আজ ১৪ই ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। আজ থেকে ৩৭ বছর আগে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জ থেকে সুখবর আসছিল যে, "এলাকা পাকসেনা মুক্ত করা হয়েছে।" এদেশের নির্ভিক মানুষগুলো চেতনার কাছে ওদের পরাজয়। সরাসরি লেজ গুটিয়ে চলে যেতে হয়েছিল ওদের। আর আত্মগোপনে যেতে থাকে স্বনাম খ্যাত রাজাকার বাহিনী। কিন্তু এই হঠাৎ করেই আরেকটি কালো অধ্যায় নেমে আসে এই দিনে।
দেশের সব বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে জড়ো করা হয়। ব্রাশ ফায়ার আর বেয়োনেটের খোঁচায় উপড়ে ফেলা হয় ভবিষ্যতের কলি গুলোকে। ঝাঁঝড়া হলো জাতির মগজ।
যাক সে কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আজ এত বছর পরে এসে আমরা কি করছি? কিছুই করতে পারিনি। বরং তারাই আমাদের চেয়ে বেশী সাহসী ছিলেন। ব্রাশ ফায়ারের সামনে দাঁড়াতেও কুন্ঠাবোধ করেনি।
এই দিন গুলো আসলেই আমাদের ব্যাস্ততা বেড়ে যায়। ডায়েরীর পাতাতে আগেই লিখে রাখি আজকের দিনগুলোর সব কর্মসূচী। রাত বারোটা বাজার সাথে সাথেই ফুলের মালা আর পুস্পস্তবক হাতে নিয়ে কম্পমান পায়ে গিয়ে দাঁড়াই সৌধের সামনে। ধপাস করে ফেলি সেটাকে সৌধের পাদদেশে। আর চোখ থাকে সামনে ক্যামেরার দিকে। ফ্লাশের ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে যায়, তবুও তাকিয়ে থাকি সামনের দিকে। সামনের সারিতে প্রবল ধাক্কাধাক্কি। যেন, যে করেই হোক ক্যামেরায় আসতে হবে আমার চেহারা মোবারক। কারণ এ ছবিতো আগামীকাল পত্রিকায় ছাপা হবে। টিভিতে দেখাবে।
তারপর, তারপর হাতটা ঝেড়ে চলে আসি। ভাবখানা এমন যেন "বিশাল একটা কাজ করে ফেলেছি।" বিরাট দায়িত্ব পালন করলাম। হায়.... আমাদের কর্ম, হায়..... আমাদের সংস্কৃতি!! ফুল, কবিতা/শ্রদ্ধাঞ্জলি পাঠের মাঝেই যেন দায়িত্ব শেষ।
জাতির এই সন্তানগুলোর জন্য আমরা কিছুই করতে পারিনি। শুধু মাল্যদান আর মঞ্চ বক্তৃতার মাঝেই জাগিয়ে রেখেছি ওদের চেতনা।
ওদের চেতনাকে প্রাণে ধারণ করে সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ তৈরী করতে, আমরা কি পারবো? তবে কবে? কবে আমাদের বোধদয় হবে? কবে ঐক্যবদ্ধ হবো?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:০৪