somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যক্তিগত দিনলিপি-১; এ জার্নি বাই বাস!!!

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিকেলের দিকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে বাসা থেকে বের হলাম। উদ্দেশ্য শাহবাগ। দল মত নির্বিশেষে এমন আন্দোলন কাছে থেকে দেখাটাও গর্বের। ফার্মগেট বা কারওয়ান বাজারের পর গাড়ী ওদিকে যেতে পারে কিনা এব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা না পাওয়ায় ভাবলাম মিরপুর রোড ধরে গিয়ে এলিফেন্ট রোডের মাথায় নেমে হেঁটে চলে যাব। যেই ভাবা সেই কাজ। পল্লবী-ঢাকেশ্বরী বিকল্প সার্ভিসে চেপে বসলাম। বিকল্প সার্ভিসগুলোর একদম সামনে ড্রাইভারের বরাবর বামদিকে একটা সিঙ্গেল সিট থাকে। রাস্তার মোটামুটি ভালো একটা ভিউ দেখতে দেখতে যাওয়ার জন্য ঐ সিটটাই আমার প্রথম পছন্দ। যাইহোক যাত্রা শুরু হলো। মানিক মিয়া এভিনিউয়ের মোড়ে যথারীতি গাড়ী সিগন্যালে। ফুরফুরে মনে ঠিক যে পড়ে পাওয়া ১৪ আনার মত কয়েকটা রিক্সায় চেপে অনিন্দ সুন্দরী কয়েকজন বিদেশিনী আমার পাশে এসে থামল। ঠিক আমার পাশের রিক্সায় বসা দুই অপ্সরীকে দেখলাম প্রচন্ড আগ্রহ আর কৌতুহল নিয়ে সব দেখছে, যে কৌতুহলী চোখ দেখেই বোঝা যায় অপ্সরীরা ঢাকা শহরে নবাগতা। তাদের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে বডি ল্যাঙ্গুয়েজে সৌজন্যতা বিনিময় করে শহরের জ্যামের দিকে চোখ বুলিয়ে বললাম,

এটা সুন্দর! কি বল?

রিক্সার ডানপাশে বসা অপ্সরী ভদ্রতাসূচক জবাব দিল, হ্যা, সুন্দর!

বললাম, তুমিও অনেক সুন্দর!

পশ্চিমা সুন্দরীদের একটা গুন আছে। এমন প্রশংসা সূচক কমপ্লিমেন্ট শুনে মনে মনে খুশি হয়ে মুখে কপট বিরক্তি দেখায়না। যে কারণে অত্যন্ত খুশি হওয়ার ভান করে বলল, রিলেলি! থ্যাঙ্কস।

ইংরেজী উচ্চারণে আমার চাইতেও বেশী দৈন্যতা দেখে বুঝলাম তারা হয়তো ইউরোপের কোন দেশ থেকে আগত। এমন সময় কোত্থেকে ছোট্ট এক টোকাই এসে অপ্সরীর পা চেপে ধরল টাকার আশায়। অপ্সরী নির্বিকার। বুঝলাম তাদের ভালো মত শিক্ষা দিয়েই এ শহরে পাঠানো হয়েছে, এমনকি এটাও বলে দেয়া হয়েছে যে রাস্তায় কোন ভিক্ষুক ধরলে কোনভাবেই যেন তার দিকে এটেনশন না দেয়!

যাইহোক, সিগন্যাল ছেড়ে দিল। গাড়ী যথারীতি সিগন্যাল ক্রস করে যাত্রী উঠা নামা করার জন্য সোবহানবাগ থামল। যাত্রী ওঠানামার মধ্যে দেখলাম আবার সেই রিক্সা বহর আমাদের গাড়ীর বামদিক দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু যাত্রী ওঠানামার কারণে এগুতে পারছেনা। একটু আগে যে ললনার সাথে কথা বললাম তার রিক্সা দেখি আমার একটু পেছনে। গাড়ীর জানালা দিয়ে গলা বের করে আবারও একটু হাসিমাখা সৌজন্যতা জানালাম এবং সাথে গ্রহন করলাম। গাড়ী চলতে শুরু করল।

আবার রাসেল স্কয়ারের সামনে সিগন্যালে গাড়ী আটকা। একটু পর দেখলাম সেই রিক্সাবহর আমাদের বামদিক দিয়ে পান্থপথের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আবারো চোখাচোখি হয়ে গেল সেই অপ্সরীর সাথে। মোড়ে মোড়ে গাড়ী থামানো আর জ্যাম দেখলে এতদিন যতই বিরক্তিবোধ করি না কেন আজ আর ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম না! যেহেতু রিক্সা বহর পান্থপথে ঢুকে যাচ্ছে সেহেতু নিশ্চিত হলাম যে জ্যাম লাগলেও আর দেখা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই তাই বাই জানানোর জন্য গলা বাড়িয়ে বললাম,

দেখেছ এখানে সব যানবাহন এক সাথে যায়।

সেও উত্তর দিল, হু তাই তো দেখতে পাচ্ছি!

বাঁ হাত নেড়ে টাটা দিয়ে বিদায় জানালাম, সেও টাটা দিয়ে চলে গেল পান্থপথের দিকে। মনে মনে ভাবলাম ছোটবেলায় পড়া সেই গল্পের কথা, যেখানে এক দেশে সব কিছুরই মূল্য সমান বলে গুরু তার শিষ্যদের সেই দেশে থাকতে মানা করে।

আবার ভাবি এমন ভাবছি কেন! এদেশটাকে কি আমার তেমন তুলনা করতে চাচ্ছি। এদেশে রাস্তায় রিক্সা বাস প্রাইভেট কারের গতি সমান থাকতে পারে, তাইবলে অন্য কিছু তো সমান না। সাড়ে তিনশ হত্যার খুনীর হয় মাত্র যাবজ্জীবন আবার সেতু কেলেংকারীর হোতা পায় দেশপ্রেমিক খেতাব! এদিকে কোন অপরাধ না করেও লিমনকে বরণ করতে হয় পঙ্গুত্ব আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অমানবিক নির্যাতন।

যাইহোক, শুধুকি এসবই মনে পড়েছে! এতটুকু কি মনে হয়নি যে ইশ মেয়েটার নাম, দেশ যদি জেনে নিতাম বা নিতে পারতাম! সাথে ইমেইল বা ফেসবুক আইডি!


সবশেষে ব্যাক্তিগত দিনলিপি শোনার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মুজিব পরদেশীর একটি গান-


আমি কেমন করে পত্র লিখি রে......



সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৪ রাত ১:৫১
২৫টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×