মানিক,প্রিন্সেস ডায়ানা ও নারীমূর্তি-পর্ব-১
৩.
আজ দোকনে ঢুকেই দেখে মিজান স্যার বসে আছে...
ঃ আজ একটু দেরী হয়ে গেল মনে হয় মানিক?
ঃ জ্বী ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল..
ঃ কাল তো আলমকে একটা ডল আনতে পাঠিয়েছিলাম । এনেছে তো ঠিকমতো?
ঃ জ্বি ঐ যে শাড়ীও পরিয়ে দিয়েছি.. পশ্চিম দিকে তৃতীয়টা
ঃ কই ... ও... আলমটা একটা অপদার্থ । এটা কী ডল এনেছে.. ওকে বললাম একটু সুন্দরী দেখে ডল আনার জন্য.. আরে মহিলারা নিজের চেহারা ভুইলা যে ডলটারে বেশি মানায় ঐটার পরণের জিনিস কিনে নিয়ে যায়.. এর কারণ কী জান মানিক?
ঃ জ্বি না..
ঃ এর কারণ হইল বেশিরভাগ মহিলাই নিজেরে সুন্দরী মনে করে..হা হা এই যে তোমাদের ভাবী তার চেহারা খারাপ না কিন্তুু সে নিজেরে ঐশ্বরিয়া মনে করে । ঐশ্বরিয়া যে ধরণের জিনিস ব্যবহার করে তারও সে ধরণের জিনিস চাই।বল এটা কী হয়? আরে আমি কী অভিষেক বচ্চন? আমি ক্যামনে তারে এইসব জিনিস কিনা দিই কও?
তবে অনেকে অভিষেকের চাইতে আমারেই বেশি হ্যান্ডসাম কয়.. হহা হা।
মানিকের মন একদমই খারাপই হয়ে গেল দুটো কারনে.. প্রথমত তার ডলটাকে ভাল না বলায়.. আর এশ্বরিয়ার নাম শুনায়.. এই মেয়েটার নাম শুনলেই তার গা জ্বালা করে..
মানিক নিজের াকাজে মন দেয়। শুরুতেই সে তার ডলটিকে মুছতে থাকে.. দুপুর পর্যন্ত কিছু কাস্টমার এসেছিল.. সব মহিলাকেই সে তার ডলটির কাছে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে .. আপা এইটা দেখেন এই বলে..কিন্তু মানিক লক্ষ্য করে কোন মহিলাই এই ডলটির কাছে বেশিক্ষণ থাকে না.. তাহলে কী ডলটি সুন্দর নয়? না না তা কী করে হয়? এমন টা হতেই পারে না.. মহিলাগুলার কোন রুচিই নাই!
২ টার দিকে আলম আসে খাবার নিয়ে..
ঃ বড় স্যারে কই?
ঃ বাইরে গেছে
ঃ ওহ্ বাঁচলাম। ডলটা লইয়া কিছু কইছিল?
ঃ না তেমন কিছু বলল না শুধু বলল তুমি একটা অপদার্থ..
ঃ দেখছেন স্যার আমি কইছি না এই মূর্তি বড় স্যারের পছন্দ হইবো না.. আর আপনে কন এইটা সবচে’ সুন্দর..
ঃ হ্যাঁ সুন্দরই তো.. তুমি যেরকম ঐটার নাম দিলা মৌসুমি আমিও এটার নাম দিয়েছি “ডায়ানা”
ঃ কন কী স্যার.. এই কথা আমারে কইলেন আর কাউরে কইয়েন না স্যার .. আপনারে পাগল কইব .. আপনার কাছে ডায়ানার মত লাগে এইটারে আমার কাছে মনে হয় “ডাইনী”
ঃ এই বের হ বের হ দোকান থেকে বের হ ...
ঃ কী কন স্যার .. খাওয়া দাওয়া..
ঃ আমি বের হলে তারপর এসে খাবি .. আর খবরদার এই ডলটারে ডাইনী বলবি না..
আলম কিছুই না বুঝে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দোকান থেকে বের হয়ে যায়...
৪.
সন্ধ্যার দিকে মানিকের মোবাইলে ফোন আসে বাড়ী থেকে
ঃ হ্যালো বাবা মানিক কেমন আছস তুই?
ঃ জ্বি আম্মা আমি ভালই আছি.. তোমরা সবাই কেমন আছ?
ঃ আল্লায় রাখছে.. তুই কতদিন বাড়ীত আসস না.. তোর কী ছুটি টুটি নাই
ঃ না মা দোকানে কাজ বেশি আর দুইমাস পরে ঈদ .. ঈদের পরদিন আসব আম্মা
ঃ ঈদের আগে কী কোনভাবেই আসতে পারবি না ?
ঃ না মা...ঈদের আগে কেন?
ঃ ঐ যে হামিদ মুহুরীর বড় মেয়ে পারুল আছে না .. ওর বিয়ের সম্মন্ধ আসতেছে.. কিন্তু ওনারা আমাদের সাথে সম্মন্ধ করতে চায়।সেদিন তোর আব্বারে তোর কথা জিজ্ঞেস করছিল .. বলছে আমাদের আপত্তি না থাকলে এবার ঈদের আগেই বিয়েটা সেরে ফেলতে চায়.. তুই ও ত ওরে ছোটবেলায় দেখছিলি..
ঃ না মা এখন বিয়ে করব না । আর গ্রামের কোন মেয়ে বিয়ে করব না ..
ঃ কী বলস.. গ্রামের মেয়ে বিয়ে করবি না .. তুই কী শহরে কাউকে পছন্দ করস?
ঃ মানিক একটু ভেবে বলে .. হ্যাঁ মা..
ঃ বাবা আমার কথা শোন শহরের মেয়ে গুলা ভাল হয় না তুই বাড়ী আয় পারূল রে দেখে যা ও মাশাল্লাহ্ এখন অনেক সুন্দর হইছে..
ঃ না মা এখন তো আসাই যাবে না.. আর বিয়ে শাদী তো অনেক দূরের ব্যাপার..
ঃ তুই কী শহরে কাউরে কথা দিছস বাবা?
ঃ না মা কথা দিই নাই...
ঃ তাহলে একাজ করি পারূলের একটা ছবি পাঠাই .. তুই না আসতে পারলেও ছবি দেখে তোর মতামত জানাস.. আমার মনে হয় তোর পছন্দ হবে..
ঃ না মা ছবি পাঠানোর দরকার নেই ৃ
ঃ না আমি পাঠাবই...
এই বলেই তার মা কল কেটে দেয়..
৫.
সপ্তাহ খানেক পরেই মানিকের মায়ের চিঠি আসে। মানিক চিঠিটি হাতে নিয়ে চেয়ে থাকে । না সে এটা খুলবে না তার মাথায় ডায়ানা ডল ছাড়া অন্য কারো চিন্তা সে নিতে চায় না। সে চিঠিটি ড্রয়ারে ঢুকিয়ে ফেলে ..
দুদিন বাদে আবার তার মায়ের ফোন আসে..
ঃ বাবা মানিক চিঠি পাইছস?
ঃ জ্বী মা..
ঃ পারুল রে কেমন লাগল বাবা.. ওর আব্বা বলছে এ সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের মতামত জানাইতে..
ঃ মা পারুলরে ভাল লাগে নাই.. চিঠি যে খোলেনি এটা সে গোপন করল..
ঃ (তার মা দীর্ঘশ্বাস ফেলল)..ঠিক আছে বাবা কী আর করা..পৃছন্দ হওয়া না হওয়াই আসল কথা..তুই তাইলে ঈদের আগে আসবি না..
ঃ না মা
ঃ ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিছ বাবা.
ঃআচ্ছা ঠিক আছে মা তুমি কোন চিন্তা কোর না।
ফোন রেখে মানিক চিন্তা করে এবার তো ঈদের আগে যাওয়াই যাবে না । প্রতিবার ঈদে ওদের দোকানে কত কাস্টমার আসে । এবার তার ডায়ানা ডলের মতো কোন মেয়েকে সে অবশ্যই দেখবে।....(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:২৮