somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুনতাসির মামুনের ভাবনা! কতজনকে হত্যা করলে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যায়?

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৩০ লাখ শহীদের পরিবার, ৬ লাখ বীরাঙ্গনা ও তাঁদের পরিবার, গত ৪০ বছর কারও কাছে কিছু চায়নি। অথচ তাদের রক্ত, বেদনা, অপমানের ওপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশের। তারা কিছুই চায়নি, শুধু বিচার চেয়েছিল এবং বিচারে দোষ প্রমাণিত হতে সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করেছিল। সেই সামান্য, অতি সামান্য চাওয়াটুকু আবার জুতোয় মাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসব ভিকটিম বলছেন, এই সামান্য বিচার চাওয়াটাই ভুল হয়েছিল। কারণ, বিচার না হলে, তখন ভবিষ্যতে হওয়ার আশাটাই হতো সান্ত¡না। এখন আর সেই সান্ত¡নাটুকুও নেই। ইয়াহিয়া ও তার দোসররা ২৬ মার্চ হেসেছিল রক্তের হোলি খেলা দেখে, আর আজ অনেকে সেই হাসিই হাসছে ৩০ লাখ শহীদকে অপমান করতে পেরে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের কোন মন্তব্য নেই। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছে তাতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও অপরাধ তদন্ত কমিটি এবং প্রসিকিউটারের চোখে পানি দেখেছি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাঙালী বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছিল। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি জামায়াত [ এবং অনেকের মতে, সরকার সমর্থকদের একটি অংশ] ছাড়া বাঙালী বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছে। আমার ছাত্র ও ছাত্রতুল্য সাংবাদিকরা শুধু বলেছে, স্যার, এ জন্যই কি সারাটাজীবন দিয়ে দিলেন আপনারা?
আমরা, আমাদের জেনারেশনের প্রায় তিন কোটি মানুষ কখনও কারও কাছে কিছু চাইনি, শুধু চেয়েছিলাম, যুদ্ধাপরাধের বিচার হোক, জাতি কলঙ্ক মুক্ত হোক, শহীদ পরিবারগুলো শান্তি পাক। এই সামান্য চাওয়ার জন্য আজ আমাদেরই কাঠ গড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। নিজের মনেই প্রশ্ন জাগছে, বিচার চেয়ে কি ভুল করেছিলাম? মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের বক্তব্য কি ছিল নিছক বক্তব্য? মানুষের ওপর বিশ্বাস রাখা কি অপরাধ?
বাচ্চু রাজাকারের রায়ে আমরা খুশি হয়েছিলাম ইতিহাসের সত্য প্রতিফলিত হতে দেখে। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগের মাত্রা ছিল তার থেকেও বেশি। অভিযোগগুলো একবার বিবেচনা করে দেখুন। ৫ এপ্রিল ১৯৭১ সালে কলেজ ছাত্র পল্লবকে দু’দিন মিরপুরে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছিল কাদের তারপর হত্যা করা হয়েছিল। এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে সন্দেহাতীতভাবে। ২৭ মার্চ কাদের ও তার বিহারি সহযোগীরা কবি মেহেরুননেসার বাড়িতে ঢুকে তাকে, তার মা ও দুই ভাইকে হত্যা করে। মেহেরুননেসার মাথা কেটে ঝুলিয়ে রাখে। এই অভিযোগও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। ২৯ মার্চ পয়গামের সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে নিয়ে যাওয়া হয় মিরপরের জল্লাদখানায়। আবু তালেবের মেয়ে জানিয়েছেন, কোরবানির গরুর মতো তালেবকে জবাই করে মাংসগুলো টুকরো টুকরো করে উল্লাসে তারা মেতে ওঠে। এই অভিযোগও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় কাদের