somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য রচনা : বিবাহ, যৌতুক ও অন্য সমীকরণ

০২ রা ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রম্য রচনা : বিবাহ, যৌতুক ও অন্য সমীকরণ

পার্থসারথি

( লেখাটির শিরোনাম অকাল প্রয়াত সঞ্জীব চেৌধুরীর দেয়া। উনি বেশ আগ্রহ ভরেই প্রস্তাব করলেন আমার দেয়া শিরোনামটি পরিবতর্ন করবেন। দেখার পর আমি সাদরেই গ্রহণ করলাম উনার দেয়া উপরোক্ত শিরোনামটি। লেখাটি ১৮ মার্চ, ১৯৯৬ সংখ্যায় দৈনিক ভোরের কাগজ-এ প্রকাশিত। )

মেয়েদের বয়স যখন বাড়তে থাকে চাহিদা বিধি অনুযায়ী বাবা-মা'র ঘুমের পরিমাণটা কমতে শুরু করে। কারণ মেয়ের বয়সের সাথে অর্থগত ব্যাপার জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে, তা আবার ব্যবসায়িক ভিত্তিতে। অবশ্য এ ব্যবসাতে ছেলের বাপের লাভের উপর লাভ ; একটা সুন্দরী বউ আসে ( যার হাতের স্পর্শে বাড়ী হযে ওঠে লক্ষ্ণীর ভান্ডার ) , সঙ্গে আসে বিরাট অংকের অর্থ ও অর্থ-মূল্যমান বিলাস সামগ্রী। এই ব্যবসায়িক লেনদেনে ছেলে বিক্রি হয় অথচ বিক্রীত মাল বিক্রেতার ঘরেই ফিরে আসে। আবার সঙ্গে আসে ক্রেতার চুক্তিবদ্ধকৃত ক্রয়মূল্যমান বিষয়বস্তু। ব্যবসায়িক দিক থেকে দেখলে সত্যিই এক আশ্চর্য রকমের বাজার ব্যবস্থা ; যার কোন আইনগত ভিত্তি নেই অথচ আইনের উর্ধে্বই সে ব্যবস্থা বহাল তবিয়েতই আছে।
মেয়ের বাবা-মা'র যখন নাজুক অবস্থা ছেলের বাবা-মা তখন যোগান বিধিতে আমদানিকৃত ঘুমের রাজ্যে নাক ডেকে ঘুমান। ছেলের বয়স যতই বাড়তে থাকে ( বিয়ের পূর্ব লগ্ন পর্যন্ত )গুণধর পিতার ঘুম হু...হু... করে সুখকর হতে থাকে।
এই দুই ভুবনের বাসিন্দা অনন্তযুগ যেন দুই ভুবনেই থেকে যাবে। কিন্তু সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব ( ? ) হিসেবে এটা কি মনুষ্য প্রজাতিকে অপমান করা নয় , যখন একটি সুন্দর জীবন পৃথিবীর বুকে বাধাপ্রাপ্ত হয় যেৌতুকের কারণে? এই যেৌতুকে বলি হচ্ছে অসংখ্য সবুজ জীবন ।
ঈদের বাজারে ক্রেতার চাহিদার ওপর ভিত্তি করে গরু-ছাগরের দাম ক্ষণে ক্ষণে উঠা-নামা করে। যদি ক্রেতার চাহিদার তুলনায় গরু-ছাগরের আমদানি বেশি থাকে তাহলে বিক্রেতার অনিচ্ছা সত্বেও দাম কমাতে বাধ্য । কিন্তু বিয়ের বাজারে জামাই নাম্নী স্বর্গের ষাড়-এর দাম জামাই-পিতা নির্ধারণ করে রাখেন। এতটুকু নড়চড় হবার উপায় নেই। স্বর্গের ষাড় যখন বিক্রি হয় মাছ বাজারের চেচামেচিকেও হার মানায়। এই বাজারের মেয়েপক্ষ সবসময় নিগৃহীত, নিপীড়িত হচ্ছে।
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে কোনকিছু আদায় করার জন্য অহরহ হরতাল-ধর্মঘট হচ্ছে। যদিও এটা রাজনীতির ব্যাপার-স্যাপার তবুও যেৌতুক প্রথা বিলুপ্তির জন্য ধর্মঘটকে একটা পন্হা হিসেবে ধররে কেমন হয় ? এ ব্যাপারে আমি নারীপক্ষের নির্ভেজাল সাপোর্টার। কারণ না-দিয়ে তো উপায় নেই ; আমিও তো একদিন মেয়ের বাবা হব।

তবে এই ধর্মঘট আহবানের আগে নারী-পক্ষকে খুব ভালোভাবে সংগঠিত হয়ে মাঠে নামতে হবে। এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তের বয়সের সকল নারীপক্সকে এই আন্দোলনে সামিল হতে হবে। শেষ বয়সে বৃদ্ধও যেন বৃদ্ধার শরীরের উত্তাপ থেকে বঞ্চিত হয়ে আন্দোলনের উদ্দেশের কাছে নত হতে বাধ্য হন। প্রেমিক প্রেমিকার ভালোবাসায় গদগদ হয়ে বলে- তোমার জন্য আমি জীবন দিতে প্রস্তুত। মাননীয়া প্রেমিকা এক্ষেত্রে আপনার প্রেমিককে শুধু বলেন এই ধর্মঘটের আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য যেন সমর্থন দেন। এটা জীবন দেয়ার চেয়ে অনেক সহজ ও শান্তিদায়ক। মহাশয়া আপনি হয়তো ভাবতে পারেন; আমার তো হিল্যে হলোই, যেৌতুক-ফেৌতুক নিয়ে আর মাথা ঘামাতে চাই না। এক্ষেত্রে আপনি কিন্তু রেহাই পাবেন না। আপনিও একদিন মা হবেন এবং যদি বহু সংখ্যক কুতসিত মেয়ের মা হন তাহলে অবস্থাটা কী দাড়াবে একবার ভেবে দেখেছেন কি? অতএব সাবধান !

পুরুষকূল হয়ত এই ধর্মঘটের কথা শুনে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরাবেন। কিন্তু কিন্তু ভয় পাবার কোন কারণ নেই। স্থায়ী ও ভ্রাম্যমান গণিকালয় আপনাদের ধর্মঘটের আওতায় ফেলে দিন, দেখবেন হালুয়া একেবারে টাইট। দিনের বেলায় চোখে সর্ষেফুল দেখবেন অতিশয় ভদ্র-পুরুষ কূল। পুরুষ মানুষের মর্যাদাবোধ আবার একটু বেশি। প্রথম প্রথম এমন ভাব দেখাবে যেন যেৌতুক বিরোধী ধর্মঘটটা একটা ফালতু জিনিস। কিন্তু তা' বেশি দিন টিকবে না। রক্ত-মাংসে গড়া মানুষতো সে। পুরুষকূল হয়ত বলবে নারীকূল কি রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ নয় ? একটা প্রবাদ আছে- নারীদের বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটে না। একটা সন্তানকে যেহেতু দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করার ধৈর্য আছে অতএব আপনাদের জেতার সম্ভাবনাতে কোন সন্দেহ নেই। যেৌতুকের সাথে ধর্মঘটের আত্মীয়তা ঘটিয়ে দিন। সাত-পাচ ভাবার কো প্রয়োজন নেই ; হিসেব সোজা--

যেৌতুক বাজার + ধর্মঘট = বিয়ে বাজার - যেৌতুক == যেৌতুকবিহীন বিয়ে।

শেষ

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×