somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ জন্মদিন: বন্দে আলী মিয়া।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি ও সাহিত্যিক বন্দে আলী মিয়া।
আজ আমি যাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালাম তিনি আজ প্রায় বিস্মৃত। অথচ আমরা আমাদের ছেলেবেলায় এঁর নাম প্রচুর শুনেছি। এঁর একটা লেখা আমাদের পাঠ্যও ছিল। আজ আর বন্দে আলী মিয়ার নাম তেমন শুনি না। কেন? অথচ ইনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। ছবিও আঁকতেন বন্দে আলী মিয়া।

বন্দে আলী মিয়ার জন্ম পাবনায়। ১৯০৬ সালে। আজকের এই দিনে। আপনারা কি পাবনার রাধানগর গ্রামের নাম শুনেছেন? সেই রাধানগর গ্রামেই বন্দে আলী মিয়ার জন্ম। যেমন হয়- বালক বন্দের ছেলেবেলায় পড়াশোনা শুরু হয়েছিল গ্রামেরই কোন এক স্কুলে। ছবি আঁকত বন্দে। সে রকম প্রতিভাক্ষমতা বালক বন্দের ছিল। অনুমান করি কাঠকয়লা কি চকখড়ি দিয়ে ছবি আঁকত বন্দে। বাড়ির লোকজন, পাড়া প্রতিবেশীরা তো সে ছবি দেখে অবাক। কী সুন্দর। মুরুব্বীরা হয়তো গলা খাখারি দিয়ে বলতেন-এসব কী। মুসলমানের ছেলে!
ছবি আঁকাকে জ্বীনের আছর বলত কিনা এই প্রশ্ন।
যাক। রুপকথার গল্প শুনতে ভীষন ভালোবাসত বালক বন্দে। যে কারণে বড় হয়ে শিশুদের জন্য রচনা করেছিলেন শিশুসাহিত্য। চোর জামাই (১৯২৭), মেঘকুমারী (১৯৩২) ...



সেই সময়কার পাবনার একটি স্কুলের নাম মজুমদার একাডেমী। সেই স্কুল থেকেই
১৯২৩ সালে এন্ট্রান্স পাস করল কিশোর বন্দে। পাস তো করলাম। এখন কী করা?
ছবি আঁকা নিয়ে বহুদূর যেতে ইচ্ছে করে আমার। কিন্তু ... রক্ষণশীল পরিবার? আমাকে বলে জ্বীনে ধরিছে।
সে রকম কি কোনও সংঘাতের মুখোমুখি হতে হয়েছিল কিশোর বন্দেকে?
বলতে পারি না। খালি বলতে পারি এ বিষয়টা উঠে আসতে পারে কেবলমাত্র বন্দে আলী মিয়াকে নিয়ে আমাদের সময়ের কোনও লেখকের লিখিত কোনও উপন্যাসে।
জীবনীকারের প্রাবন্ধিক ফর্মালিটি পরিত্যাজ্য হোক। এই একুশ শতকে-যখন আমরা বুঝে নিতে চাই ১৯১৫ সালে পূর্ববাংলার কোনও প্রত্যন্ত গ্রামে ছবি আাঁকার প্রতিভাক্ষমতাকে
কি চোখে দেখা হত?



যা হোক। ছবি আঁকার বিদ্যা শেখার অদম্য আগ্রহ নিয়ে কিশোর বন্দে যাত্রা করল কোলকাতা। নগরটি তখনও আর ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী না হলেও কোলকাতা নগরীটি তখনও শিক্ষাসংস্কৃতির অপ্রতিরোধ্য পীঠস্থান। জ্ঞানমন্দির। ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমী সেই জ্ঞানমন্দিরের অন্যতম। (জয়নুল কি এখানেই পড়েছিলেন? পটুয়া কামরুল হাসান?)
যাক। ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমীতে ছবি আঁকা শিখতে লাগল কিশোর বন্দে।
পাস করে বেরুল যথাসময়ে। এখন কি করা? শিল্পীদের জন্য কি কি জীবিকার ব্যবস্থা জগতে রয়েছে। এই সব ভাবনা তরুণ বন্দেকে কি পেয়ে বসে নাই?



