somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প -এখন দু:সময়

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটগল্প -এখন দু:সময়
= পার্থসারথি


সুপনের দিনলিপি

সুপন চঞ্চল মনটাকে নিয়ে বেকায়দায় পড়ে গেছে। হঠাত পাড় ভেঙ্গে য্ওায়া ছুটন্ত স্রোতের মত মনের চঞ্চলতা। অবাধ্য এ স্রোতের তান্ডবে সুপনের অন্তও-বাহির ্ওলট-পালট হয়ে গেছে আচমকা। সে এখন দিশেহারা। নতুন জগতের নতুন বাসিন্দা ; নতুন আঙ্গিকে চলে জীবনযাপন। গদ্যময় পৃথিবীটার এখন রূপ পাল্টে গেছে। বেচে থাকার ইচ্ছেটা পথ হেটে চলে এসেছে অনেক দূও ; যেখানে নীল আকাশ মাঠ ছুয়েছে চুমোয় চুমোয়। নি:শ্বাসে নি:শ্বাসে নি:শ্বেস হয় কষ্টের তলানি। কাবেরীকে দেখার পর থেকেই এই প্রোপট যুক্ত সুপনের জীবনে।
প্রথম দর্শনেই সুপন পলকহীন, কাবেরী নির্বাক। চারচোখের চতুষ্কোণ মিলনত্রে। সুপন বন্দী হল কাবেরীর গহীন চোখের অসীমে। যাদুর কাঠির স্পর্শে সুপন যেন প্রাণ পেল। সুপনের মনের ভেতর নড়ে ্ওঠল কিছু কথকতা। কাবেরীর জন্যই হয়ত আমার জীবন প্রাপ্তি ; সুপনের স্বগোক্তি অন্য এক সুপনের গহীনে। সুপন ভাললাগার বন্যায় দূরন্ত গতিতে ভেসে চলে। সবকিছুতেই সুপনের ভাললাগা শুরু হল। প্রতিটি সকালই সুপনের কাছে প্রত্যাশিত । কাবেরীর প্রতীায় প্রতিটি দিন কাটে সুখময় মুহূর্তে অব্যক্ত যন্ত্রণার জাল বুনে। সুপনের ধ্যান, জ্ঞান, আশা, বেচে থাকা প্রতিটি নি:শ্বাস, পলকহীন মুহূর্ত,.. এ সবই কাবেরী,..কাবেরী,..। কাবেরীকে চোখের সীমানায় পেলেই বেচে থাকার ইচ্ছেটা দারুণ প্রবল হয়ে ্ওঠে। কাবেরী যদি প্রশ্ন কওে, সুপন আমি তোমার প্রঙ্গণে দাড়ালাম তুমি দাড়িয়ে থেকে কতণ দেখবে ? উত্তরটা সুপন মনে মনেই তৈরী কওে রেখেছে- ‘ পলকহীন অনন্তকাল,..।’
দু’জনার দেখা হয় প্রতিদিন। কথা হয় কদাচিত। সুপনের ইচ্ছে, কথা বলি। কাবেরী চলে, পালিয়ে বাচি। মুখোমুখি হলে, সুযোগে কথা বলে সুপন। ্ওর ইচ্ছে জাগে শুধু কথা বলে যেতে। কাবেরী ছুতো ধওে কেটে পড়ে। আশাহত পাখির মত ছটফটানি বেড়েই চলে সুপনের। কাবেরী যতই এড়িয়ে চলে সুপনের বুকের ভেতর বিন্দু বিন্দু ভালবাসা বেড়েই চলে প্রতিনিয়ত। লজ্জায় অবনত হয় বারবার। কিন্তু পরণেই পরাজিত। চোখের পাতায় পাতায় ছবির মতো ভেসে চলে কাবেরীর প্রতিচ্ছায়া। পলকহীন এক বসন্ত কেটে যায় সুপনের।
এক পা,..দু’পা,.. সুপন এগিয়ে যায়। এখন কাবেরীর মুখোমুখি। গুছিয়ে রাখা কথামালা সব ্ওলট-পালট হয়ে যায়। কথাগুলো বাসা বাধে চোখের গভীরে। চোখের গভীরতা দেখে কাবেরী বিস্ময়ে বিমূঢ়। থমকে দাড়ায় সময়। কাবেরীর নম্র উচ্চারণ- মা করো সুপন।
ঝড়ো বাতাস বুকের ভের আর মওে ভেতর উতাল-পাতাল ঢেউ। চোখের গভীরতা ক্রমশ: অস্পষ্ট হয়ে আসে সুপনের। সুপন পেছনে পা ফেলে চলে আসে দূওে,..বহুদূওে,..। যেখানে শুধু একাকীত্ব। সে এখন জনারন্যে একাকী।

