somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ তিন চোখ

১২ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জলপাই রঙের পোষাকী সরকারের পতনের পর দেশের উত্তাল ঢেউয়ের মতো জনস্রোতের মধ্যে শাদা দাঁড়ি আলা লোকটাকে, হাজারি বাগ এলাকার কেউই আগে এই এলাকায় কখনো হাজির দেখেন নাই, হঠাৎ করেই, গত অমাবশ্যার শুরুর রাত থেকে তাঁকে এই এলাকার তিন মিনার আলা মসজিদে পাঁচ বেলায়-ই হাজির দেখাচ্ছে।

কোথা থেকে যে কী ঘটে চলেছে সে বিষয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথাও নাই। শাদা লোকটার চাল চলনে এমনই রোশনাই ছড়ানো ছিটানো যে, যা, হাজারি বাগের কোন নেক বান্দাই তা আগে কখনোই নজর করেন নাই। তারপরও এই এলাকার সামান্য লোকজনই তাঁকে পাত্তা দেন, সমীহ করেন। সে সংখ্যা হাতে গোনা।

হাজারি বাগের তিন মিনার আলা মসজিদেই তিনি বেশির ভাগ সময় হাজির দেখান, তাঁর হাতের আঙুলগুলো শাদা, ধবধবে মসৃণ। তাঁর গতিবিধি সম্পর্কে কেউ ভালভাবে ওয়াকিবহাল নয়, তবে, এই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে একমাত্র মুসলিম উদ্দীনের মায়ের সঙ্গেই তাঁকে কদাচিৎ বাতচিত করতে কেউ কেউ দেখেছেন; নিবিড়ভাবে, কথা বলার সময় তিনি নাকি মাটির দিকে দৃষ্টি রেখে কথা বলেন যেন নতমুখের ফেরেশতা, তিনার মুখের ভঙিমাতে কোন ক্লেদ নাই, বিজ্ঞাপণের কোন ভাব ভঙ্গি নাই। একটা পাঞ্জাবীই তিনি পরে থাকেন, রঙটা তার শাদা, ধবধবে, কাফনের কাপড়ের মতো সেই রঙের মধ্যে লোকটার ভিতরকার সরলতার পাখিরা তাঁর মুখের হালকা হাসির মধ্যে ফুটে ওঠে, হাজার হাজার কবুতরের পালকে ভরে ওঠে তার অবয়ব, কেউ কেউ নাকি এইসব দেখেছে। কানাঘুষাও করতে দেখা গেছে এই নিয়ে।

কেউ কেউ নজর করেছেন তাঁর ডান পায়ের কোন আঙুলই নাই, বাম হাতের কনুইয়ে নি:শব্দ একখানা কালো দাগ ফণা তুলে থাকে সারাক্ষণ। লুঙ্গি ছাড়া হাজারি বাগ বাসিন্দারা, তাঁকে কখনই ফুলপ্যান্ট পরতে দেখেন নাই। তিনি মাথায় সব সময় শাদা টুপি পরেন কপালজুড়ে সেই টুপির ছায়া লেপটে থাকে, এই অবস্থায় তাকে মানায়ও। টুপিহীন তাঁকে কেউ দেখেছেন বলে কারো স্মরণ হয়না। টুপিটা না থাকলেই যেন তাঁকে আলগা আলগা লাগতো এই ধরনের মনোভাব হাজারি বাগের অনেকেই অনুভব করেন।

তাঁর পাশাপাশি যারা হেঁটে গেছেন বা যারা তাঁর কাছাকাছি গেছেন, বা আলতো করে যারা গা ঘেষে গেছে, তারা এক বাক্যে সবাই স্বীকার করেন যে তাঁর গা দিয়ে গোলাপের চেয়ে অধিক সুগন্ধী গন্ধ বের হয়, একধরণের মায়াবী সুরভী হাতছানি দিয়ে ডাকে। তাঁর সদাহাস্য তুলোর মতন চেহারা, তামাটে চামড়ার সঙ্গে যখন সেই হাসির সম্লেলন ঘটে তা এক অদ্ভূত তন্ময়তার সৃষ্টি করে।