মিরপুরের হযরত আলী লঙ্কর ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হত্যা করে ও ১১ বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করে। এই অভিযোগও প্রমাণিত। ২৪ এপ্রিল মিরপুরে অলোকদি গ্রামে ৩৪৪ জনকে নির্যাতন করে খুন করে। মামা বাহিনীর শহীদুল হক মামা জানিয়েছেন, আজলা ভরে মানুষের চোখ তিনি সমাহিত করেছেন। এই অভিযোগও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। প্রমাণিত হয়নি ঘাটের চরের গণহত্যায় কাদেরের ইনভলভমেন্ট।
কাদের মোল্লা মোট ৩৫৫ জনকে খুন করেছে বা খুনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ১৯৭১ সালে কাদের অর্জন করে কসাই উপাধি । সেই উপাধিতেই তাকে সবাই চেনে। অন্যরা পেয়েছিল রাজাকার উপাধি, যেমন বাচ্চু রাজাকার। ৩৫৫ জনকে খুন করার জন্য যাবজ্জীবন! সরকার বদলালে সেটি বাতিল হয়ে যাবে অথবা রাষ্ট্রপতি মার্জনা করবেন। সে কারণেই কাঠগড়ায় বিমর্ষ কাদের মোল্লা রায় শুনে চাঙ্গা হয়ে ওঠে এবং আল্লাহু আকবর বলে দাঁড়িয়ে যায়। দেখায় ভি চিহ্ন। ১৯৭৫ সালের পর থেকে ইতিহাসের যে ন্যারেটিভ তৈরি হয়েছে তাতে তো আকার ইঙ্গিতে তাই বলা হয়েছে। রায়ে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, জামায়াতী কর্মকা- নিয়ে অনেক পর্যালোচনা আছে। কিন্তু সেই বিষয়টি যখন রায়ে পাওয়া যায় না তখন পূর্বোক্ত পর্যালোচনাগুলো খারিজ হয়ে যায়। ভাই সব, আপনারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মাফ করে দিয়েন। তাঁর কারণে, মেজররা মেজর জেনারেল, সেকশন অফিসাররা সচিব, মুনসেফরা বিচারক হতে পেরেছিলেন। তিনি আজীবন কারও কাছে কিছু চাননি। দিয়েই গেছেন। সবশেষে সপরিবারে জানটাও দিলেন। সে রক্ত বুটে পাড়িয়ে একজন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান হয়ে ‘মসনদে’ বসলেন। সে দিনটিকে স্মরণ করার জন্য তাঁর স্ত্রী জন্মদিন বদলালেন। এ সবের সূত্র আজ বিভিন্নজনের কর্মকা-ে আমরা দেখতে পাই। আপনাদের ইজ্জত বাড়াবার জন্য বঙ্গবন্ধু ও ৩০ লাখ শহীদ যে অপরাধ করে গেছেন ভাইসব, নিজগুণে তা মাফ করে দিয়েন এবং আসতে যেতে ভি চিহ্ন দেখাবেন যাতে ইলেকট্রনিক মিডিয়া বার বার সেগুলো দেখিয়ে এই বার্তা দেয় আপনারাই বিজয়ী, আপনারাই সত্যের ধারক।
১৯৭৩ সালে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একটি বক্তৃতায় বলেছিলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। আরও বলেছিলেন, বলা হয় [অর্থাৎ গুজব ছড়ানো হচ্ছে] বিচার হবে না, আপোস হচ্ছে। ‘শেখ মুজিবুর রহমান কখনও আপোস করে নাই।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা যখন ট্রাইব্যুনাল করেছিলেন তখন আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন দুর্বলতা নিয়ে আমরা বার বার বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করেছি, সমাধান চেয়েছি, প্রধানমন্ত্রী সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রƒক্ষেপ করেননি। আইনমন্ত্রী আমাদের বিরোধিতা করেছেন। আমরা আরও বলেছি, এই বিচারে সামান্য গড়বড় হলেও দায়িত্ব বর্তাবে সরকারের ওপর। কিন্তু ২০০৮ সালের ভোট ও সামরিক সাপোর্টে স্ফীত হয়ে আমাদের উপেক্ষা করা হয়েছে। আজ দায়িত্ব সরকারের কাঁধেই বর্তাচ্ছে। দিকে দিকে সে ধ্বনিই শোনা যাচ্ছে, হয়ে গেল আপোস? বাচ্চু রাজাকারকে পালাতে দেয়া, পালাতে দেয়া এ কারণে বলা হচ্ছে, যাদের দায়িত্ব ছিল তাকে চোখে রাখার তারা সেটা করেনি এবং এ কারণে তাদের