কাবেরীর দিনলিপি
কাবেরী প্রথম দিনেই সুপনের ভাললাগাটুকু টের পায়। চোখের গভীরতা দেখে রীতিমত হতবাক।সুপনকে নিয়ে কোনরকম ভাবনার জগতকে কাবেরী পাত্তা দেয় না। এড়িয়ে চলে সুপনের ছায়া। অথচ বারবার ভাবনার প্রকোষ্ঠে জুড়ে বসে সুপনের প্রতিচ্ছায়া। কাবেরী সচেতনভাবেই অন্য কিছু ভাবতে চেষ্ঠা করে। সুপনের পাশে নিজেকে বসাতে চায় না।
স্বপ্ন-পুরুষের ছবি মনের ভেতরই একে রেখেছে কাবেরী। স্বপ্ন-পুরুষের পাশাপাশি সুপনকে বসালে
বিস্তর ব্যবধান হয়ে যায়। ব্যবধানের মাঝে নিশ্চিন্তে বসানো যায় একটা আকাশ। এত্ত ব্যবধান কী সম্ভব ! কাবেরী স্বপ্ন-পুরুষের ছবিটি মনে মনে একে এক বিভোর হয়। সুপনকে দূওে,.., দূর থেকে বহুদূওে সরিয়ে রাখে।
কাবেরীর মনের বারান্দায় সুপনের পদচারণা বন্ধ। শান্তিও নি:শ্বাস ছাড়ে কাবেরী। এখন শুধু স্বপ্ন-পুরুষকে নিয়েই বেচে থাকা। উপদ্রবহীন সময়। গোধূলীতে নীড়ে ফেরা পাখির সুখ কাবেরীকে ছুয়ে যায়। আকাশ দেখে দেখে সুখী হতে চায় কাবেরীকাবেরীর প্রতিটিণের ভীড়ে স্বপ্ন-পুরুষ হেটে চলে। কাবেরীর স্বপ্ন-পুরুষ হবে রাজকুমার ,.. এবং,..।
,.. বসন্ত যায়। মনের পরতে পরতে ধূলো-বালির সূè আবরণ পড়ে। ফিকে হয়ে আসে স্বপ্ন-পুরুষের ছবি। গহীণ অরণ্যে রাজকুমারী কাবেরী একাকীত্ব অনুভব করে। ফুল, পাখি আর গান রোমাঞ্চ জাগায় না। সবুজের মায়ায় মনটা ভীষণ আকুপাকু করে। স্বপ্ন-পুরুষের ছবিটা হেলে-পড়া আকাশে হারিয়ে যায়।
স্মৃতি রোমন্থন। ফেলে আসা মানিকের খোজে কাবেরীর পেছনে হাটা।

দু:সময়ের মুখোমুখি

এইতো আর কিছুদিন, মুখোমুখি হতে হবে বাস্তবতার। জীবন-অধ্যায় পাল্টানেরা সন্ধিণে ঝুলে থাকতে হবে অনির্দিষ্ট কালের জন্য। সুপন দু:শ্চিন্তার সাগওে হাবুডুবু খাচ্ছে। চাকরি নামের সোনার হরিণকে নাগাল প্ওায়া দূরাশা মাত্র। আর চাকরি পেলেইবা কী। একলার পেট চালানোই দায়। চিরকুমারব্রত ছাড়া কোনো উপায় নেই। সুপনের রঙীন স্বপ্নের ফানুস চুপসে গেছে অনেক আগেই।
কাবেরী লাজুক পায়ে সুপনের মনের আঙিনায় হাটে। দণিা বাতাসে সুপনের মনটা আবার চঞ্চল হয়ে ্ওঠে। সুপন দিবাস্বপ্নে কথা বলে। ভাবনার জালে আবদ্ধ হয়। দু:শ্চিন্তার ঝড়ো হ্ওায়ায় সবকিছু ্ওলট-পালট হয়ে যায়। দিবাস্বপ্ন ভেঙে ্ওঠে সুপন আতংকিত হয়। স্বগোক্তি কওে; না, আমার ভালোবাসাকে আমি নিজের হাতে কিছুতেই কষ্ট দিতে পারব না। আমার ভালবাসা বুকের গভীরে চিরকাল বাচিয়ে রাখব।
কাবেরী সুপনকে স্বপ্ন-পুরুষের আসনে বআয়। রাজকুমারী সেজে ভালবাসার টাট্টু ঘোড়ায় চেপে বসে। ধীরে,.. ধীরে,.. সুপনের খুব কাছে আসে। সুপন স্মৃতির জানালায় উকি দেয়। কাবেরী জিজ্ঞ্যেস কওে ‘ কেমন আছ সুপন ?’
গুপনের খুব ইচ্ছে হয় কাবেরীর বাড়িয়ে দেয়া হাত ছুয়ে অনেকদূর পথ হাটার। । কিন্তু কন্ঠে উচ্চারণ-‘ এখন দু:সময়, ভাল থাকার কোন ব্যবস্থা নেই।’
কিছুণ নীবেতা,..।
কাবেরী সময়ের সিড়ি ভেঙে সামনে এগিয়ে আসে।
সুপনের শেষ উচ্চারণ-‘তুমি ভাল থেকো তোমার জন্য।’

শেষ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×