তিনি কখন গোসল করেন, কখন খানা পিনা খান, কখন ঘুমান, কোন সময় একলা একলা গুণগুণ করেন, তা কেউই বলতে পারেন না। তাঁকে যদি কেউ খাওয়াতে চান তবে তিনি তা খুবই তাজিমের সাথে প্রত্যাখান করে থাকেন। এমন ভাবে তা সম্পন্ন করেন কেউ-ই তাতে রাগ করতে পারেন না, কারো গোস্সা করার সুযোগ তিনি দেন না। হাজারি বাগ এলাকার মুসলিম উদ্দীনের মা ভক্তিসহযোগে ও তাজিমের সঙ্গে এই লোকটাকে একটু বেশি পরিমানই পাত্তা দেন, সবার চেয়ে বেশিই সমীহ করেন। পাত্তা বা সমীহ দেবার কারণ তিনি বা মুসলিম উদ্দীনের মা কাউকে বলেন না, একটা মারোফত ভাব লুকিয়ে রাখেন নিজের নিজের ভিতর।

মুসলিম উদ্দীনের মা নিবিড়ভাবে লক্ষ্য করেছেন, লোকটা পায়ে কোন স্যান্ডেল বা জুতা ব্যবহার করেন না, তবু তাঁর পায়ে কোন ময়লা বা ধুলো থাকে না, সত্যিকার অর্থে ময়লা বা ধুলো লাগে না। এক পালটি বারে অর্থাৎ বুধবারে (মুসলিম উদ্দীনের মা বুধবারকে বুধ বার বলে না, বলে পালটিবার, কারণ তার স্বামীর নাম ছিল বুধু মন্ডল, স্বামীর নাম মুখে নেওয়া পাপ বলে সে মনে করে) প্রচন্ড বৃষ্টি শেষ হলে পরে মুসলিম উদ্দীনের মা দেখেন যে লোকটা হেঁটে আসছেন কাদাপানির মধ্যে দিয়ে, কিন্তু, তারপরও তাঁর পায়ে কোন কাদা লাগে নাই। এই জিনিসিটা তাঁর মনে দাগ কেটেছে, তাঁকে সে ফকিরি কাতারে মনে মনে দাঁড় করিয়েছে, কিন্তু কারো কাছে তা প্রকাশ করেন নাই, নিজের অন্তরে তা চাবি মেরে রেখেছে।

এক শুক্র বার মাগরিব উতরিয়ে গেলে হাজারি বাগের ট্যানারি শ্রমিক রাইতু শেখের তৃতীয় স্ত্রীর চতুর্থ বারের মত প্রসব যন্ত্রণার উদ্ভব হয়, পাচুর মা শত চেষ্টা করেও খালাস করতে বেগ পান, রাত প্রায় শেষ শেষ, চারিদিকে সলকের আভাস দেখা যাচ্ছে, কিন্তু রাইতু শেখের তৃতীয় স্ত্রীর অবস্থার কোন নড়চড় হয় না, পাচুর মা শেষে বলে ’ও রাইতু তর বউয়ের সন্তান খালাস হইবো না তারে গোঙাই ধরছে’ । পাচুর মা মুসলিম উদ্দীনের নানী, সন্তান খালাসের পাকা খেলোয়াড়, জীবনে কখনো তাঁর এমন হয় নাই, সে কখনো হার মানেন নাই, এইখানে সে হার মানে, তাঁর এতদিনের অভিজ্ঞতা কোন কাজে আসেনা, এই জন্য তিনি মনে মনে খুবই কষ্ট পাচ্ছেন। বাড়ি ফেরার পর মুসলিম উদ্দীনের মা জিজ্ঞাসা করে, কি হ’লো ? গোঙাই আটকে দিচে, রাইতুর বউয়ে হয়তো বাঁচবো না এবার..পাচুর মা এই বলে বাথরূমের দিকে রওনা দেন, এ সময়ই ফজরের আযান শুরু হয়।

মুসলিম উদ্দীনের মায়ের কপালে দু:শ্চিন্তার কালো ভাঁজ পড়ে, সেই কালো ভাঁজের জমিনের মধ্যে হঠাৎ ভেসে ওঠে তিন মিনার আলা মসজিদ, শাদা দাঁড়িয়ালা লোকটার রোশনাই রাঙানো মুখ, খালি পা..কোন কাদা নাই, মসৃণ। সে তখন মুসলিম উদ্দীনকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন এবং তিন মিনার আলা মসজিদে পাঠায় শাদা লোকটার কাছে।

