somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৭০০ তম পোস্টে নিজের কথা।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগিং একটা নেশা। এইটা অনেকে বুঝেছে - অনেকে এখনও বুঝেনি। আমি বুঝেছি - আর বুঝে শুনেই ব্লগিং করি। বিষয়টা মজার বটে - জেনেশুনে নেশা করার মতোই।

কিভাবে নেশা হলো - কেন নেশা হলো - এই বিষয়ে বলতে গেলে বিরাট মহাকাব্য লেখতে হবে। তাই সংক্ষেপেই বলি - মুলত বাংলা লেখা, বাংলা পড়ার সহজ সুযোগ আর দেশে বিদেশে বসে থাকা একদল মানুষের সাথে কথা বলার আনন্দই নেশার দিকে টেনে নিয়েছে। এই আনন্দের শুরুতে আইজুদ্দিন, হোসেইন, শমসের, কেমিকেল আলীসহ আরো কয়েকজন ব্লগারের সাথে একই সময়ে লগইন হতাম। পরে এই সময় বাড়তে লাগলো।

ব্লগিং করে প্রচুর সময় নষ্ট হয় - রাতের ঘুম - দিনের কাজের ক্ষতি। তারপরও কেন ব্লগিং করি?

মুলত দুইটা কারনে ব্লগিং করছি। প্রথমটা হলো নেশার খোরাক আর দ্বিতীয়টা হলো সামান্য দায়িত্ববোধ। দ্বিতীয় কারনটা অন্য সময় বিস্তারিত বলা যাবে। নেশার বিষয়টা নিয়েই কিছু কথা বলা যাক।

তখন ২য় বর্ষের ছাত্র। আমার এক দুরসম্পর্কের আত্নীয় ঢাকায় বদলী এলেন। বয়সী ভদ্রলোক বড় সর একজন আমলা - কিন্তু বিপত্নীক। ছেলে মেয়ে বড় হয়ে নিদের মতো বাস করছে। এক সময় আমি হয়ে গেলাম উনার হাঁটার সাথী। টিউশানী শেষ করে ফকিরাপুলে বাস থেকে নামতেই দেখতাম ভদ্রলোক দাড়িয়ে আছেন। শুরু করতাম হাঁটা - হাঁটতে হাঁটতে বাইতুল মোকাররমের এসে বার্গার আর কোক খেয়ে আবার হাঁটতাম আউটার স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে বংগভবন ঘেষে উনার বাসার কাছে থেকে বাসে উঠে বিদায় জানাতাম। এই লম্বা হাঁটার সময়টাতে উনিও গল্প করতে আর আমি থাকতাম শ্রোতা। একজন অভিজ্ঞ মানুষের কাছ থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্পের মাধ্যমে প্রচুর বিষয় শিখেছি। তার মধ্যে একটা বিষয় নেশা সংক্রান্ত।

একদিন উনি জানতে চাইলেন - তোর নেশা কি?

আমি বললাম - বই পড়া, সিনেমা দেখা।

উনি বললেন - হুমম, ভাল। আর কিছু - মানে সিগারেট খাওয়া?

আমি আমতা আমতা করে বললাম - এই একটু আধটু আছে।

উনার বক্তব্য হলো - প্রতিদিন তুমি সিগারেট খাওয়ার জন্যে কষ্ট পাও আর যখন সিগারেটের দোকানের কাছ দিয়ে হাটি তখন তুমি আনমনা হয়ে যাও - আমার কথা শুনো না। তাই তুমি ইচ্ছা করলে আমার সামনেই সিগারেট খেতে পারো - তাতে আমাদের কথা বলা আরো উপভোগ্য হবে।

তারপর উনি যা বললেন তা হলো - পৃথিবীর সব মানুষের কোন না কোন নেশা থাকে। নেশা ক্ষতিকার কিনা তা নির্ভর করে এর পরিমানে উপর। তা ছাড়াও যদি নেশা বিষয়টা গোপন রাখতে হয় - তা হয় চরম ক্ষতিকারক। এতে সামাজিক জীবন আর ব্যক্তিত্বের উপর প্রভাব পড়ে। যে নেশা প্রকাশ্যে করা সম্ভব নয় - তা পরিত্যাগ করাই ভাল - কারন গোপন নেশা মানুষকে অপরাধের দিকে টেনে নেয়।

ভদ্রলোকের কথাগুলো তখনই মেনে নেইনি। কিন্তু মাথা ঢুকে গিয়েছিলো। আশে পাশের মানুষের মধ্যে নেশার বিষয়টা গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করা শুরু করি। কিন্তু আমার এক দোস্তের নেশা নিয়ে কিছুটা অন্ধকারে ছিলাম। খুবই ভাল ছেলে - ইস্ত্রী ছাড়া কাপড় পড়তো না - কিন্তু টিএসসি এড়িয়ে চলতো কারন সেখানে পোলাপান ফাইজলামী করে। সিগারেট খেত না - এমন কি দিনে এক কাপের বেশী চা খেত না। এই ছেলের নেশা কি, তা ধরতে পারছিলাম না।

