somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন মুনতাজার আল-জাইদি

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন মুনতাজার আল-জাইদিঃপ্রেসিডেন্ট বুশকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মেরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘৃণ্য ইরাক-নীতির প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন মুনতাজার আল-জাইদি। পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বারুদেই আগুন দিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিদ্রোহকে উস্কে দিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই ইরাকি সাংবাদিক। ঘটনার পর ইরাকে জুতা রীতিমতো প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে। ইরাকিরা মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারছে, ঘৃণার প্রকাশ হিসেবে রাস্তায় রাস্তায় ঝুলিয়ে রাখছে জুতা।
এরই মধ্যে এক সৌদি নাগরিক এক কোটি ডলার দিয়ে মুনতাজারের সেই জুতা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মুনতাজারের সাহসের প্রশংসা করেছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ।
মুনতাজারের মুক্তি, সেই সঙ্গে মার্কিনিদের হটাও দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো ইরাকের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল ইরাকের তৃতীয় বৃহত্তম নগর মসুল ও শিয়া অধ্যুষিত শহর নাসিরিয়ায় কয়েক হাজার মানুষ মুনতাজারের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে। ইরাকের সাংবাদিক সমিতি মুনতাজারের মুক্তি দাবি করেছে। সমিতির প্রধান মুয়াদ আল-লামি বলেন, মুনতাজার যদি ভুলও করে থাকেন, কম বয়স বিবেচনায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া উচিত। আগের দিন বাগদাদের সদর সিটির লোকজন জুতার মালা বানিয়ে খুঁটিতে ঝুলিয়ে দেয়। ওই দিন নাজাফে মার্কিন বাহিনীকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে।
তরুণ মুনতাজার রাতারাতি আরব বিশ্বের নায়ক হয়ে উঠেছেন। তাঁকে নিয়ে এখন বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে, টেলিভিশনে বারবার দেখানো হচ্ছে জুতা ছোড়ার সেই দৃশ্য। ইউটিউবে এ দৃশ্য দেখার জন্য লাখ লাখ মানুষ ইন্টারনেটে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে।
বুশকে লক্ষ্য করে মুনতাজারের জুতা ছুড়ে মারার ঘটনায় ইরাকের চিরবৈরী শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদও ঘুচে গেছে। শিয়া নেতা মুকতাদা আল-সদরের দল মুনতাজারকে 'নায়ক' আখ্যা দিয়েছে। সুন্নি মুসলমানদের সংগঠন বলেছে, মুনতাজার মার্কিন দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির মেয়ে আসিয়া ঘোষণা দিয়েছেন, বীরত্বের জন্য তিনি মুনতাজারকে বিশেষ পুরস্কার দেবেন। লেবাননের গেরিলা সংগঠন হিজবুল্লাহও ইরাকি এ সাংবাদিককে 'নায়ক' অভিহিত করেছে।
গত রোববার বাগদাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বুশকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারার পরমুহূর্তেই ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী মুনতাজারকে গ্রেপ্তার করে। এরপর জানতে চাওয়া হয় মুনতাজার স্বেচ্ছায় এ কাজ করেছেন, নাকি কেউ অর্থের বিনিময়ে তাঁকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাবাসাদে মুনতাজার কী বলেছেন, তা এখনো জানা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি কর্মকর্তারা গতকাল জানিয়েছেন, মুনতাজারকে ইতিমধ্যেই ইরাকি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
মুনতাজার যে টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক, সেই বাগদাদিয়া টিভি চ্যানেলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে বলে ইরাক সরকার যে দাবি করেছে, টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তা অগ্রাহ্য করেছে। বাগদাদিয়া টিভির কর্মকর্তারা মুনতাজারের গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মিসরের কায়রোভিত্তিক এই টিভি চ্যানেলটি এক বিবৃতিতে বলেছে, মুনতাজার একজন উদারপন্থী গর্বিত আরব। গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অবিলম্বে এই সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়া উচিত। টিভি কর্তৃপক্ষ জানায়, বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে স্মাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর ২০০৫ সালে মুনতাজার তাদের প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন।
ইউটিউবের বিপণন ব্যবস্থাপক ডেভিড বার্চ ওয়াশিংটন টাইমসকে বলেছেন, প্রতি ঘণ্টায় ২০৯ জন ব্যক্তি ভিডিওটি আপলোড করছে এবং প্রথম দিনেই ৮১ লাখ ৪৫ হাজার ব্যক্তি ফুটেজটি ইউটিউবে দেখেছে। মিসরের কায়রোয় চারুকলার শিক্ষার্থী তামের ইসমাইল বলেন, ?আমি ইউটিউবে ফুটেজটি এ পর্যন্ত অনেকবার দেখেছি। বুশকে 'কুত্তা' বলে গালি দেওয়ার দৃশ্যটি আমাকে যেমন উত্তেজিত করে, তেমনি হতাশ করে জুতা দুটো লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার দৃশ্যটি।?
