আমি আমার আগের পোষ্টগুলোতে উল্লেখ করেছিলাম যে, সনাতনপন্হীগণ সম্ভবতঃ হযরত নূহ (আঃ) ও হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর উম্মত । সে হিসেবে বেদে কাবা শরীফের কিছু উল্লেখ পাওয়া যায় এবং তাদের অনেক ধর্মীয় রীতিনীতিতে কাবা শরীফ কেন্দ্রিকতার ছোয়া পাওয়া যায় । ঠিক তেমনিভাবে কুরবানীর ঘটনাও হযরত ইব্রাহীম ও তার পুত্র ঈসমাঈল (আঃ) কে কেন্দ্র করে এবং যেহেতু তাদের সাথে ইব্রাহীম (আঃ) এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় , সেহেতু তাদের ধর্মগ্রন্হে এত বড় ঘটনার উল্লেখ না থেকে পারেনা । মুসলমান মাত্রই জানেন , আমরা কুরবানী ঈদ পালন করি হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর চরম আত্নত্যাগপূর্ণ কর্ম উনার ছেলে হযরত ঈসমাঈল (আঃ) এর কে কুরবানী করতে উদ্যত হয়ে দুম্বা কুরবানীকে স্বরণ করে ।
------------ শুরু ------------
নিম্নে ধর্মাচার্য অধ্যাপক ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় লিখিত "হিন্দু ধর্মগ্রন্হ বেদ ও পূরাণে আল্লাহ ও হযরত মোহম্মদ" হতে উদ্বৃত করা হল--
পুরুষ মেধযজ্ঞ
আদিকালে ব্রক্ষার (ইব্রাহীম-আব্রাহাম-ব্রাহাম-ব্রক্ষা) দুই পুত্র ছিলো-১. অথর্ব এবং ২. অঙ্গিরা ।
তিনি ঐশী প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হইয়া জৈষ্ঠ পুত্র অথর্বকে বলি দিতে উদ্যত হন । শাস্ত্রে উহা 'পুরূষ মেধযজ্ঞ' নামে খ্যাত । অদ্যাবধি নরবলির স্হলে পশুবলি দ্বারা উহা পালিত হইতেছে এবং বলি দেওয়ার সময উক্ত পুরূষ মেধযজ্ঞের সুক্ত গুলি পঠনের বিধান আছে ।
মূর্ধানমস্য সংসী ব্যাথর্বা হৃদয়ং চ যৎ
মস্তিস্কাদধ্বঃ প্রৈরয়ৎ পবমানোহধি র্শীর্ষতঃ
তদ বা অথর্বণঃ শিরো দেবকোশঃ সমুজিতঃ ।
তৎ প্রাণো অভি রক্ষতি শিরো অন্নমথো মনঃ ।।
উর্ধ্বো নু সৃষ্টাস্তির্য্যঙ নু সৃষ্টাঃ সর্বা দিশঃ পুরুষ আ বভুবাঁ ।
পুরং যো ব্রক্ষণো বেদ যস্যাং পুরুষ উচ্যতে ।।
যো বৈ তাং ব্রক্ষণো বেদামৃতেনাব্রতং পুরম্ ।
তষ্মৈ ব্রক্ষ চ ব্রক্ষশ্চ চক্ষুঃ প্রাণং প্রজাং দদুঃ ।।
ন বৈ তং চক্ষুর্জহতি ন প্রাণো জরসঃ সুরা ।
পুরং যো ব্রক্ষণো বেদ যস্যাং পুরুষ উচ্যতে ।।
অষ্টাচক্রা নবদ্বারা দেবানাং পুরয়োধ্যা ।
তস্যাং হিরণ্যায়াঃ কোশঃ স্বর্গো জোতিষাবৃতঃ ।।
তস্মিন হিরণ্যয়ে কোশে ত্র্যরে ত্রিপ্যাপ্রষ্ঠিত ।
তস্মিন যদ সক্ষমাত্নন্বৎ তদ বৈ ব্রক্ষবিদো বিদুঃ
প্রভাজমানাং হরিণীং যশসা সংপরীবিতাম ।
পুরং হিরণ্যায়ীং ব্রক্ষা বিবেশা পরাজিতাম ।।
[অথর্ববেদ ১০ম কান্ড ১ম অনুবাক ২য় সুক্ত ২৬-৩৩ মন্ত্র]
অর্থ - ২৬ , অথর্ব তার মস্তক ও অন্তর একত্রেই (ঐশী আদেশের সঙ্গে) গ্রথিত করিলেন, তখন ধর্মপরায়নতা তাহার ললাটে আবর্তিত হইল । ২৭, অথর্বের মস্তক প্রভুর আবাসস্হল ; উহা আত্না, মস্তক ও অন্তর সর্বদিক দিয়া সংরক্ষিত ছিলো । ২৮, উহার নির্মাণ উচ্চ, উহার প্রাচীরসমূহ সমান হোক বা না হোক, কিন্তু প্রভুকে উহার সর্বত্র দৃষ্ট হয় । যে ব্যাক্তি প্রভুর গ্রহকে অবহিত আছে, সে উহা জানে । কারণ সেখানে প্রভুকে স্বরণ করা হয় । ২৯, যে ব্যাক্তি আধ্যাত্ন-মৃতে পরিপূর্ণ প্রভুর এই পবিত্র ধর্মাধামকে অবহিত থাকে, ব্রক্ষ এবং ব্রক্ষা তাহকে