তখন কোলকাতা থেকে "ইসলাম দর্শন" নামে একটি পত্রিকা বেরুত। সে পত্রিকায় সাংবাদিকতার কাজ নিল তরুণ শিল্পীটি। ক'টাকাই বা মায়না? তাতে কি সংসার চলে? মেসের খরচ। রংতুলির দাম বাড়ছে। তার ওপর পাবনা থেকে চিঠি আসছে। অতিসত্ত্বর সামান্য হইলেও অর্থকড়ি পাঠাইও মিয়া। কাজে কাজেই ব্লক কোম্পানির (!) ডিজাইনার হল তরুন বন্দে। সেই সঙ্গে নানাবিধ প্রকাশনী সংস্থার বইয়ের প্রচ্ছদও আঁকা শুরু করল। ভিতরকার ছবিও।
(এসব ব্লক-প্রচ্ছদ আজ কোথায়? এসব ব্লক-প্রচ্ছদ কি আমাদের জাতীয় সম্পদ কি নয়? আর্কাইভে থাকলে ভালো। না থাকলে ভবিষ্যৎ জেনারেশন প্রশ্নবিদ্ধ করবে আমাদের।)
যাক। কেন যেন "ইসলাম দর্শন" পত্রিকার কাজটা সইল না। ছেড়ে দিল। আসলে বন্দের ছিল কবি মন। যে মনটি গড়েছিল পাবনার রাধানগর গ্রামের নিবিড় নির্জন সৌন্দর্য। পাঠদান ভালো লাগত। ভালো লাগত শিশুদের সংসর্গ। শিক্ষকতার কাজ খুঁজল। পেয়েও গেল। তখনকার দিনে কোলকাতা কর্পোরেশনের স্কুল ছিল। তাতেই যোগ দিল।
ওই স্কুলেই ছিলেন ১৯৩০ থেকে ৫০ সাল অব্দি।
বলা যায়, লেখালেখি যা করেছেন ঐসময়টাতেই। লিখেছেন কবিতা উপন্যাস নাটক জীবনী শিশুসাহিত্য। কাব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ময়নামতীর চর (১৯৩০),অনুরাগ (১৯৩২) অবশ্য পদ্মানদীর চর১৯৫৩ সালে লেখা। উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
বসন্ত জাগ্রত দ্বারে (১৯৩১); শেষ লগ্ন (১৯৪১) নাটক। মসনদ। রচনাকাল, ১৯৩১।
শিশুসাহিত্য। আগেই বলেছি, চোর জামাই ১৯২৭;মেঘকুমারী ১৯৩২। জীবনীও লিখেছেন বন্দে আলী মিয়া। কামাল আতাতুর্ক, শরৎচন্দ্র এবং ছোটদের নজরুল।
তাঁর হৃদয়টা যেন আমরা এখন বুঝতে পারছি।



কোলকাতা কর্পোরেশেনের স্কুলে চাকরিরত সময়েই ভারতীয় ইতিহাসের সবচে তাৎপর্যময় ঘটনাটি ঘটল। দেশ বিভাগ।
নাঃ, আর কোলকাতায় পড়ে রইলেন না বন্দে আলী মিয়া। চলে এলেন পূর্বপাকিস্থান।
এখন কি তাঁর হৃদয়টি আরও খোলসা হল আমাদের কাছে?
এবং বন্দে আলী মিয়া ততদিনে হয়ে উঠেছিলেন খ্যাতিমান সাহিত্যিক। পূর্ব পাকিস্থান বেতারকেন্দ্রে কাজ নিলেন। প্রথমে ঢাকায় ও পরে রাজশাহীতে।
এই মাত্র বললাম-বন্দে আলী মিয়া ততদিনে হয়ে উঠেছিলেন খ্যাতিমান লেখক। বাঙালি তাঁর মেধার সম্মান করল। বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেলেন ১৯৬২।
মৃত্যু, ১৯৭৯ সালের ১৭ জুন । রাজশাহীতে।



বন্দে আলী মিয়ার জন্ম, আগেই বলেছি ডিসেম্বর ১৫, ১৯০৬। আজ ডিসেম্বর ১৫। আজ বন্দে আলী মিয়ার জন্ম দিন।
শুভ জন্মদিন কবি।
এই বিস্মৃতিপ্রবণ ডিজিটাল যুগ থেকে।
ছেলেবেলায় ওঁর কী যেন পড়েছিলাম-এখন আর মনে করতে পারছি না। এই বিষন্নতা।

ছবি আঁকতেন বন্দে আলী মিয়া। কোলকাতার ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমীতে পড়াশোনা করেছিলেন।
তাঁর আঁকা ছবি সম্বন্ধে কারও কাছে কি কোনও তথ্য আছে?

ছবি: বাংলাপিডিয়ার সৌজন্যে।
তথ্য:মাহবুবুল হক লিখিত বাংলাপিডিয়ার একটি নিবন্ধ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২৫
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×