শাদা লোকটা একমনে জিকির করতেছিলেন, চব্বিশ ঘন্টায় তিনি জিকির করেন, তিনার জিকিরের কোন শব্দ নাই, দিলের ভিতর সকল সময় জিকিরের শব্দ ওঠা নামা করে, মুসলিম উদ্দীন তাঁর কাছে যাওয়ার পর মসৃণ, শাদা, খালি পায়ের লোকটা বলে - মা পাঠাইছে? মুসলিম উদ্দীন মাথা নাড়ে। তিনি সন্ন্তর্পণে পাঞ্জাবীর বুক পকেটের ভেতর থেকে একটা লাল গোলাপ বের করে বলেন, এইটা তিনার নাকে শুকালেই কাজ হবে..

সত্যি সত্যি রাইতুর তৃতীয় স্ত্রী এ যাত্রায় গোলাপ শুকে পার পেয়ে গেলো। সকালে এই কথা হাজারি বাগের মানুষের মুখে মুখে রটে গেলো। একমাত্র তিন মিনার আলা মসজিদের ডান কোনার চার তলার কেরামত আর তাঁর স্ত্রী এই ঘটনা বিশ্বাস করলো না। এর পর সাত শুক্র বার পার হবার পর এক ঝড়ের রাতে মুসলিম উদ্দীনের মায়ের কাছে লোকটা আসে, এসে ভাত খেতে চান, যে কারো কাছে কখনো খাবার চান না, সবাই কে খাওয়ায়, লুঙিরট্যারে যার সব সময় নতুন নতুন টাকা থাকে, সেই কিনা মুসলিম উদ্দীনের মায়ের কাছে ভাত খেতে চাচ্ছে? মুসলিম উদ্দীনের মা আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে, ভিতরে ভিতরে তাঁর খুশির জোয়ার ওঠে, স্বামী গত হবার পরে এই ধরনের জোয়ার তাঁর ভিতরে বহু দিন আসে নাই। সে তাঁকে বসতে বলেন। লোকটা মুসলিম উদ্দীনের সঙ্গে গল্প করতে থাকে। এই ফাঁকে সে শাদা লোকটার জন্য ভাতের ব্যবস্থা করতে চলে যায়। মুসলিম উদ্দীনের মা লোকটার কাছে জানতে আসে সে কি দিয়ে ভাত খাবে? সে যা উত্তর দেয় তা এরকম যে তাঁর ভাত খেতে ইচ্ছে করেছে, ভাতের সঙ্গে সামান্য সবজি হলেই চলবে। এই সময় শাদা লোকটা তাঁর মাথার টুপিটা অন্যমনস্কভাবে সামনের দিক হতে একটু সরাই দিছে পিছনের দিক পানে । এক ঝলক। এই ফাঁকে মুসলিম উদ্দীনের মায়ের চোখ চলে গেছে লোকটার কপালের ঠিক উপরে। সে নজর করে তাঁর কপালের উপর সুন্দর একটা চোখ বসানো, সন্ধ্যা তারার মতো জ্বলজ্বল করছে। যা শাদা লোকটা সব সময় টুপি দিয়ে ঢেকে রাখেন। এর পর মুসলিম উদ্দীনের মা নিমিষেই মাটিতে পড়ে যান, ফিট হয়ে যান, স্বামীগত হবার পর এমন কখনো হয় নাই, সত্যি ফিট হয়ে গেলো সে, তাঁর কোন হুশ নাই। শাদা লোকটা মুসলিম উদ্দীনকে তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি আনতে বললো। তারপর মুসলিম উদ্দীনকে বললো, আমি তিন মিনারে গেলাম.. তুমি তোমার মায়েরে .. মুখে পানি ছিটাই দাও..ভাল হয়ে যাবে।

