somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝিলিমিলি ভোর - (৭ই নভেম্বরকে নিয়ে একটা শিশুতোষ উপন্যাস)

২৮ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(সাতই নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিবস। একদলীয় বিভীষিকাময় দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে সিপাই জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে রুখে দেয়ার এই দিন। আজকের বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে শত ফুল হাজার ধারায় ফুটছে , বহু সংবাদ মাধ্যমের বিকাশ ঘটছে, লক্ষ মানুষের মত প্রকাশের যে ধারা যাত্রা সূচিত হয়েছে তার শিকড় প্রোথিত রয়েছে এই দিবসে। সে কথা অনেকেই ভুলে গেছেন, কেউ কেউ তা ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে দ্যুতিময় প্রভাতের বিকাশই কেবল ঘটেছে। আধার পালিয়ে গেছে বারেবারে। তবুও অন্ধকারের কাপালিক প্রভু এবং তাদের চেলারা নিবৃত্ত হননি। আজও তারা ওত পেতে থাকেন। আজও তারা কৃষ্ণ নি:শ্বাসে ডুবিয়ে দিতে চান মানুষের বিজয় গাথাকে। অন্ধকারের প্রভুদের অতীত এবং চলমান অপচেষ্টার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হল শিশুতোষ উপন্যাস ঝিলিমিলি ভোর। আজ তার শেষ পর্ব পরিবেশিত হল।)



শেষ পর্ব




ভাইয়া ভাইমনি যেন আব্বুর মত বড় হয়ে গেছে। তাদের কপালে ভাজ। কোচকানো। ঝড়ে উড়ে যাওয়া ঘরের মত চেহারা। বড়পা মেজপা আম্মুও যেন এক বয়সী। দরুদ পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ভাইমনি আব্বু ভাইয়া চাপা গলায় ফিসফিস করছেন। টুকরো কথা ছিটকে আসে। গৃহযুদ্ধ, রক্ত স্বাধীনতা ইত্যাদি। ঝিনুর কাপুনি বাড়তেই থাকে। দাঁত ঠক ঠক। মুখ ফ্যাকাশে। হাতপা অবশ অবশ এর মধ্যে আব্বু বার দুই ফোন তুলে আবার ঠকাস করে নামিয়ে রাখেন। পাগলের মত রেডিও খুলে ঘোরচ্ছেন ব্যান্ড বদলাচ্ছেন। কোথাও আশ্বাসের কোনো স্বর নেই। আবার রেডিও বন্ধ করছেন। খুলছেন। ঢাকা স্টেশনে সেই করুন কান্নার সুরে শো শো শব্দ। ঝিনুর ভয়ের ভুত ভাগিয়ে দেয়ার জন্য ভাইমনি ওকে গালগল্প ডুবিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। গল্প পাগল ঝিনুকে ফিস ফিস করে সেই শাদ্দাতের গল্প শোনাতে শুরু করলেন। । শাদ্দাতের বেহেশত তৈরীর বিশাল ইচ্ছ। আর বিপুল চেষ্টার বর্ণনায় ঝিনুর ভয়ডর কাঁপুনি একটু একটু করে কমে যায়। ভাইমনি গল্প বলতে পারেন বটে। এমন ভঙ্গী স্বর বর্ণনা যেন পুরো ব্যাপারটাই চোখের সামনে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। শাদ্দাত অনেক টাকা খরচ করে আল্লহর সাথে প্রতিযোগিতা করে একটা বেহেশত তৈরি করল। তারপর সেই নচ্ছারটা কি সত্যিই তার সেই বেহেস্তে যাবে। ঝিনু বড় বড় চোখে তাকায় । বেহেশতে এক পা মাত্র রেখেছে অমনি হিসাবের খাতা পুর্ণ হল। শাদ্দাতের পাপের ভারা ভরে গেল। মৃত্যুর হুকুম নিয়ে হাজির হলো আজরাইল । শাদ্দাতের চেলাচামন্তদের সবার জানও সে সাথে কবজ করা হল। এত সাধের বেহেস্ত ভেংগে পড়ল শাদ্দাতের মাথায়। নিজের তৈরি স্বর্গ আর দেখা আর হল না। ঝিনু হাঁফ ছাড়ে। এমন সময় আব্বুর রেডিও কথা বলে উঠে, সিপাই জনতার বিপ্লব জিন্দাবাদ। ঝলমলিয়ে ওঠে সবার চেহারা। আস্মুও খুশীতে হু হু করে কেদেই ফেলেন। চলে যা হিল্লি দিলী­। ভাইয়া দরজা খুজে কালো কাঠের টুকরাটাকে আকাশে ছুঁড়ে মারেন। ভাইমনি ভাইয়া বাইরে এসে দাড়ান। মসজিদে মসজিদে সুরেলা আজান।

