পুরা পরিবার আমারে পাইয়া যেন হাতে চাঁদ পাইছে এমন খাতির যত্ন করলো । বেচারা ছৌদি চৈলা যাইব সামনের মাসে । দুএককথার পরেই কাইন্দা দিলেন মাহবুবের মা । ছ্যানছ্যান করে উঠে মাহবুব । কি খালি ফাগলের মত শুরু করলা । দেশ জুইড়া কত মানুষ যাইতাছে । রাইতে মাহবুবের কাছে যখন এইখানে থাকার এবং যেকোন একটা হুজুরীয় কাজ করার ইচ্ছার কথা খুইলা বল্লাম , মাহবুব গিয়া তার মারে কৈল । উনি যেন যারপরনাই খুশি হৈলেন । গেরামে তারাই মাতব্বর । কৈলেন মসজিদেতো ইমাম আছে । কোনো সমস্যা নাই , মোয়াজ্জিন হিসাবে তুমি থাকবা । থাকবা খাবা আমরার ঘরেই । মাহবুবের ছুড দুইটা বৈন আছে । সকাল বিকাল ওদের একটু কায়দা আমপারা পড়াবা ।

জীবন আমি যেরকম চাইছি সেইরকম কুনোদিনও ছিল না । শুধু এইবারেরটা ছাড়া । শেষ দুফরের গরম লোহার রেললাইন ধৈরা হাইটা আসার সময় আমি আসলে জীবনের ধ্বংস চাই নাই । চাইছি নির্বাসন । এমন কুনো জায়গায় যেইখানে কুলসুমার আক্ষেপগুলা শুনা যাইব না । যেখানে কেউ মুখের সামনে কুলসুমার নাম উচ্চারণ করবো না মাসে ছমাসে একবারও । মাহবুব কে বলি নাই কুলসুমার কথা । বেচারা আমারে বড় পেয়ার করলে মোন্তাজিরকে যেইভাবে নিজের জীবনে গল্পের ঝাঁপি খুইলা দিছিলাম সেই তুলনায় মাহবুবকে কিছুই বলি নাই । তাও আমর প্রতি টানের তার কুনো ঘাটতি দেখি নাই কুনোদিনই । এখন মনে হৈল হাতের কাছেই সেই নির্বাসন ।

অলস দিনগুলা যাইতে লাগল পাঙ্খার মত । সকালে দুএকটি ব্যাএছ্যাএ জাতীয় আরবি পাঠ আর সন্ধ্যার আধঘন্টাখানেক ঝিমানিরত মাহবুবের ছুড দুই বৈনরে ক খ ১ ২ ৩ এর বাইরে সারাটা দিন কামকাজ নাই । মাহবুব ব্যস্ত এবাড়ি সেবাড়ি দাওয়াতে । আমাকে টানাটানি করে । কিন্তু নির্বাসনে আমি কুনো আনন্দ মুহূর্ত চাইনা আরো অনেকদিন । কিছু মাস যাক । তারপর দেখা যাবে । মাহবুবরে আগাইয়া দিতে ঢাকাতেও যাই না । একসময় যখন উপরের সবগুলা ভাই কুনো না কুনো কারণে একবার দুইবার ঢাকা যাইত মাঝে মাঝে আক্ষেপ কৈরা বলতাম আমার জৈন্য ঢাকার এক পলিথিন মাটি নিয়া আসাতে । ঢাকায় গিয়া যখন ঢাকার মাটিতে পা দেয়া হৈল না তাইলে গেরামে বৈসাই দিই । তাও তো কৈতে পারমু ঢাকার মাটিতে পা দিছি । কিন্তু আইজ সেই ইচ্ছা নাই । ঢাকায় হাজার হাজার মাইয়া কাউরে না কাউরে দেইখা কুলসুমার পানিভার চোখের কথা মনে হৈয়া যাইতে পারে ।

সেইদিন সন্ধ্যায় মাহবুবের ছুড বৈন দুইটা কানতে কানতে কেলান্ত হৈয়া ঘুমাইয়া গ্যাছে আগেই । বেচারি মাহবুবের মার কুনো হুশ দিশ নাই । পড়ে আছেন ঘর আন্ধার করে । বৈঠকখানায় বৈসা আছি । হঠাৎ শুনলাম একটা মেয়েকন্ঠ বলছে হুজুর হাত ধুইয়া আসেন , ভাত খান । ঝাঁ করে একঝলক রক্ত বুকের মধ্যে পোঁচ মাইরা দিয়া গেল ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৩৭
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×