তারপর থেকে শাদা লোকটাকে হাজারি বাগ বাসিন্দা আর কেউ দেখেন নাই। মুসলিম উদ্দীনের মা এই ঘটনার পর থেকে কারো সঙ্গে কথা বলেন না। গভীর রাতে ঢুকরে ঢুকরে শুধু কান্দেন। সে কান্দনের কোন শব্দ নাই। তারপর থেকে জলপাই রঙের দুঃখের মহাদেশে যেন দেবদূতের সদয় সম্মতি তাঁর বিধবা জীবনের পরম প্রাপ্তি, এই সে মনে মনে ভাবেন, আর গভীর রাতে ঢুকরে ঢুকরে কান্দেন। এই ঘটনার কথা হাজারি বাগ বাসিন্দারা আমলে আনেন নাই।

আমিও আমলে আনি নাই প্রথম প্রথম আমার মা কান্দে ক্যান? মা আমার শুধু কান্দে রাইতের বেলা। বাবা নিরেট মুখে দোচালা ঘরের মাটির দেয়ালের মত চুপচাপ। ব্যাগ গোছানো শেষে আমি যখন ঢাকার কোচে উঠার জন্য জামা পরি, জুতা পরি তখন মা আমার খালি খালি কান্দে, আর আমার চোখের পাতার প’রে নগরের সমস্ত ক্লেদ রিরংসার মত শাদা শাদা কুয়াশার মধ্যে ফোটা ফোটা জলপাই রঙের জলের মত জমে, এই জিনিস মা আমার সহ্য করতে পারেন না, আরো জোরে জোরে কান্দে, আর আমি জলপাই রঙের জল মুছতে মুছতে ঢাকার বাসে উঠে পড়ি, তারপরও মা আমার শুধু শুধু কান্দে, বাবা মাটির দেয়ালের মত চুপচাপ । মা আমার বড় ঘরের বড় মেয়ে, তবু মা আমার কান্দে, খালি খালি কান্দে। আমার জন্য কান্দে আর কান্দে আর আমি ঢাকার কোচে উঠি। আমি মায়ের কান্দার ভিতর ক্রনিক পোভার্টি খুঁজি, কারণ আমার নানীও কানতো যখন মা আমার বাবার বাড়িতে আসতো, নানী আমার শুধু শুধু কানতো আমার মায়ের জন্য। বেশি দূরতো ছিল না আমার বাবার বাড়ি, এ পাড়া থেকে ও পাড়া, তারপরও নানী অঝোরে কানতো সে কান্না গ্রাম উজাড় হওয়া কান্না, সেই কান্না দেখে মাও কানতো। আমি ঢাকার কোচের ভিতর খুব গোপনে আমার চোখের জলপাই রঙের জল মুছি আর ভাবি মা আমার কান্দে ক্যান? নানী কানতো ক্যান? আমি কান্নার ভিতর কান্না খুঁজি, কান্নার ভিতর আমি ক্রনিক পোভার্টি খুঁজি ঢাকার কোচের ভিতর। ঢাকার কোচ ছুটে চলে দূরন্ত বেগে, আমি মায়ের কান্না পেছনে ফেলে ঢাকার কোচের মধ্যে স্বপ্ন চোখে নিয়ে ছুটতে থাকি ছুটতে থাকি..

শহরে যে যত জোরে ছুটতে পারে তাঁর তত যশ, তত টাকা এই অভিপ্রায়ে দুজন গবেষণা সহযোগী টাংগাইল জেলার বাসাইল থানার বালিনা গ্রামে এসেছে। তারা দুজনই চব্বিশ ঘন্টা টালু থাকে। টালু থাকে ক্রনিক পোভার্টির খোঁজে। তাদের বস বলে দিয়েছে ক্রনিক পোভার্টি হলো দাদার বাবা থেকে দাদায়, তার থেকে বাবায়, বাবা থেকে ছেলের মধ্যে বিরাজিত; অনেকটা জামার ছেঁড়া পকেটের মত, যাই পকেটে রাখো না কেন তা পকেটে না থেকে বাজারের থলেতে চলে যায়। এই কথা সেনসাসের মত সোজা জিনিস না বা গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি না, কিংবা ছাগল পালনের ব্যাপার না, এই জিনিস মাপার যন্ত্র এখনো ইহলোকে কেউ আবিস্কার করতে পারেনি। মাপজোক করার জন্য যন্ত্র দরকার, আর এ জন্যই এই উক্ত বলদেরা বালিনা গ্রামে এসেছে। দুজন গবেষণা সহযোগী বা বলদেরা খুবই মনোযোগের সহিত মনে রেখেছে তাদের বসের কথা। তাদের বসের কোন প্রভার্টি নাই, যা আছে তা সবই প্রপার্টি আর অসাধ্য গবেষণা জ্ঞান। আর এ জন্য দুজনই বসেরে কুত্তার মত ভয় পাই। দুজন বলদের একজন এই অধম যে বসেরে একটু বেশি পরিমান ভয় পায়।

