মিলি ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে বাংলোর বারান্দায় উঠে। শীতকালীন ফুলের সব গাছই যেন এখানে আছে। বারান্দায় একটি রকিং চেয়ার পাতা। দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বারান্দা ঘেঁষা হাসনাহেনার ঝোঁপ। ভূঁইচাপা গাছে ফুল ফুটে আছে। দক্ষিণ দিকে ঘাট বাঁধানো দীঘি। ঠিক যেমনটি ও স্বপ্নে দেখেছিল। এদিকেও সিঁড়ি আছে। ও পায়ে পায়ে নেমে দীঘির ঘাটে দাঁড়ায়। চারদিকে নানা ধরনের গাছ। নারিকেল গাছের সারি, কুলগাছ, কয়েকটা তাল গাছ, করমচাসহ ছোট বড় ফলের গাছ আছে। ঝিরিঝিরি বাতাসে নারিকেল পাতার কাঁপন দেখে ওর মনে পড়ে যায় আজ থেকে সাত বছর আগের ঘটনা। ..........................
দীঘির জলে সাদা রাজহাঁস ভেসে বেড়াচ্ছে। ভালবাসার তীব্রতায় এক সময় শাহেদকে রাজহাঁস বলে সম্বোধন করতো। একটি নৌকা আছে পানিতে। দীঘির মাঝখানে বসার জন্য মাচান বানানো হয়েছে। শীতকাল বলে পানি কিছুটা নিচের দিকে নেমে গেছে। তবুও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকার মতো চমৎকার পুকুরটি দেখে মিলির মনটা ভরে উঠে। বারান্দার পূর্বদিকে সিঁড়ির গোড়ায় একটি শিউলি ফুলের গাছ। ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে পুরো গাছটি। কিছু ফুল মাটিতে পড়ে আছে। একদিন কথায় কথায় মিলি বলেছিল, ভোরের প্রথম আলো যখন শিউলি ফুলের গায়ে পড়ে তখন চারদিক কেমন হেসে উঠে। মায়াবি সুখে ভরে যায় চারদিক। এটি বাড়ির পেছন দিক। ওদিকে টিনের শেড দিয়ে একটি গরুর খামার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সাত আটটি গরু। গরুগুলোকে দেখাশোনা করার জন্য কয়েকজন রাখাল রেখে দেয়া হয়েছে। ওদিকে ঘুরে এসে মিলি যায় পশ্চিম দিকে গাছপালা ঘেরা জায়গায়। দেখতে চায় ওর সবচেয়ে পছন্দের জিনিসটি শাহেদ রেখেছে কিনা। ও ঠিকই মনে রেখেছে। রাজস্থান দোলনা। এক সময় শাহেদকে স্বপ্ন দেখাতো ওরা অনেকগুলো বিকাল আর চাঁদনি রাত এই দোলনায় বসে কাটিয়ে দেবে। দোলনাটি অনেক বড়। কয়েকটি কুশন পাতা আছে। এখান থেকে পুরো বাড়িটা দেখা যায়। ও দোলনায় বসে দেখে শাহেদ ওর দিকে আসছে। মুখে সারপ্রাইজ দেয়ার হাসি।