ঝিনু হাততালি দিয়ে চেচিয়ে ওঠে, ‘করুক্কামারী!’ ‘ করুক্কামারী!!’ ওরা তাকিয়ে দেখে পথে নেমে এসেছে এক বিশাল ট্যাংক। ভাইমনি ঝিনুকে পাশে নিয়ে ছুটছেন ট্যাংকের পাশে পাশে। কে যেন হাত বাড়িয়ে ঝিনুকে তুলে নেয় ট্যাংকের উপরে। ওমা ভাইমনি যে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। কখন যে ভাইমনি র্ট্যাংকের উপরে উঠে গেছে ঝিনু টেরই পায়নি। মোড় থেকে কতগুলো লোক ফুলের মালা হাতে দৌঁড়ে আসছে। ট্যাংকের কামান এক লোহার হাতীর শুড়েব মত সে দিতে ঘুরে যায়। লোকেরা কামানের গলার মালা ঝুলিয়ে দেয়। একটি ছোট ছেলেও ওই নল চেপে খানিক ঝুলে নেয়। সৈন্যরা হেসে উঠে । ঝিনু অবাক হয়ে ভাবে এ আবার যেমন সৈন্য একটুকুও ধমক দিতে জানে না। গাড়ি। গাড়ি সৈন্য। রাস্তা বোঝাই লোক। হাততালি!! জিন্দাবাদ!!! আর পটকার মত গুলীর শব্দ। সে সাথে স্বপ্নের পক্ষীরাজের মত ট্যাংকের পিঠে ভেসে বেড়ানো সব মিলে আবার যেন বন্দি রাজপত্তুরা জীবন ফিরে পেয়েছে । এবার দত্যি ভেগে গেছে গহীন জংগলে । মট মট করে ছোলা মটর চিবানোর আওয়াজ তুলে ট্যাংক হেলে দুলে আইল্যান্ডের উপর চড়ে আবার ও পাশে নেমে যায়। টাল সামলাতে যেয়ে ঝিনু পাশের এক সৈন্যকে আকড়ে ধরে । এবার কোথাও আর ভয় নেই। আকাশে বাতাসে গুলীর গান । হাসি। মিছিল। হাত তালি
চিৎকার । ঝিলিমিলি এক নতুন ভোর। হাওয়ার ঝিনুর ঝাঁকড়া চুল উড়ছে। একঝাঁক পায়রা ডানা মেলে দিয়েছে । খুশির আলোতে দুচোখে লক্ষ তারার ঝিলিমিলি । (সমাপ্ত)


ইন্সিপিসে পুরো উপন্যাস পিডিএফ ফরমটে দেয়া হয়েছে। আগ্রহী পাঠকের জন্য তার লিংকটি দেয়া হলো।


Click This Link


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সচীবদের সম্পর্কে এখন কিছুটা ধারণা পাচ্ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭



সামুর ব্লগারদের মাঝে ১ জন সচীব আছেন,(বর্তমানে কর্তব্যরত ) তিনি বর্তমানে লিখছেন; আধামৃত সামুতে তিনি বেশ পাঠক পচ্ছেন; উৎসাহের ব্যাপার! এরচেয়ে আরো উৎসাহের ব্যাপার যে, তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×