বালিনা বাসাইল থেকে সোজা রাস্তায় মাত্র দু’কিলো পথ। সোজা রাস্তা না বলে তিন’কিলোর মত হবে। গ্রামের দক্ষিণে নামহীন ছোট একটি নদী পূর্ব-পশ্চিম বরাবর বয়ে গিয়েছে। নদীর ওপার যে গ্রাম তাঁর পাশে একটি বাজার আছে। সেখানে এ গ্রামের লোকজন বাজার করতে যায়, তবে চল বেশি বাসাইল বাজারে যাওয়ার। আমরা বালিনা গ্রামে এক জন দিন আনে দিন খায় এমন লোকের কেস স্টাডি নিই, তাকে বলি আপনি আপনার চৌদ্দ পুরুষের গল্প বলেন, যার শরীরে ক্রনিক প্রভার্টির শাদা শাদা দাগ আছে, খালি পা, কাদা নাই, মসৃণ.। তাঁর ভাষায় সে তখন বলতে থাকে, যা এই অধমের ভাষায় নিচে বর্ণিত হলো:

আমার চৌদ্দ পুরুষ ক্রনিক পোভার্টির মধ্যে নিমজ্জিত আছে, ডুবে আছে, ইংরেজ আমলের শেষে তা সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করেছে, সাহেবরা চলে যাবার পরে সেইটা নানা মাত্রায় পুষ্ঠিলাভ করে অনেক মোটা তাজা হয়েছে; ব্যবসায়িদের পেটের মত, রাজনীতিবিদদের মুখের মত। বাংলাদেশ হবার পর অনেক আশা ছিল এবার হয়তো খাচার ভিতর থেকে বের হওয়া যাবে, কিন্তু তা হয়নি। হয়নি কেন? তার জন্য আমার বাবার বাবা দায়ি, কারণ তার কোন জমি ছিল না, বিদ্যা ছিল না, তার সময়ে তিনি শাসকের পা চাটতে পারে নি বা ব্যবসায় মন দেয় নি। ঔ সময় শাসকদের পা চাটতে হলে যা দরকার ছিল তা হলো বিদ্যা ধন নয়তো শুধু ধন, এ ব্যতীত কেউ পা চাটার সুযোগ পায় নাই। বাবার অবস্থাও তাঁর বাবার বাবার মত। তবে আমার দাদা ছিল শাদা সরল, দিন এনে দিন খেত, সঞ্চয় বলতে কিছুই থাকতো না। তার ছেলে ছিল তাঁর বিপরীত। প্রথম জীবনে শুধু ঘুরে বেড়াতো। তারপর পাখি শিকার করতো। পাখি ধরে বিক্রি করে সংসার চালাতো। সংসার দিন দিন বড়ো হলো কিন্তু বাবার আয় বড়ো হলো না। আমরা লেখা পড়া শিখতে পারি নি। যে দিন কাজ থাকে সে দিন খেতে পারি না হলে উপোষ থাকি। আমার মা বলে পাখির অভিশাপে নাকি আমাদের এই দশা হয়েছে। আমার দাদার দাদার বাবায় নাকি প্রথম পাখি শিকার করতো। সে নাকি একদিন একটা পাখি ধরেছিল তার ছিল তিন চোখ, সন্ধ্যা তারার মতো জ্বলজ্বলে, সেই পাখি নাকি সে জবাই করে তার বউকে রান্না করার জন্য হুকুম তালিম করেছিল, তার বউ তিন চোখ আলা পাখি দেখে অজ্ঞান হয়ে ফিট হয়েগিয়েছিল, তারপরে সে আর জাগে নাই, সেই থেকেই আমাদের এই দশার আরম্ভ। এই গল্পের যেন শেষ নাই, এ ছাড়া আমাদের আর কোন গল্প নাই। পোভার্টি নাই।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৩১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×