আমি এক দেশের কথা বলতে এসেছি। যে দেশটিকে, পৃথিবীর মানচিত্রে দেখবে বলে বুকের রক্ত ঝরিয়েছিল হাজার হাজার তাজা প্রাণ। গোলা ভরা ধান আর গলা ভরা গান -এমনই কোন দেশের স্বপ্ন দেখেছিল তারা। কিন্ত সেই স্বপ্ন কি শুধুই স্বপ্ন? তবে কি তারা কোন রুপকথার দেশের কথাই ভেবেছিল?
আজ ১৬ই ডিসেম্বর- বিজয় দিবস। এই দিনে মানচিত্রে অভ্যূদয় ঘটে স্বাধীন সাবভৌম বাংলাদেশের। স্বাধীনতাকামী মানুষের উল্লসিত হয়ে আকাশে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা ঊড়ানোর দিন। ১৯৭১ সালে ২৫ শে মাচ সেই কাল রাত্রির পরে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায় গোটা দেশ, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তিরিশ লাখ মানুষ শহীদ হয়। সেই মুক্তিযুদ্ধে খালি হয়েছে অনেক মায়ের কোল, বোন হারিয়ে কত না ভাই, কত নারী বিধবা হয়েছে বা সম্ভ্রম লুন্ঠিত হয়েছে – সবই শুধু দেশের স্বাধীনতার জন্য, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় আজকের বাংলাদেশ। হানাদার বাহিনী যখন বুঝল যে বাংলার মানুষের সুনিশ্চিত জয় তারা আর থামাতে পারবে না তখন তারা বাঙ্গালী জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য মানব ইতিহাসের নিকৃষ্টতম আর বর্বরতম কাজটি করে। ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদররা অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে দেশের কৃ্তি সন্তান দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজিবীদের | অনেক শোক গাঁথার গৌ্রবমন্ডিত এই বিজয়, এই দেশ, এই জাতি ।
স্বাধী্নতা উত্তর পরবর্তি সময়ে আমাদের দেশে কি ঘটেছিল সেদিকে একটু দৃষ্টিপাত করে দেখি। আমার সেই বীর বাঙ্গালী জাতি, একটি নতুন দেশের সাথে সাথে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা মহান জাতি হিসাবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেলাম। নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাস্ত হয়ে গেলাম সবাই যে যার পকেট গুছাতে। ভুলে গেলাম যে, গোটা বাংলাদেশ আমরা - একটি পরিবার, একটি জাতি । কতইনা ত্যাগ তিতিক্ষার পর আজ আমরা আমাদের স্বপ্নের দেশকে পেয়েছি।। ভুলে গেলাম দেশ আমাদের সকলের আগে, দেশের যা কিছু সম্পদ সবই আমাদের। দেশ ও দশকে ঠকিয়ে নিজের ভাল থাকার চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলাম। দেশের রন্ধে রন্ধে ঢুকে গেল সন্ত্রাস আর দুর্নীতি। এছাড়াও আইন শৃংখলার অবনতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিক্ষা ব্যবস্হার চরম দূর্গতি হল , যার ফলশ্রুতিতে শুরু হল নিজেদের মাঝে হানাহানি, রেষারেষী, দলাদলি ইত্যাদী। নেতারা ব্যাস্ত নিজেদের গদি আর সম্পদ নিয়ে, যারা এই গড্ডালিকা প্রবাহে নিজেদের ভাসাতে পারল তারা হল ধনী, কিন্ত সাধারণ মানুষ শুধু মানবেতর জীবন উপহার পেল। দেশের জন্য আত্নহুতি দেওয়া সেই মহান জাতি এখন গোটা বিশ্বে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত জাতি হিশেবে পরিচিতি পেল। আজ আমারা একটি বিকলাঙ্গ জাতি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছি।
দলাদলি আর কোন্দলের ৩৭ বছর পার হল, তবুও আমাদের টনক নড়ল না, এখনো দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র বলতে যা বোঝায় তা এখনও প্রতিষ্ঠিত হ্য়নি। নিজেদের চিন্তায় আমরা এতই মশগুল যে আজ পর্যন্ত দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটাও ঠিক মত লেখা হয়নি।। অনেকেই বলে মুক্তিযুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস নাই, বিকৃ্ত করা হয়েছে| রাজনৈ্তিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে পাঠ্য পুস্তক ও সরকারী দলিল পত্রে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের তথ্য পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের রাজাকাররা মানবতার বিরুদ্ধে যে জঘন্যতম অপরাধে অপরাধী, সেই অপরাধের বিচার এখনো হয় নি| আজও তারা এ দেশে সগর্বে তাদের দামী গাড়ীতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে চলাচল করে। সামনে আবারো নির্বাচন। আবারও চেয়ার দখলের প্রতিযোগীতা। যুদ্ধাপরাধীদের অনেকেই এখন দেশের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। যারা নির্বাচনে জয়ী হবেন তারাই আবার এই দেশটি চালাবেন। কিন্তু আজকের এই দিনের জন্য কি এত বলিদান, এত ত্যাগ, এত প্রতিক্ষা?
আজ চারিদিকে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হেরে যাওয়ার গল্প, শুধু তাদের বুকফাটা কান্নার শব্দ।
এদিনের জন্য আমরা নিশ্চই এই বলিদান দেই নি, আসুন আজ এই বিজয় দিবসে আমারা সবাই মিলে শ্রদ্ধা জানাই সেই সব মুক্তিযোদ্ধাদের এবং তাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে প্রতিবদ্ধ হই। আগামী বছর বিজয় দিবসের আগেই আমরা দেখতে চাই ঃ-
১। একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার।
২। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ।
৩। মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাসের ডকুমেন্টেশনের ।
৪। সন্ত্রাস ও জঙ্গী মুক্ত বাংলাদেশ।
৫। ধর্ম নিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ।
৬। দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কতিকে সকল প্রকার ধর্মন্ধতা থেকে দূরে রাখা ।
৭। যুদ্ধাপরাধীদের ভোট না দেওয়া এবং সক ল দল থেকে বহিস্কার করা।
৮। বুদ্ধিজীবীদের নিধন -এর প্রকৃতি, পরিধি,রহস্য ও অপরাধীদের চিহ্নিত কল্পে একটি সুষ্ঠ সরকারি তদন্তের ব্যাবস্হা।
সবাইকে বিজয় দিবসের অভিনন্দন ।
আলোচিত ব্লগ
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।
এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?
আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=
০১।
=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।
পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।
জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন