somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেলে আসা কৈশোরে প্রত্যাবর্তন - ২

০১ লা ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ২৮ আর ২৯ শে নভেম্বর ছিল উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের রিইউনিয়ন।। কারো কারো সাথে সেদিন দেখা হলো প্রায় ২০-২২ বছর পর। বন্থুদের সাথে নিয়ে সেদিনের সেই স্মৃতিচারণ ....

শম্পা, আরিফ আর তুলি। আরিফ বিনিয়োগ বোর্ডের ডেপুটি ডিরেক্টর আর তুলি টিটিসি'র এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর।

ফ্ল্যাশব্যাক : পরবি তো পর মালির ঘাড়েই .... স্কুলের গেটের পাশেই একটা আম গাছ ছিল আগে। প্রতি বছরই আম ধরতো। সেবারও ধরেছিল। আনোয়ার আর আরো কয়েকজর মিলে ঠিক করলো আম চুরি করতে হবে।
টিফিন পিরিয়ড শেষ হয়ে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। আশ-পাশ ফাঁকা দেখে একজন তরতর করে উঠে গেল গাছে। আনোয়ার গাছে নিচে দাড়ানো। অন্যরা খেয়াল রাখছে কেউ আসে কিনা। প্রিন্সিপাল আর.বি. সাহা কার কাছ থেকে যেন খবর পেলেন এই দুঃস্কর্মের। বেত একটা হাতে নিয়ে হাজির হয়ে গেলেন, মূহূর্তেই ফাঁকা হয়ে গেল চারপাশ। হাতে-নাতে ধরা পড়লো কেবল আনোয়ার। আর গাছের উপর যে ছিল, চুপটি করে বসে রইলো সুসময়ের অপেক্ষায়। আনোয়ারের তখন ছেড়ে দে মা ... টাইপ অবস্থা। বিধি বাম! মট করে একটা শব্দ হলো।
আর চোর বাবাজি বমাল সমেত একেবারে স্যারের কাঁধের উপর। দুজনেই তখন ভূমি শয্যায়। আনোয়ারই প্রথম তুলে দাঁড় করালো স্যারকে। এরমধ্যে অন্যরাও এসে গেছে। স্যার নিজে ব্যথা পাওয়ার কারণেই কিনা
জানিনা, ব্যাপারটা নিয়ে আর তেমন কিছু হলো না সেদিন।

জাকারিয়া, শাহেদ আরিফ আর আনোয়ার


ফ্ল্যাশব্যাক : মামুন স্যার - তিনি ছিলেন আমাদের ইলেক্টিভ ম্যাথের শিক্ষক। বুয়েট থেকে পাশ করে পোট্রোবাংলার চাকরির পাশাপাশি স্কুলেও পড়াতেন। তার মাও ছিলেন আমাদের শিক্ষিকা - প্রয়াত মহিমা
টিচার। ক্লাসের বাইরে স্যার ছিলেন খূবই ফ্রেন্ডলি, তবে ক্লাসে বেশ কড়া। পড়াশোনার ব্যাপারে মেয়েরাও কোন ছাড় পেতো না। একদিন ক্লাসে কি কারণে মনে নেই, রুচিরার উপর ক্ষেপলেন। শাস্তি হলো - বেঞ্চের
উপর দাঁড়াও। রুচিরা তো আর দাঁড়ায় না। আমরা সব স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। এদিকে বেচারির তো নাকের জলে চোখের জলে একাকার হয়ে গেলো। আমরা ছেলেরা ২/১ জন বলার চেষ্টা করলাম - মেয়ে তো, স্যার ছেড়ে দেন। আর যায় কোথায়। যে যে বললো, তাদেরকেও একই শাস্তি পেতে হলো। এতোকিছুর পরও কিন্তু রুচিরা
সেদিন পার পায়নি। চোখের জলে বুক ভাসিয়ে তাকে সেদিন বেঞ্চের উপর দাঁড়াতে হয়েছিল। { জিয়াউল হক মামুন বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই.বি.এ. 'র পরিচালক। রুচিরার বদদোয়ার কারণেই কিনা কে জানে
মামুন স্যারের বউ স্যারেরই এক ছাত্রের হাত ধরে চলে গেছে। :) }

আনোয়ার আর জাহেদার সাথে প্রয়াত রউফ স্যারের তিন ছেলে

ফ্ল্যাশব্যাক : স্কুলে অগ্নিকান্ড - যথানিয়মে একদিন স্কুলে গেছি। গিয়ে শুনি স্কুল বন্ধ। কারণ আগের দিন সণ্ধ্যায় স্কুলেরই একটি রুমে নাকি আগুন লেগেছিল। রুমটা দেখতে গেলাম। আমাদের ক্লাসরুমেরই পাশের রুম। কয়েকটা বেঞ্চ অর্ধ দগ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে আর ওয়ালগুলো কাল হয়ে আছে। কিভাবে কি হয়েছে কেউ বলতে পারে না। স্কুলের জমি নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল। সবাই ধারণা করছিল সে কারণেই হয়তো এই নাশকতার চেষ্টা। গত ২৮ বছর এই ধারণাটাই মাথায় ছিল। ২৮ বছর পর জানলাম এটা ছিল আমাদের ক্লাসেরই তিন মহারথী'র কাজ। মামুন স্যার ইলেক্টিভ ম্যাথে একজনকে ৭ আর দু'জনকে ০০ দেয়ায় স্কুল পুড়িয়ে ছাই করার এই মহতী প্রচেষ্টা।

আখতার স্যার। এই স্যারের হাতে বেতের বাড়ি খায়নি এমন ছাত্র পাওয়া যাবে না। অথচ স্যার সেদিন তার পূরানো ছাত্রদের পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেছিলেন।

ফ্ল্যাশব্যাক : নির্বাক থেকে সবাক - আফসারী আহমেদ তুলি ছিল আমাদের ফার্ষ্ট গার্ল। ভীষণ রকমের লাজুক আর শান্ত স্বভাবের ছিল মেয়েটা। স্কুলে থাকতে ওর গলার স্বর শুনেছে এমন ক্লাসমেট ছিল বিরল। এমনকি মেয়েরাও খূব একটা শোনেনি। একদিন নিশাত জিজ্ঞাসা করেছিল - আফসারীর গলার স্বর শুনেছি কিনা। বললাম -না। নিশাত জানালো ওর গলার স্বর নাকি খূবই মিষ্টি। আফসারীর বাসার ফোন নাম্বার কে দিয়েছিল মনে নেই, একদিন ফোন করতেই - ওমা! এ যে দেখি রীতিমতো কোকিলকন্ঠী। সেই লাজুক আর শান্ত আফসারী ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বিয়ে করেছে নিজের ক্লাসফ্রেন্ডকে। এক ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে তাদের সূখের সংসার এখন। আর এখন সে খূবই সবাক - কারণ সে টিটিসি'র সহকারী প্রভাষিকা।

গান গাইছে ব্ল্যাক। ব্ল্যাক এর জন, টনি আর জাহান এই স্কুলেরই ১৯৯৫ সালের ব্যাচ। মাইলসের শাফিন আহমেদ ছিলেন ১৯৬৭-৬৯ এ।

এইসব ছোটখাট স্মৃতি মনে করতে করতেই কেটে গেলো আনন্দঘন দুটো দিন। বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ পূনঃস্থাপিত হলো এই দু'দিনে। যোগাযোগ অব্যাহত থাকুক বাকি জীবন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৫৫
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×