কোন শাস্তিও হয়নি। পুলিশের বেধড়ক মার খাওয়া। হরতাল ঘোষণার আগে খবরের কাগজের প্রতিবেদন অনুযায়ী চট্টগ্রামে এক জামায়াত নেতা বলেছেন, সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, হরতালে দেদার ভাংচুর, হত্যার পরও আর্মড পুলিশ বা বিজিবি, র‌্যাব না নামানো, হরতালের আগের দিন প্রহৃত পুলিশদের দাঙ্গাবাজ কর্তৃক রজনীগন্ধা প্রদান ও হাসিমুখে তা গ্রহণ, তিনদিন অবাধে জামায়াতকে রাস্তা ছেড়ে দেয়া, জামায়াতের গৃহযুদ্ধের হুমকি, তারপর এই রায়। অধিকাংশ মানুষ এর মধ্যে কোন না কোন যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন। আমরা এর সত্য মিথ্যা জানি না। ব্যক্তিগতভাবে তা বিশ্বাস করাও কষ্ট। কিন্তু, এখন একজন রিকশাঅলাও বলেন, ‘এত নাটক করার কি দরকার ছিল’, তখন অতি গলাবাজ মন্ত্রীরা কী বলবেন? আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, মন্ত্রী বা আওয়ামী নেতারা রায়ের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তা কেউ বিশ্বাসই করছে না। দুপুর সাড়ে বারোটার পর থেকে সরকারের শত ভাল কাজের একটিরও কথা কেউ বলছে না। সবকিছু মুছে গেল। বিশ্বাসের জায়গাটাও নষ্ট হয়ে গেল। গলাবাজ মন্ত্রী, নেতারা গলাবাজিটা একটু নামিয়ে, রাস্তার লোক কী বলছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। আর্মি, জামায়াত, বিএনপি আপনাদের ভোটের বাক্স ভরবে না। এই রাস্তার লোকেরাই ভোটের বাক্স ভরবে। হামবড়া ভাবটা ছেড়ে, নিজেদের অতি বুদ্ধিমান ভাবাটা একটু কমান। মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন। পদ্মা সেতু, খালেদা জিয়ার চিঠি এখন কোন ইস্যু নয়। এটিই ইস্যু। কে কার সঙ্গে কী আপোস করেছে, সেটির সঙ্গে রায়ের কী সম্পর্ক, এগুলো আমি জানি না, জানতেও চাই না। এটি বিশ্বাস করলে আমাদের আর ভোট দেয়ার জায়গায়ই থাকে না। যে একশ’জনের সঙ্গে কথা হয়েছে গতকাল তার ৫০ জনই ঘোষণা করেছেন, এ দেশে তারা আর ভোট দেবেন না। হয়ত এগুলো ক্ষোভের কথা, রাগের কথা। কিন্তু রাস্তার মানুষদের নিয়ে রাজনীতি করতে হলে তাদের সেন্টিমেন্ট বুঝতে হবে, চারপাশের গুটিকয়ের সেন্টিমেন্ট আর ডিজিএফআইয়ের সেন্টিমেন্ট কোন কাজে আসবে না। অন্তত গত ৫০ বছরের ইতিহাস তা প্রমাণ করে না।
এই রায় মানুষকে কেন ক্ষুব্ধ করল? এই রায় মানুষের মনে কেন সন্দেহের সৃষ্টি করল এবং যার ফলে রায়ে দায় দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাল? বাচ্চু রাজাকারও ছিল আলবদর, তার বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছিল, তাকেও একটি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল কিন্তু একটি কি দু’টি অভিযোগে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল। মোল্লা ৩৫৫ জনকে খুন করেছে বা তার সঙ্গে জড়িত, ১১ বছরের এক বালিকাকে ধর্ষণ করে লাভ করেছে যাবজ্জীবন। সে কারণেই সে রায় শেষে বলেছে আল্লাহু আকবর। এই বৈসাদৃশ্য সবার চোখে প্রকট হয়ে ঠেকছে এবং সে কারণেই নানা ধরনের সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। একটা খুন করলেও মৃত্যুদ- দেয়া হয়, ৪৫৫ জনকে খুন করলে দেয়া হয় যাবজ্জীবন! অন্যান্য বিচারক যদি একজনকে খুনের দায়ে প্রাণদ- দেন তা’হলে কি তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে? মানুষের ক্রোধটা হলো এই যে ৪৫৫ জন খুন করেও সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয় না। ক’জনকে হত্যা করলে মৃত্যুদ- দেয়া যেতে পারে, মহারাজ?