একটা সুযোগ এলো একদিন। এরশাদ ভ্যাকেশানে সবাই যখন বাড়ী চল গেছে - তখন আমরা কয়েকজন গোপনে হলে থাকলাম মুলত টিউশানী টিকানোর জন্যে। একদিন দুপুরে আমি বেড়িয়ে গেছি - কিন্তু ভাল ছেলে বললো ও কিছু পড়ে যাবে। হলের বাইরে গিয়ে রিক্সায় উঠার পর মনে পড়লো মানিব্যাগ ফেলে রেখে এসেছি। ফিরে গেলাম রুমে - গিয়ে দরজায় হালকা চাপ দিতেই খুলে গেল। দেখি ভাল ছেলেটা চেয়ার নিয়ে জানালার কাছে বসে আছে। কি যেন দেখছে গভীর মনোযোগ দিয়ে - কোন শব্দ না করে ওর মাথার উপর দিয়ে নীচে তাকালাম - দেখি নীচে খোলা গোসলখানায় ছাপড়া ঘরগুলো বাসিন্দাদের এক মহিলা গোসল করছে - আর ভাল ছেলে মশগুল হয়ে প্রতিটি দৃশ্য উপভোগ করছে। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে বললো - দেখ, বেটিগুলার লজ্জা শরমের বালাই নাই।

আমি বললাম - হুমম, চারতলার উপর থে কেউ দেখছে এইটা বোধ হয় ওরা জানে না।

অবশেষে আমার নেশা সম্পর্কিত শিক্ষা সম্পূর্ন হলো - যাদের দৃশ্যত কোন নেশা নেই - তারা গোপন নেশায় মশগুল।

এই বিবেচনায় ব্লগের নেশা অনেকটা নিরাপদ। প্রকাশ্যতো বটেই। তবে নিয়ন্ত্রন থাকা জরুরী বটে।

(২)

৭০০ পোস্ট লেখি ফেলেছি। কি লিখেছি তা পাঠকরাই ভাল বলতে পারবেন ( অবশ্য যদি কেউ পড়ে থাকেন)। বলতে অসুবিধা নেই বেশীর ভাগ পোস্টই হলো অপরিকল্পিত আর প্রতিক্রিয়ামুলক। একটা পোস্টের ঘটনা বলি। আমার পছন্দের একজন নাস্তিক ব্লগার পোস্ট দিলেন - কাকরাইল মসজিদ সরাতে হবে। চিন্তায় পড়ে গেলাম। প্রিয় মানুষের মতামতকে সরাসরি বিরোধীতা করা মানেই বন্ধুত্ব হারানোর ঝুঁকি। কিন্তু বিষয়বস্তুটা বিতর্কের জন্যে দারুন। ভেবেচিন্তে লিখলাম - ঢাকা ক্লাবের অপসারন চাই। মজা বিষয় হলো সেই পোস্টে ২৫ টা প্লাস পাবার পর একটা মাইনাস পেয়েছি। পোস্টটা অধিকাংশ পাঠকের ভাল লেগেছে। বন্ধুরা চুপচাপ মাইনাস দিয়ে গেল।

কিন্তু কিছু কিছু পোস্ট লেখার পর নিজেকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বোকা মনে হয়। আবার কিছু পোস্ট লেখে দারুন আনন্দ পেয়েছি। যেমন একটা ছিলো মাইনুল হোসেনের উপর লেখা একটা পোস্ট - দারুন মজা লেগেছে।

তবে কিছু পোস্ট লেখার পর মনে হয়েছে এই পোস্ট না লেখলেই ভাল হতো।

যাই হোক - ভাল মন্দ মিলে ৭০০ পোস্ট লেখেছি। কারো ভাল লেগেছে - কারো লাগেনি। কিন্তু আমি মোটামুটি তৃপ্ত। কারন নিজেকে পরিপূর্ন প্রকাশ করতে পেরেছি। আমি যা তাই বলেছি। তাই লিখেছি। এইটাই আমার আনন্দ। কারন আমি কোন উচ্চাভিলাস নিয়ে ব্লগিং করি না। কারো কাছে দায়বদ্ধতা বা ভবিষ্যতে প্রমোশন বা চাকুরী হারানোর সমস্যা নেই বলেই মন খুলেই লিখতে পারি। এইটাই আমার আনন্দ।

সবচেয়ে বেশী উপভোগ করি একদল উদ্দীপ্ত তরুন ব্লগারের শানিত মন্তব্য গুলো। ভাল লাগে যখন দেশের তরতাজা খবরের ব্লগ পড়ি। খারাপ লাগে যখন দেখি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি। বিশেষ করে রাজাকার মতাদর্শের কেউ যখন ধর্মের আড়ালে প্রগতির বিরোধীতা করে। বিব্রত হই যখন কোন নোংরামী আর নীচুতা দেখি। হতাশ হই যখন দেখি কোন তরুন বোকার মতো কথা বলে।

ব্লগিং করার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত অনেকের সাথে ভার্চুয়াল ঘনিষ্টতা হয়েছে। এর মধ্যে আবার কারো কারো সাথে দেখাও হয়েছে - বিশেষ করে উল্লেখ্য আয়ারল্যান্ড থেকে এসেছিলো এক ব্লগার - আড্ডা হয়েছে অনেক্ষন।

ব্লগ এক মজার জগৎ - ব্লগ এক নেশার জগৎ। জানি না কতদিন লেগে থাকতে পারবো এই জগতে। যদি কোন দিন ব্লগিং ছেড়ে দেই - তাহলে একটা দারুন অভিজ্ঞতা নিয়ে যাবো।

সবশেষে ধন্যবাদ জানাই সামহোয়ার এর উদ্যগতাদের - যারা অবিরাম উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলা ভাষার জন্যে এতো সহজ আর সুন্দর ব্লগে আমাদের ব্লগিং এর সুযোগ করে দিয়েছে।

আর যারা সময় নষ্ট করে আমার লেখা ছাইপাশগুলো পড়েছেন - তাদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

(৭০০ পোস্ট অনেক আগেই লেখা হয়েছে - ব্লগার ইন্ডিয়ানা জোনস এর সৌজন্যে এই লেখাটা লিখা হলো।)
৪৪টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×