বিভিন্ন মহল মনে করছে, ঘটনাটি একজন তরুণ সাংবাদিকের অনিয়ন্ত্রিত আবেগের বহিঃপ্রকাশই শুধু নয়, এ ছিল প্রতিবাদের বড় অস্ত্র। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিষয়ের অধ্যাপক আসাদ আবু খলিল বলেন, 'এ ঘটনা দেখিয়ে দিল যে জুতা কলমের চেয়েও শক্তিশালী।' তিনি বলেন, ঘটনাটির ব্যাপ্তি ছিল মাত্র কয়েক সেকেন্ড। কিন্তু এর মধ্য দিয়েই মুনতাজার সবার মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন।
জর্দানের আল-গাহদ পত্রিকার সম্পাদক মুসা বারহুমেহ বলেছেন, 'বুশকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারার চেয়ে বড় কোনো বিদায়-চুম্বন হতে পারে না। ইরাকসহ আরব বিশ্ব বুশকে কতখানি ঘৃণা করে· এ ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ।'
সৌদি আরবের একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি মুনতাজারের সেই জুতা জোড়ার এক পাটি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ওই ব্যক্তি বলেছেন, এক কোটি ডলার দিয়েও যদি মুনতাজারের এক পাটি জুতা কেনা যায় তবে তিনি ধন্য বোধ করবেন।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশ ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজও ইরাকি সাংবাদিকের সাহসের প্রশংসা করেছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠক চলার সময় টেলিভিশনে জুতা মারার দৃশ্যটি দেখে শাভেজ হো হো করে হেসে ওঠেন। এরপর তিনি বলেন, 'ভালোই হলো যে জুতা বুশের গায়ে লাগেনি। আর আমি নিজেও কখনো এমন কাজে কাউকে উৎসাহিত করব না। তবে ইরাকি সাংবাদিকের সাহসের প্রশংসা করতেই হয়!'
সোমবার দিনভর ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় টিভিতে দৃশ্যটি দেখানো হয়। দৃশ্যটি ফলাও করে প্রচার করে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব টিভি নেটওয়ার্ক। দামেস্কের রাজপথের পাশে বিশাল এক ব্যানারে শোভা পাচ্ছিল এ লেখাটিঃ 'হে সাহসী সাংবাদিক, মহান ওই কাজের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ'।
এদিকে মুনতাজারের ভাই দুরগাম আল-জাইদি অভিযোগ করেছেন, নিরাপত্তাকর্মীরা মুনতাজারকে বেদম মারধর করেছেন। মারধরের ফলে মুনতাজারের হাত ও বুকের খাঁচা ভেঙে গেছে, চোখ ও পা জখম হয়েছে। তাঁকে ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, জুতা ছুড়ে মারার পর পরই নিরাপত্তাকর্মীরা মুনতাজারকে ধরে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে যান। এরপর অনেকক্ষণ ধরেই তাঁর চিৎকারের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।
সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের ঘটনায় মুনতাজার আল-জাইদি খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন। রোববারের ঘটনাটি ছিল তারই বহিঃপ্রকাশ। ইরাকি আইনে বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে অপদস্থ করার দণ্ড হচ্ছে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড। তবে মুনতাজারের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হবে, তা জানা যায়নি।
গত জানুয়ারি মাসে মার্কিন সেনারা মুনতাজারকে ধরে নিয়ে যায় এবং এক দিন পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। গত বছরও মুনতাজারকে ইরাকি অস্ত্রধারীরা অপহরণ করে এবং তিন দিন পর মুক্তি দেয়। পরিবারের সদস্যরা জানায়, এই দুটি ঘটনার পর থেকেই মার্কিনিদের প্রতি মুনতাজারের ঘৃণা আরও বেড়ে যায়।
বাগদাদে রোববারের ওই সংবাদ সম্মেলনে মুনতাজার "কুত্তা, এই নে তোর বিদায়ী চুম্বন" বলে বুশকে লক্ষ্য করে একটি জুতা ছুড়ে মারেন। বুশ সরে গিয়ে আঘাত এড়াতেই উড়ে আসে মুনতাজারের আরেকটি জুতা। তবে এটিও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এ সময় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নূরি আল মালিকি বুশের পাশেই ছিলেন। সূত্রঃ এএফপি, এপি, রয়টার্স ও বিবিসি অনলাইন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৪০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অলীক সুখ পর্ব ৪

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৫

ছবি নেট

শরীর থেকে হৃদয় কে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে চেয়েছি
তুমি কোথায় বাস করো?
জানতে চেয়েছি বারবার
দেহে ,
না,
হৃদয়ে?
টের পাই
দুই জায়গাতে সমান উপস্থিতি তোমার।

তোমার শায়িত শরীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় জেনে নেই!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫১

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় তা জেনে নেই৷ এবার আপনাদের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ঘটনা শেয়ার করবো৷ আমি কোরিয়ান অর্থনীতি পড়েছি৷ দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রায় আকাশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৮

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪


আজকের গল্প হেয়ার স্টাইল ও কাগজের মোবাইল।






সেদিন সন্ধ্যার আগে বাহিরে যাব, মেয়েও বায়না ধরল সেও যাবে। তাকে বললাম চুল বেধে আসো। সে ঝটপট সুন্দর পরিপাটি করে চুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×