এই রায় এই বার্তা দিয়েছে, ৪৫৫ জনকে খুন, ফিক্্র মাৎ করো। আরও খুন কর। ১ জনকে খুন করলে মৃত্যুদ- হতে পারে। সুতরাং, বাঁচতে চাইলে বেশি কর। ধর্ষণ ভি করো, কুছ পরোয়া নেই। ১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমানরা, ফারুক-রশীদরা এই বার্তা দিয়েছিল, খুন করেগা বাঁচ যায়েগা। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ভি মিলেগা। সে কারণে, গণহত্যার সহযোগী শর্ষিনার পীরকে দুবার স্বাধীনতার পদক দিয়েছিলেন বীরউত্তম জিয়াউর রহমান। সেই থেকে সমাজে, রাষ্ট্রে ভায়োলেন্সের শুরু। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে না দেয়ায় রাষ্ট্রের বুনন নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এ সরকার সেসব হত্যার বিচার করে দায়বদ্ধতা আনতে চেয়েছিল এই রায়ে সেটি নস্যাৎ হয়ে গেল।
বিষয়টি অন্যভাবে দেখা যেতে পারে। ১৯৭৫ সালের পরের জেনারেশন এই সংস্কৃতিতে বড় হয়েছে, যেখানে খুনীদের সমাজে রাষ্ট্রে স্থান দেয়া স্বাভাবিক ব্যাপার, তাদের শাস্তির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষকে নানাভাবে হেনস্থা করা, দায়হীনতার সংস্কৃতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। দায়হীনতার সংস্কৃতি বিনাশ চাইলে বিদ্যমান ব্যবস্থাটা নাড়া খায়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেকেও তাই সেই সংস্কৃতি অজান্তে মেনে নেন।
বাংলাদেশে একটি কথা বহুল প্রচলিত, জাজেস ও জেনারেলরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে নষ্ট করেছেন। তারা সামরিক আইন বিধি জারি করেছেন, সামরিক প্রধানের অধীনে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর বিচারের ব্যাপারে বিব্রত হয়েছেন, সামরিক শাসন বৈধ করেছেন, নির্বাচন কমিশনার হয়ে যাবতীয় কুকর্ম করেছেন। একজন বিচারপতি খায়রুল হক বা বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিকের প্রয়োজন হয়েছে সেসব কলঙ্ক অপনোদন করে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য। এ কারণে প্রতিক্রিয়ার ধারক-বাহকরা তাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এই রায় দেখে মনে হচ্ছে, বিচারপতিদের পূর্বতন ঝোঁক মনের গহীন গভীরে বাসা বেঁধে আছে যা অজান্তে কাজ করে। এই রায়, বঙ্গবন্ধুকে, ৩০ লাখ শহীদকে, ৬ লাখ বীরাঙ্গনা, অগণিত মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের জন্মকে অপমান করেছে। বলতে চেয়েছে গণহত্যা, ধর্ষণ এগুলো মাইনর অপরাধ। এর জন্য গুরুদ- হতে পারে না। ১৯৭৫-এর অনুসারীরা ছাড়া এরকম ঔদ্ধত্য দেখানো সম্ভব নয়।
এই রায় ও নানাবিধ গুজব শুনে আমার মনে হয়েছে, সমাজে এখনও ১৯৭৫ সাল, মার্কিন ডলার এবং পেশি শক্তি প্রাধান্য বিস্তার করে আছে।
এই রায়ের একটি ইতিবাচক দিক আছে। ১৯৭৫ সালের প্রতিনিধিরা যখন দাঙ্গা শুরু করে, গৃহযুদ্ধের হুমকি দেয় সবাই তাদের তুষ্ট করতে অস্থির হয়ে পড়ে। ভাবে এরাই সমাজে রাষ্ট্রে জয় এনে দেবে। এদের সঙ্গে সমঝোতা দরকার।
৫ তারিখ দুপুর সাড়ে বারোটা বা মধ্যাহ্নে সারাদেশে কালো ছায়া নেমে এসেছিল। তারপর আস্তে আস্তে সে মেঘ সরিয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে লাগল সবাই যাকে আমরা বলি সাইলেন্ট মেজরিটি। এই নিশ্চুপ সংখ্যাগরিষ্ঠ হঠাৎ আড়মোড়া ভাংতে শুরু করছে। ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার সয়লাব হয়ে গেছে। এতে রায় সম্পর্কে সবার নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে আর সরকার সম্পর্কে বিরূপতা। এই নিশ্চুপ গরিষ্ঠের অধিকাংশ তরুণ যারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল, এই গরিষ্ঠের মনোভাব যদি নীতি নির্ধারকরা উপেক্ষা করেন তাহলে নির্বাচনে বিপর্যয় ছাড়া কিছু আশা করা যায় না।
এই নিশ্চুপ গরিষ্ঠের অনেকে বলেছিলেন নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। তবে সামনে আছে সেসব যার উল্লেখ করেছি সেই প্রতিবন্ধকতা পেরুতে হবে। আমরা খুশি যে তরুণ প্রজন্ম দায়ভার কাঁধে নিতে এগিয়ে এসেছে। আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমানকে তারা নিয়ে যাবে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে। আমি শুধু বলব, লড়াই চালিয়ে যাওয়াটাই আসল, জয়-পরাজয় কিছু নয়। তারপরও বলব, ইতিহাস আমাদের পক্ষে। যারা ইতিহাস বিনষ্ট করতে চায় ছলে বলে কৌশলে, ইতিহাস তাদের পক্ষে নয়। সে কারণে অন্তিমে আমরাই জিতব। কারণ, পরাজিতের সঙ্গে পরাজিতরাই আঁতাত করে, বিজয়ীরা নয়।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×