অর্ন্তদৃষ্টি, প্রাণ ও সন্তানাদি দান করেন । ৩০, যে ব্যাক্তি এই পবিত্র গৃহকে অবহিত হয় এবং যাহার অর্ন্তদৃষ্টি ও আত্নশক্তি বিদ্যমান, সে কখনো উহা ত্যাগ করেনা । কারণ সেখানে প্রভুকে স্বরণ করা হয় । ৩১, দেবতাদের এই পবিত্র ধামের আটটি চক্র-পরিক্রম ও নয়টি দ্বার আছে । উহা অপরাজেয় এবং উহা হিরণ্যময় অনন্ত জীবন এবং স্বর্গীয় জ্যোতিতে সমাবৃত । ৩২, তথায় হিরণ্যময় পবিত্র আত্না প্রতিষ্ঠিত আছে । উহা তিনটি স্তম্ভ, তিনটি কড়িকাঠ দ্বারা নির্মিত ; কিন্তু উহা ব্রক্ষাত্নার কেন্দ্রবিন্দু । ৩৩, ব্রক্ষ সেখানে অবস্হান করেন, উহা স্বর্গীয় প্রভায় সমুজ্জল ও স্বর্গীয় আর্শীবাদে পরিপূর্ণ । এ ধাম মানুষকে হিরণ্যময় পনমাত্নার জীবন দান করে এবং উহা অপারজেয় ।
কোরআনের বর্ণনানুযায়ী মহর্ষি ইব্রাহীমের দুই পুত্র ছিলো- ১. ঈসমাঈল ও ২. ইসহাক । তিনি ঐশী প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হইয়া তাহার জৈষ্ঠ পুত্র ঈসমাঈলকে বলি দিতে উদ্যত হন । তখন প্রভু তাহাকে একটি স্বর্গীয় দুম্বা দান করেন এবং তিনি উহা বলি দেন । এই প্রথা অদ্যাবধি প্রতি বৎসর মুসলমানগণ কোরবানী করিয়া পালন করিতেছেন ।
মহর্ষি ইব্রাহীম একটি ধর্মধাম বা ইবাদতগাহ নির্মাণ করেন । বেদের বর্ণনানুযায়ী উহার উচ্চতা অনধিক, প্রাচীরগুলি অসমান, উহাতে তিনটি স্তম্ভ, তিনটি কড়িকাঠ ছিলো, উহার নয়টি দ্বার ও আট পরিক্রমা বিদ্যমান । কোরআনে উহাকে আল্লাহর ধাম এবং অপরাজেয় (সূরা-ফীল) বলা হইয়াছে । ধনবান মুসলিমগণ মক্কার উক্ত প্রভুধামে গমন করিয়া হজ্ব পালন করেন । সুতরাং এইক্ষেত্রে বেদ ও কোরআনের উভয়ের মধ্যে অপূর্ব সামন্জস্য পরিলক্ষিত হয় । হযরত মোহাম্মদ সাহেব হইলেন সেই ঈসমাঈল তথা অথর্ব ঋষির বংশধর ।
---------------- শেষ -------------------------------
মহান আল্লাহ কুরআনে বলেন," ইব্রাহীমকে তার পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন, তখন পালনকর্তা বললেন,' আমি তোমকে মানবজাতির নেতা করব (সূরা- বাকারা ১২৪) । বর্তমানে তিনি সত্যই মানবজাতির নেতা--ইহুদী, খ্রীস্টান , মুসলমানগণ তাকে পিতা হিসেবে গন্য করে আর সনাতনপন্হীরাও না জেনে তাকে অনুসরণ করছে । উনার মত এত বেশী কঠিন পরীক্ষা মনে হয় আর কোন নবী-রাসূল দেননি । আল্লাহ কর্তৃক উনার প্রতি পরীক্ষাসমূহ ছিল, বাদশাহ নমরূদের অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ, শিশু সন্তানসহ বিবি হাজেরাকে উষর মরুভুমির নির্জন প্রান্তর মক্কায় রেখে আসা এবং কিশোর বয়সের সন্তান হযরত ঈসমাঈল (আঃ) কে আল্লাহর নির্দেশে কুরবানী করা । এই জন্য আল্লাহ উনাকে 'বন্ধু' বা খলিলুল্লাহ বলে সম্বোধন করেছেন ।
কুরবানী সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, আমি প্রত্যক উম্মতের জন্য কুরবানী নির্ধারিত করে দিয়েছি । যাতে আমি তাদের জীবিকা স্বরৃপ যেসব চতুষ্পদ পশুদান করেছি সেগুলো যবাইকালে আল্লাহর নাম স্বরণ করে । তোমাদের ইবাদত যোগ্য তো একমাত্র আল্লাহ । সুতরাং তোমরা তার নিকট আত্নসমর্পণ কর এবং বিনয়ীগনকে সুসংবাদ দাও (সূরা-হজ্ব -৩৪)
দেখেছেন আল্লাহ কুরআনে কি বলেছেন ? প্রত্যেক উম্মত এর জন্য কুরবানী নির্ধারিত।